স্ট্রোক বা ব্রেইন স্ট্রোক হল একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় অথবা মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যায়, তখন স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে দ্রুত মারা যেতে শুরু করে।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কি কি?

স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- হঠাৎ করে শরীরের একপাশ দুর্বল বা অবশ হয়ে যাওয়া।
- কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া।
- দৃষ্টিতে সমস্যা হওয়া, যেমন – ঝাপসা দেখা বা এক চোখে দেখতে না পাওয়া।
- হঠাৎ করে তীব্র মাথা ব্যথা।
- শরীরের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হওয়া।
স্ট্রোক কেন হয়?
স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের কারণে হয়:
- ইস্কেমিক স্ট্রোক: যখন মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোতে ব্লক সৃষ্টি হয়, তখন এই স্ট্রোক হয়। রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো কারণে রক্তনালী সরু হয়ে গেলে রক্ত চলাচল কমে যায়।
- হেমোরেজিক স্ট্রোক: যখন মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়, তখন এই স্ট্রোক হয়। উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তনালীর দুর্বলতার কারণে এমনটা হতে পারে।
বাথরুমে স্ট্রোক বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণগুলো হলো :
- ১. রক্তচাপের পরিবর্তন: বাথরুমে সাধারণত আর্দ্রতা বেশি থাকে। এই কারণে অনেক মানুষের রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- ২. অতিরিক্ত গরম জল ব্যবহার: অনেকে বাথরুমে অতিরিক্ত গরম জল ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত গরম জল ব্যবহার করলে রক্তনালী প্রসারিত হতে পারে, যার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- ৩. শরীরের অতিরিক্ত চাপ: বাথরুমে অনেক সময় মানুষ তাড়াহুড়ো করে কাজ করে বা শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ দেয়। এর ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- ৪. কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা: যাদের আগে থেকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের বাথরুমে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- ৫. জলের তাপমাত্রা: বাথরুমে যদি খুব বেশি ঠান্ডা বা খুব বেশি গরম জল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা জল যেমন রক্তনালীকে সংকুচিত করতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত গরম জল রক্তচাপ কমাতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

- ৬. পর্যাপ্ত আলো না থাকা: বাথরুমে যদি পর্যাপ্ত আলো না থাকে, তাহলে বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল, তাদের সমস্যা হতে পারে। পর্যাপ্ত আলো না থাকলে তারা পড়ে যেতে পারে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
- ৭. অতিরিক্ত ভিড়: ছোট বাথরুমে অনেক সময় বেশি মানুষ একসাথে থাকলে দমবন্ধ লাগতে পারে। এছাড়াও, বয়স্ক বা অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে তাদের সমস্যা হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ৮. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন, অনেকক্ষণ ধরে বাথরুমে থাকা বা অতিরিক্ত জোর দিয়ে কিছু কাজ করার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।
- ৯. ঠান্ডা লাগা: বাথরুমে অনেক সময় ঠান্ডা লাগার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ঠান্ডা লাগলে রক্তনালী সংকুচিত হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ১০. জলের অভাব: শরীরে জলের অভাব হলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, যা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। বাথরুমে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকে বা কেউ যদি যথেষ্ট জল পান না করে, তাহলে তার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- ১১. অন্যান্য কারণ: অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদ্যপান এবং মানসিক চাপও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
করণীয়:
- বাথরুমে বেশি সময় ধরে থাকবেন না।
- অতিরিক্ত গরম জল ব্যবহার করা উচিত না।
- যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের বাথরুম ব্যবহারের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো এবং বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।