মেছতার সমস্যা পুরুষ অথবা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এর কারণে আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই কমে যায়। এই মেছতা ত্বকের এমনই এক সমস্যা যে সহজে দূর হতে চায় না। বয়স বৃদ্ধির কারণে অনেক সময় এই সমস্যা হতে পারে। মুখ-কপালসহ বুকেও হতে পারে মেছতা। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় সেটাই হল প্রশ্ন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মেছতা দূর করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
মেছতা কী? What is Melasma?
মেছতাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মেলাজমা বা কোলাজমা বলা হয়। এই সমস্যা হলে ত্বকে হালকা বাদামি রঙের দাগ পড়ে। বিশেষত মুখেই এমন দাগ ছোপ দেখা দেয়, তবে কপালসহ বুকে ও গলায় বা ঘাড়েও এটি হতে পারে।
মেছতার প্রকার, Types of Melasma :
ত্বকের স্তর অনুযায়ী মেছতা দুই ধরনের হয়। উপরের স্তরে মেছতার হলে সেটিকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় অ্যাপিডার্মাল মেলাজমা। অন্যদিকে যদি ডার্মাল লেয়ারে হয় তবে সেটা ডার্মাল মেলাজমা বলে পরিচিত। মেছতা একবার হলে তা একেবারে দূর করা যায় না। ধীরে ধীরে দাগ হালকা করা যায়।
মেছতা হওয়ার কারণ কি? What is the reason for Melasma?
মেছতা বা মেলাজমা ত্বকের এক ধরনের অসুখ। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
- সাধারণত শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে গালে মেছতা দেখা দেয়।
- দীর্ঘসময় রোদে থাকার কারণে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকেও মুখে ছোপ ছোপ দাগ হয়।
- থাইরয়েড অসুখ এবং রক্তচাপের ওষুধ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মেছতা হতে পারে।
এসব ছাড়াও জিনগত সমস্যা, অস্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ, ঘুমের অভাব, সঠিক পরিমাণ জল পান না করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ঘাম হওয়ার পরও পরিচ্ছন্ন না হওয়া ইত্যাদি কারণেও মেছতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মুখে মেছতা দূর করার ব্যবস্থা , Ways to remove Melasma scars from the face :
মুখে মেছতা দেখা দিতে শুরু করলে অনেকেই এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেক রকম প্রচেষ্টা করেন এই সমস্যা দূর করার জন্য। বর্তমান সময়ে মেছতা দূর করার জন্য লেজার ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা আছে। তবে লেজার করালেই প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের। এদিকে ব্যস্ত জীবনে কারও সময় থাকেন ত্বকের সঠিকভাবে যত্ন নেওয়ার। এর ফলে ত্বকের আরও ক্ষতি হয়ে যায়। তাই মেছতা দূর করার জন্য নিরাপদ হল ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা। চলুন এমন কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক-
টক দইয়ের ব্যবহার :
টক দইয়ের ব্যবহার হল মেছতা দূর করতে অন্যতম কার্যকরী উপায়। সামান্য টক দই নিতে সেটা ভালোভাবে ফেটিয়ে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। নিয়মিত এভাবে টক দইয়ের ব্যবহার করলে মেছতা দূর হবে, পাশাপাশি বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতাও।
লেবুর রসের ব্যবহার
মেছতার দূর করতে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। তবে লেবুর রস কখনোই সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। কিছু না হলেও জলের সাথে মিশিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। জল ও লেবুর রসের মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের মতো। তারপর জল দিতে ধুয়ে নিন। লেবুর রসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি সূর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্নির প্রভাব দূর করতে সহায়ক।
আমন্ড অয়েলের ব্যবহার
আমন্ড অয়েলের বহু উপকারিতা রয়েছে। চুলের পাশাপাশি এই তেল ত্বকের যত্নেও সমান উপকারী। ২-৩ ফোঁটা আমন্ড অয়েল নিয়ে মেছতার স্থানে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। মেছতার দূর করতে নিয়মিত এভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর না ধুয়ে তেল মুখে বা মেছতার সেই স্থানে আছে সেই অংশ তেল সহ এভাবেই ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। এভাবে করলে মেছতার দাগ দূর হবে।
হালকা গরম তেল করে লাগান
মেছতার দূর করতে ত্বকে যেকোনো তেল হালকা গরম করে ম্যাসাজ করুন। ত্বক তেলটুকু শুষে নেওয়া অবধি ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর এভাবে অন্তত ১ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে তেল লাগান অংশটি ধুয়ে নিন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে মেছতা দূর হবে।
সানস্ক্রিনের নিয়মিত ব্যবহার
সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মধ্যে অনেকেই বুঝতে পারেন না। কিন্তু সূর্যের তাপ এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি রোদে বের হলে সঙ্গে ছাতা, মাস্ক ও সানগ্লাস রাখবেন।
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় কি? What is the way to remove Melasma forever?
মাত্র ৪ টি উপায়ে দূর করুন মেছতা :
- আলুর রস : আলুতে থাকা স্টার্চ, মৃত কোষ সরিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। মেছতার দূর করে আলুর খোসা ছাড়িয়ে আলুকে গ্রেট করে নিন। ক্রমে ছাঁকনি দিয়ে গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করে, মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। আধা ঘণ্টা রেখে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ১দিন পরপর ব্যবহার করতে থাকুন। দেখবেন মেছতার দাগ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
- লেবু এবং মধু : লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি। লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে মুখের দাগযুক্ত অংশে মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিন ব্যবহার করলে ত্বকের দাগছোপ দূর হয়ে যাবে।
- অ্যাপল সিডার ভিনিগার : অ্যাপল সিডার ভিনিগার সরাসরি মুখে লাগাবেন না। জলের সঙ্গে মিশিয়ে শুধুমাত্র দাগযুক্ত স্থানে অ্যাপল সিডার ভিনিগার লাগান। পাঁচ মিনিটের মত রেখে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পর পর এভাবে করতে পারেন।
- কমলার খোসা : কমলার খোসা বেটে, হলুদ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
কফি দিয়ে মেছতা দূর করার উপায় কি? What is the way to remove Melasma with coffee?
কফির প্যাক তৈরি করতে তিন চা-চামচ কফির সঙ্গে এক টেবিল-চামচ বেসন, তিন চা-চামচ মধু, দুই চা-চামচ অ্যালো ভেরার জেল এবং দুই -তিন ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশল তেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। প্যাকটি মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মেলাসমা রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা, Melasma Natural Treatment :
মেলাজমার প্রাকৃতিক চিকিৎসায় অ্যালোভেরা, হলুদ বা লেবুর রসের মতো উপাদান ব্যবহার করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যাইহোক, ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে, এবং ব্যক্তিগতকৃত পরামর্শের জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।
মুখের মেছতার দাগ দূর করার বিশেষ উপায় কি? What is the special way to remove Melasma scars?
মেছতার বসে যাওয়া দাগ দূর করতে মুলতানি মাটি, চন্দনের গুঁড়া, টকদই ও মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই প্যাক মুখে মেখে রাখুন ১৫ মিনিট। হালকা শুকিয়ে এলে একটু ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। চিনির গুঁড়া অলিভ অয়েল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে রেখে দিন, ২০ মিনিট পর পাতলা কাপড় দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন।
শেষ কথা, Conclusion :
মেছতা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষদের মধ্যেও এটি হতে পারে। তবে উপরিউক্ত উপায়গুলো দুজনের ক্ষেত্রে কাজ করে। পাশাপাশি ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি। ত্বককে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। মেয়েদের থেকে ছেলেদের ত্বক থেকে মেছতার দাগ দূর হতে সময় একটু বেশি লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে হবে।
Frequently Asked Question :
মেছতাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মেলাজমা বা কোলাজমা বলা হয়। এই সমস্যা হলে ত্বকে হালকা বাদামি রঙের দাগ পড়ে।
অ্যাপিডার্মাল মেলাজমা ও ডার্মাল মেলাজমা।
জিনগত সমস্যা, অস্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ, ঘুমের অভাব, সঠিক পরিমাণ জল পান না করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ঘাম হওয়ার পরও পরিচ্ছন্ন না হওয়া ইত্যাদি