অবন্তী বিশ্বাস হলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি অপু বিশ্বাস নামে জনগণের মধ্যে অধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের একজন মডেল এবং উল্লেখযোগ্য অভিনেতা শাকিব খানের সাবেক স্ত্রী। অপু বিশ্বাস ২০০৬ সালে ‘কাল সকালে’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।
পরিবার পরিচয়, Family identity
অপু বিশ্বাস ১৯৮৯ সালের ১১ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস (মৃত্যু ২০১৪) এবং শেফালী বিশ্বাস (মৃত্যু ২০২০) এর ঘরে জন্ম নেন তিনি। উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং শেফালী বিশ্বাসের সংসারে তিন কন্যা ও এক পুত্র ছিল। তবে সকল ভাইবোনের মধ্যে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ছিলেন সবার ছোট।
অভিনেত্রীর শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন, Childhood and educational life of Apu Biswas
অপু বিশ্বাসের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বগুড়াতেই। তাঁর প্রথম স্কুল ছিল এসওএস হারম্যান মেইনার। তারপর বেশ কয়েকবার তিনি স্কুল বদল করেন, এক কথায় তিনি এক স্কুলেই শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করেন নি বরং ভিন্ন স্কুলে পড়াশুনা করেন। এসওএস হারম্যান মেইনার এর পর ভর্তি হন আলোর মেলা, এরপর ক্রিসেন্ট হাই স্কুল এবং সব শেষে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। পড়াশুনার পাশাপাশি বাবা-মায়ের যৌথ উৎসাহেই তিনি নাচ শিখতে শুরু করেন।
বগুড়ার নৃত্যগুরু আবদুস সামাদের কাছে অভিনেত্রী নাচের তালিম নেন। অপুর প্রাতিষ্ঠানিক নাচের হাতেখড়ি হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে। তারপর তিনি শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন এবং সবশেষে নৃত্যাঞ্চলে নাচ শিখেন। স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন অপু বিশ্বাস নৃত্যাঞ্চল আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় দশম স্থান অধিকার করেছিলেন।
অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসের কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক, Career life of Apu Biswas
অপু বিশ্বাস ২০০৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত এক চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একই সালে এফআই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে শাকিব খানের বিপরীতে প্রধান নায়িকা হিসাবে অভিনয় করেন তিনি। ক্রমে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। অভিনেত্রী শাকিব খানের বিপরীতে ৭২টিরও অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অপু বিশ্বাস ২০১৩ সালে দেবদাসের বাংলাদেশী রিমেকে পার্বতীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। তাছাড়াও একই সালে তিনি বাংলাদেশী ছবি “মাই নেম ইজ খান” চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত উক্ত ছায়াছবিটি ঢালিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের সেরা দশ এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল। শাকিব-অপু জুটির প্রায় সব ছবিই সফল হয়েছিল। দর্শকরা তাদের জুটি খুব পছন্দ করেছিলেন।
অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস অভিনীত কিছু চলচ্চিত্র, Movies starring actress Apu Biswas
২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
কাল সকালে, সহশিল্পী ফেরদৌস, শাবনূর, পরিচালক আমজাদ হোসেন।
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
চাচ্চু, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক এফ আই মানিক।
দাদীমা, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক এফ আই মানিক।
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
পিতার আসন, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক এফ আই মানিক।
কাবিননামা, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক এফ আই মানিক।
তোমার জন্য মরতে পারি, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক সাফি-ইকবাল।
স্বামীর সংসার, সহশিল্পী শাকিব খান।
কথা দাও সাথী হবে, সহশিল্পী শাকিব খান।
২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
আমাদের ছোট সাহেব, সহশিল্পী শাকিব খান।
আমার জান আমার প্রাণ সহশিল্পী শাকিব খান।
সন্তান আমার অহংকার, সহশিল্পী শাকিব খান।
তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক শাহাদাত হোসেন লিটন।
মনে প্রাণে আছ তুমি, সহশিল্পী শাকিব খান, পরিচালক জাকির হোসেন রাজু।
যদি বউ সাজোগো, সহশিল্পী শাকিব খান।
তুমি আমার প্রেম, সহশিল্পী শাকিব খান।
পিতা মাতার আমানত, সহশিল্পী মান্না, পূর্ণিমা, পরিচালক এফ আই মানিক।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
মন যেখানে হৃদয় সেখানে; সহশিল্পী নিরব, শাকিব খান, রত্না; পরিচালক শাহীন সুমন।
ও সাথী রে।
জন্ম তোমার জন্য।
মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি, পরিচালক এফ আই মানিক।
ভালোবাসা দিবি কিনা বল?
২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, পরিচালক জাকির হোসেন রাজু।
প্রেমে পড়েছি,
নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, পরিচালক বদিউল আলম খোকন।
নিঃশ্বাস আমার তুমি, পরিচালক বদিউল আলম খোকন।
জীবন মরণের সাথী, পরিচালক শাহাদাত হোসেন লিটন।
তুমি আমার মনের মানুষ।
প্রেম মানে না বাঁধা।
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
মনের জ্বালা, পরিচালক মালেক আফসারী ।
অন্তরে আছো তুমি।
কোটি টাকার প্রেম, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান।
মনের ঘরে বসত করে, পরিচালক জাকির হোসেন রাজু।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
এক টাকার দেনমোহর।
এক মন এক প্রাণ।
ঢাকার কিং।
দূর্ধর্ষ প্রেমিক, পরিচালক এম বি মানিক।
বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না, পরিচালক আলম খোকন।
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
ভালোবাসা এক্সপ্রেস।
ডেয়ারিং লাভার, পরিচালক বদিউল আলম খোকন ।
হিরো: দ্যা সুপার স্টার, পরিচালক বদিউল আলম খোকন(শাকিব খান প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র)।
হিটম্যান তানিয়া, পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন।
কঠিন প্রতিশোধ।
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
লাভ ম্যারেজ।
দুই পৃথিবী, পরিচালক এফ আই মানিক।
রাজাবাবু – দ্য পাওয়ার, পরিচালক বদিউল আলম খোকন।
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
রাজা ৪২০, পরিচালক উত্তম আকাশ।
সম্রাট: দ্য কিং ইজ হেয়ার, পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
রাজনীতি, পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
পাংকু জামাই, পরিচালক আবদুল মান্নান।
২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
প্রিয় কমলা, সহ শিল্পী বাপ্পী চৌধুরী, পরিচালক শাহরিয়ার নাজিম জয়।
২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২, পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস।
ঈশা খাঁ, সহশিল্পী দায়েল রহমান।
২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র
লাল শাড়ি, সহশিল্পী সায়মন সাদিক, পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস।
ওপারে চন্দ্রাবতী, সহশিল্পী সায়মন সাদিক, পরিচালক রফিক শিকদার।
ছায়াবৃক্ষ, সহশিল্পী নিরব, পরিচালক বন্ধন বিশ্বাস।
প্রেম প্রীতির বন্ধন, সহশিল্পী জয় চৌধুরী, পরিচালক সোলায়মান আলী লেবু।
ছায়াবাজি, প্রথম ওয়েব ফিল্ম।
অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of actress
অপু বিশ্বাস ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশী অভিনেতা শাকিব খানকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি নিজের বিয়ে গোপন রেখেছিলেন ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের সংসারে একটি ছেলের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় আব্রাম খান জয়। কিন্তু তাদের সুখের সংসার বেশিদিন টেকেনি।
শাকিব খান ২০১৭ সালের শেষের দিকে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন এবং ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নিঃসন্দেহে অপু বিশ্বাস বিবাহ পূর্বে একজন হিন্দু ছিলেন এবং বিয়ের পর ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাঁর নাম পরিবর্তন করে অপু ইসলাম খান রাখা হয়েছিল, তবে, পরবর্তীতে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেন।
অভিনেত্রীর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and recognition
অপু বিশ্বাস ২০০৮ সালের “জান আমার জান” চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘এক বুক ভালোবাসা’ ও ২০০৯ সালের ‘মনে বড় কষ্ট’ চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার তারকা জরিপে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। তিনি ছয়বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন লাভ করেন। তাছাড়াও কর্মজীবনে অপু ‘মাই নেম ইস খান’ ও ‘রাজনীতি’ ছবির জন্য বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেছেন। গ্ল্যামার পুরস্কারের পক্ষ থেকে ২০১০ সালে ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’ ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার পান।
অপু বিশ্বাস সম্পর্কে ব্যক্তিগত কিছু তথ্য, personal information about Apu Biswas
সেন্টিমিটারে উচ্চতা: 167 সেমি
মিটারে উচ্চতা: 1.67 মি
ইঞ্চিতে উচ্চতা: 5’6″
কিলোগ্রামে ওজন: 58 কেজি
পাউন্ডে ওজন: 127 পাউন্ড
শরীরের পরিমাপ: 36-26-37 ইঞ্চি
ব্রা সাইজ: 36-C
কোমরের মাপ: 26 ইঞ্চি
নিতম্বের সাইজ: 37 ইঞ্চি
দৈহিক আকৃতি: ঘন্টাঘাস
রাশি রাশি/ রাশিচক্র: তুলা রাশি
চুলের রঙ: কালো
চোখের রঙ: গাঢ় বাদামী
জামার মাপ: 4-মার্কিন
জুতার মাপ: 8-মার্কিন
প্রিয় অভিনেতা: শাকিব খান
প্রিয় অভিনেত্রীঃ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
প্রিয় রং: লাল, কালো, গাঢ় নীল, গোলাপী
পছন্দের খাবার: মাছ–ভাত, গরুর মাংস
প্রিয় গন্তব্য: থাইল্যান্ড
শখ: কেনাকাটা, বিভিন্ন ধরনের পাদুকা সংগ্রহ, নাচ।
অপু বিশ্বাসের সম্পদের পরিমাণ, Apu Biswas net worth
মোট সম্পদের পরিমাণ : ৫ কোটি টাকা
সিনেমা প্রতি বেতন : 2 লক্ষ থেকে 6 লক্ষ টাকা
উপসংহার, conclusion
অপু বিশ্বাস বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তথা সুন্দরী অভিনেত্রী হিসেবে সুপরিচিত। ভালো অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর সৌন্দর্যও মানুষকে বেশ আকর্ষণ করে। দেখতে গেলে প্রথম ছবির মাধ্যমে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি, আর এখন রাজত্ব করছে কোটি কোটি মানুষের মনে।
Frequently asked questions
অবন্তী বিশ্বাস হলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী
১৯৮৯ সালের ১১ই অক্টোবর
শাকিব খান।
কাল সকালে।