আপনি কি জানেন, আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের গর্ভে লুকিয়ে থাকতে পারে হিরের রাজত্ব? চমকে উঠছেন? নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, বুধের বুকের ৫০০ কিমি নিচে রয়েছে ১৬ কিমি পুরু হিরের স্তর! ভাবুন তো, একটি গোটা গ্রহ—যার অন্দর হিরে দিয়ে তৈরি!
মেসেঞ্জার মহাকাশযান কী বলছে?
২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বুধকে ঘিরে ঘুরেছে নাসার MESSENGER মহাকাশযান। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পাঠানো ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন—বুধের গঠন সম্পর্কে আগে যা ভাবা হত, সেটা সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে চলেছে!
কার্বন থেকে হিরে—কীভাবে সম্ভব?

গবেষকদের মতে, এক সময় বুধে ছিল কার্বনসমৃদ্ধ ম্যাগমার সমুদ্র। সেই ম্যাগমা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমাট বেঁধে তৈরি করেছে গ্রাফাইট স্তর। কিন্তু প্রবল তাপ ও চাপের ফলে সেই কার্বন-ঘন ম্যাগমা বদলে গেছে হিরেতে! ৫০০ কিমি নিচে গঠিত হয়েছে হিরের পুরু স্তর—এক কথায় প্রাকৃতিক ‘ডায়মন্ড ভল্ট’!
কীভাবে জানলেন বিজ্ঞানীরা?
বুধের মতো চরম পরিবেশ পরীক্ষার জন্য নাসার গবেষকরা সাত গিগাপাস্কালের চেয়েও বেশি চাপ প্রয়োগ করে তৈরি করেছিলেন কৃত্রিম সিলিকেট মডেল। সেখানে দেখা যায়, নির্দিষ্ট পরিবেশে কার্বন থেকে হিরে তৈরি হওয়া একেবারেই সম্ভব!
এই আবিষ্কারের তাৎপর্য কী?
- বুধের আগ্নেয়গিরি হঠাৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পেছনে হিরের স্তরের হাত থাকতে পারে।
- হিরে অত্যন্ত ভাল তাপ পরিবাহী। তাই ভূতাপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আগ্নেয়গিরির প্রাণকাল কমে যায়।
- নতুন এই গবেষণা Nature Communications-এ প্রকাশিত হয়েছে, যা সৌরজগতের গঠন বোঝার দিকেই এক বিশাল পদক্ষেপ।
তবে হিরে তুলব কীভাবে?
এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, হিরের স্তর যেখান থেকে শুরু, সেই গভীরতা থেকে খনন করা এই মুহূর্তে কার্যত অসম্ভব। তাই বুধের হিরে আপাতত বিজ্ঞানীদের কল্পনার ধনভাণ্ডার হয়েই রয়ে যাচ্ছে।

আসছে ‘বেপিকলম্বো মিশন’!
২০২৬ সালে ESA-JAXA-নাসা যৌথভাবে পাঠাতে চলেছে BepiColombo মিশন, যা আরও গভীরভাবে বুধের গঠন ও হিরের স্তর নিয়ে অনুসন্ধান করবে।
এই আবিষ্কার এক দিকে যেমন সৌরজগতের রহস্য আরও উন্মোচন করছে, তেমনই অন্য দিকে প্রমাণ করছে—মহাকাশে সত্যিই লুকিয়ে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ, যা আমাদের কল্পনার অনেক গুণ বেশি চমকপ্রদ!
এই চমকপ্রদ খবরটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না!