এমন অনেক ফল এবং শাকসবজি আছে যা শুধু শরীর নয়, বরং ত্বকের জন্যও উপকারী। শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, তবে এমনও বহু মানুষ আছেন যারা রূপচর্চায় বিভিন্নভাবে শশার ব্যবহার করে থাকেন, কারণ এর ব্যবহারে ত্বক থাকে সুস্থ আর ফুরফুরে। রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে কিভাবে শশার ব্যবহার করা যায় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। আজকের প্রতিবেদনে রইল বিভিন্ন উপায়ে শসা ব্যবহারের উপায়।
ত্বকের যত্নে শশার ভূমিকা, Role of cucumber for skin care
ত্বকের যত্নে শশা বিশেষ ভূমিকা রাখে। খুঁজলে দেখা যায় যে আদিকাল থেকেই রূপচর্চায় শসা ব্যবহার করে আসা হচ্ছে। প্রতিদিন শসা খাদ্য তালিকায় থাকলে তা আমাদের ত্বক ও চুলকে করে তুলবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। ত্বকের সুস্থতায় শশার ভূমিকা জেনে নিন :
চোখে নিচে থাকা ডার্ক সার্কেল দূর করবে :
অনেকেই চোখের নিচে থাকা কালো ছোপ বা ডার্ক সার্কেলের সমস্যায় ভোগেন। অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত চিন্তা, পরিমিত ঘুম না হওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে ডার্ক সার্কেল পড়ে চোখের নিচে। যাদের উক্ত সমস্যাটি রয়েছে, তারা নিয়মিত শশা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন, কারণ শসায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
অন্যদিকে শসায় ত্বক উজ্জ্বল করার মত বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। শসাকে গোলাকৃতি করে কেটে নিয়ে চোখের ওপর রেখে দিন, রোজ এই পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখতে পারেন, অথবা কেউ চাইলে শসার রস বের করে তা তুলার মধ্যে লাগিয়ে নিয়ে চোখের নিচে রেখে দিতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে তুলে নিন।
রোদে পোড়া দাগ কম করে শশার ফেসপ্যাক :
রোদে ঘোরাফেরা করার ফলে অনেক সময় আমাদের ত্বক রোদে পুড়ে যায়, যার কারণে ত্বকের রঙই বদলে যায়। এর সমাধান করার ক্ষেত্রে শশা বেশ উপযোগী। এরজন্য ২ টেবিল চামচ শসার রস নিয়ে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ যোগ করুন, সাথে ১ টেবিল চামচ দই ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন।
এবার এই পেস্টটিকে রোদে পোড়া ত্বকের উপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও শশা দিয়ে আরেক ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এরজন্য ২ চা-চামচ টকদই, ২ টেবিল চামচ ওটস গুঁড়া, ২ চা চামচ মুলতানি মাটি ও ২ চা চামচ শসার রস নিয়ে সবকিছু একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়েও পূর্বের মিশ্রণের মত একই পদ্ধতিতে ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
শশা দিয়ে তৈরি উক্ত মিশ্রণটি ফ্রিজে ৩-৪ দিন রেখেও ব্যবহার করতে পারেন। কখনো বাইরে থেকে বা রোদ থেকে ফিরে এসে পুরো মুখে এই মাস্ক লাগিয়ে নিয়ে, ১৫-২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ট্যান অবশ্যই দূর হবেই, পাশাপাশি ত্বক কোমল ও মসৃণও হয়ে উঠবে।
মসৃণ ত্বক পেতে শশার স্ক্রাব :
কোমল এবং মসৃণ ত্বক কে না চায়, এরজন্য কত পণ্য ব্যবহার করা হয়, কিন্তু রাসায়নিক যুক্ত পণ্য ব্যবহার না করে বরং প্রাকৃতিক উপায়ে শশা ব্যবহার করেই তৈরি করতে পারবেন স্ক্রাব। এরজন্য ৩-৪ কাপ শসার কুচি নিয়ে তাতে কয়েকটা তুলসী পাতা, আধ কাপ নারকেল তেল ও এক কাপ সাদা চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। চাইলে উক্ত মিশ্রণটিকে শুধু মুখেই নয়, বরং গোটা শরীরেও ব্যবহার করতে পারেন।
শুস্ক ত্বকের যত্নে শশার মাস্ক, Cucumber mask for dry skin care
অনেকের ত্বক শুস্ক থাকে সারা বছর ধরে। শীতের দিনে এরূপ ত্বকের রুক্ষতা আরও বেড়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ৩ টেবিল চামচ শসার রস নিয়ে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধের সর মিশিয়ে নিতে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি গলা ও মুখের ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন, ১৫-২০ মিনিট পর কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার শুষ্ক ত্বকের প্রাণ ফেরাতে সহায়তা করবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শশার তৈরি মাস্ক, Cucumber mask for oily skin
আধা কাপ শসার কুচি নিয়ে তার সঙ্গে অর্ধেকটা অ্যাভোকাডো, একটা ডিমের সাদা অংশ এবং ২ চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিয়ে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকে জেল্লা বাড়াতে শশার ব্যবহার, The use of cucumber to increase the area of the skin
ত্বকে জেল্লা বাড়াতে শসার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা টাটকা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে লাগান। দেখবেন ত্বকে আসবে দারুন জেল্লা।
বলিরেখা দূর করতে শসার ব্যবহার, Use of cucumber to remove wrinkles
বয়স যতই হোক না কেনো, ত্বকে বয়সের ছাপ কিংবা বলিরেখা কারোরই ভালো লাগে না। এই সমস্যা কম করতে ২ টেবিল চামচ শসার রস, অল্প পরিমাণে ডিমের সাদা অংশ এবং ১ চা চামচ লেবুর রস নিয়ে একসাথে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শশা দিয়ে তৈরি অ্যান্টি-রিঙ্কল মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বক টানটান হয়ে উঠবে।
রূপচর্চায় শশার ব্যবহার করার পদ্ধতি, How to use cucumber for beauty care
শশা খেলে শরীরে যেভাবে হাইড্রেশান নিয়ন্ত্রিত হয়, ঠিক তেমনি রূপচর্চার ক্ষেত্রে শশার ব্যবহার আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এক কথায় শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে শশা মহৌষধ। তবে শুধু শুষ্ক ত্বক নয়, ত্বকের আরো বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গেও লড়াই করতে সাহায্য করে শসা। টোনার থেকে শুরু করে মাস্ক, স্ক্রাব; শসা দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারবেন এসবকিছু। একইভাবে চুলের যত্নেও এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে শসা ব্যবহারের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে:
শসা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন :
মুখ পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার করেন, আবার অনেকে ত্বকের ক্ষতি হবে ভেবে এসব ব্যবহার করতে চান না, রাসায়নিক যুক্ত পণ্য ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মুখ পরিষ্কার করতে চাইলে শসাই আদর্শ। শসার রস নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে ৩-৪ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
শসা দিয়ে মুখের মাস্ক তৈরি করুন :
আপনার মুখে কি ব্রণ আছে? তাহলে আপনার এই সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করবে শশার তৈরি মাস্ক। ব্রণ প্রবণ ত্বকে যেকোনও কিছু ভেবে বুঝে ব্যবহার করতে হয়।
তবে শসার ফেস মাস্ক আপনার ব্রণ নিরাময়ে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। উক্ত মাস্কটি তৈরি করতে যে সব উপকরণ লাগবে সেগুলি হল : ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এবং ১ কাপ শসার রস। দুটি উপকরণকে মিশিয়ে নিতে হবে। ব্যস, ফেস মাস্ক তৈরি। এই ফেস মাস্কটির বিশেষত্ব হল, এটা ত্বককে শুষ্ক না করেই ব্রণের ব্রেকআউট কমায়।
টোনার হিসেবে শশার ব্যবহার :
ত্বক সুস্থ রাখার জন্য টোনার ব্যবহার করা উচিত। তবে বাজারের রাসায়নিক পণ্যগুলো ব্যবহার বা করে বরং শসা দিয়ে খুব সহজেই বাড়িতেই টোনার তৈরি করে নেওয়া সম্ভব।
এরজন্য প্রথমে শসার খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে অল্প আঁচে ৫ থেকে ৭ মিনিট গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে নামিয়ে নিন, তারপর এগুলো ঠান্ডা করে নেওয়ার পর মিক্সারে পিষে নিতে হবে। এ বার একটি ছাঁকনি নিয়ে শসার রস ছেঁকে নিতে হবে । চাইলে এই রসে সামান্য গোলাপ জল বা উইচ হ্যাজেলও যোগ করতে পারেন। ব্যস, টোনার তৈরি। এই টোনার ব্যবহারের পূর্বে মুখ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। শসা থেকে তৈরি এই ঘরোয়া টোনার ২-৩ দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
রূপচর্চায় চুলের যত্ন নেওয়াও জরুরী, Taking care of hair is also important in makeup
শুধু মুখের জন্য নয় বরং আপনার মাথার চুলের নিচে থাকা ত্বকের জন্যই শশা উপযোগী। স্ক্যাল্প সুস্থ রাখতেও শশার ব্যবহার করতে পারেন। কিভাবে জেনে নিন:
হেয়ার মাস্ক হিসেবে শশা ব্যবহার করতে পারেন :
হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে যা যা লাগবে সেগুলি হল একটি শসার অর্ধেকটা অংশ, একটা ডিম, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল; উক্ত তিনটে জিনিস একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে মাস্ক বানিয়ে নিন। মিশ্রণটিকে চুলে ও মাথার চামড়ায় ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এতে চুল পুষ্টি পাবে, চুলের রুক্ষতা দূর হয়ে যাবে এবং চুলগুলো মোলায়েম থাকবে।
শশা দিয়ে হেয়ার টনিক তৈরি করুন :
শসার রস নিয়ে তা আপনার পুরো স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রেখে দিন। এরপর আঙুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না। স্নানের আগে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করে, ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
উপসংহার, Conclusion
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা রূপচর্চায় শশার ব্যবহার কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে জেনেছি। যারা রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে অনিচ্ছুক এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বককে সুস্থ রাখতে চান তারা উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে শশার ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া চুল ও ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন এক গ্লাস শসার রস খান, এতে শরীরে টক্সিন জমা হতে পারবে না, ফলে ত্বক ও চুল ভেতর থেকে হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।