যোগ শব্দের অর্থই হলো মিলন—শরীর, মন এবং আত্মার মিলন। হাজার বছরের প্রাচীন ভারতীয় সাধনা থেকে জন্ম নেওয়া যোগ শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনপদ্ধতি। যোগাসন (Yogasana) হলো যোগের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যেখানে শরীরের বিভিন্ন ভঙ্গি বা pose-এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধন করা হয়।
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে, যেখানে মানসিক চাপ, অনিদ্রা, স্থূলতা এবং নানা রোগ আমাদের ঘিরে ধরছে, যোগাসন হতে পারে এক অসাধারণ সমাধান।
যোগাসন কী?, What is meant by Yogasana?
যোগাসন মানে শুধু শরীরের ভঙ্গি নয়। সংস্কৃত শব্দ আসন মানে “বসে থাকা ভঙ্গি”। যোগ দর্শনে আসনের মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে দীর্ঘ সময় ধরে ধ্যান করা যায়। ধীরে ধীরে এই আসনগুলো শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকারে রূপান্তরিত হয়েছে।
যোগশাস্ত্র কী? What is Yoga Shastra?
যোগশাস্ত্র হলো ভারতীয় দর্শন ও সাধনার এক অমূল্য ধারা। যোগশাস্ত্রের ইতিহাস কমপক্ষে ৫,০০০ বছরের পুরোনো।
এর উদ্দেশ্য কেবল শরীর সুস্থ রাখা নয়, বরং মনকে স্থির করা এবং আত্ম-উপলব্ধির পথে অগ্রসর হওয়া। যোগ মানে “সংযোগ” — অর্থাৎ ব্যক্তিগত আত্মার সঙ্গে মহাজাগতিক আত্মার মিলন। তাই যোগশাস্ত্র কেবল শারীরিক অনুশীলন নয়, এটি এক সম্পূর্ণ জীবনদর্শন।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি সুপ্ত মৎস্যেন্দ্রাসন
সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
যোগশাস্ত্রের মূল ধারণা, Basic concept of Yoga Shastra
1. শারীরিক ও মানসিক সাধনা – শরীরকে শক্তিশালী ও নমনীয় করা, আর মনকে শান্ত ও একাগ্র করা।
2. আত্ম-উপলব্ধি – যোগের আসল উদ্দেশ্য হলো নিজের অন্তরের সত্যকে জানা এবং মুক্তি লাভ করা।
3. দার্শনিক ভিত্তি – যোগ হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মসহ ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি প্রধান অঙ্গ।
পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগ, Patanjali Ashtanga Yoga
মহর্ষি পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্রে যোগকে আটটি ধাপে ভাগ করেছেন, যা “অষ্টাঙ্গ যোগ” নামে পরিচিত।
1. যম (Yama): সমাজে সৎ ও নৈতিক আচরণ – যেমন অহিংসা, সত্যবাদিতা।
2. নিয়ম (Niyama): ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা – যেমন শৌচ (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা), সন্তোষ।
3. আসন (Asana): শরীরের ভঙ্গি বা যোগাসন।
4. প্রাণায়াম (Pranayama): শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের কৌশল।
5. প্রত্যাহার (Pratyahara): ইন্দ্রিয়কে বাইরের থেকে ভেতরের দিকে ফেরানো।
6. ধারণা (Dharana): মনকে একাগ্র করে রাখা।
7. ধ্যান (Dhyana): গভীর ধ্যান বা মনন।
8. সমাধি (Samadhi): চূড়ান্ত চেতনা ও মুক্তি লাভ।
গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও যোগশাস্ত্রের রূপ, Important texts and forms of Yoga
- পতঞ্জলির যোগসূত্র – সবচেয়ে বিখ্যাত যোগগ্রন্থ।
- হেমচন্দ্রের যোগশাস্ত্র – জৈন ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ।
- দত্তাত্রেয় যোগশাস্ত্র – প্রাচীন ভারতীয় যোগদর্শনের আরেকটি ভিত্তি।
- যোগকে আবার চারটি প্রধান পথে ভাগ করা হয়— কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ এবং রাজযোগ।
যোগাসন কেন করব? Why should we do yoga? Benefits of Yoga
যোগাসন শুধু শরীরচর্চা নয় — এটি মন, শরীর ও আত্মার মধ্যে এক সেতুবন্ধন। নিয়মিত যোগ করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক জীবনে আসে এক গভীর পরিবর্তন। যোগাসন করার প্রধান কারণ গুলি হল :-
শরীরকে করে সুগঠিত ও নমনীয়
যোগাসনের প্রতিটি ভঙ্গি শরীরের পেশি, হাড় ও সন্ধিগুলোকে প্রসারিত করে। এর ফলে শরীর হয় নমনীয়, শক্তিশালী ও সক্রিয়।
নিয়মিত যোগ করলে শরীরের গঠন সুন্দর থাকে এবং চেহারায় আসে উজ্জ্বলতা।
মানসিক প্রশান্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করে
যোগ ও ধ্যান একসঙ্গে করলে মন শান্ত হয়, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে যায়। নিয়মিত প্রণায়াম করলে চিন্তা-ভাবনার স্বচ্ছতা আসে এবং মনোযোগ অনেক বৃদ্ধি পায়।
ঘুমের মান উন্নত করে
যারা অনিদ্রা বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের জন্য যোগাসন এক অসাধারণ সমাধান। শবাসন বা প্রণায়াম মনকে প্রশমিত করে ঘুমের মান বাড়ায়।
রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে
যোগাসন দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর সুনির্দিষ্ট প্রভাব ফেলে। এটি রক্ত সঞ্চালন, হজম, হরমোন নিঃসরণ ও হৃদ্যন্ত্রের কাজকে নিয়মিত রাখে।
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে
যোগ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। এর ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব জন্মায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যোগাসনের মাধ্যমে শরীরের রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়, টক্সিন বেরিয়ে যায়, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
সার্বিক জীবনযাত্রায় ভারসাম্য আনে
যোগাসন শেখায় কীভাবে শরীর, মন ও আত্মাকে একসূত্রে বাঁধা যায়। এর ফলে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় — আপনাকে আরও শান্ত, স্থির ও উদার করতে সাহায্য করে।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
যোগাসনের শ্রেণীবিভাগ, Classification of Yoga poses
যোগাসন কেবল ব্যায়াম নয়, বরং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির উপায়। ভঙ্গির ভিত্তিতে এগুলোকে কিছু বিশেষ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
প্রচলিত প্রধান যোগাসন, Common main yoga poses
( দাঁড়ানো, বসা, ফরোয়ার্ড বেন্ড, ব্যাকবেন্ড, ইনভার্শন, ব্যালান্স, রিল্যাক্সেশন আসন)।
নিচে বিস্তারিতভাবে এই সম্পর্কে জানানো হলো:-
১. দাঁড়ানো আসন (Standing Poses)
এই আসনগুলো শরীরকে দৃঢ় করে এবং ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
- তাড়াসন (Tadasana): শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখে, মেরুদণ্ডকে সোজা করে।
- বৃক্ষাসন (Vrikshasana): ভারসাম্য বাড়ায়, মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্রিকোণাসন (Trikonasana): কোমর ও শরীরের পাশের অংশকে নমনীয় করে।
- বীরভদ্রাসন I ও II (Virabhadrasana I & II): পা ও কাঁধের শক্তি বৃদ্ধি করে।
- উৎকটাসন (Utkatasana): উরুর পেশি মজবুত করে।
- অর্ধচন্দ্রাসন (Ardha Chandrasana): শরীরের ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা উন্নত করে।
- পরিবৃত্ত ত্রিকোণাসন (Parivrtta Trikonasana): হজমশক্তি বাড়ায়, মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখে।
২. বসা আসন (Seated Poses)
এই আসনগুলো ধ্যান ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত।
- সুখাসন (Sukhasana): ধ্যানের আসন, মন শান্ত রাখে।
- পদ্মাসন (Padmasana): গভীর ধ্যান ও প্রাণায়ামের জন্য সেরা।
- বজ্রাসন (Vajrasana): খাবারের পর করার জন্য আদর্শ, হজমে সাহায্য করে।
- অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন (Ardha Matsyendrasana): মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়ায়।
- দণ্ডাসন (Dandasana): ভঙ্গি ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযোগী।
- বদ্ধকোণাসন (Baddha Konasana): শ্রোণি অঞ্চলের জন্য কার্যকর।
- গোমুখাসন (Gomukhasana): কাঁধ ও বক্ষ প্রসারিত করে।
৩. ফরোয়ার্ড বেন্ড (Forward Bends)
এগুলো শরীরকে শিথিল করে ও স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে।
- পশ্চিমোত্তানাসন (Paschimottanasana): পুরো শরীর প্রসারিত করে।
- জানুশীর্ষাসন (Janu Sirsasana): হজমশক্তি বাড়ায়।
- উত্তানাসন (Uttanasana): রক্তসঞ্চালন উন্নত করে।
- প্রসারিত পদোত্তানাসন (Prasarita Padottanasana): মস্তিষ্ক শান্ত রাখে।
৪. ব্যাকবেন্ড (Backbends)
এগুলো মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী ও নমনীয় করে।
- ভুজঙ্গাসন (Bhujangasana): কোমর ও বুক খোলে।
- উষ্ট্রাসন (Ustrasana): ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়।
- ধনুরাসন (Dhanurasana): পেটের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সক্রিয় করে।
- চক্রাসন (Chakrasana): পুরো শরীরকে শক্তিশালী করে।
- সেতুবন্ধাসন (Setu Bandhasana): পিঠ ও বুক প্রসারিত করে।
- শলভাসন (Salabhasana): কোমর ও পিঠের জন্য উপকারী।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি সুপ্ত বদ্ধ কোনাসন কী?
সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
৫. ইনভার্শন আসন (Inversions)
এই আসনগুলো শরীরকে উল্টোদিকে নিয়ে যায়, রক্তসঞ্চালন ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
- সর্বাঙ্গাসন (Sarvangasana): থাইরয়েড ও হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
- শির্ষাসন (Sirsasana): মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- অধোমুখ বৃক্ষাসন (Handstand): ভারসাম্য উন্নত করে।
- বিপরীত করণী (Viparita Karani): বিশ্রাম ও রিল্যাক্সেশনের জন্য কার্যকর।
- পিঞ্চ ময়ূরাসন (Pincha Mayurasana): কাঁধ ও বাহু শক্তিশালী করে।
৬. ব্যালান্সিং আসন (Balancing Poses)
শরীরের ভারসাম্য, মনোযোগ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
- নটরাজাসন (Natarajasana): ভারসাম্য ও নমনীয়তা বাড়ায়।
- বাকাসন (Bakasana): বাহু ও কব্জি শক্তিশালী করে।
- গরুড়াসন (Garudasana): সমন্বয় শক্তি উন্নত করে।
- কাকাসন (Kakasana): মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
৭. রিল্যাক্সেশন আসন (Restorative Poses)
শরীর ও মনকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়।
- বালাসন (Balasana): মানসিক চাপ দূর করে।
- শবাসন (Savasana): পূর্ণ বিশ্রাম দেয়।
- সুপ্ত বদ্ধকোণাসন (Supta Baddha Konasana): শ্রোণি অঞ্চলের জন্য উপকারী।
- সুপ্ত মৎস্যেন্দ্রাসন (Supta Matsyendrasana): মেরুদণ্ডকে শিথিল করে।
উপরে উল্লেখিত প্রধান আসনের বাইরে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসন রয়েছে। সেগুলি হল :-
১. প্রাণায়াম সম্পর্কিত আসন
প্রাণায়াম করার সময় সঠিক আসন জরুরি। যেমন—
সিদ্ধাসন (Siddhasana): ধ্যানের জন্য খুব শক্তিশালী আসন।
স্বস্তিকাসন (Swastikasana): দীর্ঘক্ষণ বসার জন্য আরামদায়ক।
২. কোর মজবুত করার আসন
নৌকাসন (Navasana): পেট ও কোমরের জন্য অসাধারণ।
অর্ধনৌকাসন (Ardha Navasana): হজমশক্তি বাড়ায়।
৩. হাত ও কব্জির শক্তির আসন
অস্তাভক্রাসন (Astavakrasana): উন্নত স্তরের ব্যালান্স আসন।
ময়ূরাসন (Mayurasana): যকৃত ও হজমতন্ত্রের জন্য উপকারী।
৪. রেস্টোরেটিভ ও থেরাপিউটিক আসন
মৎস্যাসন (Matsyasana): থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য ভালো।
শীতলী আসন (Sheetali Asana): গরম কমায়, শরীর ঠান্ডা রাখে।
৫. অন্যান্য আসন
কপালভাতি আসন (Kapalabhati posture): শ্বাসযন্ত্র পরিষ্কার রাখে।
মণ্ডুকাসন (Mandukasana): ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
উত্তানপাদাসন (Uttanapadasana): পেট ও পিঠের জন্য কার্যকর।
শুরু করার জন্য কোন কোন সহজ যোগাসনগুলো সবচেয়ে উপযুক্ত? Simple yoga poses are best for beginners?
যোগের জগতে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সময় সঠিক আসন বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুনদের জন্য এমন কিছু আসন বেছে নিতে হয় যা সহজ, আঘাতের ঝুঁকি কম, এবং শরীরকে ধীরে ধীরে নমনীয় ও শক্তিশালী করে তোলে। নিচে কিছু শুরু করার জন্য আদর্শ যোগাসনের নাম এবং উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
তাড়াসন (Tadasana / Mountain Pose)
এই আসনটি সমস্ত যোগাসনের ভিত্তি। দাঁড়িয়ে করা হয়, এবং এটি দেহভঙ্গি ও ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
উপকারিতা: মেরুদণ্ড সোজা করে, দেহভঙ্গি উন্নত করে, মানসিক একাগ্রতা বাড়ায়।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি কাকাসন
সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
বৃক্ষাসন (Vrikshasana / Tree Pose)
এক পায়ে দাঁড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এটি মনোযোগ ও স্থিরতা গঠনে সাহায্য করে।
উপকারিতা: পা ও কোমর মজবুত করে, একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়ায়।
উত্তকটাসন (Utkatasana / Chair Pose)
মনে হবে যেন অদৃশ্য একটি চেয়ারে বসে আছেন। এটি উরু ও হাঁটুর পেশি শক্তিশালী করে।
উপকারিতা: পা ও কোমরের পেশি শক্তিশালী করে, সহনশক্তি বাড়ায়।
শিশুসন (Balasana / Child’s Pose)
এই আসনটি বিশ্রামের জন্য খুব ভালো। এটি শরীর ও মন দুইকেই শান্ত করে।
উপকারিতা: পিঠের ব্যথা কমায়, মানসিক প্রশান্তি আনে।
ভূজঙ্গাসন (Bhujangasana / Cobra Pose)
এই আসনে বুক মাটির ওপর থেকে তুলে নেওয়া হয়। এটি পিঠের পেশি শক্তিশালী করে।
উপকারিতা: মেরুদণ্ড নমনীয় করে, হজমে সাহায্য করে, ক্লান্তি দূর করে।
পশ্চিমোত্তানাসন (Paschimottanasana / Seated Forward Bend)
বসে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকে করা হয়। এটি দেহের পশ্চাৎ দিকের টান কমায়।
উপকারিতা: হজমের উন্নতি, মানসিক প্রশান্তি, ওজন কমাতে সাহায্য।
সেতুবন্ধাসন (Setu Bandhasana / Bridge Pose)
পিঠের ওপর শুয়ে কোমর তুলে এই আসনটি করা হয়। এটি মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখে।
উপকারিতা: থাই ও গ্লুট পেশি শক্তিশালী করে, স্নায়ু শান্ত করে, স্ট্রেস কমায়।
শবাসন (Savasana / Corpse Pose)
সবচেয়ে সহজ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সম্পূর্ণ বিশ্রামের মাধ্যমে মন ও শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে।
উপকারিতা: মানসিক শান্তি, উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করে, ধ্যানের প্রস্তুতি দেয়।
নতুনদের জন্য কিছু টিপস: Yoga tips for the beginners
- শুরুতে প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট অনুশীলন করুন
- খালি পেটে যোগ করাই ভালো, বিশেষ করে সকালে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ রাখুন — যোগ মানেই শ্বাসের সঙ্গে শরীরের সঙ্গতি।
- অতিরিক্ত চাপ না নেওয়া ভাল; ধীরে ধীরে দেহকে মানিয়ে নিতে দিতে হবে।
যোগে চক্র, Chakra in Yoga
হিন্দু দর্শনে যোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চক্র। চক্রকে মানুষের শরীরের ভেতরে শক্তিকেন্দ্র বলে মনে করা হয়। এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো দৃশ্যমান নয়, বরং অদৃশ্য শক্তির কেন্দ্র। এখানে প্রবাহিত হয় প্রাণশক্তি (Prana)।
“চক্র” শব্দটির আদি উৎস সংস্কৃত “চক্র”, যার অর্থ হলো “চাকা” বা “রহস্যময় বৃত্ত”। ধারণা করা হয়, এগুলো এক ধরনের ঘূর্ণির মতো, যা মহাবিশ্ব থেকে শক্তি টেনে নিয়ে মানুষে প্রবাহিত করে।
যখন কোনো চক্রে শক্তির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন শরীর, মন বা আবেগে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। যোগাভ্যাস ও ধ্যানের মাধ্যমে চক্রগুলিকে সক্রিয় ও সুষম রাখা সম্ভব।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি বিপরীত করণী আসন
সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
সাতটি প্রধান চক্র, Seven main Chakras
1. সহস্রার (Sahasrara):
মাথার মুকুটে অবস্থিত। আধ্যাত্মিক সংযোগ ও সর্বোচ্চ চেতনার প্রতীক।
2. আজ্ঞা (Ajna):
দুই ভ্রুর মাঝখানে, যা “তৃতীয় নয়ন” নামে পরিচিত। অন্তর্দৃষ্টি ও জ্ঞানবোধের সঙ্গে যুক্ত।
3. বিশুদ্ধ (Vishuddha):
গলায় অবস্থিত। এটি যোগাযোগ ও প্রকাশের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
4. অনাহত (Anahata):
হৃদয়ের মাঝখানে অবস্থিত। ভালোবাসা, সম্পর্ক ও সহমর্মিতার কেন্দ্র।
5. মণিপুর (Manipura):
নাভির উপরের অংশে, পাকস্থলীর কাছে। আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
6. স্বাধিষ্ঠান (Svadhishthana):
নাভির নিচে অবস্থিত। আনন্দ, সৃজনশীলতা, প্রাণশক্তি ও প্রজননের সঙ্গে যুক্ত।
7. মূলাধার (Muladhara):
মেরুদণ্ডের গোড়ায় অবস্থিত। এটি মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং স্থিতিশীলতা দেয়।
যোগাসন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য, Unknown facts about Yogasana
- 1. যোগের উৎপত্তি হাজার হাজার বছর আগে – ঋগ্বেদে প্রথম “যোগ” শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
- 2. আসনের সংখ্যা হাজারে হাজারে – হঠযোগ প্রদীপিকা অনুযায়ী আসনের সংখ্যা ৮৪ লক্ষ। তবে বর্তমানে প্রায় ২০০–৩০০ আসন নিয়মিত অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়।
- 3. প্রথমদিকে আসন মানে শুধু বসা ভঙ্গি – মূলত ধ্যানের জন্য আরামদায়ক বসা আসনকেই আসন বলা হতো। পরে তা নানা ভঙ্গিতে প্রসারিত হয়েছে।
- 4. মেডিকেল সায়েন্স যোগকে মানছে – আমেরিকা, ইউরোপসহ সারা বিশ্বে যোগ থেরাপি এখন চিকিৎসার পরিপূরক। অনেক চিকিৎসক ও গবেষক আজ যোগকে বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
- 5. ইন্টারন্যাশনাল যোগা ডে – প্রতি বছর ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করা হয়।
- 6. প্রতিটি আসনের আলাদা এনার্জি পয়েন্টে প্রভাব আছে – শরীরের নাড়ি ও চক্র (energy center) গুলো সক্রিয় হয় বিভিন্ন আসনে।
- 7. যোগাসন শুধু শারীরিক নয় – সঠিক প্রণায়াম ও ধ্যানের সঙ্গে যোগ করলে মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ে এবং ঘুম ভালো হয়।
যোগাসন: এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি পিঞ্চা ময়ূরাসন
সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
উপসংহার, To conclude
যোগাসন কেবল শরীরের জন্য ব্যায়াম নয়, এটি জীবনযাপনের একটি অনন্য উপায়। নিয়মিত অনুশীলন করলে শরীর হবে নমনীয় ও শক্তিশালী, মন হবে প্রশান্ত, আর আত্মা পাবে গভীর শান্তি।
প্রতিদিন কয়েকটি সহজ আসন দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে অগ্রসর হন কঠিন আসনগুলোর দিকে। মনে রাখবেন, যোগ মানে প্রতিযোগিতা নয়, বরং নিজেকে চেনা এবং নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা।

