বিশাল বীরু দেবগন বলিউডের এক জনপ্রিয় অভিনেতা। তবে তিনি অজয় দেবগন নামে সমাধিক পরিচিত। একজন অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক৷ তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের অর্থাৎ বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী তথা সফল অভিনেতা। তিনি নিজের অভিনয় জীবনে এখনও অবধি একশোর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন৷ তাছাড়া নিজের কাজের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা অজয় দেবগন এর জীবনী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
অজয় দেবগন এর প্রাথমিক জীবন, Ajay Devgan early life
১৯৬৯ সালে এক পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অজয় দেবগন৷ তাঁর বাবা ছিলেন স্টান্ট কোরিওগ্রাফার ও চলচ্চিত্র পরিচালক বীরু দেবগন। মা বীণা দেবগনও ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক ৷ অন্যদিকে অজয়ের ছোটো ভাই অনিল দেবগনও একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ৷
অজয় দেবগন এর শিক্ষাগত যোগ্যতা, Ajay Devgan education
অজয় দেবগন এর ছেলেবেলা কেটেছে মুম্বাই তে। তিনি মুম্বাইয়ের জুহুতে অবস্থিত সেন্ট বীচ হাই স্কুল থেকে পড়াশুনা করেন। বিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করে তিনি মিঠীবাই কলেজে পড়ালেখা করেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ৷
অজয় দেবগন এর অভিনয় জীবন, Ajay Devgan’s acting career
অজয় দেবগনের অভিনয় জীবনের শুরু হয় ১৯৯১ সালে, “ফুল অউর কাঁটে” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। কর্মজীবন শুরুর প্রথম ছবির জন্যই তিনি ফিল্মফেয়ার বেস্ট ডেবিউ অ্যাকটর পুরস্কার পান ৷
এর পরবর্তী বছর তাঁর ” জিগার ” ছবি মুক্তি পায় ৷ ছবিটি ১৯৯২ সালের ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম ছিল৷ এরপর অজয় দেবগনকে “দিল হে বেতাব” , “দিব্য শক্তি” , “সংগ্রাম” ,”এক হি রাস্তা”, “শক্তিমান “, “বেদারদি” ,” দিলওয়ালে” , ” সোহাগ” , ” কানুন” , “বিজয়পথ” , “নাজায়েয ” , “জাঙ্গ” প্রমুখ ছবিতে দেখা যায়। ১৯৯৭ সালে তাঁর অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘ইস্ক’ মুক্তি পায়৷ এটি ছিল কমেডিপূর্ণ চলচ্চিত্র এবং অজয়ের সহ অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন আমির খান, কাজল ও জুহি চাওলা ৷
২০০০ সালে অজয়ের “দিওয়ানে” ছবি মুক্তি পায় ৷ এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০২ সালে , তিনি অমিতাভ বচ্চনের সাথে ‘ হাম কিসিসে কাম নাহি ‘ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন৷ ঐবছরই মুক্তি পায় লেজেন্ড অব ভগৎ সিং ৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার অন্যতম নায়ক ভগৎ সিং এর জীবনী নিয়ে রচিত হয়েছিল সিনেমাটি, যেখানে ভগৎ সিং এর ভূমিকায় অভিনয় করেন অজয়, ছবিতে তাঁর অভিনয় বহুল প্রশংসা অর্জন করে৷ তাঁর অভিনয় সকলের মন কেড়ে নেয় ৷
এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন ৷ ক্রমে ২০০৩ সালে রামগোপাল বার্মার পরিচালিত “ভূত” মুভিতে দেখা যায় তাঁকে। এরপর তিনি ” কায়ামত” , ” গঙ্গাজল” , ” লক কার্গিল” , “চোরি চোরি” , “মাস্তি” ইত্যাদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ৷ ২০০৮ সালে রোহিত শেঠি পরিচালিত কমেডিধর্মী চলচ্চিত্র ” গোলমাল” মুক্তি পায়, এরপর ২০০৯ সালে তিনি লন্ডন ড্রিমস মুভিতে কাজ করেন সালমান খানের সাথে৷
২০১০ – ২০১১ সালের সময়ে অজয় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, এই সময়ে তাঁর বেশিরভাগ মুভি ব্যবসাসফল হয় ৷ ২০১০ সালে তাঁর অভিনীত “ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই ” , “রাজনীতি”, “গোলমাল ” ইত্যাদি মুক্তি পায়, যা বক্স অফিসে যথেষ্ট সফল হয়। এরপর কমেডি চলচ্চিত্র “অতিথি তুম কাব যাওগে” বক্স অফিসে প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেছিল৷ উক্ত মুভিতে পরেশ রাওয়াল ও কঙ্কনা সেন শর্মা অজয়ের সহঅভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন ৷
২০১১ সালে রোহিত শেঠী পরিচালিত “সিংহাম” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়, যা অজয় অভিনীত সেরা চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি ৷ সেই বছরই মুক্তি পায় “দিল তো বাচ্চা হে জী”, যেখানে তিনি ইমরান হাশমি সহ আরো বেশ কয়েকজন অভিনেতার সাথে অভিনয় করেন ৷ ২০১২ সালে অজয় দেবগন এর “তেজ” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়৷ ছবিতে অজয় ছাড়াও অনিল কাপুর, বোমান ইরানি প্রমুখ জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনয় করেছেন ৷
ঐ বছরই “সান অব সারদার” মুক্তি পায় যা ছিল কমেডিপূর্ণ এবং ছবিতে সোনাক্ষি সিনহা অজয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। ২০১৩ সালে মুক্তি পায়, “হিম্মতওয়ালা” চলচ্চিত্রটি, যেখানে অজয় এর বিপরীতে তামান্না ভাটিয়া অভিনয় করেন ৷ পরবর্তীতে প্রকাশ ঝা পরিচালিত “সত্যাগ্রহ” মুভিতে অভিনয় করেন তিনি।
“সিংহাম” এর ধারার ২য় মুভি “সিংহাম রিটার্নস” ২০১৪ সালে মুক্তি পায়৷ সেই বছরই জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী তথা পরিচালক প্রভু দেবা পরিচালিত অ্যাকশন কমেডি চলচ্চিত্র “অ্যাকশন জ্যকশন” মুক্তি পায়৷ উক্ত সিনেমাতে অজয়ের দ্বি-পার্শ্বিক অভিনয় ছিল প্রশংসাপূর্ণ ৷ ২০১৫ সালে “দৃশ্যাম” চলচ্চিত্রে দেখা যায় তাঁকে।
এই ছবির জন্য তিনি প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেন ৷ পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তাঁর নিজস্ব প্রযোজনায় মুক্তি পায় “শিবায়” মুভিটি। চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ১৪৬ কোটি রূপি আয় করে।
অজয় দেবগন ২০১৭ সালে ‘বাদশাহো’ এবং ‘গোলমাল এগেইন’ ছবিতে অভিনয় করেন। মিলন লুথারিয়ার পরিচালিত ‘বাদশাহো’ ছবি বিশ্বব্যাপী ১২৩.৫০ কোটি টাকা আয় করে। অপরদিকে রোহিত শেঠির পরিচালিত “গোলমাল এগেইন” ছবিটি বিশ্বব্যাপী ৩১১ কোটি টাকা আয় করে।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ‘রেইড’ চলচ্চিত্রটি, যা পৃথিবীব্যাপী ১৪৫ কোটি টাকা আয় করে। এরপরের কিছু বছর তাঁর আরো কিছু ছবি মুক্তি পায়। সেগুলো হল : “তানাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিওর” এবং “ভুজ: দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া”। ২০২২ সালে তাঁর অভিনীত”দৃশ্যাম ২” মুক্তি পায়।
অজয় দেবগন এর সিনেমার তালিকা, List of films acted by Ajay Devgan
- ফুল অউর কাঁটে (১৯৯১)
- জিগার (১৯৯২)
- প্লাটফর্ম (১৯৯৩)
- শক্তিমান (১৯৯৩ )
- দিল হ্যায় বেহ্তাব (১৯৯৩)
- এক হি রাস্তা (১৯৯৩)
- বেদারদি (১৯৯৩)
- সংগ্রাম (১৯৯৩)
- দিলওয়ালে (১৯৯৪)
- বিজয়পথ (১৯৯৪)
- সোহাগ(১৯৯৪)
- ম্যাডাম এক্স (১৯৯৪)
- নাজায়েজ (১৯৯৫)
- হালচাল (১৯৯৫)
- গুন্ডারাজ (১৯৯৫)
- হাকিকাত (১৯৯৫)
- জঙ্গ (১৯৯৬)
- দিলজালে (১৯৯৬)
- জান (১৯৯৬)
- ইস্ক (১৯৯৭)
- মেজর সাব (১৯৯৮)
- পেয়্যার তো হোনা হি থা (১৯৯৮)
অজয় ও কাজলের বৈবাহিক সম্পর্ক, Ajay Devgan married life with Kajol
১৯৯৯ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, অভিনেত্রী কাজলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অজয়। ১৯৯৫ সালে “গুন্ডারাজ” চলচ্চিত্রে কাজ করার সময় থেকে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷
কয়েকবছর ধরে সম্পর্কে থাকার পর তারা বিয়ে করেন। তখন যদিও সংবাদমাধ্যম তাদের বিবাহকে নিয়ে সমলোচনার সৃষ্টি করেছিল, তবে বর্তমানে বলিউডের শ্রেষ্ঠ দম্পতির মধ্যে তাদের জুটি অন্যতম ৷ অজয়- কাজলের সংসারে তাদের দুই সন্তান রয়েছে, একটি মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় ২০০৩ সালে এবং তাদের পুত্র জন্মগ্রহণ করে ২০১০ সালে৷
অজয়ের প্রযোজনা কোম্পানি, Ajay’s production company
২০০০ সালে অজয়ের নিজস্ব প্রযোজনা কোম্পানি অজয় দেবগন ফিল্মস প্রতিষ্ঠিত হয়৷ “অজয় দেবগন ফিল্মস” এর প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র হল “রাজু চাচু”, যেখানে কাজল ও অজয় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
এরপর তিনি “ইউ মি অউর হাম” চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ২০০৮ সালে তাঁর প্রোডাকশন থেকে মুক্তি পায় “অল দ্য বেস্ট” চলচ্চিত্র, যেখানে অজয় নিজে অভিনয় করেন, তবে তাঁর সহ অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন বিপাশা বসু, সঞ্জয় দত্ত এবং আরো অনেকে৷
২০১২ সালে তাঁর প্রোডাকশন থেকে রোহিত শেঠি পরিচালিত তৈরি হয় “বোল বচ্চন” চলচ্চিত্রটি, যেখানে অজয়, অসিন, অভিষেক বচ্চন, প্রাচী দেসাই সহ আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় অভিনেতা কাজ করেন৷ ছবির নির্মানব্যায় ছিল ৭০ কোটি এবং মুক্তির পর ছবিটি বক্স অফিসে ১৫৮ কোটি টাকা আয় করে ৷
অজয় দেবগন এর পুরস্কার প্রাপ্তি, awards and recognition
অজয় দেবগন অভিনয় জগতে বিশেষ অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়াও তিনি চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অভিনেতাকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করা হয়।
উপসংহার, Conclusion
অজয় দেবগন অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। প্রতিটি সিনেমার ক্ষেত্রে তিনি নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন এবং সেই সুবাদে বহু পুরস্কারের পাশাপাশি দর্শকদের প্রশংসার অধিকারী হন। আশা করা যায় তাঁকে ভবিষ্যতেও আরো ভালো ছবিতে কাজ করতে দেখা যাবে।
Frequently Asked Questions
১৯৬৯ সালে।
ফুল আউর কাঁটে।
রাজু চাচু।