মুশফিকুর রহিম হলেন একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক। বাংলাদেশের সাবেক কোচ জেমি সিডন্স রহিম সম্পর্কে বলেছিলেন যে, ‘রহিমের ব্যাটিং কৌশল এতটাই বহুমুখী যে সে টপ অর্ডারে এক থেকে ছয় পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে পারবে।’ বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম এবং একমাত্র উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান যিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
প্রথম জীবন ও পরিবার পরিচয়, Early life of Mushfiqur Rahim
মুশফিকুর রহিম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৭ সালের ৯ জুন, তাঁর জন্ম হয় বাংলাদেশের বগুড়ায়। তিনি মাহবুব হাবিব ও রহিমা খাতুনের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশুনা করতে ভালোবাসতেন, সাথে ভালোবাসতেন খেলাধুলা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা, Mushfiqur Rahim education
মুশফিকুর রহিম বগুড়া জিলা স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস অধ্যয়ন করার সময় থেকেই ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি মাস্টার্স এর পড়াশুনা শেষ করেন। রহিম ছাত্রজীবন থেকেই খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন। তিনি স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ভক্ত। অন্যদিকে তিনি আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় মেসির ভক্ত।
ব্যক্তিগত জীবন, Mushfiqur Rahim personal life
মুশফিকুর রহিম ২০১৪ সালে জান্নাতুল কিফায়েত মন্ডিকে বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে তাদের দাম্পত্য সংসারে একটি ছেলের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখা হয় মায়ান।
মুশফিকুর রহিম প্রাথমিক ক্যারিয়ার, Mushfiqur Rahim early career
জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করার পূর্বে রহিম বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়েও খেলেছেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তিনি তিনটি টেস্ট এবং ১৮ টি ওডিআই এর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০০৬-এর সময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন রহিম, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। ২০০৫ সালে প্রথমবার সিনিয়র টেস্ট দলে ডাক পান রহিম।
রহিম জাতীয় ক্রিকেট লিগে রাজশাহীর হয়ে খেলেছিলেন। এছাড়া রহিম ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং বারোটি হাফ সেঞ্চুরি এবং ৩৪ টি সেঞ্চুরি সহ ৬৫০০ এরও বেশি রান করেছেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ, Bangladesh Premier League
২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছয় দলের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ প্রতিষ্ঠা করে। দুরন্ত রাজশাহীর ‘আইকনিক প্লেয়ার’ ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর নেতৃত্বে দুরন্ত বিসিবি এর সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল; রহিম ১১ ম্যাচে ২৩৪ রানের অবদান রাখেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ২০১২-১৩ এর জন্য সিলেট রয়্যালস দলে অন্তর্ভুক্ত হন। সেই বছরের ১৩ ম্যাচে ৪০.৪০ গড়ে ৪৪০ রান করে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘২০১৬-১৭ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ’ এর জন্য তাঁকে বরিশাল বুলস স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১২ খেলায় তিনি সেই টুর্নামেন্টের অন্যতম শীর্ষ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত, ২০১৮-১৯ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ড্রাফটের পরে তাকে চিটাগং ভাইকিংস দলের স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল। তেরো ম্যাচে ৪২৬ রান নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত, ২০১৯-২০ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে তিনি খুলনা টাইগার্স দলের হয়ে খেলেন। তিনি উক্ত টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন। এই টুর্নামেন্টের ৪০ তম খেলায় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৯৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ, Bangabandhu T20 cup
মুশফিকুর রহিম ২০২০-২১ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বেক্সিমকো ঢাকার হয়ে খেলেন। তাঁর রেকর্ড ১৩ বার অবিক্রীত থাকার কারণে তিনি ২০২১ সালের আইপিএলের নিলাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের এলিমিনেটরে একই ক্যাচ ধরার চেষ্টার পর সতীর্থ নাসুম আহমেদকে হারানোর চেষ্টা করেছিলেন রহিম, যার জন্য তিনি বিশেষ সমালোচিত হন। উভয় ফিল্ডার সংঘর্ষ এড়িয়ে যান এবং রহিম ক্যাচটি নিয়েছিলেন।
বেক্সিমকো ঢাকার অধিনায়ক রহিম ওই ঘটনায় তাঁর সতীর্থের উপর বিরক্ত হয়ে তাকে আঘাত করার হুমকি দেন, আর এই ঘটনার ভিডিও টুইটারে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে রহিম সতীর্থের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি রহিমকে তাঁর গেম ফি’র ২৫% জরিমানা করেছে এবং মাইনাস পয়েন্ট দিয়েছিল।
সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব, responsibility of vice captainship
২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। দলের তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে সাকিব তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান মুশফিক।
ভারতের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারী ঘরোয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে মুশফিক নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১১২ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, ফলে বাংলাদেশের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হন। ঐ বছরেরই ৮ নভেম্বর ওয়ানডেতে মুশফিক নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেন। ২০১০ এ মুশফিকের জায়গায় তামিম ইকবাল সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
অধিনায়কত্ব (২০১১ -২০১৪), captaincy
মুশফিক ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের খেলায় নিজেদের সেরা সাফল্য পায়। এই টুর্নামেন্টে এই দল রানার্সআপ হয়। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল মুশফিকের অধিনায়কত্বেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে। ২০১৪ সাল অবধি দলের অধিনয়কত্ব করেন তিনি।
ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড এবং অর্জন, Mushfiqur Rahim achievement and records
বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে বেশ কিছু রেকর্ড তৈরি করেছেন এবং জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছেন।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কুমার সাঙ্গাকারাকে ছাড়িয়ে প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। তিনি ২১৯* রানে ইনিংস শেষ করেছিলেন, যা একজন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ একক স্কোর।
ইনিংস চলাকালীন ক্রিজে ৫৮৯ মিনিটে ৪২১ বলের মুখোমুখি হন তিনি, যা টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড ছিল। একই মাসে মুশফিক বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে ৪,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইএসপিএন কর্তৃক মুশফিককে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ হিসাবে স্থান দেওয়া হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে অপরাজিত ২০৩ রান করেন মুশফিক, টেস্ট ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম তথা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান তিনি।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর, মুশফিককে উইজডেনের টিনেজ রাইট টেস্ট একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুশফিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৫ মে, ১৫০ টি ক্যাপ জেতা প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী খেলোয়াড় হন। তামিম ইকবালের সাথে, তিনি সাকিব আল হাসানের ঠিক পিছনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চবারের (৫ বার) ম্যান অফ দ্য সিরিজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বার্ষিক আইসিসি পুরষ্কারে, ২০২১ সালের জন্য আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে মনোনীত করা হয়েছিল তাঁকে। সেই দলের উইকেটরক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বিশেষ কিছু তথ্য, Special information about Mushfiqur Rahim
- ডাকনাম : মিতু
- উচ্চতা : ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬৩ মিটার)
- ব্যাটিংয়ের ধরন : ডানহাতি ব্যাটসম্যান
- খেলায় ভূমিকা : উইকেট-রক্ষক, ব্যাটসম্যান
শেষ কথা, Conclusion
বাংলাদেশী দলের একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তিনি দলের হয়ে বহু টুর্নামেন্ট খেলেছেন এবং তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বহু ম্যাচ জয়ী হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গর্ব, তাঁকে দেখে নব প্রজন্মের খেলোয়াড় অনুপ্রেরণা পায়।
Frequently Asked Questions
১৯৮৭ সালের ৯ জুন।
২০১১ সাল।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান।