অনেকেরই খুশকির সমস্যা রয়েছে। শ্যাম্পু, স্পা ইত্যাদির পরও এই সমস্যা ঘুরে ঘুরে আসে বার বার। তাছাড়া অ্যান্টি-ড্যানড্রফ শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই যে উপকার পাওয়া যায়, তাও কিন্তু নয়। তবে অনেক সময় ঘরোয়া টোটকার সাহায্য নিয়ে খুশকির সমস্যা দূর করা যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে তাতেও খুব বেশি উপকার পাওয়া যায় না। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, খুশকির সমাধান পাওয়া যায় আয়ুর্বেদের ব্যবহার করে।
আয়ুর্বেদ প্রাচীন ভারতের অঙ্গ। আয়ুর্বেদের টোটকায় খুশকির সমস্যা দূর হবে এবং আপনি সুন্দর ঘন চুল পাবেন। দেখে নিন কিভাবে আয়ুর্বেদ খুসকির সমস্যা দূর করে :
নিম ব্যবহার করুন :
নিম পাতা খুশকির সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকর। সাধারণত স্ক্যাল্পে ধুলো-ময়লা জমে থাকেলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। তবে অনেক সময় আর্দ্রতা কম হওয়ার কারণেও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিমের মধ্যে থাকে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা আমাদের মাথার ত্বক থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। খুশকি দূর করতে নিম পাতা বেটে স্ক্যাল্পে লাগাতে পারেন। এছাড়াও কেউ চাইলে নিম তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এতেও আপনাদের খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার :
খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা দিতে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিন। জেল এর সাথে নিম পাতা এবং আমলকী বেটে নিন। সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক বানিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগান।
কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করে এর ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
মেথির ব্যবহার :
চুলের যেকোনো সমস্যায় মেথির জুড়ি মেলা ভার। খুশকির ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা যায়। এরজন্য আগের দিন রাতে মেথি জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সেই ভেজানো মেথি বেটে নিন। এরপর মেথি বাটার সঙ্গে চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটি হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে নারকেল তেলের সাথে মেথি দানা ফুটিয়ে সেই তেল নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
জবা ফুলের ব্যবহার :
চুলের পরিচর্যায় জবা ফুলের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। নারকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুল ফুটিয়ে নিয়ে, সেই তেল চুল ও স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। এতে খুশকির সমস্যা ধীরে ধীরে কম হয়ে যায়, পাশাপাশি চুলকে ঘন করে তোলে।
ভৃঙ্গরাজ ব্যবহার করুন :
আয়ুর্বেদের ইতিহাসে চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজের বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এটি চুলের পরিচর্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ভৃঙ্গরাজ স্ক্যাল্পের আর্দ্রভাব ধরে রাখতে সহায়ক, তাই খুশকির ক্ষেত্রেও এটি কার্যকরী। খুশকির সমস্যা দূর করতে ভৃঙ্গরাজের তেল বানিয়ে তা ব্যবহার করতে পারেন।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া কিছু টোটকা, Some home remedies to get rid of dandruff :
খুশকি দূর করতে ব্যবহার করা কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু অনেক সময় চুলের ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া খুশকি দূর হবে।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া কিছু টোটকা দেখে নিন :
- আপেল সিডার ভিনেগার ও জল সমপরিমাণ নিয়ে এক সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ঢেলে দিন। এটি কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে মাথার ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- হাতের তালুতে শ্যাম্পু নিয়ে তাতে লবণ মিশিয়ে নিন। লবণমিশ্রিত শ্যাম্পু চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর চুল ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- নারকেল তেল ও লেবুর রস সমপরিমাণে নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
- চুল ভিজিয়ে মাথার ত্বকে বেকিং সোডা লাগিয়ে কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- অ্যালোভেরা জেলের সাথে লবণ মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে খুশকির অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবেন।
- নারকেল তেল নিয়ে তাতে ৮-১০ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন, এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে নিন।
- খুশকি দূর করতে ৪ টেবিল চামচ আদা বাটার সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এটি চুল ও মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
- একটি পেঁয়াজ নিয়ে তার থেকে খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজটি টুকরো টুকরো করে কেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট থেকে রস ছেঁকে নিয়ে তা আঙুলের সাহায্যে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। এতে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। পাশাপাশি চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায়। এই টোটকা খুশকির সমস্যাও কম করে দেয়। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করুন।
চুলে খুশকি হয় কেন? Why dandruff problem occurs ?
মাথার ত্বকে একধরনের ফাঙ্গাস বা ইস্ট জীবাণুর সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণ বেশি হয়ে তেলগ্রন্থি (সেবাসিয়াস গ্রন্থি) থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হলে খুশকি হয়।
অনেকে জেনেটিক সূত্রে খুশকির ঝুঁকিতে থাকেন। খুশকির কারণে মাথায় চুলকানি ছাড়াও চুল নিয়মিত পড়তে পারে।
কি শ্যাম্পু ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে? What kind of shampoo should be used to get rid of dandruff?
খুশকি দূর করতে হলে খুশকি-প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সেই শ্যাম্পুতে থাকে জিংক পাইরোথিন, স্যালিস্যলিক এসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড।
অপরদিকে সালফারযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলতে হবে। আবার ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু চুল তাৎক্ষণিক ঝরঝরে করলেও মাথার ত্বক শুষ্ক করে ফেলে।
স্পা করলে কি খুশকি কমে? Does spa reduce dandruff?
চুলের খুশকিমুক্ত চুল পেতে হেয়ার স্পা ট্রিটমেন্ট হল নিখুঁত সমাধান । এটি স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এর হারানো দীপ্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে। যাইহোক, এই চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় সেশনের সংখ্যা আপনার চুলের শুষ্কতার পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
এছাড়াও, হেয়ার স্পা আপনার নিয়মিত চুলের যত্নের রুটিনের অংশ হওয়া উচিত।
খুশকি চুলের কি ক্ষতি করে? Does dandruff cause hair damage?
খুশকি চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর, আর এর কারণে নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়। চুল পড়া, মাথার ত্বকে চুলকানি, অতিরিক্ত চুলকানির ফলে নখের আঁচড়ে মাথার ত্বকে ইনফেকশন ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
অনেক সময় মাথার ত্বকে খুশকির পাশাপাশি ছোট ছোট দানার মতো কিছু গোটা হয়ে থাকে এবং রোগীর মাথার ত্বকে অতিরিক্ত চুলকানি হয়।
লেবুর রস কি খুশকি দূর করে? Does lemon juice help to get rid of dandruff?
লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা ভিটামিন-সি-এর ভালো উৎস। এ ছাড়া লেবুতে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কারণে লেবু খুশকি দূর করতে একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। নিয়মিত মাথার ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারে মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমে, যা স্কাল্পে খুশকি হতে বাধা দেয়।
শীতে খুশকি বেশি হয় কেন? Why dandruff occurs more in winter?
সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়া ও অতিরিক্ত দূষণের কারণে খুশকি হয়। এর ফলে চুল পড়া, রুক্ষতা ও মাথার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। শীতের সময় চুল ও মাথার ত্বক আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি। অন্যথায় বাড়ে খুশকির প্রকোপ।
শেষ কথা, Conclusion :
বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় স্ক্যাল্পও রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে কম বেশি সবার মাথাতেই খুশকির সমস্যা শুরু হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকের সমস্যা থাকলেও খুশকি হতে পারে। তাই স্ক্যাল্পের কোনোও চিকিৎসা চললে বা কোনও ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘরোয়া টোটকা কাজে লাগাবেন না।
Frequently Asked Questions
খুশকি মোকাবেলা করতে, জিঙ্ক পাইরিথিওন বা কেটোকোনাজোলের মতো উপাদান সহ খুশকিবিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুল পড়ার জন্য, বায়োটিন, আয়রন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য বজায় রাখুন । কঠোর চুলের চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন, এবং ব্যক্তিগত নির্দেশনার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
মাথার ত্বকের সমস্যা যেমন খুশকি, ক্রমাগত চুলকানি, এবং অন্যান্য মাথার ত্বকের সমস্যাগুলি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং চুলের ফলিকলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, মেলানিন উৎপাদনকে ব্যাহত করে এবং ধূসর প্রক্রিয়াতে ভূমিকা পালন করে।
আপনার চুলে তেল দেওয়া মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং আপনার চুলের স্ট্র্যান্ডগুলিকে পুষ্ট করে। এটি আপনার মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ রাখে।