নেইমার এর জীবনী, Biography of Neymar in Bengali

নেইমার এর জীবনী

ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র, যিনি স্প্যানিশ ক্লাব এফসি বার্সেলোনা এবং ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ফরোয়ার্ড এবং উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। উক্ত জাতীয় দলের অধিনায়কও তিনিই।  নেইমার বিশ্বের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে একজন। তিনি নিজেকে তার সমসাময়িক প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে দেখতে চান। খুব অল্প বয়সেই তিনি সুনাম অর্জন করেছেন নিজের কর্মজীবনে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা এই বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড় এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

নেইমার কে ? Who is Neymar?

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র আধুনিক বিশ্বের উদীয়মান ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম বলে গণ্য। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি ২০১১ এবং ২০১২ সালের দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে নির্বাচিত হন। নেইমার ২০১১ সালে মনোনয়ন পান ফিফা ব্যালন ডি’অরের জন্য, সেখানে তিনি ১০ম স্থানে অধিকার করেন এবং ফিফা পুরস্কারও অর্জন করেন।

তিনি খেলায় নিজের গতি, বল কাটানো এবং উভয় পায়ের ক্ষমতার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। নেইমারের খেলার ধরন তাঁকে সমালোচকদের প্রশংসা, দেশ বিদেশে প্রচুর ভক্ত এনে দিয়েছে, তাছাড়াও মিডিয়া তাঁকে সাবেক ব্রাজিলীয় ফুটবলার পেলের সঙ্গে তুলনা করেন।

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র আধুনিক বিশ্বের উদীয়মান ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম বলে গণ্য

নেইমার এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Neymar birth and family identity 

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর জন্ম হয় ব্রাজিলের এমন একটি পরিবারে যার সদস্যরা পূর্ব থেকেই খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলেন। নেইমারের বাবা সিনিয়র নেইমার দা সিলভাও ব্রাজিলের একজন প্রাক্তন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। নেইমারের মায়ের নাম নান্দিনি সান্তোস।

বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নেইমার ফুটবল খেলতে শুরু করেন।  তাঁর বাবা তাঁকে খেলায় অনেক সহায়তা করেছিলেন, যেন সেও একজন পেশাদার ফুটবলার হয়ে উঠতে পারে।

নেইমার এর জন্ম ও পরিবার

নেইমার এর খেলোয়াড় জীবনের শুরুর দিক, Neymar’s early career as a footballer 

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ১৯৯৯ সালে পর্তুগিজ সান্তিস্তার যুব দলের প্রতিনিধিত্ব করার কাজ শুরু করেন। এরজন্য তিনি সো ভিসেন্টে শহরে চলে আসেন। ভালো খেলার ধরণ এর ভিত্তিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই, তিনি তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিতদের একজন হয়ে ওঠেন। 

১১ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ক্লাব এফসি সান্তোসে যোগ দেন। ক্রমে তিনি খেলোয়াড় হিসাবে নিজেকে আরও উন্নত করে তোলেন। ১৭ বছর বয়সে নেইমার এফসি সান্তোসের সাথে প্রথম সিনিয়র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।  এইভাবে, তিনি নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে শুরু করেছিলেন।

খেলোয়াড় হিসেবে নেইমার এর ক্যারিয়ার, Neymar’s career as a player

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ২০০৯ সালে সান্তোস এফসি ক্লাবের হয়ে সিনিয়র দলে অভিষেক করেন। দলকে তিনি লিবার্তাদোরস কাপ জয় করতে সাহায্য করেন। পরবর্তী ৪ টি বছরে তিনি এই দলের এক দুর্দান্ত গোল স্কোরার হয়ে ওঠেন।  উক্ত ক্লাবের হয়ে তিনি ১০৩ টি খেলায় অংশ নেন এবং সর্বমোট ৫৪ টি গোল করেন।

দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন হিসাবে, সান্তোস ক্লাব ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বার্সার বিপক্ষে খেলেছিল। সেখানে মেসি এবং ইনিয়েস্তার পরে নেইমার টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে নেইমার অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এভাবে নেইমারের ক্যারিয়ারের প্রথম দিক খুব ভালোভাবে কেটেছিল।

খেলোয়াড় হিসেবে নেইমার এর ক্যারিয়ার

নেইমার এর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু, The start of Neymar’s international career

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের পর, নেইমার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেলায় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক করেন।  সে সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। পরবর্তীতে ২০১২ সালে সংঘটিত লন্ডন অলিম্পিক গেমসের জন্য ব্রাজিলীয় দলের হয়ে খেলেন তিনি এবং দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন কিন্তু শেষ অবধি মেক্সিকোর সাথে হেরে যান।

২০১৩ সালে এফসি বার্সেলোনার সাথে চুক্তির পূর্বে, নেইমার ব্রাজিলের সাথে কনফেডারেশন কাপ জয়ী হন, সেখানে স্পেনের বিপক্ষে ফাইনাল খেলায় গোল করে তিনি টুর্নামেন্টের এমভিপি হিসেবে পরিচিত হন।  নেইমার ২০১৩ সালের ১৮ ই আগস্ট লা লিগায় ক্লাবের হয়ে লেভান্তের বিপক্ষে খেলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজের আত্মপ্রকাশ করেন।

নেইমার এর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু

২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল ছিল নেইমারের খেলার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফল মরশুম। উক্ত মরশুমে তিনি মেসির পর বার্সেলোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গণ্য হন। ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপে, ব্রাজিল দল ষষ্ঠ বারের মত বিশ্বকাপ জয়ী হয় এবং নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ব্রাজিলের প্রধান তারকা খেলোয়াড় ছিলেন।  

নেইমার এর রেকর্ড এবং পুরস্কার প্রাপ্তি, Neymar’s records and awards received

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ২০১১ সালে ‘ওয়ার্ল্ডস ইয়াং সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জয় করেন এবং একই বছরে উক্ত বছরের সেরা গোল স্কোরার হিসেবে তিনি ফিফা পুসকাস পুরস্কার জয় করেছিলেন। একজন ফুটবলার হিসাবে নেইমারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল ২০১৪-২০১৫ সালের মরশুমে ৩৯ টি গোল করা, যার ফলে তাঁর ক্লাব বার্সেলোনা ট্রেবল জিতেছিল। 

নেইমার এর রেকর্ড এবং পুরস্কার প্রাপ্তি

নেইমার এর নেট ওয়ার্থ, Neymar’s net worth

 নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র মোট সম্পদের পরিমাণ ১১০ মিলিয়ন ইউরো, প্যারিসের রেকর্ড অনুযায়ী তাঁর সম্পত্তি ৯০ মিলিয়ন ইউরোর চেয়েও বেশি।  তবে এই পরিমাণ মহান ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর থেকে কম।  কিন্তু বয়সের হিসেবে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ চিত্তাকর্ষক। তবে কার্লোস তেভেজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার হলেন নেইমার। ফ্রান্স ফুটবলের এক জরিপ অনুসারে ২০১২ সালে প্রকাশ করা হয় যে, নেইমার বিশ্বের ১৩ তম ধনী ফুটবলার। সেই তালিকায় মেসি ছিলেন প্রথম স্থানে।

নেইমার এর নেট ওয়ার্থ

ব্যক্তিগত জীবন, Personal life

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নেইমার বহুবার আলোচনায় এসেছেন। উনিশ বছর বয়সে তিনি বাবা হন, শিশুটির নাম দাভি লুকা। শোনা যায়, ছেলেটি নেইমারের সাবেক বান্ধবী ক্যারেলিনা দানতাসের। পূর্বে অন্যান্য সম্পর্কে জড়িত ছিলেন তিনি, তবে বর্তমানে জেসিকা তুরিনির সঙ্গে নেইমার ডেটিং করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে আছে।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নেইমার বহুবার আলোচনায় এসেছেন

নেইমার এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Special information about Neymar

  • নেইমারের উচ্চতা : ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি
  • নেইমারের জার্সি নম্বর : ১০
  • নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র খ্রিস্টধর্মাবলম্বী।
  •  নেইমার নিজের আয়ের ১০ শতাংশ গির্জাকে দেন এবং তিনি নিজের কাকাকে ধর্মীয় আদর্শ হিসেবে মানেন।
  •  নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র অন্য কয়েকজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের সাথে মিলে প্রতি বছর দাতব্য ম্যাচের আয়োজন করেন এবং জুনদিয়ার নেনে গ্রামের সকল অভাবী পরিবারগুলিকে খাবার সরবরাহ করেন।

বিজ্ঞাপন সংস্থার সাথে কাজ, Work with advertising agencies

 নেইমার বেশ কয়েকটি স্পনসরশিপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যার কারণে তিনি অনেক কম বয়স থেকেই যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন এবং এই খ্যাতি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।  তিনি ২০১১ সালে আমেরিকান স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি নাইকির সাথে ১১ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। 

সে বছরই প্যানাসনিক নেইমারকে দুই বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ করেন। এছাড়াও নেইমার বিশ্বের আরো অনেক নামি দামি ব্র‌্যান্ডের স্পন্সর হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং বর্তমানেও এগুলোর সাথে যুক্ত আছে। তম্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল : ওয়ল্সভগন, লুপো, পে বারুইল, ক্লারো, টিনেইজ, ইউনিলিভার দক্ষিণ আমেরিকা এবং স্যান্টান্ডার।

বিজ্ঞাপন সংস্থার সাথে কাজ

এ ছাড়াও তিনি আরো অনেক বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন । অন্যদিকে তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ স্টাইলিশভাবে থাকতে পছন্দ করেন এবং তাঁর স্টাইল মানুষ বেশ পছন্দও করে।

উপসংহার, Conclusion 

নিজের শৈল্পিক খেলার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে পরিচিত নেইমার। তাঁর খেলোয়াড় শৈলী ও দৃঢ় মানসিকতার জন্য নেইমারের দলের প্রতিপক্ষরাও তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর খেলার প্রশংসা করতে পিছপা হয় না। যদিও ছোট থেকে পাড়ার সরু গলিতেই তাঁর ফুটবল জীবনের শুরু হয়েছিল, কিন্তু তিনি আজ এক তারকা খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য হন, যা সকলের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়।

Frequently Asked Questions :

নেইমার কে ?

নেইমার একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল খেলুয়ার ।

নেইমার এর জন্ম কোথায় হয় ?

নেইমার এর জন্ম হয় ব্রাজিলে ।

নেইমার এর জন্ম কবে হয় ?

নেইমার এর জন্ম হয় ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ সালে ।

নেইমার এর পিতার নাম কী ?

নেইমার এর পিতার নাম সিনিয়র নেইমার দা সিলভা ।

নেইমার এর মাতার নাম কী ?

নেইমার এর মাতার নাম নান্দিনি সান্তোস ।

নেইমার এর বর্তমান ক্লাবের নাম কী ?

নেইমার এর বর্তমান ক্লাবের নাম পারি সাঁ-জেরমাঁ ।

নেইমার কবে ওয়ার্ল্ডস ইয়াং সকার প্লেয়ার হোন ?

নেইমার ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ডস ইয়াং সকার প্লেয়ার হোন ।

নেইমার এর পুরো নাম কী ?

 নেইমার এর পুরো নাম নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র ।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts