বেসন মুখে মাখার উপকারিতা, Benefits of applying besan on the face in Bengali

বেসন মুখে মাখার উপকারিতা

ত্বকের যত্ন নিতে অনেকেই বেসনের ব্যবহার করে থাকেন। বেসন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করে তা রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করা যায়। বেসন মুখের দাগছোপ কম করতে সহায়তা করে, যার ফলস্বরূপ মুখ থেকে উপচে পড়বে এক অন্যরকম জেল্লা! তবে অনেকেই বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করার পদ্ধতি জানেন না, আবার অনেকে ঠিক নিয়মে এর  ব্যবহার করতে পারেন না, ফলে তাদের ত্বকে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না।

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ত্বকের যত্নে বেসন ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ঘরোয়া রূপটানে বেসনের ব্যবহার, Uses of besan in domestic cooking

ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই ঘরোয়া টোটকায় ভরসা করেন, কারণ বাজারের পণ্য ব্যবহার করে অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু ঘরোয়া টোটকার ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটা হয় না, বরং ফলাফল ভালই পাওয়া যায়। ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরে পেতে আমরা বেসন দিয়ে তৈরি নানা ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারি, এছাড়া ঘরোয়া রূপটান আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ভালো। 

ঘরোয়া রূপটানে বেসনের ব্যবহার

তাছাড়া রূপচর্চায় বেসন এর ব্যবহার পদ্ধতি অনেক পুরনো। বহু বছর ধরে আমাদের মতোই আমাদের দিদা-মায়েরাও বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করে আসছেন। এর মূল কারণ হল এই উপাদানটি আমাদের ত্বকে ক্লিনজার তথা এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। তবে মুখে বেসন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে বেসন দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। 

বেসন মুখে মাখলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়, Benefits of applying besan on the face

বেসন ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কারণ বেসনে নানারকম উপকারী ভিটামিন রয়েছে, যেমন : ভিটামিন বি২ এবং বি১২ ইত্যাদি। এই দুই ধরনের ভিটামিন ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এছাড়া অন্য উপকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বেসন ত্বকের জেল্লা ধরে রাখে। ত্বককে টানটান থাকতে সহায়তা করে। তাছাড়া বেসনের ব্যবহারে সহজে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না। প্রাচীন সময় থেকে ঘরোয়া রূপটানে বেসন ব্যবহার করে ত্বকের নানা সমস্যাই সমাধান করা হত। গবেষণাতেও দেখা গেছে যে ত্বকের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে বেসন।

বেসন মুখে মাখলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়

ত্বকের ট্যান উঠিয়ে বেসন আপনার প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া এর ব্যবহার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণকেও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মুখে ব্রণর সমস্যা কম করতেও সাহায্য পারে। 

বেসন দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহারের ফেসপ্যাক তৈরি করার পদ্ধতি, How to make a daily use face pack with besan/ gram flour

দৈনন্দিন ব্যবহার করার জন্য বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে গিয়ে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো বেসন নিন, তার সাথে বেসনের পরিমাণ অনুযায়ী গোলাপ জল এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটিকে আপনি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এর ব্যবহারের আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন, তারপর আঙ্গুল বা ব্রাশের সাহায্যে পেস্টটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ৫-৭ মিনিট অপেক্ষা করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

এই ফেসপ্যাকটিকে আপনি নিত্যদিকের ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতিদিন এর ব্যবহার না করাই ভালো। তবে সপ্তাহে ৩ দিন এর ব্যবহার করতে পারেন। তবে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এবং ত্বকের কোনও সমস্যা সংক্রান্ত চিকিৎসা চলছে এমন অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও প্যাক ব্যবহার করবেন না। 

উল্লেখিত পদ্ধতি ছাড়াও আরো বেশ কিছু প্রক্রিয়ায় বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। তবে কখনোই ত্বকের জন্য ভালো এমন সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি করে এর ব্যবহার করবেন না। কিছু নির্দিষ্ট এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে যা একসাথে মিশিয়ে তবেই তা মুখে লাগাতে পারেন।

বেসন দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহারের ফেসপ্যাক

বেসনের ফেসপ্যাক তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ হল দুধের সর, হলুদ ও বেসন। এরজন্য একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ বেসন নিন, এরপর এতে ১ টেবিল চামচ দুধের সর এবং ১ টেবিল চামচ হলুদ নিয়ে সবকিছু একসাথে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। চাইলে এতে সামান্য পরিমাণে জল যোগ করে সব উপকরণ দিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারেন।

এরপর এটি আপনার মুখে, গলায় এং ঘাড়েও লাগাতে পারেন। ৮-১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সপ্তাহে ১-২ দিন এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ভালো ফল পাবেন। এসব ছাড়াও বেসনের দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিগুলো হল :

বেসন, গোলাপজল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক দিন পর পর এর ব্যবহারে পোড়া দাগ কম হয়ে আসবে।

মুখে যেকোনো ক্ষতের দাগ (যেমন ব্রণ,বসন্ত) থাকলে তা দূর করতে বেসন ও কচি ডাবের জল একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে সেই দাগের ওপর লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের ব্যবহারেই দাগ কম হয়ে আসবে।

পরিমাণমতো বেসনের সাথে অল্প দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন, এতে ত্বকের মৃত কোষের স্তর সরে যাবে ফলে ত্বক প্রাণবন্ত ও সজীব হয়ে উঠবে, পাশাপাশি বয়সের ছাপ কম পড়ে।

১ চা-চামচ বেসন নিয়ে তার সঙ্গে সমপরিমাণ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট ধরে আলতো হাতে মুখে ঘষতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে মুখে ঘষার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক দিন এই পদ্ধতির ব্যবহারে ধীরে ধীরে আপনার বলিরেখা কম হয়ে আসবে। তাছাড়া ত্বকের শুষ্কতাও কমে যাবে।

বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করার সময় যে সব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, Things to keep in mind while using besan face pack

  • পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে বেসন আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তৈলাক্ত ত্বকে নির্দ্বিধায় এই উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। তবে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে বেসনের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়েও ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আরও ভালোভাবে উপকার পাবেন।
  • মুখে বেসনের ফেসপ্যাক লাগানোর পর অন্য কোনও কাজ করবেন না, চুপচাপ কোথাও বসে থাকুন।
  • সপ্তাহে ১ দিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এই ফেসপ্যাক। 
  • বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
  • ফেসপ্যাক ব্যবহার করে মুখ ধোয়ার পর টোনার এবং ময়শ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
  • অনেকের মতে, ফেসপ্যাক যত বেশি সময় মুখে লাগিয়ে রাখা যায়, তত বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের এই ধারণা একদমই ভুল। তাই এমন কাজ কখনো করবেন না। বেসনের ফেসপ্যাক মুখে লাগানোর পর দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। খুব বেশি হলে ৮-১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
  • বেসন দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক সরাসরি কখনো মুখে লাগাবেন না, কারণ এটি সবার ত্বকে মানানসই নাও হতে পারে। তাই প্রথমে একবার প্যাচ টেস্ট করে নেবেন। যদি কোনোও রকমের জ্বালা অনুভব হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন।
বেসনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে

উপসংহার, Conclusion 

ত্বকের যত্নে বেসনের জুড়ি মেলা ভার। আর এটা আজকের সময়ে কোনো নতুন বিষয় নয়। বহুকাল ধরেই বেসনের ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়া হচ্ছে। ত্বককে টানটান ও সুস্থ রাখতে এটি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। তবে সকলের ত্বকের সাথে এটি মানানসই নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর ব্যবহার করা ভালো, অথবা কেউ চাইলে ঘরেই প্যাচ পরীক্ষা করে বুঝে নিতে পারেন যে এটি ত্বকে কোনো জ্বালা বা চুলকানি সৃষ্টি করছে কি না।

 

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts