নারীদের সৌন্দর্য বর্ধনের ক্ষেত্রে চুলের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। চুলের সৌন্দর্য যে কোনো নারীকে রূপবতী করে তুলতে পারে খুব সহজেই। মেয়েদের রেশমি ঝলমলে চুলই যেন তাদের মূল পরিচয়, আর এই চুলই যখন বিভিন্ন কারণে রুক্ষ হয়ে পড়ে তখন লাবণ্যময়ী চেহারাতেও যেন মলিনতার ছাপ পড়ে যায়।
আজকাল বিভিন্ন কারণে মেয়েদের ত্বক ও চুলও হয়ে উঠছে রুক্ষ। অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন। তবে একটু চেষ্টা করলেই চুলে রুক্ষতাকে বশে আনা সম্ভব। এরজন্য মূলত প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আর্দ্রতা। চুল যদি সঠিক পুষ্টি পায়, তাহলে রুক্ষতার সমস্যা দূর হয়ে যায়।
চুল রুক্ষ হয়ে ওঠার বিভিন্ন কারণ, causes of roughness of hair
বর্তমান যান্ত্রিক জীবনযাপনে আমাদের চুল রুক্ষ হয়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন কারণ আছে। এরমধ্যে একটি অন্যতম কারণ হল ধূলোবালি। আজকালের যুগে মেয়েরাও আত্মনির্ভরশীল, সেই সুবাদে তারা বিভিন্ন কাজের তাগিদে ঘরের বাইরে পা বাড়ায়। এতে চুলের বিভিন্ন স্টাইল করতে গিয়ে যেমন বহু পণ্য তথা যন্ত্রের ব্যবহার করতে হয় তেমনি বাইরের ধূলোবালি লেগে চুলের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এছাড়া ভেজা চুলকে শুকানোর জন্য অনেকেই ব্লো ড্রাই করেন, এতেও চুল রুক্ষ হয়ে ওঠে।
এছাড়াও চুলের স্টাইল করতে বিভিন্ন কিছু করা হয় যেমন রিবনডিং, হেয়ার কালার ইত্যাদি। এসবের ফলেও চুল ধীরে ধীরে মসৃণতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে যায়। একবার চুল রুক্ষ হয়ে গেলে চুলের আগা খুব সহজেই ফেটে যেতে থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। কিন্তু খুব সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আমরা চুলের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পেতে পারি।
রুক্ষতা কম করার বিভিন্ন উপায়, Different ways to reduce roughness
অনেকেরই হয়তো জানা নেই, কিন্তু হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক উপাদান, যা চুলের রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করতে খুব কার্যকর। তবে প্রসাধনীর তুলনায় প্রাকৃতিক উপাদানগুলো কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করে। তাই ধৈর্য ধরে এর ব্যবহার করতে হয়, দু–একবার ব্যবহার করেই সম্পূর্ণ সমাধান আশা করতে যাওয়া ঠিক হবে না। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের সাথে বাড়তি নিয়ম ও যত্ন প্রয়োজন হয়। এক কথায় বাড়িতে নিয়মিত ভাবে যত্ন নিলে চুল রুক্ষ হবে না বরং কোমল ও নরম হয়ে উঠবে।
চুলের রুক্ষতা দূর করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন হয় কন্ডিশনারের। তবে বাজারজাত কন্ডিশনার নয়, বরং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করা শ্রেয়। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কলা দারুণ কাজ করে, এটি নিমেষেই দূর করে দেয় চুলের রুক্ষতা। একটা পাকা কলা নিয়ে তার সঙ্গে দুই চা-চামচ মধু এবং অর্ধেক কাপ পরিমাণ নারকেল অথবা আমন্ড তেল মিশিয়ে নিয়ে চুলে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই বা তিন দিন এর ব্যবহার করুন, চুলের রুক্ষতা দূর হয়ে যাবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুক্ষতার কারণে চুল ভেঙে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে ডিম খুব উপকারী। এছাড়া চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে ডিম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি অলিভ অয়েলও চুলের জন্য দারুন উপকারী। উক্ত দুটো উপাদান একসঙ্গে মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে রুক্ষ চুল দূর করার জন্য আদর্শ একটি প্যাক। এই মিশ্রণটিকে মাথার তালুসহ পুরো চুলে লাগিয়ে নিতে হবে এবং ৪০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর একটি অপ্রখর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
অ্যাভোকাডো চুলের জন্যে এটি বিশেষ উপকারী উপাদান। এর কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও ই–এর মতো বিশেষ প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান, যা আমাদের চুলের রুক্ষতা দূর করতে কার্যকরী।
আমাদের অতি পরিচিত মেয়োনেজও চুলের রুক্ষতায় ভীষণ উপকারী। যেকোনো ভাজাভুজির সাথে মেয়োনেজ স্বাদ বর্ধকের কাজ করে, তবে এটি চুলের যত্নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অর্ধেক কাপ মেয়োনেজ এর সাথে দুই টেবিল–চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে নিন, এরপর চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী দু–একটা ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
এই মিশ্রণটি চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রেখে দিন আধঘণ্টা। পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি শুধু যে চুলের রুক্ষতা দূর করে তা না, বরং চুলের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।
চুলের যত্নে গরম তেল দিয়ে মালিশ চুলের যত্নে খুব বেশ পরিচিত একটি বিষয়। চুলের রুক্ষতা দূর করার ক্ষেত্রেও এটি দারুণ কার্যকর। এরজন্য ভালো মানের নারকেল তেল ব্যবহার করলে রুক্ষতা অনেকটাই কম হয়।
তবে চুলের যত্নে একাধিক তেল মিশিয়ে সঠিকভাবে ম্যাসাজ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়, যেমন ক্যাস্টর অয়েল ও নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। যাদের চুল পাতলা হয়, তাদের ক্ষেত্রে হালকা তেল, যেমন জোজোবা বা আমন্ড তেল লাগাতে পারেন। অন্যদিকে ঘন চুলের ক্ষেত্রে নারকেল তেল বা আর্গান তেল লাগানো যেতে পারে।
প্রয়োজন অনুযায়ী তেল সামান্য গরম করে মালিশ করে নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো তেল বেশি গরম করলে এর উপকারী উপাদান নষ্ট হতে পারে। তাই হালকা গরম করে তেল মাথার তালুতে ১০-১৫ মিনিট ধরে হালকাভাবে মালিশ করা উচিত। এরপর গরম জলে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে তুলে নিয়ে অতিরিক্ত জলে ফেলে চুলে বেঁধে রাখুন, এর আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
চুল বা ত্বকের সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী হল পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া। শরীরে সঠিক পরিমাণে জলের উপস্থিতি আমাদের শরীরকে যেমন সতেজ করে রাখে তেমনি আমাদের চুলকেও সতেজ রাখতে সহায়ক। তাই চুলের যত্নে দিনে ২-৩ লিটার জল পান করা উচিত।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের রুক্ষতা দূর করতে এবং চুলকে কোমল, নমনীয় ও ঝলমলে করার একটি অন্যতম উপায় হল- ১টি পাকা কলা, ১টি ডিম, ২-৩ চা চামচ টক দই, ২-৩ চা চামচ মধু, ১টি লেবুর সম্পূর্ণ রস সবকিছু একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন, এই প্যাক মাথায় ১ ঘণ্টার মতো লাগিয়ে রেখে দিন। তবে মিশ্রণটি লাগানোর আগে চুলে ভালো করে তেল ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এতে প্যাকটি খুব ভালোভাবে চুলে বসবে।
চুলের রুক্ষতা দূরীকরণে নিয়মিত অভ্যাস, Regular practice to remove roughness of hair
ঘরোয়া বিভিন্ন উপায় রোজ অবলম্বন করা সহজ কাজ নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বিভিন্ন রেমেডি ব্যবহার করা উচিত। তবে আরো বেশ কিছু অভ্যাস নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরী, বিশেষ করে তেল মালিশ, কারণ চুলের রুক্ষতা দূরীকরণে তেলের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। তাই রাতে ঘুমানোর আগে মাথায় ও চুলে তেল দিয়ে সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ফেলা উত্তম।
যাদের চুল রুক্ষ এবং সাথে খুশকিও আছে তাদের ক্ষেত্রে হালকা গরম তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এর পাশাপাশি শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার এর বদলে ১/২ মগ জলের সাথে সাদা ভিনেগার মিশিয়ে চুলে দিতে পারেন। এতে চুল ঝরঝরে হয় এবং এর সাথে চুল খুশকি মুক্তও হয়।
উপসংহার, Conclusion
চুলের যত্ন নেওয়া খুব জরুরী, নয়তো চুল খুব সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, ফলে সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে। তাই নিয়ম করে চুলে তেল মালিশ করা জরুরী। পাশাপাশি রুক্ষ চুল দূর করতে উপরিউক্ত রেমেডি ব্যবহার করতে পারেন।