একসময় পাড়া-প্রতিবেশীরা বলত, “ও তো ছোট জাতের মেয়ে, ওর আর কিই বা হবে!” আজ সেই মেয়ে—শ্যামনগরের রীতুপর্ণা বিশ্বাস—নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে। হার্ভার্ডের গেট পেরিয়ে স্পেনে মারি কুরি ফেলোশিপে গবেষণা করতে চলেছেন। ভাবতে পারছেন?
কৈশোরেই শুরু যুদ্ধ, প্রেম ছিল ‘অপরাধ’!

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সমাজ বুঝিয়ে দিয়েছিল—রীতুপর্ণার জায়গা রান্নাঘরে, বড়জোর রেলের গ্রুপ-ডি কর্মচারীর বউ হয়ে জীবন কাটানো। কিশোরী বয়সে প্রেমে পড়েছিলেন অর্ঘ্যর সঙ্গে। প্রেমের জন্য কোচিং ক্লাসে পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়লে সমাজ তেড়ে আসে— “ছোট জাতের মেয়েদের তো এমনই হয়!” কিন্তু থেমে যাননি রীতুপর্ণা। বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন— “আমি হারব না, আমি দেখাব কাকে বলে লড়াই।”
লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার—শিক্ষা!
২০১২ সালে শ্যামনগর বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হলেন কলকাতার লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে, মাইক্রোবায়োলজিতে। এরপর এল সেই সুযোগ, যা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়— Erasmus Mundus স্কলারশিপ। পড়তে গেলেন পোল্যান্ডে, Warsaw University of Life Sciences-এ।
এই স্কলারশিপের টাকার অঙ্ক শুনলে চোখ কপালে উঠবে—তৎকালীন বহু সরকারি অফিসারের বেতনের থেকেও বেশি!
হার্ভার্ড, পিএইচডি, আর টাইমস স্কোয়ার!
রীতুপর্ণা এরপর পিএইচডি করেন ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ ভেরোনা থেকে। কাজ করেন স্টেম সেল নিয়ে। সঙ্গে যুক্ত হন ইউনিভার্সিটি অফ পিসা-তে। এরপর আসে সেই স্বপ্নের ডাক—হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল। সরাসরি কাজ করেন এক নোবেলজয়ীর অধীনে, যিনি ইমিউনোলজি বিভাগের ডিরেক্টর; আর সেই সময়েই ঘটে যায় এক ম্যাজিক— টাইমস স্কোয়ারে জায়গা পায় রীতুপর্ণার অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল! যেখানে জায়গা পাওয়াটা আজও বহু তারকার স্বপ্ন!
পৃথিবীটা যেন হাতে তুলে নিলেন…

রীতুপর্ণা ১৮টি ইউরোপিয়ান দেশ আর আমেরিকার একাধিক শহর ঘুরেছেন শুধুমাত্র পড়াশোনা আর গবেষণার কাজে। কেমব্রিজ, লস অ্যাঞ্জেলেস, হাওয়াই, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন— সবই যেন তাঁর মেধা ও পরিশ্রমের ফল।
এখন কোথায় রীতুপর্ণা?
২০২৩-এ প্রথম পোস্টডক করেন University of California-তে, জিন থেরাপি ও নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার নিয়ে কাজ। এবার যাচ্ছেন স্পেনে, বিশ্বের অন্যতম সেরা স্কলারশিপ—Marie Curie Fellowship নিয়ে, ক্যানসার গবেষণার জন্য।
বিয়ে করেছেন অর্ঘ্যকে, যিনি প্রথম প্রেম। শ্বশুরবাড়ি দিচ্ছে অকুণ্ঠ সমর্থন। রীতুপর্ণা যেন বলছেন— “আমি সমাজের ছুঁড়ে দেওয়া অপমানকে রূপান্তর করেছি সাফল্যে। আজ আমি প্রমাণ করেছি, স্বপ্ন সত্যি হয়!”