ভূত কি সত্যিই আছে? Do ghosts really exist?

ভূত কি সত্যিই আছে?

ভূত, প্রেতাত্মা বা অশরীরী হল মৃত ব্যক্তির আত্মা। বিশ্বাস করা হয় যে, ভূতেরা জীবদ্দশায় যেসকল বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলিকে বা তাদের তাড়া করে ফেরে। বিজ্ঞানের অপ্রতিরোধ্য সম্মতি হল যে ভূতের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু তাও অনেকেই ভূত দেখার দাবি করে থাকেন।

ভূত কি ? what is a ghost?

ভূত

বিশ্বাস করা হয়, অতৃপ্ত মানুষের মৃত্যুর পরে তাঁরা ভূত হয়ে যান। এছাড়াও, খুন, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মারা যাওয়া ব্যক্তির আত্মাকেও ভূত বলে মনে করা হয়। অন্যান্য প্রাণীদের মৃত্যুর পরেও তারা ভূত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হয়।

ভূত কি সত্যিই আছে? Do ghosts really exist?

পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় ভূত বলতে কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যে কারণে পদার্থবিদরা বলছেন ভূতের অস্তিত্ব থাকতে পারে না । এখন পর্যন্ত, এমন কোন প্রমাণ নেই যে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও চলতে পারে।

ভুতের অর্থ কি? What does ghost mean?

ভূত, আত্মা সবই একজন ব্যক্তির দেহত্যাগী আত্মাকে বোঝায়। একটি ভূত হল একজন মৃত ব্যক্তির আত্মা, যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে প্রদর্শিত হয় বা অন্যথায় তার উপস্থিতি জীবিতদের কাছে জানিয়ে দেয়।

ভূত কোথায় থাকে? Where do ghosts live?

ভূত আছে কি?

ইচ্ছেমতো ভূত দেখা না গেলেও কিছু কিছু জায়গায় গেলে ভূত দেখা যায় বলে বিশ্বাস আছে। মানুষ ধারণা করে ভূতেরা সাধারণত ভাঙা পুরানো বাড়ি, গোরস্থান, শ্মশান, বট গাছ, গাব গাছ, শেওড়া গাছ, তাল গাছ, বাঁশ বাগান, বনের পুকুর পাড়ে প্রভৃতি জায়গায় বাস করে।

ভুতের প্রমাণ আছে কি? Is there any evidence of ghosts?

বিজ্ঞানের মতে, ভূতের অস্তিত্ব নেই। কয়েক শতাব্দীর তদন্তেও কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে কোনও জায়গায় মৃতদের আত্মারা বাস করে। ভূত দেখার ঘটনা মন বা চোখের বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়।
তবে, অনেকেই ভূত দেখেছেন বা ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা বলেন। ভূত দেখার পেছনে প্রধান বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল: ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড মানুষের মস্তিষ্কের সংকেতগুলিতে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে হ্যালুসিনেশন হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভূত কে? Who is the most powerful ghost in the world?

প্রতিহিংসাপরায়ণ স্প্রিটগুলিকে প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের ভূতের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই আত্মাগুলি রাগ, ঘৃণা বা প্রতিশোধের তৃষ্ণার মতো তীব্র আবেগ দ্বারা চালিত হয়, যা তাদের সাধারণ চেহারার বাইরে একটি শক্তিশালী শক্তি দেয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভুতুড়ে দুর্গ কোনটি? Which is the most haunted castle in the world?

ভানগড় দুর্গ (রাজস্থান, ভারত) প্রায়শই ভারতের সবচেয়ে ভুতুড়ে স্থান হিসাবে বিবেচিত। ভানগড় দুর্গ কিংবদন্তি এবং অভিশপ্ত লোককাহিনীতে পরিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করা হয়। দর্শনার্থীদের সূর্যাস্তের পরে দুর্গ প্রাঙ্গনে প্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভুতুড়ে শহর কোথায়?

পোভেগ্লিয়া দ্বীপ, ভেনিস, ইতালি মুখোশ এবং গন্ডোলা ছাড়াও, ভেনিস পোভেগ্লিয়া দ্বীপের Where is the most haunted city in the world? জন্যও পরিচিত, যাকে প্রায়ই “বিশ্বের সবচেয়ে ভুতুড়ে স্থান” বলা হয়। পরিত্যক্ত এই দ্বীপটি ভূত শিকারীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।

ভুতুড়ে বাড়িতে কি হয়? What happens in haunted houses?

ভূতুড়ে বাড়ি

একটি ভুতুড়ে বাড়ি, স্পুক হাউস বা ভূতঘর এমন একটি বাড়ি যেখানে অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয় । অনেক ভুতুড়ে বাড়িতে ভূত আছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

বিভিন্ন ধরনের ভূত, Various types of ghosts :

বাংলা সংস্কৃতিতে অনেক ধরনের ভূতের বিশ্বাস রয়েছে; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভূত সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে :

পেত্নী:

পেত্নী হলো মেয়ে ভূত যার বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেতিনী শব্দ থেকে এসেছে (পুরুষবাচক শব্দ প্রেত)। এসব ভূত সাধারণত যে কোন আকৃতি ধারণ করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এরা সাধারণত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে।

শাঁকচুন্নি:

শাঁকচুন্নি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ শঙ্খচূর্ণী থেকে এসেছে। এটা হলো হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের ভূত। লোকগাথা অনুসারে তারা শেওড়া গাছে বসবাস করে। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিতা মহিলাদের উপর ভর করে বা আক্রমণ করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে।

চোরাচুন্নি:

সাধারণত কোন চোর মৃত্যুবরণ করলে চোরাচুন্নিতে পরিণত হয়। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে।

পেঁচাপেঁচি:

এ ধরনের ভূত জোড়া ধরে থাকে ও জোড়ায় শিকার করে থাকে বলে বিশ্বাস। এরা সাধারণত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে ও শিকারের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।

মেছোভূত:

মেছো ভূত

এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে বলে বিশ্বাস করা হয়। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারণত গ্রামের কোনো পুকুরপাড়ে বা জলাশয়ের ধারে, যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায়, সেখানে বসবাস করে।

দেও:

এ ধরনের ভূত পুকুর-ডোবা, নদী এবং বিভিন্ন জলাশয়ে বসবাস করে। এরা লোকজনকে জলে ফেলে ডুবিয়ে মারে বলে বিশ্বাস করা হয়।

নিশি:

মানুষের ভয় ভীতি অনুযায়ী অনেকেরই ধারণা যে, ভূতদের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর হলো নিশি। নিশি গভীর রাতে শিকারকে তার প্রিয় মানুষের কন্ঠে নাম ধরে ডাকে এবং বাইরে বের করে নিয়ে যায়। নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে; আর কখনো ফিরে আসে না। লোককাহিনী অনুসারে নিশিরা কোন মানুষকে তিনবারের বেশি ডাকতে পারে না।

মামদো ভূত:

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এটি মুসলমান ব্যক্তিদের আত্মা। এদের শরীরের গঠন অদ্ভূত রকমের হয় বলে প্রচলিত ধারণা। কোমরের নীচ থেকে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে গেছে। এদের কোন পা নেই এবং এরা বাতাসে ভেসে থাকে। এদের কারোর মাথায় টুপি এবং লম্বা লম্বা দাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত কবরস্থানে ও আশে-পাশে থাকা বড় ও ঘন গাছ-পালায় বসবাস করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

গেছোভূত:

গেছো ভূত গাছে বসবাস করে। লোকগাথা অনুসারে যেসব মানুষ গাছের ডালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে, তাদের আত্মা সেই গাছেই থেকে যায় এবং গেছো ভূতে পরিণত হয়।

জোকা ভূতঃ

বিশ্বাস অনুযায়ী, এ ধরনের ভূত পুকুর-ডোবা, নদী এবং বিভিন্ন জলাশয়ে বসবাস করে। এদের উচ্চতা কম হয়, গায়ের রঙ সাধারনত কালো হয়।

ব্রহ্মদৈত্য:

এধরনের ভূত সবচেয়ে জনপ্রিয়। এরা সাধারণত কারো ক্ষতি করে না। বিশ্বাস অনুযায়ী এ ধরনের ভূতরা ব্রাহ্মণের ভূত। এদেরকে পবিত্র ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়।

বেঘোভূত:

যেসব মানুষ বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছে তারাই বেঘোভূত বলে বিশ্বাস করা হয়। সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত।

স্কন্ধকাটা/কন্ধকাটা/ কবন্ধ:

স্কন্ধ কাটা

নাম দেখেই ধারণা করতে পারছেন হয়তো যে, এই ভূতেরা মাথাবিহীন হয়ে থাকে। এরা হলো সেইসব লোকের আত্মা, মৃত্যুর সময় যাদের মাথা কেটে গিয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এ শ্রেণীর ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং অন্য মানুষকে আক্রমণ করে তাদের দাসে পরিণত করে ও তার মাথা খুঁজার কাজে নিয়োগ করে।

কানাভুলো:

বিশ্বাস অনুযায়ী এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর এই ভূতরা নিজের শিকারকে মেরে ফেলে বলে ধারণা করা হয়। l

ঝেঁয়ো পেত্নী:

সাধারণত ঝাউগাছে এই ধরনের ভূত নিজেদের লুকিয়ে রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সন্ধ্যাবেলায় কোনো পথিক যদি একা একা ঝাউবন বা জঙ্গল পেরুতে যায়, তখন এ জাতীয় পেত্নীরা তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে চড়িয়ে দেয়।

গো-ভূতঃ

গলায় দড়িতে জড়িয়ে অপঘাতে কোনো গরু মরলে এই ধরনের ভূত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। স্কন্ধকাটার মতো এদেরও মাথা থাকে না বলে গল্প প্রচলিত রয়েছে।

ভূত নিয়ে কিছু ছবির নাম, Names of some films about ghosts :

ভূত নিয়ে কিছু ছবির নাম হল :

  • ১৯২০,
  • এক থি ডায়ান,
  • দ্য সিক্সথ সেন্স,
  • দ্য আদারস,
  • পল্টারজিস্ট,
  • দ্য গ্রাজ,
  • এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ,
  • ১৪০৮,
  • দ্য নান,
  • দ্য কনজিউরিং,
  • রাজ,
  • এক থি ডায়ান,
  • দ্য রিং,
  • হেরিডেটারি,
  • দ্য শাইনিং,
  • দ্য টেক্সাস চেইনসো ম্যাসাকার,
  • হ্যালোউইন,

ভূত চতুর্দশী মানে কি? What does Bhoot Chaturdashi mean?

ভূত চতুর্দশী হল একটি বার্ষিক হিন্দু উৎসব, যা দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এটি হিন্দু পঞ্জিকার কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এই তিথিটি নরক চতুর্দশী নামে পরিচিত। এটি রূপ চতুর্দশী বা রূপ চৌদাস নামেও পরিচিত।
বলেন দেবী কালী চামুণ্ডা রূপে ভূত এবং প্রেতাত্মা সঙ্গে নিয়ে ভক্তের বাড়িতে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে। কারওর মতে এই তিথিতে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন, সঙ্গে আসে নানা অশুভ শক্তি, অর্থাৎ ভূত এবং প্রেতাত্মা।

ভূত চতুর্দশী

ভূত চতুর্দশী কেন পালন করা হয়? Why is Bhoot Chaturdashi celebrated?

ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী পালনের কারণগুলি হল:

  • ভগবান কৃষ্ণের রাক্ষস নরকাসুরের উপর বিজয়কে স্মরণ করা।
  • মনে করা হয়, নরকাসুররূপী রাজা বলি প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর দিন অসংখ্য ভুত-প্রেত নিয়ে মর্ত্যে আসেন।
  • ভূতদের সন্তুষ্ট করার জন্য বা বাড়ির আশপাশ থেকে তাড়ানোর জন্য ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয় ।
  • নেতিবাচক শক্তিকে দূর করার জন্য বাড়ির চারিদিকে প্রদীপ জ্বালানো হয় ।
  • অনেকে মনে করেন পূর্বপুরুষের আত্মা এই তিথিতে মর্ত্যলোকে আসেন।
  • চতুর্দশীর এই দিন তারা রাক্ষসকে বধ করে সবাইকে রক্ষা করেছিলেন। অন্য মতে চামুণ্ডা রূপে মা কালী এ দিন চৌদ্দখানা ভূতকে সাথে নিয়ে ভক্তের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে দূর করতে পৃথিবীতে আসেন।

শেষ কথা, Conclusion :

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভূত সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা তুলে ধরেছি। পাশাপাশি কত ধরনের ভূত থাকে বলে মানুষের বিশ্বাস সম্পর্কেও আপনাদের অবগত করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই প্রতিবেদন আপনাদের মনোগ্রাহী হলে অবশ্যই আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে নেবেন।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts