হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জীবনী, Biography of Harland Sanders in Bengali

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জীবনী

 হারল্যান্ড স্যান্ডার্স ছিলেন স্কুলের পড়া ছেড়ে দেওয়া এক ছাত্র, একজন খেতমজুর, একসময়ের ট্রেনের ফায়ারম্যান, এক বিমা কোম্পানির সেলসম্যান, স্বল্প সময়ের আইনজীবী, ডিঙি নৌকার একজন উদ্যোক্তা, গাড়ির টায়ার বিক্রেতা, একজন অসফল রাজনীতিক, তথা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীও। তবে শেষ অবধি তিনি একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর জীবন কাহিনীতে স্যান্ডার্সের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার মত বিষয় রয়েছে যা আজকের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

স্যান্ডার্সের জন্ম, পরিবার ও বেড়ে ওঠা, Sanders’ birth, family and upbringing

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জন্ম হয় ১৮৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তিনি ইন্ডিয়ানা হেনরিবিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মার্গারেট অ্যান ডানলেভি এবং উইলবার্ট স্যান্ডার্সের ছেলে। পিতা পেশাগত দিক থেকে একজন কৃষক তথা কসাই ছিলেন। ১৮৯৫ সালে উইলবার্ট স্যান্ডার্স মৃত্যুবরণ করেন। যাবার বেলা রেখে যান বিধবা স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে।

হারল্যান্ডের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তিনি পিতাকে হারান। পরিবারের প্রতিপালন করার জন্য তখন তাঁর মাকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে হয়েছিল। এদিকে বাড়িতে বাচ্চাদের সামলানোর জন্য কেউ ছিলো না, তাই হারল্যান্ডের মা তাকে কীভাবে নিজের ছোট ভাইবোনদের যত্ন নিতে হয় এবং কীভাবে রান্না করতে হয় তা শিখিয়েছিলেন, দু’বছরের মধ্যেই হারল্যান্ড একজন পাকা রাঁধুনি হয়ে উঠেন। এদিকে দাদার হাতে তৈরি করা স্ন্যাক্স খেতে খুব পছন্দ করত তাঁর খুদে দুই ভাইবোন।

স্যান্ডার্সের জন্ম, পরিবার ও বেড়ে ওঠা

কিন্তু খুব বেশি দিন এই ভাবে থাকতে পারলেন না হারল্যান্ড। দশ বছর বয়সে তাঁকেও এক খামারবাড়িতে কাজ করতে যেতে হল। অল্প বয়সী হারল্যান্ডকেও স্থানীয় টমেটো ক্যানারিতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছিল। এর কিছু সময় পর মার্গারেট পুনরায় বিয়ে করেন। এরপর বাচ্চাদের নিয়ে নতুন স্বামী উইলিয়াম ব্রডডাসের সাথে ইন্ডিয়ানার গ্রিনউডে বাস করতে শুরু করেন। 

শৈশবের স্মৃতি ও শিক্ষালাভের ইতিহাস, Childhood and education 

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের শৈশবকাল আকস্মিকভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একসময় তিনি স্কুলের পড়াশুনাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে গ্রেড স্কুলের পড়া স্থগিত রাখলেও তিনি পরবর্তী সময়ে আইন সংক্রান্ত কোর্স করেন। জীবিকা সংস্থানের জন্য কী করনেনি হারল্যান্ড! তিনি বাসের কন্ডাক্টর, রেল ইঞ্জিনে বেলচা দিয়ে কয়লা ফেলা, কয়লার ইঞ্জিনের ছাই সাফাই করার কাজ, ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে এক বিচিত্র ভূমিকায় দেখা গিয়েছে হারল্যান্ডকে।

১৯০৬ সালে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। এর আগে হারল্যান্ড একটি ফার্মহ্যান্ড এবং নিউ আলবানি স্ট্রিটকার লাইনে একজন কন্ডাক্টর হিসাবে কাজ করেন। তাছাড়া স্যান্ডার্স সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন ডিগ্রি লাভ করার জন্য চিঠিপত্রের কোর্স নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন।

একসময় তিনি, বীমা এবং টায়ার বিক্রি করার তথা স্ট্যান্ডার্ড অয়েল বিক্রয়ের জন্য একটি গ্যাস স্টেশন পরিচালনা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ১৯২৯ সালে তাকে স্টেশনটি বন্ধ করে দিতে হয়। পরবর্তীতে তিনি সেই স্টেশনের পিছনে থাকা এক কক্ষে একটি ছোট টেবিল ডিনারের ব্যবসা শুরু করেন। অবশেষে তাঁর এই ব্যবসা প্রসারিত করেন এবং ১৯৩৭ সালে সতেরো কক্ষের এক মোটেল কমপ্লেক্স তৈরি করেন তিনি। 

ব্যক্তিগত জীবন, Personal life

 হারল্যান্ড স্যান্ডার্স ১৯০৮ সালে জোসেফাইন কিং এর সাথে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতির তিনজন সন্তানের জন্ম হয়েছিল। প্রথমদিকে সাংসারিক জীবনে সুখের থাকলেও পরে ১৯৪৭ সালের দিকে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর স্যান্ডার্স পুনরায় বিবাহ করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ক্লডিয়া লেডিংটন, যিনি ছিলেন একজন প্রাক্তন কর্মচারী, ১৯৫০ সালে তাদের বিবাহ হয়। 

ব্যক্তিগত জীবন

কর্মজীবনের সময়কালে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Career experiences

মোটেল এবং রেস্তোরাঁর ব্যবসা হ্যারিলেন্ড স্যান্ডার্সের জন্য একটি ভালো আয়ের পথ তৈরি করেছিল এবং একসময় সেই অঞ্চলের প্রথম ফ্রাইড চিকেন রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়েছিল। যখন তাঁর বয়স পঁয়ষট্টি বছর, তখন অবধি তিনি সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে প্রতি মাসে $105 আয় করতেন। এরপর স্যান্ডার্স নিজের বিখ্যাত ভাজা মুরগির ফ্র্যাঞ্চাইজিংয়ের উপর তাঁর ভবিষ্যত তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কর্নেল স্যান্ডার্স কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন ব্র্যান্ড নামে নিজের পণ্যগুলো বিক্রি করতে শুরু করেন।

কেন্টাকি কর্নেলদের সদস্য হিসাবে, তিনি অন্যান্যদের মনে একজন ভদ্রলোক হিসাবে নিজের প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছিলেন। সেই অনুযায়ী তিনি সাদা লিনেন স্যুটের পোশাকের সঙ্গে ব্ল্যাক স্ট্রিং টাই এবং ড্যাপার ওয়াকিং স্টিক যুক্ত করেন। তাছাড়া তার রূপালী ধূসর চুল এবং গোঁফ স্বাভাবিকভাবে সাদা করে নেন যাতে তার সদয়, ছবি তোলার উপযোগ্য মুখের সৌন্দর্য আরো ফুটে ওঠে।

কর্মজীবনের সময়কালে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা

স্যান্ডার্স তিন বছরের মধ্যেই পুরো মিডওয়েস্ট জুড়ে কয়েক ডজন আউটলেট প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছিলেন। তিনি কেএফসি এর ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার সময় সকল স্টোরে বিনামূল্যে চিকেন পৌঁছে দিয়েছিলেন। সাফল্যের মধ্যে তিনি তার মেয়ের বিয়ের উপহার হিসেবে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে তার প্রথম ফাস্ট-ফুড টেক-আউট পরিষেবা শুরু করেছিলেন। বিশেষ রেসিপির জন্য সঠিক পণ্য বিতরণের উদ্দেশ্যে তিনি কর্নেলস ফুডস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন (KFC) Opens in a new tab.উত্তর আমেরিকা জুড়ে ১৯৬০ সাল নাগাদ প্রায় ২০০ টি ফ্র্যাঞ্চাইজি অন্তর্ভুক্ত করে, যার প্রিট্যাক্স মুনাফা হয়েছিল $100,000। তখনকার সময় ফ্রাইড চিকেন তৈরি করতে বছরে 2 মিলিয়নেরও বেশি মুরগি ভাজা করা হতো। ব্যাবসায়িক দিক থেকে উন্নতি তখনই প্রকাশ পায় যখন স্যান্ডার্স তার ক্লাসিক সাদা ক্যাডিলাক গাড়ি থেকে সোনার রোলস-রয়েস সিলভার ক্লাউডে বিলাসিতা শুরু করেছিলেন।

কোম্পানিটি ১৯৬৩ সালের ভিতর ৬০০ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে উন্নীত হয়; পাশাপাশি মুনাফাও আনুপাতিকভাবে তিনগুণ বেড়ে $300,000 তে দাঁড়িয়েছিল। ততদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ফাস্ট-ফুড ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে উঠেছিল এই কেএফসি। এরপর স্যান্ডার্স, জন ওয়াই ব্রাউন জুনিয়রের সাথে চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত হন; ব্রাউন সম্পূর্ণভাবে KFC-এর জন্য একটি বিড করেন।  

১৯৬৪ সালে স্যান্ডার্স, ব্রাউন এবং অন্য আরেকজন অংশীদার জ্যাক ম্যাসির কাছে  কোম্পানির আয়ের 2 মিলিয়ন ডলারের মালিকানা এবং কোম্পানিটির কানাডিয়ান অপারেশনের একচেটিয়া অধিকার হস্তান্তর করে দেন। উক্ত চুক্তিটি স্যান্ডার্সকে শুভেচ্ছা দূত হিসাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য $40,000 ডলার আয়ের পাশাপাশি কোম্পানির বাণিজ্যিক অবশিষ্টাংশ থেকে আজীবন বার্ষিক বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। স্যান্ডার্স নিজের কোম্পানির একজন ক্যারিশম্যাটিক মুখপাত্র ছিলেন এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে “ফিঙ্গার লিকিন’ গুড” চিকেন বলে এক টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের শুরু করা হয়েছিল।

কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন (KFC)

১৯৬৭ সালের দিক থেকে কেএফসি ব্যবসার ৩০ শতাংশের মধ্যে ক্যারি-আউট ব্যবসা বেড়ে গিয়েছিল। এর পরেই লাল-সাদা-ডোরাকাটা কেএফসি ক্যারি-আউট স্টোরগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। ১৯৭২ সালে কেএফসিকে হিউব্লিন, ইনকর্পোরেটেডের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়, তখন ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল্য আরো বৃদ্ধি পেয়ে $273 মিলিয়নে পৌঁছে যায়।

কর্ণেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্সের জীবনাবসান, Death of Colonel Harland David Sanders

কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্সের মৃত্যু হয় ১৯৮০ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। স্যান্ডার্স নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল নব্বই বছর। তাঁকে লুইসভিলের গুহা হিল কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

কর্ণেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্সের জীবনাবসান

কর্ণেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের আত্মজীবনী, Autobiography of Colonel Harland David Sanders

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের লেখা আত্মজীবনীর নাম হল Life as I Have Known It Has Been “Finger Lickin’ Good “, যা ১৯৭৪ প্রকাশিত হয়। 

কর্ণেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের আত্মজীবনী

উপসংহার, Conclusion 

নিজের জীবন নিয়ে কখনো হতাশ না হয়ে, সর্বদা উন্নত কাজ করার পেছনে লেগে থাকলে অবশ্যই সফল হওয়া যায়, এর প্রমাণ দিয়েছিলেন কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন বা কেএফসি এর প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স। তাঁর জীবনের পথে সর্বদাই এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যে জীবনে কখনো হার মানা উচিত নয়, নিজেকে সফল করতে হলে কাজ করে যেতে হবে।

Frequently Asked Questions: 

হারল্যান্ড স্যান্ডার্স কে?

হারল্যান্ড স্যান্ডার্স ছিলেন স্কুলের পড়া ছেড়ে দেওয়া এক ছাত্র, একজন খেতমজুর, একসময়ের ট্রেনের ফায়ারম্যান, এক বিমা কোম্পানির সেলসম্যান, স্বল্প সময়ের আইনজীবী, ডিঙি নৌকার একজন উদ্যোক্তা, গাড়ির টায়ার বিক্রেতা, একজন অসফল রাজনীতিক, তথা ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীও। তবে শেষ অবধি তিনি একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের জন্ম কবে হয় ?

১৮৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।

হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের মৃত্যু কবে হয় ?

১৯৮০ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts