মোহাম্মদ আমির হোসেন খান বিশ্ব ব্যাপী আমির খান হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ভারতের একজন বিখ্যাত অভিনেতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক। অভিনেতা হিসেবে তিনি বহু হিট ছবিতে কাজ করেছেন। বলিউডের ভারতের সেরা শিল্পীদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ আমির হোসেন খান এবং তিনি সকল বয়সী মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমির খান কে মিস্টার পারফেকশনিস্ট নামেও ডাকা হয়।
আমির খান কে ? Who is Aamir Khan?
মোহাম্মদ আমির হোসেন খান বা আমির খানের পরিচয় দিতে গিয়ে বিভিন্ন অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত বিভিন্ন পেশার উল্লেখ করতে হয়। তিনি একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেন তিনি, পরিচালক হিসেবেও বেশ কিছু ছবিতে তাঁর ভূমিকা রয়েছে, এছাড়া তিনি চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেও পরিচিত।
অন্যদিকে বেশ কিছু টিভি শো এর উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। হিন্দি চলচ্চিত্রে নিজের সফল কর্মজীবনের মাধ্যমে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় তথা প্রভাবশালী অভিনেতাদের মধ্যে একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমির খান।
আমির খানের জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family of Aamir Khan
আমির খানের জন্ম হয় ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তিনি ১৯৬৫ সালের ১৪ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আমির খান এর পিতার নাম তাহির হোসেন, যিনি পেশায় একজন প্রযোজক ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম জিনাত হোসেন। মা বাবা ছাড়াও আমির খানের পরিবারে এক ভাই এবং দুই বোন রয়েছে। তবে তিনিই ভাইবোনদের মধ্যে জেষ্ঠ্য।
আমির খানের ছোট ভাইকেও বেশ কিছু ছবিতে কাজ করতে দেখা গেছে, তাঁর নাম ফয়জল খান। তাদের দুই বোনের নাম হল ফারহাত খান ও নিখাত খান। নিখাত খানও একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক।
আমির খানের শিক্ষাজীবন, Educational life of Aamir Khan
আমির হোসেন খানের শিক্ষা জীবন কাটে মুম্বাই শহরে। তবে তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। তবে আমিরের বাবা-মা চেয়েছিলেন যে তিনি চলচ্চিত্রে কেরিয়ার না করে নিজের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুন, কিন্তু অভিনেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমির কে তাঁর স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়।
আমির খানের বিবাহ সম্পর্ক, Marital status of Aamir Khan
আমির খানের প্রথম স্ত্রী রীনা দত্ত :
আমির খান দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৬ সালে, তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম রীনা দত্ত, যিনি একজন হিন্দু। রীনার সাথে আমিরের সংসারে তাদের দুটি সন্তান ছিল, যার মধ্যে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে; ছেলেটির নাম জুনায়েদ খান এবং মেয়ের নাম ইরা খান। তবে রীনার সাথে আমিরের বিয়ে স্থায়ী হয় ২০০২ সাল পর্যন্ত। কোনো বিবাদ ছাড়াই তাদের বিচ্ছেদ হয়েছিল
দ্বিতীয় বিবাহ, second marriage
আমির খান প্রথম স্ত্রী রীনার সাথে বিচ্ছেদের প্রায় তিন বছর দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ২০০৫ সালে তিনি কিরণ রাও এর সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনের পরিচয় হয়েছিল লাগান সিনেমার সময়। কিরণ ও আমিরের একটি সন্তানও রয়েছে, যার নাম আজাদ রাও খান। এই বিয়েও বিচ্ছেদের সুর ধরে ২০২১ সালে। এক্ষেত্রেও কোনো বিবাদ ছাড়াই পরস্পর থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুজনে।
আমির খানের নিজের উভয় স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও, বিভিন্ন পার্বণে সকলে একসাথে আনন্দ করেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই সবার ছবি একসাথে দেখা যায়। এক কথায় উভয় স্ত্রীর সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছেন তিনি।
আমির খানের অভিনয় জীবনের নানা ঘটনা, Various incidents of Aamir Khan’s acting life
আমির খান শৈশবকাল থেকে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে নাসির হুসেনের ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ ছবিতে একজন শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয় জীবন শুরু হয় তাঁর। ১৯৭৪ সালে, তিনি আরেকটি ছবিতে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন, এই ছবিটি ছিল আমিরের বাবার তৈরি ‘মধোষ’ নামক ছবি।
১৯৮৪ সালে প্রথমবার ছবিতে প্রধান ভূমিকায় কাজ করেন আমির খান। ছবির নাম ছিল ‘হোলি’, এর পরিচালনা করেছেন কেতন মেহতা। এই ছবিটি তেমন সফল হতে না পারলেও আমির খানের অভিনয় অনেকেরই বেশ পছন্দ হয়েছিল। পেশাগতভাবে তাঁর অভিনয় জীবনের সূচনা উক্ত ছবির মধ্য দিয়েই হয়েছিল।
‘হোলি’ ছবিতে কাজ করার পর তিনি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির প্রস্তাব পান। প্রণয়ধর্মী গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত উক্ত ছবিটিই ছিল আমিরের ক্যারিয়ারের প্রথম হিট ছবি। সিনেমাটি ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিতে আমিরের সহ অভিনেতা ছিলেন জুহি চাওলা। ছবিটি বেশ কিছু পুরস্কারও জিতেছে।
এই ছবির জন্য আমির শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান। এছাড়াও ১৯৯৬ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি “রাজা হিন্দুস্তানি”-র জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর থেকে একের পর এক ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি। ‘লাগান’, ‘মঙ্গল পান্ডে: রাইজিং প্লেয়িং’ ‘রং দে বাসন্তী’, ‘ফানা’, ‘তারে জমিন পার’, ‘গজিনি’-এর মতো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ছবিতে কাজ করেন তিনি এবং উক্ত সকল ছবিই হিট হয়।
আমির খানের অভিনয় জীবনে থ্রি ইডিয়ট সুপার হিট ছবি হিসেবে গণ্য হয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর এই ছবি সেই সালে বলিউডের সবচেয়ে সফল সিনেমা হয়ে ওঠে। ছবিটি ভারত ব্যতীত অন্যান্য দেশেও বেশ পছন্দ করা হয়েছিল এবং এই সিনেমাটি বিদেশী বাজারে সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় ছবি হয়ে ওঠে।
এমনকি চলচ্চিত্রটি ৬ টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ছাড়াও ১০ টি স্টার স্ক্রিন পুরস্কারও অর্জন করে, এছাড়াও ৮ টি আইফা পুরস্কার এবং ৩ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছিল। আমির খানের ছবি ‘পিকে’ ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে খুব জনপ্রিয় ও সফল হয়েছিল। উক্ত ছবিটি বিশ্বব্যাপী মোট ৮৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তবে দাঙ্গাল ছবি আমিরের পূর্বের সকল ছবির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে, ছবিটি মুক্তি পায় এবং মোট ২১২২ কোটি টাকা আয় করে। মোট ৭০ কোটি টাকা বাজেটে তৈরি হয়েছিল এই ছবিটি।
প্রযোজক হিসেবে আমিরের কাজ, Aamir Khan as a producer
- ২০০১সালে আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত লাগান ছবির প্রযোজনায় ছিলেন আমির খান।
- ২০০৭ সালে : তারে জমিন পর।
- ২০০৮ সালে আব্বাস টায়ারওয়ালার পরিচালনায় তৈরি ছবি ‘জানে তু ইয়া জানে না ‘ এর প্রযোজনায় ছিলেন আমির খান।
- ২০১০ সালে পিপলি লাইভ ছবিতে পরিচালক আনুশা রিজভির পাশে প্রযোজনায় ছিলেন আমির খান।
- ২০১১ সালে ধোবি ঘাট ছবিতে কিরণ রাও এর পরিচালনায় প্রযোজকের ভূমিকা পালন করেন আমির।
- ২০১১ সালে অভিনয় দেও পরিচালিত দিল্লি বেলি ছবির প্রযোজনা করেন আমির খান।
- ২০১২ সালে তালাশ সিনেমার প্রযোজনায় ছিলেন আমির খান।
আমির খানের প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and recognition of Aamir Khan
আমির খান অভিনয় জীবনের প্রশংসনীয় কাজের পরিপ্রেক্ষিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার এবং মনোনয়ন অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্র জীবনে ১৬ বার ফিল্ম ফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কারের জন্য মনোনিত হন তিনি। আমির ৩ বার সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করেন লাগান , রাজা হিন্দুস্তানি ও দঙ্গল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য । ২০০৩ সালে তাঁকে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পদক প্রদান করা হয় এবং ২০১০ সালে তিনি পদ্মভূষণ পদকে সম্মানিত হন।
আমির খানের কিছু তথ্য, Special information about Aamir Khan
আমির খান এর বাবা প্রযোজক হিসেবে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর নির্মিত বেশিরভাগ ছবিই ফ্লপ প্রমাণিত হয়, যার ফলস্বরূপ আমির খানের অভিনয় জীবনের প্রথম দিনগুলো ছিল সংগ্রামে ভরা।
চলচ্চিত্রে অভিনয় জীবনের প্রথম দিকে, আমির খান নিজের অভিনয়ের উন্নতি করার জন্য ‘অবন্তর’ নামে একটি থিয়েটারেও কাজ করেছিলেন। এই থিয়েটারে যোগ দিয়ে তিনি বেশ কিছু নাটকে ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন।
২০১২ সালে, ভারতীয় সংসদে আমির খানকে একটি সংসদীয় প্যানেলে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেখানে আমির খান ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে এফডিআই সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করেন।
কিরণ রাওকে বিয়ে করার পূর্ব সময় অবধি আমির খান আমিষ ভোগী ছিলেন, কিন্তু রীনার সাথে দ্বিতীয়বারের মত বিয়ের করার কয়েক বছর পর আমির খান মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেন।
উপসংহার, Conclusion
শুধু ভারতে নয় বরং সারা বিশ্বে আমির খানের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে এবং তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রচুর। তাঁর বহু সিনেমা সমাজের সমস্যা বা চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এক কথায় তিনি নিজের চলচ্চিত্র পরিচালনার দ্বারা সমাজকে কোনো না কোনোও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছেন। নিজের নম্রতার জন্য তিনি সকলেরই প্রিয় একজন মানুষ।
Frequently Asked Questions:
একজন ভারতীয় অভিনেতা ।
আমির খানের জন্ম ১৪ মার্চ ১৯৬৫ ।
মহারাষ্ট্র ।
২০০৩ সালে ।
তাহির হোসেন ।
জীনাত হোসেন ।
দাঙ্গাল ছবি ।
২০১৪ সালে ।