হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এর জীবনী, Biography of Hridaynath Mangeshkar in Bengali 

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এর জীবনী

পণ্ডিত হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর সঙ্গীত জগতের ভিন্ন কর্মের সাথে জড়িত। তিনি একজন ভারতীয় সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীতশিল্পী। তিনি সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রশিল্পে বালাসাহেব নামেও সুপরিচিত। তিনি বোন লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের মত সঙ্গীত জগতে খুব একটা চর্চায় কখনোই ছিলেন না, তাই অনেকেই তাঁর জীবন সম্পর্কে বহু তথ্য থেকে অজানা। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক পণ্ডিত হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Hridaynath  Mangeshkar birth and family 

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের জন্ম হয়েছিল ১৯৩৭ সালের ২৬শে অক্টোবর। তিনি মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলিতে জন্মগ্রহণ করেন। হৃদয়নাথ ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর ও সেবন্তীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান এবং তিনিই নিজের পরিবারের একমাত্র পুত্র। হৃদয়নাথের চার বোন ছিল, যাদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, তারপর ক্রমে আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, ও মীনা খড়িকর।

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের ব্যক্তিগত জীবন, Hridaynath Mangeshkar personal life 

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর বিয়ে করেছিলেন মারাঠি কৌতুকাভিনেতা দামুআন্না মালবনকরের কন্যা ভারতী মালবনকরকে। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে; যাদের নাম আদিনাথ ও বৈজনাথ এবং একজন কন্যা রয়েছে যার নাম রাধা মঙ্গেশকর। কন্যা রাধা পিতা হৃদয়নাথের নিকট সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন এবং বেশ কিছু মঞ্চ অনুষ্ঠানেও পিতার সাথে গান করেন। ২০০৯ সালে রাধা নিজের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেন যার নাম ছিল ‘নাব মাজা সামি’। অ্যালবামটিতে মারাঠি ভাষার গান প্রকাশ করেন তিনি।

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের ব্যক্তিগত জীবন

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের কর্মজীবন, career life of Hridaynath Mangeshkar 

কর্মজীবনে বহু মরাঠি ছবির সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। এছাড়াও বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি।

তাছাড়া সাভারকর এবং মরাঠি কবি জ্ঞানেশ্বরের কবিতা নিয়েও কাজ করেছেন হৃদয়নাথ। হৃদয়নাথ ১৯৫৫ সালে মারাঠি ছবি ‘আকাশ গঙ্গা’ দিয়ে তাঁর সঙ্গীত ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। তারপর থেকে, তিনি বিভিন্ন মারাঠি চলচ্চিত্র যেমন সংসার, চানি, হা খেল সাবলীঞ্চা, জানকি, জাইত রে জাইত, উম্বার্থা এবং নিভডং এবং বেশ কয়েকটি বলিউড চলচ্চিত্রের জন্য সুর করেছেন; তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সুবাহ, লেকিন… এবং মায়া মেমসাব।

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের কর্মজীবন

তিনি মারাঠি ও হিন্দিতে গান রচনা করেছেন। তার গানে প্রায়শই জটিল এবং উপভোগ্য পরিবেশনের গভীরতা দেখা যায়। তিনি দূরদর্শনের বাদ্যযন্ত্র নাটক ফুলবন্তীর জন্যও সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এছাড়া তিনি লোকগানও রচনা করেছেন। আত্মার প্রতি সত্য থাকা, তার কলি গীতগুলি (জেলেদের গান) জেলেদের ঐতিহ্যবাহী ছন্দকে প্রতিফলিত করে। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত সিনেমা ‘জৈত রে জাইত’ এ তাঁর সঙ্গীত হৃদয়নাথের দক্ষতার আরেকটি উদাহরণ।

তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলির মধ্যে একটি হল মারাঠি চলচ্চিত্র নিভডং-এর সঙ্গীত রচনা। এক সময় ওস্তাদ আমির খানের ছাত্র ছিলেন হৃদয়নাথ; তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে বোনদের সাথে হারমোনিয়াম ও তবলা নিয়ে নিত্য সঙ্গীত চর্চা করতেন তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় সুরকার যিনি সন্ত কবির ও মীরার কবিতা এবং গান সমন্বিত দুটি সম্পূর্ণ অ্যালবাম রচনা ও প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল চল ভাহি দেশ এবং মীরা ভজন।

তিনি মীরা, কবির এবং সুরদাসের কাজ সমন্বিত মীরা সুর কবীর শিরোনামেরও একটি অ্যালবাম রচনা ও প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি গালিবের গজল সমন্বিত একটি অ্যালবাম তৈরি করেন, যার নাম ছিল গালিব এবং অ্যালবামের গানগুলো গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। শান্তা শেলকে এবং সুরেশ ভাটের মতো প্রখ্যাত মারাঠি কবিদের সাথে তাঁর সহযোগিতার ফলে অতুলনীয় জনপ্রিয়তার অনেক মারাঠি ক্লাসিক গান তৈরি হয়েছে। 

উল্লেখযোগ্য ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ, Hridaynath Mangeshkar worked as Music Director in notable films 

তাঁর সঙ্গীত রচনার ধরন মূলত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, পপ এবং লোকসঙ্গীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের যে সকল ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :

উল্লেখযোগ্য ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ

মারাঠি

  • আকাশ গঙ্গা (১৯৫৫)
  • সংসার (১৯৭১)  
  • হা খেল সভালাঞ্চা (১৯৭৬) 
  • চানি (১৯৭৭) 
  • জানকি 
  • যাইত রে যাইত ( ১৯৭৭) 
  • উম্বর্থা (১৯৭৭) 
  • নিকডাং (১৯৮৯) 

হিন্দি

  • হরিশচন্দ্রের তারামতি (১৯৬৩) 
  • ধনবান (১৯৮১)
  • সুবাহ
  • প্রার্থনা
  • চক্র
  • মশাল (১৯৮৪)
  • লেকিন….(১৯৯১)
  • মায়া মেমসাব (১৯৯৩)
  • লাল সেলাম (২০০২)

হৃদয়নাথের জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা, A memorable incident in the life of Hridyanath

অভিনেতা রাজ কাপুরের সাথে লতা মঙ্গেশকরের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। রাজ সাহেব লতাকে বোনের মত আদর করতেন। সিনেমায় গানের ক্ষেত্রে বহুবার একসাথে কাজ করেছিলেন দুজনে। একবার রাজ কাপুর লতা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথের সাথে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর গুণী সুরকার।

তাই সত্যম শিবম সুন্দরম ছবিতে রাজ সাহেব চাইলেন হৃদয়নাথ যেন সুর দেয়। একথা শুনে বোন লতা আনন্দিত হয়ে ভাইকে বলে রাজ কাপুরের সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজি করালেন। তবে হৃদয়নাথ নাকি ফিল্মে সুর দিতে খুব উৎসাহী ছিলেন না! তারপর লতা আমেরিকায় যান গানের অনুষ্ঠান করতে।

হৃদয়নাথের জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা

সেখানে থাকতেই তিনি শুনতে পেলেন যে ভাই হৃদয়নাথ বাদ পড়েছেন রাজ কাপুরের ছবি থেকে। তিনি তখন খুব রেগে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে এসে নিজের অভিমান ব্যক্ত করে খুব চেঁচিয়েছিলেন রাজ কাপুরজির ওপর, “কেন এমন করলেন? আপনি বললেন বলেই তো আমি ভাইকে বলে রাজি করালাম!” শেষ অবধি ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবি রিলিজ হয় লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের সুরে।

রাজনৈতিক যোগাযোগ, Political contacts

2009 সালে হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি রাজনৈতিক দিক থেকে প্রথমে শিবসেনায় যোগদান করেন। তিনি রাজনৈতিক বিতর্কেও জড়িত হয়েছিলেন, যার কারণে খবরে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছিল। একবার রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি ভাষণের উপর ‘মোশন অফ থ্যাংকস’ বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস শাসন আমলে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

রাজনৈতিক যোগাযোগ

তিনি অভিযোগ করেন, লতা মঙ্গেশকরের ছোট ভাই পণ্ডিত হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরকে সাভারকরের দেশাত্মবোধক কবিতা পাঠ করার কারণে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নিজেই এই অভিযোগ তোলেন হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের পুরস্কার তথা সম্মাননা প্রাপ্তি, Awards and recognitions 

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর ১৯৫৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল অবধি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন জুড়ে বেশ কয়েকটি পুরষ্কার পেয়েছেন, যেমন ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পুরস্কার, মহারাষ্ট্র রাজ্যের লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার, এবং সেরা কণ্ঠশিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালক/সুরকারের জন্য সাতটি মহারাষ্ট্র রাজ্য পুরস্কার।

সঙ্গীতজ্ঞ হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের পুরস্কার তথা সম্মাননা প্রাপ্তি

ভীমসেন জোশী ও যশরাজ মহারাষ্ট্রের জনগণের সমক্ষে তাঁকে পণ্ডিত উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। শঙ্করাচার্য তাঁকে ভব গন্ধর্ব উপাধিতে ভূষিত করেছেন। হৃদয়নাথ ১৯৯০ সালের লেকিন… চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৯ সালে ভারত সরকার হৃদয়নাথকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।

শেষ কথা, Conclusion

ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত চর্চার পরিবেশে বড় হয়েছেন হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। পরিবারের প্রায় সকলেই সঙ্গীত জগতের সাথে জড়িত। তাই তো পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনিও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

Frequently Asked Questions

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের জন্ম কবে হয়েছিল?

১৯৩৭ সালের ২৬শে অক্টোবর।

সঙ্গীত ক্যারিয়ারের সূচনা কোন ছবির মধ্য দিয়ে করেছিলেন ?

১৯৫৫ সালে ‘আকাশ গঙ্গা’।

হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের স্ত্রীর নাম কি?

মারাঠি কৌতুকাভিনেতা দামুআন্না মালবনকরের কন্যা ভারতী মালবনকরকে বিয়ে করেছিলেন হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts