বাংলাদেশী ক্রিকেটার মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য। রিয়াদ দলে খেলছেন অল-রাউন্ডার, কার্যকরী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং অকেশনাল অফ স্পিন বোলার হিসেবে। বাংলাদেশ জাতীয় টি-২০ দলের সাবেক অধিনায়ক তিনি। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় ক্রিকেটারের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করবো।
জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family background :
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্ম হয় ১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী একজন দক্ষ তথা জনপ্রিয় ক্রিকেটার তিনি। ক্রিকেটের মাঠে তিনি সাইলেন্ট কিলার হিসেবে পরিচিত।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Some special information about Riyad :
- উচ্চতা : ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি (১.৮০ মিটার)
- ব্যাটিংয়ের ধরন : ডানহাতি
- বোলিংয়ের ধরন : ডানহাতি অফ স্পিন
- ভূমিকা : অল-রাউন্ডার
- টেস্ট অভিষেক : ২০০৯ সালে ৯ জুলাই, বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- ওডিআই অভিষেক : ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই, বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা
- টি২০আই অভিষেক : ২০০৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ বনাম কেনিয়া
- ঘরোয়া দলের তথ্য : ২০১২–২০১৩ চিটাগং কিংস, ২০১২ – বাসনাহিরা ক্রিকেট ডুনডি, ২০১৫ – বরিশাল বুলস, ২০১৬–২০১৭- ২০১৯ খুলনা টাইটানস, ২০১৭- কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স, ২০১৭- জ্যামাইকা তালাওয়াস, ২০১৯- চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, জেমকন খুলনা, ফরচুন বরিশাল।
মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খেলোয়াড়ী জীবন, Riyad’s life as a Player :
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি (১০৩) করার গৌরব অর্জন করেছিলেন রিয়াদ। এছাড়াও তিনিই প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি অর্জন করেন।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য ডাক পান রিয়াদ। উক্ত সফরের তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে তাঁর প্রথম অভিষেক হয়। এছাড়া ২০০৭ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত সিরিজ এবং ২০০৭ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ স্কোয়াডের জন্য দলে নেয়া হয় তাঁকে।
রিয়াদের টেস্ট অভিষেক ঘটে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই, আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টে। উক্ত খেলায় তিনি একে একে টিএম ডাউলিন, এফএল রেইফার, সিএকে ওয়ালটন, আরএ অস্টিন ও কেমার রোচ প্রমুখ খেলোয়াড়দের আউট করে নিজের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এরফলে তিনি বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেট লাভ করেন। বলা যায় যে, তাঁর ক্রীড়ানৈপুণ্যে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলায় জয়লাভ করেছিল।
২০১৪ সালের ১৫ জুন, ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিকে মাহমুদুল্লাহ খেলার জীবনের শততম ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত খেলায় বাংলাদেশের জাতীয় দল ৭ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
তবে ভারতের বিপক্ষে রিয়াদের ব্যাটিং গড় ৬৯ ও বোলিং গড় ১৯৮, যা যে-কোন দলের বিপক্ষে অংশগ্রহণকৃত একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন।
২০২১ সালের জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলার সময় মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর ঘোষণা করে দেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় রিয়াদের অংশগ্রহণ, Riyad’s participation in Cricket World Cup :
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে বিসিবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল, যেখানে রিয়াদও দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
উক্ত সালের ৫ মার্চ তারিখে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ৪র্থ খেলায় তামিম ইকবালের সাথে ১৩৯ রানে জুটি গড়েন তিনি।
পরবর্তী সময়ে সাকিব, মুশফিকের অনন্য নৈপুণ্যে উক্ত খেলায় বাংলাদেশ দল ভালো রান করে ৬ উইকেটের কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে। এই জয়ের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ সফলভাবে একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান করে বিজয়ী হয়।
২০১৫ সালের ৯ মার্চ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ৫ম খেলায় অভিষেক সেঞ্চুরি করেন রিয়াদ। এরফলে, বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১০৩ রানের এ ইনিংসে তাঁর ৭ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ১৩৮ বল স্থায়ী ছিল। কিন্তু ক্রিস উকসের বলে রান-আউট হন তিনি।
বিশ্বকাপের যে-কোন উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন তিনি। এছাড়াও একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের এ জুটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান করেছিল। পরবর্তী সময়ে রুবেল হোসেনের প্রশংসনীয় বোলিংয়ে (৪/৫৩) বাংলাদেশ ১৫ রানের ব্যবধানে জয়ী হয়। এই জয়ের মধ্য দিয়ে এই দল সিরিজের কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়। উক্ত খেলায় রিয়াদ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।
১৩ মার্চ তারিখে সেডন পার্কে নিউজিল্যান্ডের সাথে গ্রুপ পর্বে দলের সর্বশেষ খেলায় ১২৮* রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি এবং দ্বিতীয় শতরান অর্জন করেন। উক্ত খেলার মধ্য দিয়ে রিয়াদ বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে দুটো খেলায় শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেছিলেন, এর আগে কোন বাংলাদেশী খোলোয়াড় এই গৌরব লাভ করতে পারেননি। খেলাটি হয়েছিল তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ, কিন্তু শেষমেশ বাংলাদেশ দল ওই খেলায় ৩ উইকেটে পরাজিত হয়।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মোট রান কত, What is the total run scored by Riyad ?
ওয়ানডেতে এখনো পর্যন্ত ২২০ ম্যাচ খেলেছেন টাইগার এই অলরাউন্ডার, যেখানে এখনো পর্যন্ত ৩টি সেঞ্চুরি ও ২৮ হাফসেঞ্চুরিতে তিনি ৪ হাজার ৯৫৯ রান করেছেন।
এছাড়া ৫০ টেস্টে ২৯১৪ রান এবং ১২১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রিয়াদের সংগ্রহ ২১২১ রান।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ফিফটি করেছেন কে, Who made the first fifty for Bangladesh in World Cup history ?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে ২ টা সেঞ্চুরি করেছিল।
২০২১ আইপিএল এ রিয়াদের ভিত্তিমূল্য , 2021 IPL base price of Riyad !
প্রথমবারের মত আইপিএল খেলতে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ রুপি। অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে থাকা মাহমুদউল্লাহ এর আগে খেলেননি আইপিএলের কোনো আসর।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of Riyad :
২০১১ সালের ২৫ জুন মাহমুদুল্লাহ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি।
২০১২ সালে ৩ জুন এই দম্পতির কোল আলো করে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। রিয়াদের প্রথম পুত্রের নাম রাইয়েদ যাকে পেপসোডেন্ট টুথপেস্ট এর বিজ্ঞাপনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে দেখা যায়।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেট ওয়ার্থ, Riyad’s Net Worth :
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জাতীয় দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি ঘরোয়া লীগ এর খেলাতেও উচ্চ মূল্যে খেলে থাকেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক ব্যবসা থেকেও উপার্জন হয় তাঁর। অন্যদিকে নিজের ইনভেস্টমেন্ট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্পন্সরশিপ থেকেও টাকা পান তিনি।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ম্যাচের জন্য ম্যাচ প্রতি ৬ লক্ষ টাকা করে পেয়ে থাকেন। ওয়ানডে ম্যাচ প্রতি তিনি তিন লক্ষ টাকা পেয়ে থাকেন এবং টি-টোয়েন্টি ফরমেটে তিনি পারিশ্রমিক পান ২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তাঁর মাসিক আয় তো আছেই।
- মোট সম্পদ : ৫৩ কোটি টাকা
- মাসিক ইনকাম : ৫ লক্ষ টাকা
- বাৎসরিক আয় : ৬০ লক্ষ টাকা
শেষ কথা, Conclusion :
সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক্রিকেটের কেরিয়ার জীবনে গড়ছেন বহু সংখ্যক রেকর্ড। এই দক্ষ ক্রিকেটার বাংলাদেশ টিমকে দিয়ে গেছেন অসাধারণ পারফরমেন্স এবং দারুন সব ইতিহাস।
রিয়াদের অন্যতম ফিনিশার ইনিংস টি ছিল ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট শ্রীলংকার সাথে। এছাড়াও তিনি আরো বহু ম্যাচে দলের অংশ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
আশা করি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বাংলাদেশী ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছেন।
Frequently Asked Questions
বাংলাদেশী ক্রিকেটার মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য।
১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি।