আলুকে সবজি হিসেবেই জানেন সবাই। বিভিন্ন সবজির সাথে আলুর জুড়ি খুব জমে খাবারের ক্ষেত্রে। বলতে গেলে প্রায় সব রান্নায় আলুর ব্যবহার হয়ে থেকে। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে জুড়ি নেই আলুর। কিন্তু, ত্বকের যত্নে আলু কতটা ভূমিকা পালন করে তা হয়তো জানেন না অনেকেই। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে, আলু দিয়ে রূপচর্চাও করা যায়।
রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার, The use of potatoes in cosmetics
শুধু খাওয়া নয়, বরং রূপচর্চাতেও আলুর কদর খুব। আলুর মধ্যে আছে পটাশিয়াম যা ত্বকের বয়স কমিয়ে দেয়। এছাড়াও আলুতে উপস্থিত বিভিন্ন ফাইবার, খনিজ, ভিটামিন ত্বকের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে, ফলে ত্বক সুস্থ থাকে। সেই সঙ্গে আজীবন ত্বককে রাখে কোমল। তাছাড়াও ডার্ক সার্কেল থেকে শুরু করে মুখের কালো ছোপ এক নিমেষে উধাও হয় আলুর গুণেই। এরজন্য কীভাবে ব্যবহার করবেন তা জানা জরুরী। তাহলে রূপচর্চায় আলুর ব্যবহারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
১) উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য লুকিয়ে আলুর রসের মধ্যে :
উজ্জ্বল ত্বক পেতে আলু দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এরজন্য একটি ছোট বাটিতে ৩ চা চামচ আলুর রস নিয়ে নিন ও তাতে ২ চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই আলুর রসের ফেস প্যাকটি গোটা মুখে, গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ হালকা হাতে মাসাজ করুন। তারপর ১০-১৫ মিনিট রেখে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে এই ফেস প্যাক প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
২) চোখের পরিচর্যায় আলুর ব্যবহার :
চোখ ঠাণ্ডা রাখতে অনেকেই শশার ব্যবহার করেন, একইভাবে আলু দিয়েও চোখের ক্লান্তি দূর করা যায়। এর জন্য প্রথমে একটি আলু পাতলা করে চাকা করে কেটে নিতে হবে, এরপর এই টুকরোগুলো চোখের উপর চাপা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো রেখে শুয়ে পড়ুন বা বিশ্রাম নিন। এভাবে করলে ডার্ক সার্কেল থেকে শুরু করে চোখের ফোলাভাবও কম হয়ে যায় এবং চোখ ঝকঝকে হয়ে উঠে।
৩) ব্রণের দাগ দূর করতে আলুর ব্যবহার :
মুখের বিভিন্ন দাগছোপ দূর করার ক্ষেত্রে আলুর রস খুব কার্যকরী। সেইভাবেই ব্রণের দাগ ফিকে করার জন্যও আলুর ব্যবহার করতে পারেন। এরজন্য একটি আলু কুরিয়ে নিয়ে এর রস বের করে নিন। এবার এই রস সারা মুখে ভালোভাবে মাখিয়ে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করলেই দেখবেন মুখ থেকে ব্রণের সমস্ত দাগ দূর হয়ে যাবে।
৪) আলুর ব্যবহার ত্বকের রং উজ্জ্বলে করে তোলে :
আলুর রসে এমন কিছু উপকারী গুণাগুণ রয়েছে যা ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আলু খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে কুরিয়ে তিন টেবিলচামচ রসের সঙ্গে দু’টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি মুখে ও গলায় মেখে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। মুখটা শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং আয়নায় গিয়ে দেখুন আপনার ত্বক আগের তুলনায় কতটা উজ্জ্বল লাগছে। ত্বকে এভাবে আলু ব্যবহার করলে ত্বকের কালচেভাব দ্রুত দূর হয় এবং মিশ্রণে থাকা মধু ত্বকের আর্দ্রতা ভাব রক্ষা করে।
৫) রোদে পোড়া ত্বকের পরিচর্যায় আলুর ব্যবহার :
গরম হোক কিংবা শীত, রোদে বাইরে বের হলে ত্বক পুড়ে যায়। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই ট্যান সরাতে সহায়তা করে আলু। এরজন্য আলুকে পাতলা চাকা করে কেটে নিন। তারপর সেই টুকরোগুলোকে পোড়া অংশে লাগিয়ে রাখুন। এছাড়াও আলুর রস নিয়ে তার মধ্যে শশার রস মিশিয়ে পোড়া অংশে লাগিয়ে নিতে পারেন। ২০ মিনিট এভাবে রাখার পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের জ্বালাপোড়াভাবও কম হবে এবং ত্বক শীতল হবে, পাশাপাশি পোড়াদাগও মিলিয়ে যাবে।
৬) আলুর রস বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না :
অনেকেরই বয়সের আগেই বলিরেখা দেখা দেয়। তখন বাজার থেকে বিভিন্ন ক্রিম ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে বার্ধক্যের ছাপ কম করার চেষ্টা করেন অনেকে। তবে একটা কথা অবশ্যই জেনে রাখা ভালো যে মুখে বয়সের দাগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ সাহায্য করে আলু। ৩০-এর গণ্ডি পেরোলেই মুখে বলিরেখা দেখা দেয় অনেকের।
এই সমস্যা দূর করতে পারে আলুর রস, কারণ আলুর রসের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। এরজন্য আলুর খোসা ছাড়িয়ে থেঁতো করে নিন, একটু পেস্টের মত তৈরি করে সেটা ২০ মিনিট ধরে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত আলুর এই পেস্ট ব্যবহার করলে বয়সের ছাপ আর মুখে পড়বে না। ত্বক থাকবে টানটান।
৭) শুষ্ক ত্বকে আলুর ব্যবহার :
অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়, ফলে তাদের ত্বক দেখতে বেশ রুক্ষ মনে হয়। সেক্ষেত্রে আলুর ব্যবহার করে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারেন। এরজন্য একটি আলু খোসা ছাড়িয়ে তাকে ভালোভাবে ছেঁচে নিয়ে রস আলাদা করে নিন। তারপর একটি টিস্যু বা পেপার টাওয়েল ভিজিয়ে নিয়ে ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
এটি একটি উপকারী ফেস মাস্ক এর কাজ দেবে। চাইলে আলুর রসের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অলিভ ওয়েল এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন, আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে। এবার এই মিশ্রণটিকে ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন।
তারপর জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতিতে ত্বকের ময়েশ্চারের অভাব দূর হবে, অথবা আলুর রসের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিলে ত্বকে তেলতেলে ভাব বজায় থাকবে। তাছাড়াও রুক্ষ ও শুষ্ক চুলেও আলু ছেঁচে নিয়ে তার রস লাগালে তা চুলের ময়েশ্চার বজায় রাখার কাজ করে।
৮) ব্ল্যাক হেডস এবং হোয়াইট হেডস দূর হবে আলুর ব্যবহারে :
ব্ল্যাক হেডস এবং হোয়াইট হেডস নারীদের ত্বকের একটি অন্যতম সমস্যা, তবে শুধু নারী নয় পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা উধাও করে দিতে পারে এক টুকরা আলু। এরজন্য লাগবে ১টি আলু এবং ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও জল। একটি আলু ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে এর চামড়া ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন।
এবার আলুর টুকরোগুলো এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে একটি ব্লেন্ডার দিয়ে তা ব্লেন্ড করে নিন। আলু এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের ঘন পেস্টটি পাতলা করার জন্য কিছু পরিমাণ জল মিশিয়ে নিয়ে আবার ব্লেন্ড করুন। এই মিশ্রণটিকে ব্যবহার করার জন্য একটি আইস ট্রেতে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন ৩-৪ ঘণ্টার জন্য।
এরপর প্রথমে আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এবার আইস ট্রে থেকে আলুর রসের বরফের টুকরো নিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করতে থাকুন, সম্পূর্ণ মুখে লাগাতে হবে; বিশেষ করে ব্ল্যাক হেডস এবং হোয়াইট হেডসের স্থানগুলো ম্যাসাজ করুন। এভাবে দিনে দুই বা তিনবার ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস ১০-১২ দিনের মধ্যে দূর করে দেবে।
শেষ কথা, Conclusion
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, চোখের ডার্ক সার্কেল পরিচর্যা, ব্রণের দাগ দূর করা তথা ত্বকের রং উজ্জ্বল করা সহ রোদে পোড়া ত্বকের পরিচর্যা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আলুর ব্যবহার খুব উপকারী। উপরিউক্ত উপায়গুলো অবলম্বনে আলু দিয়ে ত্বকের পরিচর্যা করে, হয়ে উঠুন আকর্ষণীয়!