আমেরিকান বিজনেস ম্যাগনেট জেফ বেজোস একজন শিল্প উদ্যোগপতি তথা সমাজ সেবক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী। ২০১৮ সালে আমেরিকার শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটসকে পিছনে ফেলে জেফ বেজোস প্রথমবার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন।
জেফ বেজোস কে ছিলেন, Jeff Bezos at a glance
জেফ বেজোস মূলত একজন মার্কিন ইন্টারনেট উদ্যোক্তা তথা বিনিয়োগকারী। তাছাড়া জেফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ই-কমার্সের বৃদ্ধি ঘটানোর ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে Amazon.com বিশ্বের বৃহত্তম বিক্রেতা হিসেবে পরিণত হয়।
জেফ বেজোসের পরিবার পরিচয়, Family identity of Jeff Bezos
জেফ বেজোস এর জন্ম হয় ১২ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে। জেফ বেজোসের পিতার নাম টেড জর্গেনসন, মায়ের নাম জ্যাকলিন গ্রীস জর্গেনসন। তাঁর মা মাত্র ১৭ বছর বয়সে থাকাকালীন জেফের জন্ম হয়। জ্যাকলিন গ্রীস তখনও নিজের স্কুলের শিক্ষা সম্পন্ন করেননি। তাছাড়া খুব কম বয়সে শিশু জন্ম দেওয়ার কারণে তাঁকে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই সব কারণেই বেজোসের বাবা-মায়ের সম্পর্কের মধ্যেও চরম অবনতি দেখা দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে পিতা তাঁর মাকে ছেড়ে চলে যান।
শৈশবকালের স্মৃতি, Childhood
জেফ বেজোসের বয়স যখন কম ছিল, তখন থেকেই তিনি সবক্ষেত্রেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতেন। পিতা যখন গ্যারেজে কোনো কাজ করতেন তখন জেফ সেখানে থাকা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে সেগুলো খোলা এবং লাগানোর চেষ্টা করে যেতেন। বেজোস এর পিতাও তাঁর আগ্রহ দেখে তাঁকে সব সময় অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
জেফ বেজোসের শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Educational experience of Jeff Bezos
জেফ বেজোস পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলেন। স্কুলে তিনি অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় একজন অসাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মাত্র চতুর্থ ক্লাসে পড়ার সময়কালে ড্রীম ইনস্টিটিউট নামে নিজের প্রথম কোম্পানি তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাঁর এই কোম্পানি প্রতিবছর একটি এডুকেশনাল সামার ক্যাম্প পরিচালনা করত।
পরবর্তী সময়ে পিতার কর্মসূত্রে তিনি নিজের পরিবারের সাথে মিয়ামি ফ্লোরিডা তে চলে যান। জেফ বেজোস সেখানে মিয়ামি পল মেট্রো হাই স্কুলে অধ্যায়ন শুরু করেন, উক্ত স্কুলে পড়াশোনা করার সময় থেকে তিনি গরমের ছুটিতে ম্যাকডোনাল্ড রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম রাঁধুনি হিসেবে কাজ করতেন।
জেফ বেজোসের অসাধারণ প্রতিভার জন্য স্কুলে থাকাকালীন তাঁকে star lex s ও Silver night মেডেল প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মারক অর্জন করেন। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা এবং আগ্রহের জেরে তাঁকে মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক, Higher studies and career
অল্প বয়সী জেফ বেজোসের কম্পিউটারের প্রতি সর্বদাই খুবই আগ্রহ ছিল। এর জন্যই তিনি সেই সময়কালের বিখ্যাত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী অর্জন করেন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি বেশ কিছু বছর নিউইয়র্ক শহরের ওয়াল স্ট্রিটের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন। কর্ম দক্ষতা ও সততার জন্য সেখানে তিনি খুব দ্রুততার সঙ্গে পদোন্নতি অর্জন করেন। একসময় বেজোস D E Show নামক একটি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট এর পদে নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। বলতে গেলে অনেক কম বয়সেই জেফ বেজোসের অর্জিত অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে যায়।
আমাজন কোম্পানির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, History of the founding of Amazon company
অনেকেরই হয়তো বিশ্বাস হবে না যে, অ্যামাজন কোম্পানির প্রতিষ্ঠা জেফ বেজোস নিজের বাড়ির গ্যারেজে বসে করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই উক্ত কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান সময়ে অ্যামাজন কোম্পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিস্তার লাভ করেছে।
আজকের দিনে দেশ বিদেশের প্রায় সকলেই বিভিন্ন কারণে এর ব্যবহার করছে। একটা সময় এমন ছিল যখন তিনি নিজের এই ব্যবসার কাজে বিনিয়োগ করার জন্য বড় বড় আর্থিক বিনিয়োগ কোম্পানীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখন কেউ তাঁকে সহায়তা করেনি। তিনি কারও কাছ থেকে কোনো বিনিয়োগই টানতে সক্ষম হন নি। এর কারণ হল জেফ যে সকল ব্যবসায়ীকেই নিজের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তাদেরকে এটাও সাথে বলে দিয়েছিলেন যে এই ব্যবসায় লাভবান হওয়ার আশা মাত্র কুড়ি শতাংশ, তবে লস হওয়ার আশঙ্কা বেশি, প্রায় ৮০%।
এইসবের কারণ স্বরূপ তিনি জানান যে, অনলাইনে বই বিক্রি করার এরূপ প্রচেষ্টা কেউ এর আগে করেনি, তাই তার কাছে পুরনো ব্যবসার কোনোও রকম উদাহরণ নেই। এমন অবস্থায় কেউই বিনিয়োগের সাহস করতে চায়নি, তাই তাঁকে নিজের প্রচেষ্টায় সবকিছু শুরু করতে হয়েছিল। আমাজনের শুরু প্রথমে শুধু একটি ভার্চুয়াল বুক শপ হিসেবে হলেও ধীরে ধীরে এটি ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্প হয়ে উঠেছিল।
ব্লু অরিজিন কোম্পানির প্রতিষ্ঠার কাহিনী, The founding story of Blue Origin Company
২০০০ সালে জেফ বেজোস ব্লু অরিজিন নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। উক্ত সংস্থাটির নেতৃত্বের পদে নিযুক্ত হন সিইও বব স্মিথ। ব্লু অরিজিন সংস্থার লক্ষ্য হল পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণ যানগুলি মহাকাশে ভ্রমণ সুলভ করে তোলা এবং এগুলোকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো নির্ভরযোগ্য করে তোলা ।
সংস্থাটি মূলত আমেরিকায় বেসরকারীভাবে অর্থায়িত এ্যারোস্পেস প্রস্তুতকারক এবং উপ-কক্ষপথীয় মহাকাশ উড্ডয়ন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। ওয়াশিংটনের কেন্টে এর সদর দফতর অবস্থিত। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বেজোস ২৫ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটি পত্রিকা, ওয়াশিংটন পোস্ট কোম্পানিটি ক্রয় করে নেন।
জেফ বেজোস এর মহাকাশ যাত্রা, Jeff Bezos’ Space Journey
জেফ বেজোস তাঁর নিজস্ব সংস্থার দ্বারা তৈরী, অর্থাৎ ব্লু অরিজিন সংস্থার তৈরি ‘নিউ শেপার্ড বুস্টার’ নামক এক রকেটে চেপেই ২০২১ সালে ২০ জুলাই মহাকাশে পাড়ি জমান। তিনি রকেট নিয়ে পশ্চিম টেক্সাসের একটি মরুময় উঁচু স্থান থেকে রওনা দেন। তিনি মহাকাশে মাত্র ১০ মিনিট ২০ সেকেন্ড ছিলেন। উক্ত মহাকাশ যাত্রায় বেজোসের সহযাত্রী হিসেবে তাঁর সাথে ছিলেন বেজোসের দুই ভাইসহ আরও দুইজন ব্যক্তি। মহাকাশ ভ্রমণ শেষ করে প্যারাসুটে তারা সকলে নিরাপদে আবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা, Future plan
বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জেফ বেজোস নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন যে, তার লক্ষ্য হল মহাকাশকে মানুষের বসবাসযোগ্য উপনিবেশ হিসেবে তৈরি করতে চান। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে সময়ে সময়ে অনেক মানুষ কে মহাকাশে পাঠানো হবে। যে যানে করে মানুষ পাঠানো হবে তার মধ্যে কৃত্রিম উপায়ে ভরে দেওয়া হবে পৃথিবীর আবহাওয়া।
আগামী দিনে হয়তো মহাশূন্যে পুরোদস্তুর এক আলাদা দুনিয়াও বানিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এরূপ অসম্ভব কাজকে সম্ভব করার মত আশা রাখেন তিনি। জেফ বেজোস এর মতে এইসব সম্ভব হলে হয়তো মহাকাশে বহু মানুষের জন্মও হতে পারে। তখন এই মহাকাশ হবে তাদের জন্মভূমি আর আমাদের পৃথিবী তাদের কাছে ঘুরতে আসার জায়গা হয়ে থাকবে।
উপসংহার, Conclusion
একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা তো থাকবেই। পৃথিবীতে হয়তো এমন কোনও সফল ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যিনি জীবনের কোনও পর্যায়ে ব্যর্থ হননি। জেফ বেজোসের জীবনেও ব্যর্থতা এসেছিল। কিন্তু তিনি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠেন এবং নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
বেজোস যদি নিজের চাকরি এবং নিশ্চিত জীবনের নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়ে আমাজন শুরু করার জন্য কোনো ঝুঁকি না নিতেন, তবে হয়তো তাঁর জীবন তথা পৃথিবীর চেহারাও হয়তো অন্যরকম হত। বলাই বাহুল্য যে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বেজোসের জয়যাত্রা আজও অব্যাহত আছে। তিনি সকলের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ।
Frequently Asked Questions :
জেফ বেজোস একজন মার্কিন ইন্টারনেট উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারী ।
জেফ বেজোস এর জন্ম হয় ১২ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে ।
জেফ বেজোস এর স্ত্রীর নাম ম্যাকেঞ্জি বেজোস ।
জেফ বেজোস এর জন্ম হয় নিউ মেক্সিকো ।
5 July1994 সালে আমাজন প্রতিষ্ঠা হয় ।
জেফ বেজোস ব্লু অরিজিন কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন।