ঘন কালো চুল বুড়ো হোক কিংবা কম বয়সী কেউ, সকলেরই পছন্দ। কিন্তু বর্তমান জীবনযাপনের ব্যস্ত ধারা চুলের যত্ন নেওয়ার মতো সময় দিচ্ছে না কাউকে। তাই কম বয়সেই দেখা দিচ্ছে পাকা চুল।
অনেকের ক্ষেত্রে এটি জেনেটিক সমস্যা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দূষণ ও স্ট্রেসের প্রভাবে চুল পেকে যাচ্ছে। পাকা চুলের সমস্যা দূর করতে আমরা অনেক তেল এবং রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার করি, তবে সকল পণ্য পর্যাপ্ত ফলাফল দিতে পারে না, বরং চুলের অন্যান্য সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার করে অনেক সময় চুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে হয়। তাই আপনি যদি সাদা চুল কালো এবং ঘন করতে চান তবে কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করতে পারেন।
আজ, আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা প্রাকৃতিক কিছু তেলের ব্যবহার করে চুল কালো রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করবেন কিভাবে? How to Get Black Hair Naturally ?
কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় আজকাল সকলেই জর্জরিত। কিন্তু চুল সাদা হতে শুরু করলে, এমনকি এর আগে থেকেই কিছু কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেই এই সমস্যা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন।
চুলের সঠিক যত্ন নিতে প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি ঘরোয়া তেলের ব্যবহার করতে পারেন। জেনে নিন ঘরোয়া তেলগুলো কিভাবে তৈরি এবং ব্যবহার করবেন।
আমলকি গুঁড়ো ও নারকেল তেল :
২ চামচ আমলকি গুঁড়ো এবং ৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল নিয়ে একসাথে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। একটি পাত্রে দুই উপাদান ভালো করে মিশিয়ে তেল হালকা গরম করে নিন।
আমলকি গুঁড়ো যতক্ষণ না পর্যন্ত নারকেল তেলে মিশে যাচ্ছে, ততক্ষণ তেল গরম করুন। এবার ধীরে ধীরে সেই তেল ঠান্ডা করে নিন। তারপর এই তেল মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে মালিশ করে নিন। এরপর অন্তত ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
তবে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না, পাশাপাশি চেষ্টা করবেন কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করার। এই তেল সপ্তাহে অন্তত ২ দিন লাগাতে পারেন। আমলকির মধ্যে আছে এমন কিছু গুণ, যা চুলে অসময়ে পাক ধরা রোধ করতে পারে।
তাছাড়া এর ব্যবহারে খুশকির সমস্যা কম হয় এবং চুলের গোড়াও মজবুত করে।
নারকেল তেল ও ভৃঙ্গরাজ :
৩ টেবিল চামচ ভৃঙ্গরাজ এবং ৪ টেবিল চামচ নারকেল তেল একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ হালকা গরম করে নিন। তারপর ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন।
তেল সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর এই তেল আপনার স্ক্যাল্প এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করতে হবে।
১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ২বার এই তেল ব্যবহার করুন। বলাই বাহুল্য যে প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করতে চাইলে এই তেল ব্যবহার উপযোগী।
চুলে পাক ধরা আটকাতে এই তেলটি খুব কাজ দেয়। তাছাড়া চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদেও ভৃঙ্গরাজের গুণের কথা উল্লেখ রয়েছে। এই তেলের ব্যবহার করলে চুল সহজে ভেঙে যায় না। পাশাপাশি খুশকির সমস্যা এবং স্ক্যাল্পে চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
কারিপাতার তেল :
অনেকেই হয়তো জানেন যে, চুল কালো রাখায় কারিপাতা ও নারকেল তেলের যুগলবন্দির জুড়ি মেলা ভার। চুল কালো থাকার ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেলানিন, আর কারিপাতা মেলানিনের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
এছাড়াও কারিপাতা নতুন চুল গজাতে খুবই কার্যকরী। চুল কালো রাখার ক্ষেত্রে একটি পাত্রে ৩ চামচ নারকেল তেল নিন, তাতে ৫-৬টি কারি পাতা মিশিয়ে হালকা আঁচে নাড়াতে থাকুন। মিশ্রণ যতক্ষণ না পর্যন্ত কালচে হয়ে আসে, এটা চালু রাখুন। তারপর এই তেল ঠান্ডা হতে দিন।
ঠাণ্ডা তেল হাতের আঙুলের সাহায্যে স্ক্যাল্পে এবং চুলের গোড়ায় এই তেল মাসাজ করে নিন। তেল লাগানো হয়ে গেলে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার চুলে এই তেল ব্যবহার করুন। কিছুদিনের মধ্যেই ভালো ফল দেখতে পাবেন।
কালোজিরার তেল :
১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ টেবিল চামচ কালোজিরার তেল একটি পাত্রে নিয়ে নিন। দুই উপাদান ভালো করে মিশিয়ে আপনার মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন।
মনে রাখবেন এই তেল স্ক্যাল্পে মাসাজ করতে হবে। পাশাপাশি চুলেও মাখতে হবে। তারপর ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ বার এই ব্যবহার করুন এই তেল, চুলের রং কালো থাকবে। প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করতে অনেকেই এই তেল ব্যবহার করেন।
এছাড়াও আপনি চাইলে নারিকেল তেলে কালোজিরা ফুটিয়ে সেই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
নারকেল তেল ও জবা ফুল :
চুলের যত্ন নিতে তথা কালো রং বজায় রাখতে অনেকেই জবা ফুল ব্যবহার করে থাকেন। বাজারে পাওয়া যায় এমন কিছু তেলেও জবা ফুলের গুণ আছে বলে দাবি করা হয়, কিন্তু আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে জবা ফুলের ব্যবহার করতে পারেন তেলের সাথে।
এরজন্য আপনার প্রয়োজন ৫টি জবার পাতা এবং ফুল, সাথে নিয়ে নিন ৪ টেবিল চামচ নারকেল তেল। একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে সেটি ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত গরম করে নিন। এবার তার মধ্যে জবার পাতা ও ফুল টুকরো করে মিশিয়ে দিন। কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে দিন।
তেল সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর এই তেল আপনার মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। স্ক্যাল্পে লাগানোর পাশাপাশি চুলেও মেখে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই তেল ব্যবহার করুন। প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কালো করতে এই তেল খুব কার্যকরী। এই তেল পাক ধরা আটকাতে এটি খুব কাজে দেয়। এমনকী চুলের গোড়া মজবুত করে এবং সহজেই চুল উঠে আসে আটকায়।
নারিকেল তেল ও কেশুত পাতা :
অনেকেই হয়তো নতুন চুল গজানো এবং চুল সুস্থ ও কালো রাখার জন্য কেশুত পাতা খুবই কার্যকর। আয়রন, ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়ামে সমৃদ্ধ কেশুত চুলের ফলিকলগুলিতে পুষ্টি জোগায়।
এর ব্যবহার চুল গোড়া থেকে মজবুত হয়। এই পাতা দিয়ে তেল তৈরি করার জন্য নারকেল তেলের মধ্যে একমুঠো কেশুত পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। তারপর এটি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
ঠান্ডা হলে মাথায় ভালোভাবে তেলটি মেখে নিন। খুব ভাল হয় যদি এই তেল রাতে মেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।
ক্যাস্টর অয়েল লাগালে কি পাকা চুল কালো হয়? Will castor oil make grey hair black?
ক্যাস্টর অয়েল লাগালে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড ধূসর চুলের গঠন কমাতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর অয়েল আপনার চুলকে ঘন করতেও সাহায্য করবে।
ক্যাস্টর অয়েলে রিসিনোলিক অ্যাসিড রয়েছে, এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মাথার ত্বকে সঞ্চালন বাড়াতে পারে এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর এবং মজবুত চুলকে উন্নীত করতে পারে।
শেষ কথা, Conclusion :
বুড়ো বয়সেও চুল কালো রং করে রেখে চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন অনেকে, এদিকে যদি কম বয়স থেকেই রং দিয়ে চুলের সাদা ভাব ঢেকে রাখতে হয় তখন যেন যুবক যুবতীদের দুঃখের শেষ থাকে না। অনেকেই এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
কিন্তু উপরে উল্লেখিত প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার চুলের প্রাকৃতিক কালো রং বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন, পাশাপাশি চুলও মজবুত থাকবে। বলতে গেলে হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়েই চুলের যত্ন নিতে পারবেন, তাই চাইলে আজই বাড়িতে এই তেল বানিয়ে ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন।
Frequently Asked Questions
মাথার ত্বকে কালোজিরার তেল প্রয়োগ করুন,বিশেষ করে যেখানে চুল ধূসর হয়ে গেছে, তেলের প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই রঙিন রঙ্গক কোষগুলিকে উদ্দীপিত হবে এবং চুল কালো হবে।
ক্যাস্টর অয়েল লাগালে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড ধূসর চুলের গঠন কমাতে সাহায্য করে।
ক্যাস্টর অয়েল, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই রয়েছে।