আমাদের শরীরের জন্য জরুরী বহু ভিটামিন রয়েছে, যেমন ভিটামিন A, B, C, D, K, E ইত্যাদি, তবে অন্য ভিটামিনগুলোর মতো ভিটামিন E আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ত্বক ও চুলের সুস্থতার জন্য এটি উপকারী একটি উপাদানI ভিটামিন E গ্রহণ করার সব চাইতে ভালো উপায় হল একে খাবারের মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা।
কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে ভিটামিন ই প্রয়োজনের থেকে বেশি গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণও হয়ে উঠতে পারেI তবে শুধু খাবারের সাথে না বরং আরো বিভিন্নভাবে ভিটামিন E ব্যবহার করা যায়।
ওষুধের দোকানে ভিটামিন E ক্যাপসুল পাওয়া যায়, যার ব্যবহার করে আপনি বাড়িতে বসেই চুলের যত্ন নিতে পারেন। আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিতে চান তবে কি কি উপায়ে ভিটামিন E ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের এই প্রতিবেদনে।
ভিটামিন E এর উৎস, sources of Vitamin E
ভিটামিন E অনেক খাবারেই বিদ্যমান। বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আপনি এই ভিটামিন ই পেতে পারেন। যেমন : আখরোট, উদ্ভিজ্জ তেল, চিনাবাদাম, গম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী ইত্যাদিতে। এছাড়াও, সূর্যমুখী বীজ এবং সবুজ শাক সবজির মধ্যে ভিটামিন ই প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।
চুলের যত্নে ভিটামিন E এর উপকারিতা, Vitamin E for hair care
দিনের পর দিন দূষণ বেড়ে চলেছে, যার ফলে বাইরে বেরোলেই চুলে ধুলোবালি আটকে গিয়ে রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, সুস্থ সুন্দর চুল ঝরতে শুরু করে দিয়েছে। কারও চুলের জেল্লা কম হয়ে যাচ্ছে, আবার কারোর চুলের দুই আগা বের হচ্ছে। আবার কারোর স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে থাকার কারণেই বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত উপাদান হল ভিটামিন E। চুলের সৌন্দর্য ফিরে পেতে আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করতে পারে ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
এই ক্যাপসুলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পুরুষ হোক কিংবা মহিলা, উভয়েরই মাথার স্ক্যাল্পের জন্য দারুণ স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। এর ব্যবহার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও কেউ যদি অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভোগে থাকেন, তবে সেই সমস্যা কম করতেও সাহায্য করে E ক্যাপসুল।
এক কথায় বলতে গেলে, চুলের যাবতীয় যত্ন নিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন E ক্যাপসুল। তাছাড়া এটি বেশ সহজলভ্য। যেকোনো মেডিকেল স্টোরে গিয়েই এটি পেয়ে যাবেন আপনি। দামও ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যেই, অর্থাৎ অনেক কম খরচে আমরা চুলের যত্ন নিতে পারবো।
বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে গিয়ে আপনার যদি লম্বা চুল হয় তাহলে ৭ থেকে ৮টি ক্যাপসুল ব্যবহার করতে হবে আর ছোট চুল হলে ৪ থেকে ৫ টি ক্যাপসুল।
চুলের যত্নে ভিটামিন E এর ব্যবহার, uses of Vitamin E for hair care
খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন E গ্রহণ করা অবশ্যই উপকারী, তবে আপনি চাইলে ভিটামিন E ক্যাপসুল সরসরি ত্বক বা চুলে ব্যবহার করতে পারেন, কারণ ভিটামিন E চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুল পাকা রোধ করে। চুলের আগা ফাটা রোধেও এটি বেশ কার্যকর। জেনে নিন কি কি উপায়ে চুলের যত্নে ভিটামিন ই ব্যবহার করবেন-
চুলের জেল্লা ফিরিয়া আনবে ভিটামিন E :
নিত্যদিনের দূষণ, মানসিক চাপ, কাজকর্মের চাপে চুলের যত্ন নেওয়ার সময় হয়ে উঠে না, যার জন্য অনেকেরই চুলের জেল্লা একেবারে চলে গিয়েছে। চটজলদি যদি হারিয়ে যাওয়া জেল্লা ফেরাতে চান তাহলে উপকারী উপাদান হিসেবে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের জুড়ি মেলা ভার। এরজন্য যা করতে হবে, স্নানের সময় ভাল করে চুল ধুয়ে নিন।
এরপর বেশ কয়েকটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে নিয়ে ক্যাপসুলের ভিতর থেকে তরল বের করে তা ভাল করে চুলে মেখে নিন। কিছুক্ষণ এভাবে রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন এভাবে করে দেখবেন চুলে জেল্লা ফিরে এসে যাবে।
ভিটামিন E ক্যাপসুল ও অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণ :
ভিটামিন E আর অ্যালোভেরা দুটোই চুলের তথা ত্বকের উপকারী। তাহলে ভাবুন দুটোর মিশ্রণ চুলকে কতটা মজবুত করে তুলবে। মিশ্রণটি তৈরির জন্য একটি পাত্রে সাত-আটটা ভিটামিন E ক্যাপসুল কেটে তার থেকে তেল বের করে নিতে হবে।
সেই তেলের সাথে দু’ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে, এবার সেই মিশ্রণটি চুল ও মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। আঙুল দিয়ে মাথার ত্বককে আলতোভাবে মালিশ করুন। উক্ত মিশ্রণের মাস্কটিকে ৩০-৪০ মিনিটের জন্য রেখে দিন, এর পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এটি ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং এর পাশাপাশি চুল পড়ার সমস্যাও কম হয়ে যাবে।
ভিটামিন E ক্যাপসুল, ডিম এবং বাদাম তেলের মিশ্রণ :
চুলকে মোলায়েম ও মজবুত করে তোলার জন্য আরো একটি কার্যকরী টোটকা হল ভিটামিন E ক্যাপসুল, ডিম এবং বাদাম তেলের মিশ্রণ। এরজন্য একটি ডিম নিয়ে তা ভেঙে একটি পাত্রে রাখুন। এবার এর উপর চারটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি সম্পূর্ণ করতে এক চা চামচ বাদাম তেল নিয়ে মিশ্রণটির সাথে যোগ করে সবকিছু ভালো করে মেশান। এখন এই মিশ্রণটিকে মাথার ত্বক থেকে শুরু করে সারা চুলে ভালোভাবে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক থেকে দু’বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
ভিটামিন E ক্যাপসুল, দই এবং মধুর বিশেষ মিশ্রণ :
অনেকেরই চুলে খুশকি সমস্যা থাকে, তেল ও শ্যাম্পু দিয়ে খুশকি পরিষ্কার করলেও দুদিন পর আবার এই সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হল ভিটামিন E।
এরজন্য একটি পাত্রে অর্ধেক কাপ দই ও দু’ চামচ মধু নিয়ে তাতে চারটি ভিটামিন E ক্যাপসুল কেটে সেগুলো থেকে তেল বের করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটিকে মাস্ক হিসেবে চুলে লাগাতে পারেন। আধ ঘণ্টা এভাবেই রেখে দিয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দু’দিন এটি ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা দূর হবে। পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতাও ফিরবে।
ভিটামিন E হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন, Make a vitamin E hair mask
একটি ছোটো পাত্রে আপনার চুলের পরিমাণ অনুযায়ী নারকেল তেল নিয়ে তাতে ২-৩ টে ভিটামিন E ক্যাপসুল কেটে ভেতরের তেল নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। যদি নারকেল তেল ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার পছন্দের অন্য কোনো তেল ব্যবহার করলেও কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আপনার চুলের জন্য সেরা ও উপযুক্ত তেলই ব্যবহার করাই ভালো, তাতে ফল সঠিকভাবে পাওয়া যাবে যেমন অলিভ ওয়েল, আমন্ড অয়েলের সঙ্গে ভিটামিন E ক্যাপসুল নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।
অনেকে আবার এই মিশ্রণটিকে একটি বাটিতে নিয়ে গরম জল পূর্ণ পাত্রে কিছু সময় বসিয়ে রেখে তারপর ব্যবহার করে থাকেন। তবে দুভাবেই ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার, Conclusion
আজকালের আধুনিক জীবনে সকলেই ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছেন। নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার মত উপযুক্ত সময়ও অনেকের কাছে নেই। আবার অনেকে এমনও আছে যারা বাজারজাত ক্ষতিকর কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে নিচের সুন্দর চুলগুলোর অবস্থা খারাপ করে নিয়েছেন। তাদের সকলকেই নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে ভিটামিন E ক্যাপসুলএর ব্যবহার শুরু করা উচিত। চুলের সৌন্দর্য ফিরে পেতে এটি ম্যাজিকের মত কাজ করবে।