কে না চায় উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারিণী হতে! ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক সর্বদাই নজর কাড়ে, তাই সকলেই চায় ফর্সা ত্বক পেতে। কিন্তু সবাই তো আর ফর্সা হয় না, কেউ শ্যামলা, আবার কারোর ত্বকের রং হয়তো বিভিন্ন কারণে চাপা পড়ে যায়, ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। তবুও সবাই চায় নিজেকে সুন্দর করে তুলতে, আর এরজন্য আশ্রয় নেয় বাজারজাত বিভিন্ন কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর।
অনেকেই জানেন যে এইসব পণ্য আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করে, কিন্তু সুন্দর দেখতে হলে তো এসবের ব্যবহার করতেই হয়। কিন্তু এসবকিছু ব্যবহার করার থেকে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করাই শ্রেয়, কারণ ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন উপায়, Various home remedies to get fair
বাজারের রাসায়নিক পদার্থযুক্ত পণ্য ব্যবহার স্থগিত রেখে ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন। ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া বিভিন্ন উপায় হল :
টমেটো এবং ওটমিল :
উক্ত দুটো উপকরণই আমাদের ত্বককে ফর্সা অথবা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ওটমিল এর ব্যবহার ত্বক থেকে মৃত কোষ গুলোকে অপসারণ করে এবং টমেটো ত্বককে ফর্সা এবং মসৃণ বানানোর জন্য উপকারী উপাদানগুলোর মধ্যে একটি।
এক্ষেত্রে প্রথমে ওটমিল এবং টমেটো দুটোকেই পেস্ট বানিয়ে নিয়ে একসাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপরে এই পেস্টকে ত্বকে স্ক্রাবের মত কয়েক মিনিট হালকা হাতে মর্দন করে কুড়ি মিনিটের জন্য এভাবেই রেখে দিন। এর পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতি এর প্রয়োগ দু’সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন করতে পারেন।
লেবুর রসের ব্যবহার :
এটা আমরা অনেকেই জানি যে লেবু আমাদের ত্বককে ফর্সা বানানোর জন্য সব থেকে সহজ এবং সরল পদ্ধতি। এতে ব্লিচিং জাতীয় উপাদান থাকে যা আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া লেবুর প্রয়োগ ত্বক থেকে দাগ এবং ছোপকে দূর করে।
এক্ষেত্রে লেবুর রস নিয়ে তুলো বা আঙুলের সাহায্যে ত্বকের উপর লাগান এবং কুড়ি মিনিটের জন্য এরকম ভাবেই রেখে দিন। এরপরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। একদিন অন্তর আপনি লেবুর রস কে এভাবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখুন যে যখনই আপনি এই পদ্ধতির ব্যবহার করছেন তখন সূর্যের সামনে যেন না যাওয়া হয়।
কেউ চাইলে লেবুকে মধুর সাথেও ব্যবহার করতে পারেন, বিশেষত যাদের ড্রাই স্কিন। লেবুতে থাকে ভিটামিন সি যা ত্বককে ফর্সা বানায় এবং মধু ত্বককে মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে চার চামচ মধু নিয়ে তাতে চার চামচ লেবুর রস মেশান। দুটো উপকরণকেই ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটিকে ত্বকের উপর লাগান এবং পনেরো-কুড়ি মিনিটের পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে দিন। পরিষ্কার এবং কোমল ত্বক পেতে এই পদ্ধতি ব্যবহার সপ্তাহে ৩ বার করা জরুরি।
বেসন এর ব্যবহার :
প্রত্যেকের রান্নাঘরে বেসন থাকে, আর এই বেসনই আমাদের ত্বককে ফর্সা করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বেসন ত্বকের এক্সফলিয়েটর এর মত কাজ করে যা সূর্যের কিরণ থেকে হওয়া ট্যানকে দূর করে। বেসনের ব্যবহার ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা করতে এবং দাগ ছোপ দূর করতে সাহায্য করে।
এক্ষেত্রে ৫ চামচ বেসন এবং ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো বা একটি ছোটো টুকরো হলুদের নিয়ে সেটা পেস্ট করে দুটো উপকরণকে একসাথে মিশিয়ে নিন। এবারে পেস্টটিকে ত্বকের উপর ভালো ভাবে লাগিয়ে কুড়ি মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে দিন। এভাবে বেসনের ব্যবহার প্রত্যেকদিন স্নান করার আগে করতে পারেন।
অ্যালোভেরার ব্যবহার :
অ্যালোভেরা হল সহজে পাওয়া যায় এমন ওষুধ, যার জেল ত্বককে ফর্সা করার একটি অসাধারণ ঘরোয়া পদ্ধতি কারণ এতে এন্থ্রাক্যুনোন কম্পাউন্ড থাকে যা ত্বকের উপরিভাগ সরিয়ে ভেতরে লুকিয়ে থাকা ফর্সা ত্বক কে বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল লাগানো ছাড়াও আপনি এর লোশন বা ক্রিম লাগাতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল কে পুরো শরীরে লাগিয়ে মর্দন করুন। মর্দন করার পরে কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত একে এমনভাবেই রেখে দিন। এরপর ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে শরীরকে জল দিয়ে ধুয়ে দিন। অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার রোজ করুন।
চালের গুঁড়োর ব্যবহার :
চালের গুঁড়ার মধ্যে থাকে প্যারা- অ্যামিনোবেঞ্জোয়িক অ্যাসিড, যা কেবল ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচানো ছাড়াও ত্বকে ভিটামিন সি এর স্তর অটুট রাখে। চালের গুঁড়ো ভিটামিন সি, ভিটামিন ই , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফেরুলিক এসিড দ্বারা ভরপুর, তাই চালের গুঁড়ো ত্বকের আর্দ্র ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অল্প কাঁচা চালকে বেটে পাউডার তৈরি করে নিন। এবার এই পাউডারএ সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে এক মোলায়েম পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পোস্টকে ত্বকের উপর আধঘন্টার জন্য লাগিয়ে রাখতে পারেন। এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিন। ভালোভাবে উপকার পেতে আপনি এই পোস্টকে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন।
পেঁপে আর ডিমের মাস্ক :
ত্বকের সুস্থতার জন্য পেঁপে খুব ভালো, সেটা হয়তো অনেকেই জানেন। তবে এটাও জেনে রাখা ভালো যে, পেঁপে আর ডিম এর একসাথে ব্যবহার ত্বকের রঙ আস্তে আস্তে ফর্সা করে তুলতে পারে। ডিমের প্রোটিন ত্বককে টানটান করে রাখবে।
এক্ষেত্রে যেসব উপকরণ লাগবে, সেগুলি হল ৩ চামচ পেপের রস, ২ চামচ দই, ৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, ৩ চামচ আমন্ড অয়েল, গ্লিসারিন ও একটি ডিমের সাদা অংশ। গ্লিসারিন আর ডিম বাদ দিয়ে বাকি সব উপকরণকে একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটা ঘন পেস্ট মতো তৈরি হয়ে গেলে সেটা ফ্রিজে রেখে দিন ঘণ্টা দুয়েকের মতো। তারপর পেস্ট বের করে তাতে দিন গ্লিসারিন আর ডিমের সাদা অংশ বিষয়ে নিন। এই পেস্ট মুখে মেখে রেখে দিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
চন্দন গুঁড়োর ব্যবহার করতে পারেন :
জ্বেল্লাদার ঝকঝকে ত্বক পেতে চন্দন গুঁড়োর অবদান অনস্বীকার্য। ত্বকের দাগ ছোপ দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চন্দনের জুড়ি মেলা ভার। পরিষ্কার ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চন্দন গুঁড়োর ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে চন্দন গুঁড়োর সাথে দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে প্রত্যেক দিন ত্বকে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। অল্প দিনের মধ্যে আপনার ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
কাঁচা আলুর রস এর ব্যবহার :
কাঁচা আলুর রস ত্বককে মসৃণ ও ফর্সা করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে কাঁচা আলুর রস সংগ্রহ করার জন্য আলু পাতলা কুচি করে কেটে নিয়ে এর থেকে রস ছেঁকে নিন। এই রস দিনে ২ বার করে লাগান এবং ১৫ নিন রেখে ধুয়ে নিন। এভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন,কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
শেষ কথা, Conclusion
ফর্সা হওয়ার ইচ্ছা কার না থাকে। কিন্তু বাজারের পণ্য ব্যবহার করে তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না, বরং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে উপরিউক্ত উপায় অবলম্বন করে ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করুন, দেখবেন ত্বক আগের থেকে আরো ভালো হয়ে উঠেছে এবং উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে। যদিও পদ্ধতিগুলো কিছুটা সময় সাপেক্ষ, কিন্তু তবুও নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নেওয়াও জরুরী।