‘ঠাকুর’ নয়, ‘কুশারী’ ছিল রবীন্দ্রনাথের পদবি! ইতিহাসের এই বাঁক জানলে চমকে যাবেন

‘ঠাকুর’ নয়, ‘কুশারী’ ছিল রবীন্দ্রনাথের পদবি!

বাঙালির কাছে ‘ঠাকুর’ শব্দটি শুধুমাত্র একটি পদবি নয়, এক আবেগ, এক বিশ্বাস। সেই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ — যাঁর কাব্য, সুর, ভাবনা ও দার্শনিকতা প্রতিদিন পথ দেখায় একটি জাতিকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষদের প্রকৃত পদবি ছিল ‘ঠাকুর’ নয়, ‘কুশারী’।

আদিতে ছিলেন কুশারী

ঠাকুরবাড়ির আদি পদবি ছিল ‘কুশারী’।

ঠাকুরবাড়ির আদি পদবি ছিল ‘কুশারী’। তাঁদের বংশপরম্পরায় প্রথম দিকের নাম হিসেবে পাওয়া যায় রতিদেব কুশারী, কামদেব কুশারী, শুকদেব কুশারী ও জয়দেব কুশারী — চার ভাই, যাঁরা বসবাস করতেন সুন্দরবনের অঞ্চলে।

ব্রাহ্মণ সমাজে একঘরে হওয়ার গল্প

জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক বিশেষ ধরনের মাংসের গন্ধ শোঁকার অপরাধে ব্রাহ্মণ সমাজ থেকে ‘একঘরে’ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। সেই কারণে সমাজচ্যুত হন তাঁরা এবং একপ্রকার বঞ্চনার শিকার হন।

গোবিন্দপুরে আগমন ও সমাজসেবায় মনোনিবেশ

পরবর্তী প্রজন্মে জন্ম হয় জগন্নাথ কুশারীর, যাঁর বংশধর ছিলেন রামানন্দ কুশারী। তাঁর দুই পুত্র মহেশ্বর ও শুকদেব কুশারী পরবর্তীকালে সুন্দরবন ছেড়ে চলে আসেন তৎকালীন গোবিন্দপুর গ্রামে — যেটি আজকের কলকাতার অংশ।

সেখানে গরিব গ্রামবাসীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সেবাব্রত নিয়ে কাজ করতেন দুই ভাই। দান-ধ্যান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো কাজে নিয়মিত যুক্ত ছিলেন তাঁরা।

‘ঠাকুর’ উপাধির সূচনা

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস

এই সেবামূলক কার্যকলাপের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে দুই ভাইয়ের প্রতি ঈশ্বরতুল্য শ্রদ্ধা জন্মায়। প্রায়শই তাঁদের ‘ঠাকুর’ বলে সম্বোধন করা হতো। সেই সম্বোধনকে উপাধি হিসেবে গ্রহণ করেন শুকদেব কুশারী। পরে তাঁর ভাইপো পঞ্চাননও এই পদবি গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে পুরো পরিবার পরিচিত হতে শুরু করে ‘ঠাকুর’ পদবিতে।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস

পরবর্তী প্রজন্মে নীলমণি ঠাকুরের সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে বন্ধুত্ব হয় কলকাতার ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের সঙ্গে। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বৈষ্ণবচরণ তাঁকে উপহার দেন গঙ্গার ধারে বড়বাজার অঞ্চলে দেড় বিঘা জমি। সেখানেই গড়ে ওঠে জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ি।

উনিশ শতকের গোড়ায় প্রতিষ্ঠিত এই ঠাকুরবাড়িই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে বাংলা সংস্কৃতি, সাহিত্য ও জাতীয় চেতনার প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকেই জন্ম নেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর — যাঁর নাম আজ সারা বিশ্বের কাছে বাঙালির গর্ব।

‘ঠাকুর’ পদবির পেছনের এই অজানা ইতিহাস কেবল একটি নামবদলের গল্প নয়, বরং তা সামাজিক বঞ্চনা থেকে মানবিকতার জয়গাথার এক অনন্য অধ্যায়। ‘কুশারী’ থেকে ‘ঠাকুর’ হয়ে ওঠার এই যাত্রাপথ বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts