ডোয়েইন জনসন এর জীবনী, Biography of Dwayne Johnson in Bengali 

ডোয়েইন জনসন এর জীবনী

ডোয়াইন ডগলাস জনসন নামটির সাথে সকলেরই কম বেশ পরিচিতি রয়েছে। তিনি একজন সুখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক তথা প্রাক্তন পেশাদার কুস্তিগীর, যিনি রিং নামেও পরিচিত । ডোয়াইন ডগলাস জনসন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পেশাদার কুস্তিগীর হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত। তিনি একসময় বিশ্ব কুস্তি ফেডারেশন WWE (পূর্বে WWF) এর বিকাশ ও সাফল্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন। জনসন অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আগের আট বছর ধরে WWF-এর জন্য কুস্তি করেছিলেন। 

জন্ম ও পরিবার পরিচিতি, Birth and Family identity

ডোয়াইন জনসন ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যাওয়ার্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২রা মে তাঁর জন্ম হয়।   জনসন নিজের মায়ের পরিবারের সাথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের গ্রে লিনে বসবাস করতেন। জনসনের বাবা ছিলেন একজন কালো নোভাস্কশিয়ান এবং মা সামোয়ান। তার বাবা এবং টনি অ্যাটলাস ১৯৮৩ সালে WWE এর ইতিহাসে প্রথম ব্ল্যাক ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। অন্যদিকে তাঁর মা ছিলেন পিটার মাইভিয়ার দত্তক কন্যা।

জন্ম ও পরিবার পরিচিতি

পিটার একজন পেশাদার কুস্তিগীর ছিলেন। অন্যদিকে জনসনের মাতামহী লিয়া প্রথম মহিলা প্রো রেসলিং প্রবর্তকদের একজন ছিলেন, যিনি ১৯৮২ সাল থেকে পলিনেশিয়ান প্যাসিফিক প্রো রেসলিং এর দায়িত্ব নেন এবং ১৯৮৮ সাল অবধি এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। বলতে গেলে জনসন রেসলিং এর সাথে বংশ পরম্পরায় যুক্ত হন।

শিক্ষা জীবন, Education

ডোয়াইন জনসন উত্তর ক্যারোলিনার শার্লটের মন্টক্লেয়ার এলিমেন্টারি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানে তিনি শেফার্ড গ্লেন এলিমেন্টারি স্কুল এবং পরবর্তীতে হ্যামডেন মিডল স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি একের পর এক ভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তিনি হনলুলুতে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলে হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন, এরপর ন্যাশভিলের গ্লেনক্লিফ হাই স্কুল এবং ম্যাকগাভক হাই স্কুলে, তারপর লেহই উপত্যকার বেথলেহেম টাউনশিপের ফ্রিডম হাই স্কুলেও পড়াশোনা করেন জনসন, সেখান থেকে তিনি ১৯৯০ সালে স্নাতক হন। 

পরবর্তীতে তিনি মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ জেনারেল স্টাডিজ এবং ক্রিমিনোলজি এবং ফিজিওলজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

ফুটবল এর প্রতি উৎসাহ, Affinity for football

ছাত্রজীবনে ফুটবল খেলার প্রতি খুব আকর্ষণ ছিল জনসনের, তিনি ফুটবলে প্রতিরক্ষামূলক ট্যাকল খেলায় খুব ভালো ছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি মিয়ামি হারিকেনস ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন এবং সেই বছরের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী হয়েছিলেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর, কানাডিয়ান ফুটবল লীগের ক্যালগারি স্ট্যাম্পেডার্স দ্বারা স্বাক্ষরিত হন জনসন। ক্যালগারি জনসনকে রক্ষণাত্মক ট্যাকল থেকে লাইনব্যাকার অবস্থানে নিয়ে যায়। 

ফুটবল এর প্রতি উৎসাহ

রেসলিং ক্যারিয়ার, Wrestling Career

১৯৯৫ সালে ক্যালগারি থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর, জনসন পরের বছরই নিজের পেশাদার রেসলিং ক্যারিয়ারে যোগ দেন। প্রথমে তিনি নিজের আসল নামেই রেসলিং শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জেরি ললারের ইউনাইটেড স্টেটস রেসলিং অ্যাসোসিয়েশনে ফ্লেক্স কাভানা নাম ধারণ করে বার্ট সোয়ারের সাথে দুইবার ইউএসডব্লিউএ ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ এর জন্য , WWF এর এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। 

পরবর্তী সময়ে তিনি রেসলিংয়ে দ্য রক নামেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। দ্য রক এক বছরে প্রধান-ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি শো এর রেকর্ড রাখেন , সালটি ছিল 2000, উক্ত সালে তিনি ৩৮ টি শো করে রেকর্ড তৈরি করেন। ডোয়াইন ডগলাস জনসন এর রেসলিং ক্যারিয়ার অনেক ওঠা নামার মধ্য দিয়ে কেটেছিল, বিভিন্ন সময় বহু সমস্যার সম্মুখীনও হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই সব কিছু কাটিয়ে উঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রেসলিং ক্যারিয়ার

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মজীবন, Career in Film Industry

জনসন হলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করার পর তাঁর কুস্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত জনপ্রিয়তা এবং উল্লেখযোগ্য কাজের নীতির মধ্য দিয়ে তিনি অভিনয় ক্যারিয়ারেও অল্প সময়ের মধ্যেই হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত তথা সবচেয়ে সফল অভিনেতাদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি কুস্তি খেলার সময় থেকেই টেলিভিশনের মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন।

টেলিভিশনে অভিনয়ের প্রথম কাজ হল, ১৯৯৯ সালের, “সেই রেসলিং শো” নামক ৭০ দশকের এক পর্ব, যেখানে তিনি নিজের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জনসন দ্য মমি রিটার্নস (২০০১), দ্য স্করপিয়ন কিং (২০০২), দ্য রানডাউন (২০০৩), এবং ওয়াকিং টল (২০০৪); তিনি একজন দেহরক্ষী হিসেবে ‘বি কুল’ (২০০৫) , নামক চলচ্চিত্রে এক সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২০০৬ সালে গ্রিডিরন গ্যাং এবং সাউথল্যান্ড টেলস, ২০০৭ সালে রেনো 911!: মিয়ামি ছবিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন । তাছাড়াও তিনি ২০০৭ সালে দ্য গেম প্ল্যান এবং ২০০৮ সালে গেট স্মার্ট-এ এজেন্ট এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ।

জনসন আরও অসংখ্য সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যেমন টুথ ফেয়ারি (২০১০), জার্নি 2: দ্য মিস্ট্রিয়াস আইল্যান্ড (২০১২), পেইন অ্যান্ড গেইন (২০১৪), জিআই জো: রিটেলিয়েশন (২০১৩), হারকিউলিস (২০১৪), সান আন্দ্রেস (২০১৫), সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স (২০১৬), মোয়ানা (২০১৬), জঙ্গল ক্রুজ (২০২১) প্রভৃতি। তাছাড়াও ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস এর মত বিশ্ব বিখ্যাত চলচ্চিত্রের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে অভিনয় করা ছিল জনসনের বক্স অফিসে মুক্তি প্রাপ্ত সবচেয়ে সফল ছবি।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মজীবন

তিনি ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস 6 (২০১৩), ফিউরিয়াস 7 (২০১৫), এবং ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য ফেট অফ দ্য ফিউরিয়াস- এ অভিনয় করেছিলেন। জনসন অভিনীত আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফ্র্যাঞ্চাইজি হল জুমানজি ফ্র্যাঞ্চাইজি , তিনি ২০১৭ সালে জুমানজি: ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল এবং ২০১৯ সালে এর সিক্যুয়েল জুমানজি: দ্য নেক্সট লেভেলএও অভিনয় করেছেন। তাঁর বেশ কিছু চলচ্চিত্র উত্তর আমেরিকায় $3.5 বিলিয়ন এবং কিছু $10.5 বিলিয়নেরও বেশি আয় করেছে, যা তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী তথা সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত অভিনেতাদের মধ্যে একজন করে তোলে।

ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য, Personal life

১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মী ড্যানি গার্সিয়ার সাথে ডোয়াইন জনসনের পরিচয় হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ রা মে তারা দুজনে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতির কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় সিমোন , ২০০১ সালের ১৪ আগস্ট এই কন্যার জন্ম হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে এই দম্পতি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলাদা হয়ে যান, অর্থাৎ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

২০০৭ সালের দিকে জনসন, বোস্টনের ড্রামার সিব হাশিয়ানের কন্যা লরেন হাশিয়ানের সাথে ডেটিং করতে শুরু করেন। ২০০৬ সালে দ্য গেম প্ল্যানের চিত্রগ্রহণের সময় তাদের প্রথম দেখা হয়। বেশ কিছু বছর ডেটিং করার পর ২০০৯ সালের ১৮ আগস্ট হাওয়াইতে তাদের বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতির সংসারে দুটি কন্যা রয়েছে, যাদের নাম জেসমিন এবং তিয়ানা।

ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য

জনসনের প্রযোজনা সংস্থা, Johnson’s Production Company

ডোয়াইন ডগলাস জনসন ২০১২ সালে, নিজের প্রযোজনা সংস্থা সেভেন বক্স প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন । ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় এই সংস্থার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের ট্রেলারের সাথে অফিসিয়াল টিজার, প্রকল্পটি জুমানজি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে, জনসন ফাইটিং উইথ মাই ফ্যামিলি নামক একটি কমেডি নাটক তৈরি করেন।

তিনি নিজেই তাতে অভিনয় করেন। ২০২১ সালে, এই সংস্থার প্রযোজনায় জনসনের জীবনীমূলক কমেডি-ড্রামা সিরিজ ইয়ং রক এনবিসি-তে প্রচারিত হতে শুরু করে। বলতে গেলে জনসন এই প্রযোজনা সংস্থার মধ্য দিয়ে ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যে বিশেষ প্রভাব তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি “দ্য টাইটান গেমস” নামক টিভি শো এর স্রষ্টা যা ২০১৯ থেকে ২০২০ অবধি পরিচালিত হয়েছিল।

চ্যাম্পিয়নশিপ এবং কৃতিত্ব, Champianship and Achievement

প্রো রেসলিং ইলাস্ট্রেটেড

বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় কুস্তিগীর (১৯৯৯, ২০০০ সাল) 

বর্ষসেরা কুস্তিগীর (২০০০) 

২০০০ সালে পিডব্লিউআই ৫০০- র শীর্ষ ৫০০ একক কুস্তিগীরদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেসলিং অ্যাসোসিয়েশন

ইউএসডব্লিউএ ওয়ার্ল্ড ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ ( ২ বার ) – বার্ট সোয়ারের সাথে।

রেসলিং অবজারভার নিউজলেটার

সেরা বক্স অফিস ড্র (২০০০, ২০২১, ২০১২) 

সেরা গিমিক (১৯৯৯) 

মোস্ট ক্যারিশম্যাটিক (১৯৯৯-২০০২, ২০১২, ২০১২)  

রেসলিং অবজারভার নিউজলেটার হল অফ ফেম (ক্লাস অফ 2007 ) 

WWE/ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট/ফেডারেশন

WWE চ্যাম্পিয়নশিপ ( 8 বার ) 

WCW চ্যাম্পিয়নশিপ ( 2 বার ) 

WWF ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপ ( 2 বার ) 

WWF ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ ( 5 বার ) – ম্যানকাইন্ডের সাথে (3), আন্ডারটেকার (1), এবং ক্রিস জেরিকো (1) 

রয়্যাল রাম্বল ( ২০০০ ) 

ষষ্ঠ ট্রিপল ক্রাউন চ্যাম্পিয়ন 

ডেডলি গেমস ডাব্লুডাব্লিউএফ চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট (১৯৯৮) 

স্ল্যামি অ্যাওয়ার্ড (৯ বার)

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ( ২০২৪ ) 

গেম চেঞ্জার অফ দ্য ইয়ার ( ২০১১ ) – জন সিনার সাথে।

উপসংহার, Conclusion 

ডোয়েইন জনসন একসময় কুস্তির জগতের একজন বিখ্যাত খেলোয়াড় ছিলেন। পরবর্তিতে হলিউডের একজন সুপরিচিত সুপারস্টার হয়ে ওঠেন। এছাড়া পেশাদারিত্বে তিনি বেশ কিছু ফুটবল ম্যাচ খেলেছেন। তাই তিনি বহুদিকে মেধাবী বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না। বর্তমানে তিনি কুস্তি থেকে দূরে অভিনয়ে কাজ করার দিকে বেশি আকৃষ্ট এবং বিশ্বের সেরা অভিনেতা তথা ধনী অভিনেতা হিসাবে পরিচিত। তাছাড়াও তিনি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেয়া অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম।

Frequently asked questions

ডোয়াইন জনসন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

ডোয়াইন জনসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হেওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন।

ডোয়াইন জনসন কখন জন্মগ্রহণ করেন?

ডোয়াইন জনসন 2 মে, 1972 সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ডোয়াইন জনসন কি বিবাহিত?

লরেন হাশিয়ান (2019-বর্তমান), ড্যানি গার্সিয়া (1997-2008)




Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts