বাংলাদেশী পপ গায়ক আসিফ আকবর এর গান আমরা সকলেই শুনেছি। গায়ক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে কম নয়। তাই তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও অনেক। একজন বাংলাদেশী সংগীত শিল্পী হিসেবে তিনি দেশের পপ-ধারার সঙ্গীত শিল্পকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তবে শুরু গায়ক হিসেবেই তাঁর কর্মক্ষেত্রে থেকে নেই, গানের পাশাপাশি তিনি অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত। শ্রোতা এবং সাংবাদিকরা ভালোবেসে তাকে বাংলা গানের যুবরাজ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
আসিফ আকবরের জন্ম ও পরিবার, Birth and family Identity of Asif Akbar :
আকবর আসিফ ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় জন্ম হয় তাঁর। বিশিষ্ট এই গায়কের পিতার নাম আলী আকবর এবং মাতা রোকেয়া আকবর। আসিফ মাতা পিতার পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন।
আসিফ আকবরের প্রথম গান কোনটি? Which is the first song of Asif Akbar?
ও প্রিয়া তুমি কোথায় বাংলাদেশী শিল্পী আসিফ আকবরের প্রথম সঙ্গীত অ্যালবাম। এটি সাউন্ডটেকের ব্যানারে ৩০ জানুয়ারি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। তাঁর এই প্রথম সঙ্গীত এ্যালবাম এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
আসিফ আকবরের ক্যারিয়ার, Career of Asif Akbar :
চলচ্চিত্রে আসিফ আকবরের গাওয়া প্রথম গান হল ‘আমারই ভাগ্যে তোমারই নাম’। ১৯৯৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘রাজা নাম্বার ওয়ান’ চলচ্চিত্রে গানটি গেয়েছিলেন তিনি। ক্রমে ২০১৯ সালে তিনি অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘গহীনের গান’ চলচ্চিত্রে আসিফ অভিনয় করেছিলেন।
গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার ক্ষেত্রে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়টা ছিল আসিফের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। উক্ত বছরগুলোতে একের পর এক অ্যালবাম প্রকাশ করেন তিনি, আর এই অ্যালবামগুলোর বিক্রির দিক থেকেও সে সময়ে শীর্ষে ছিলেন আসিফ।
তিনি ধারাবাহিকভাবে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, কুমার সানু , বাপ্পা মজুমদার , ডলি শাওনতনি , সুজানা আনসার , সোনিয়া, কানিজ সুবর্ণা, দিনাত জাহান মুন্নি, মনিরের মতো গায়কদের সাথে ডুয়েট গান করেন। তাঁর প্রথম গানের এ্যালবামের ৫.৫ মিলিয়ন বৈধ কপি বিক্রি হয়েছিল, যা বাংলাদেশের অডিও ইতিহাসে বর্তমান অবধি সর্বোচ্চ। বলাই বাহুল্য যে, সদা স্পষ্টভাষী আসিফ আকবর বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যার জনপ্রিয়তা এবং আধিপত্য এখন পর্যন্ত সমানভাবে বিরাজমান।
আসিফ আকবরের ব্যক্তিগত জীবন, Personal Life of Asif Akbar :
আসিফ আকবর দাম্পত্য সঙ্গী হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন সালমা আসিফ মিতু- কে। এই দম্পতির সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। তাদের নাম হল রণ, রুদ্র এবং সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সন্তান আইদাহ্ আসিফ রঙ্গন।
মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়, Acting in music videos :
আসিফ নিজের মিউজিক ভিডিওগুলোতে অভিনয় করে থাকেন। এই ব্যাপারটা সকলেই লক্ষ্য করেছেন। অভিনেতা হিসেবে তাঁর কাজও দর্শকদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
আসিফের একক অ্যালবাম, Asif’s solo album :
- তুমিই সুখী হও
- তুমিই কথা রাখনি
- তুমিও কাদবে একদিন
- সুখে থেকো তুমি বান্ধবী
- পাষাণী তুমি পাষাণী
- তুমিই মনে রাখনী
- একবার বল তুমি
- কেন তুমি সুখে থাকবে
- তুমিই ভালবাসনি
- তবুও ভালবাসি
- বাতাসে প্রেম উড়িয়ে দিও
- বাঁচব না
- জবাব দাও
- অভিনয়
- সংসার
- হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
- কিছু ভুল কিছু স্মৃতি
- এখনো জোঁসনা দেখি
- এক ফোটা অশ্রু পপ
- বন্ধু তোর খবর কিরে
আসিফের মিশ্র ও দ্বৈত অ্যালবাম, Asif’s Duet and mixed Albums :
- আমরা দুজনে
- অনুভবে
- আসমান সাক্ষী
- আয় ফিরে আয়
- এইতো জীবন
- ব্যর্থ প্রেমের গল্প
- বায়না
- বেদনার অশ্রু
- ভুলতে পারিনা সাথী
- বিরহী হৃদয়
- বিষন্ন সন্ধ্যা
- বাঁধন
- বন্ধু মায়া নাই
- বন্ধুরে
- বুঝিনি কাঁদাবে
- চাঁদের দেশের কন্যা
- ছেলে মানুষী
এছাড়াও আরো বহু অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন আসিফ আকবর।
আসিফের লেখা বই, Books written by Asif :
আসিফ আকবর গায়ক তথা অভিনেতা, এই বিষয় সকলেই জানেন। তবে আপনারা কি জানেন তিনি লেখক হিসেবেও পাঠকদের কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখা দুটো বই এর মাধ্যমে। আসিফের লেখা বইগুলো হল :
- পোটকরা টু ম্যানহাটান (২০২০)
- আকবর ফিফটি নট আউট
আসিফ আকবরের প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and honors received by Asif Akbar :
আকবর 2001 থেকে 2005 সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর শ্রেষ্ঠ গায়ক (পুরুষ) জন্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার , 2006-এর জন্য সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়কের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং 2013 সালে ষষ্ঠ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান । তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারগুলো হল :
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: ১ বার
- মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার: ৬ বার
- ৭ম বিএমজেএ মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-২০১৯: ১ বার
- ৮ম আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড: ১ বার
- সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড: ১ বার
উক্ত পুরস্কারগুলো ছাড়াও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অ্যালবাম বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে থাকার বিষয়টা বাংলাদেশের অডিও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এক বিরল ঘটনা, যা নিয়ে আজও আলোচনা হয়।
সঙ্গীতাঙ্গনে আসিফের জনপ্রিয়তা, Asif’s popularity in the music industry :
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের ইতিহাসে সাড়াজাগানো যত বাংলা গান রয়েছে তার মধ্যে আসিফের গান সবচেয়ে জনপ্রিয়তার সবচেয়ে। বাংলাদেশে হয়তো এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে আসিফ এর গান পছন্দ করে না। দেখতে গেলে, আসিফ কয়েকশত গান গেয়ে তাঁর শ্রোতাদের মন জয় করেছেন। তাঁর গানের ধরনের মধ্যে আছে বিরহের গান, ভালোবাসার গান, দেশপ্রেমের গান ইত্যাদি। সঙ্গীতাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন তিনি। নির্দিষ্ট সময় পর পর গান প্রকাশ করে গেছেন। এক সাক্ষাৎকারে গানের অ্যালবাম প্রকাশ করা নিয়ে আসিফ বলেন,
‘আমি যখন গানের জগতে আসি, তখন বছরে ২০০- ২৫০ গান গাইতাম। তখন তো অ্যালবামের যুগ ছিল। বছরে তিনটা একক অ্যালবাম, তিনটা দ্বৈত, অসংখ্য মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশিত হতো। চলচ্চিত্রের গান তো ছিলই। এখন ভিডিওর যুগ হওয়াতে, একটি গানে সময় দিতে হয় বেশি।’
দুই দশকেরও বেশি সময়ের পেশাদার সংগীতজীবন আসিফের। কিন্তু তবে গানের ক্যারিয়ার যখন তুঙ্গে ছিল, সেই অবস্থায় হঠাৎ অবসরে চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে আবার গানের জগতে ফেরেন তিনি। সেই সময় এক সাক্ষাৎকারে আসিফের ভাষ্য, ‘বিরতির পর আমি যখন কাজে ফিরি, তখন দেখি সংগীতাঙ্গনের মরা অবস্থা। গান প্রকাশের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গান ভবিষ্যতে জীবনের সম্পদ, এটা ভেবে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাই।’
আসিফ আকবরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, Discussion and criticism about Asif Akbar :
দেশের জনপ্রিয় সংগীত তারকা আসিফ আকবর বেশ কিছুবার সমালোচনায় এসেছেন। এর নেপথ্যে মূল কারণ ছিল এই যে, 2018 সালের জুন মাসে জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও গায়ক শফিক তুহিন তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছিলেন। আকবরকে ৬ জুন ঢাকার এফডিসি এলাকায় তার স্টুডিও থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকার একটি আদালত রিমান্ড ও জামিন উভয় আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৫ দিন কারাগারে থাকার পর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জামিন দেন।
এছাড়াও গায়িকা ন্যান্সির করা মানহানির মামলার আসামি হয়ে যান তিনি। আসিফ ভক্তদের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল যে তাদের প্রিয় গায়কই কেনও এভাবে মামলায় জড়াচ্ছেন। এদিকে গায়ক নিজেও এসব বিষয় নিয়ে চুপ করে থাকেন নি। তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তাঁর অনুরাগীদের বলেছিলেন,
‘মানুষের মনে প্রশ্ন আছে আমিই কেন শুধু ঝামেলায় জড়াই। আমিও উটপাখি হয়ে সবার মত মুখ গুঁজে নিজের স্বার্থ বুঝে নিয়ে চুপ থাকতে পারতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি বিতর্কে জড়িয়ে আছি প্রভাবশালী হাতিদের বিপক্ষে। ছোটদের উপর বড়দের অনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে লড়ে গেছি। অনেক কিছু হারিয়েছি, শুধু মাথাটাকে চির উন্নত মম শির হিসেবেই রেখেছি। সব ঝামেলায় আমাকে পাওয়ার কারণ একটাই, আমি অনৈতিকতার প্রতিবাদ করি, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করি। তথাকথিত নপুংসক তারকা হয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে স্বার্থকতা খুঁজিনি কখনো। মানিয়ে চললে অনেক ভালো থাকতে পারতাম, বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকার চেষ্টায় সত্যটাকেই ধারণ করি, আর এখানেই সমস্ত সমস্যার শুরু।’
শেষ কথা, Conclusion :
বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আসিফ আকবর বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে একক, দ্বৈত এবং মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ করেন। তাঁর প্রায় সকল গানই শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।
Frequently Asked Questions :
আসিফ আকবর কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
সালমা আসিফ মিতু
১৯৯৮ সালে রাজা নাম্বার ওয়ান চলচ্চিত্রে