প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জীবনী, Biography of Priyanka Chopra in Bengali

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জীবনী

ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সকলের সুপরিচিত। তিনি ২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ড এর খেতাব জয় করেছিলেন। বহু বছর ধরে বলিউডে কাজ করার পর প্রিয়াঙ্কা হলিউড এর বেশ কিছু ব্লকবাস্টার মুভিতেও কাজ করেছেন। আজকের সময়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম বিশ্বের সবচেয়ে সফল নারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। আজ আমরা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কে, Who is Priyanka Chopra

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্রের বিখ্যাত একজন অভিনেত্রী, সাবেক মিস ওয়ার্ল্ড, লেখিকা, মানবহিতৈষী এবং একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও পরিচিত। তিনি ২০০২ সালে তামিল চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে নিজের অভিষেক ঘটান। পরবর্তী সময়ে এক হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কে

সানি দেওলের বিপরীতে ‘দ্য হিরো’ ছবির মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা বলিউডে প্রবেশ করেন। তবে তিনি দর্শকের নজরে আসেন ২০০৪ সালে আন্দাজ ছবিতে তাঁর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে, উক্ত ছবির জন্য তিনি সেরা নবাগতা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। ২০০৮ সালে প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন ছবিতে কাজ করেন যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেন।

প্রারম্ভিক জীবন, Early life

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ১৯৮২ সালের ১৮ ই জুলাই, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অশোক চোপড়া এবং মা মধু চোপড়া, দুজনেই আর্মি-ডাক্তার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। প্রিয়াঙ্কার শৈশব কেটেছিল লাদাখ অঞ্চলের অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা সমতলভূমিতে, কিন্তু বাবা-মায়ের চাকরির সুবাদে, প্রিয়াঙ্কা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো কাটিয়েছেন, যেমন লাদাখ, চণ্ডীগড়, লখনউ, দিল্লি, মুম্বাই, বেরেলি, পুনে এবং আরও বেশ কিছু জায়গায় বসবাস করেছিলেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া নিজের পরিবারের প্রতি খুব দরদি ছিলেন। তাছাড়া তিনি সব ক্ষেত্রেই সবসময় নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন। প্রিয়াঙ্কার মা মধু চোপড়াও এক সময় মেয়ের জন্য নিজের চাকরি ছেড়ে দেন। প্রিয়াঙ্কা নিজের বাবার খুব কাছের ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্যান্সারের কারণে 2013 সালের জুন তিনি পিতাকে হারান।

প্রারম্ভিক জীবন

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Educational Experiences of Priyanka Chopra

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বাবা-মায়ের কাজের সুবাদে ভারতের বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়াশুনা করার সুযোগ পান। বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে প্রিয়াঙ্কা লখনউয়ের লা মার্টিনিয়ার গার্লস স্কুল এবং বেরেলির সেন্ট মারিয়া গোরেটি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বেশ কয়েকটি সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে জানান যে স্কুল পরিবর্তন করতে গিয়ে তার কখনও কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি, তিনি এই স্কুল বদল এর বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতেন এবং প্রতিবার নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করতেন।

পরবর্তী সময়ে প্রিয়াঙ্কা পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকায় চলে যান। প্রিয়াঙ্কার বেশ ক’জন আত্মীয়রা আমেরিকায় বাস করতেন, তিনি সেখানে এই আত্মীয়দের সঙ্গে ৩ বছর থেকেছেন পড়াশোনা করার জন্য। আমেরিকায়, প্রিয়াঙ্কা কেনেডি হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন। কিন্তু আমেরিকায় থাকাকালীন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া নিজের শ্যামল বর্ণের কারণে কলেজে অনেক ছাত্রের ব্যবহারে হয়রানির শিকার হন।

আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া নিজে দেশে অবস্থিত বেরেলির আর্মি স্কুলে ভর্তি হন,  সেখান থেকে তিনি দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশুনা শেষ করেন। এরপর প্রিয়াঙ্কা জয় হিন্দ কলেজ এবং মুম্বাইতে কলেজের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। তিনি বসন্ত সিং ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে ভর্তি হন, তবে মডেলিং-এর শৌখিনতা ছিল বলে, মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মিস ওয়ার্ল্ড এর খেতাব জয়, Priyanka Chopra winning the Miss World title

২০০০ সাল ছিল প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জীবনের সেই ঐতিহাসিক বছর যখন তিনি মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব অর্জন করেছিলেন। এই খেতাব সারা বিশ্বে তাঁকে সুখ্যাতি লাভ করতে সহায়তা করেছিল।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ২০০০ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনের মিলেনিয়াম ডোমে মিস ওয়ার্ল্ড ২০০০ এবং মিস ওয়ার্ল্ড কন্টিনেন্টাল কুইন অফ বিউটি এশিয়া এবং ওশেনিয়ার মুকুট নিজের মাথায় সাজিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য যে, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াই প্রথম ভারতীয় মহিলা ছিলেন যিনি মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব জয় করেছিলেন। উক্ত খেতাব জয়ের পর থেকেই প্রিয়াঙ্কা চোপড়া একে একে ফিল্ম জগত থেকে অভিনয়ের অফার পেতে শুরু করেন, সেই থেকেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মিস ওয়ার্ল্ড এর খেতাব জয়

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, Career in film industry 

মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব জয়ের পর কিছুদিনের মধ্যেই, প্রিয়াঙ্কা আব্বাস মস্তানের রোমান্টিক ট্রেলার ফিল্ম হামরাজের জন্য প্রস্তাব পান, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তিনি উক্ত ছবিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি, এরপর প্রিয়াঙ্কা এক তামিল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ের জগতে প্রথমবারের জন্য পা রাখেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের দিকে ‘দ্য হিরো’ ছবির প্রস্তাব পান তিনি, ছবিতে মূল নায়ক হিসেবে ছিলেন সানি দেওয়াল, উক্ত ছবির মাধ্যমেই প্রিয়াঙ্কা নিজের বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

ছবিটিতে দ্বিতীয় প্রধান অভিনেত্রীর চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ভূমিকা রাখা হয়, ছবিতে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সানি দেওল ছাড়াও, অমরিশ পুরি, রাজপাল যাদবের মতো বেশ কয়েকজন নামী অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা কাজ করেছিলেন। সেই বছর ছবিটি চলচ্চিত্র জগতের এক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়।

এরপর, ২০০৩ সালে, আন্দাজ ছবিতে অক্ষয় কুমারের সাথে প্রধান চরিত্রে কাজ করেন তিনি। এই ছবিও সুপারহিট হয়, এবং এর জন্য প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডেও যুক্ত হয়েছিল। এরপর, ২০০৪ সালে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার আরো বেশ কিছু ছবি মুক্তি পায়, যেগুলি ক্রমাগতভাবে ফ্লপ হয়েছিল, কিন্তু এই ফ্লপের ছোট থাকা ধারা বাঁধা পড়ে যায় যখন তিনি ডেভিড ধাওয়ান এর পরিচালিত কমেডি ছবি ‘মুজসে শাদি করোগী ‘-তে প্রধান ভূমিকার অভিনয়ের সুযোগ নিয়েছিলেন।

ছবিতে সালমান খান এবং অক্ষয় কুমারের মত দুই নায়কের সাথে প্রিয়াঙ্কা একা নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন এবং ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এরপরও প্রিয়াঙ্কা আরো বেশ কিছু হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ফ্যাশন, মেরিকম, সাত খুন মাফ ইত্যাদি।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বৈবাহিক জীবন, Married life of Priyanka Chopra 

বলিউডে থাকাকালীন প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম তার বেশ কয়েকজন সহ-অভিনেতার সাথে শোনা গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে হলিউডে নিজের যাত্রা শুরু করার সময় থেকে তিনি নিক জোনাসের সাথে ডেটিং শুরু করেন। নিক জোনাস একজন আমেরিকান গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত।

কিছু সময় ডেটিং করার পর, তারা ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে একে অপরের সাথে বাগদান করে নেন এবং সেই সালের ডিসেম্বর মাসেই যোধপুরের উমেদ ভবনে হিন্দু ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মের নিয়ম অনুসারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই জুটি। বর্তমানে সারোগেসী পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া তাদের একটি মেয়ে রয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে মালতি মেরি জোনাস।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বৈবাহিক জীবন

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পুরস্কার সমুহ, Various awards and recognition 

নিজের অভিনয়ের দক্ষতা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে দেশবাসী তথা বিদেশিদেরও মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মাননা এবং পুরস্কারও।

 (2016) পদ্মশ্রী

 (2009) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার

 (2010) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

 (2017) প্রিয় নাটকীয় টিভি অভিনেত্রীর জন্য পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড

 (2004) শ্রেষ্ঠ মহিলা অভিষেকের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার

 (2016) শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার

 (2012) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার

 (2016) একটি নতুন টিভি সিরিজে প্রিয় অভিনেত্রীর জন্য পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পুরস্কার সমুহ

উপসংহার, Conclusion 

প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে ভারতের একজন অন্যতম হাই-প্রোফাইল তথা জনপ্রিয় সেলিব্রিটি এবং একটি স্টাইল আইকন হিসাবে গণ্য করা হয়। ২০১১ সালে, তিনি ভারতীয় জনগণের ভোটের মাধ্যমে “ভারতের সেরা পোশাক পরিহিত মহিলা” হিসাবে মনোনীত হন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বহু সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত, অন্যদিকে তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা পার্পল পেবল পিকচার্স স্থাপন করেছিলেন যার লক্ষ্য হল ছোট বাজেটের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা এবং আঞ্চলিক ভারতীয় চলচ্চিত্রে নতুন প্রতিভার পরিচয় এবং প্রচার করা। বিখ্যাত এই নায়িকার বিভিন্ন কার্যকলাপ সকলকে প্রেরণা জোগায় কখনও থেমে না গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

Frequently asked questions : 

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কে ?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর জন্ম কোথায় হয় ?

 প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর জন্ম হয় বিহারে ।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর জন্ম কবে হয় ?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর জন্ম হয় ১৮ জুলাই ১৯৮২ সালে ।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর কর্মজীবন কবে শুরু হয় ?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর কর্মজীবন শুরু হয় ২০০২ সালে ।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর কবে মিস ওয়ার্ল্ড হোন ?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ড হোন ।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর দাম্পত্য সঙ্গীর নাম কী ?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এর দাম্পত্য সঙ্গীর নাম নিক জোনাস ।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts