অপরাহ গেইল উইনফ্রে; 20 শতকের আফ্রিকান-আমেরিকানদের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তাছাড়াও তিনি একাধারে একজন আমেরিকান টক শো হোস্ট, অভিনেত্রী, টেলিভিশন প্রযোজক, স্বনামধন্য লেখক এবং মিডিয়া স্বত্বাধিকারী। শিকাগো থেকে সম্প্রচারিত টক শো, দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো-এর জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একসময় অপরাহ গেইল বিশ্বের একমাত্র কালো বিলিয়নেয়ার ছিলেন। ২০০৭ সালের দিক থেকে, তিনি প্রায়শই বিশ্বের প্রভাবশালী মহিলাদের মধ্যে গণ্য হয়েছেন।
জন্ম ও শৈশব কালীন স্মৃতি, Birth and childhood
অপরাহ গেইল উইনফ্রের জন্ম হয় ১৯৫৪ সালের ২৯ শে জানুয়ারী। উইনফ্রে মিসিসিপির কোসিয়াসকোতে জন্ম গ্রহণ করেন, সেখানকার গ্রামীণ পরিবেশে দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে একজন কিশোর বয়সী মায়ের কাছে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার জন্মের সময় মা ভার্নিটা লি অবিবাহিত ছিলেন। উইনফ্রের জন্মের পর, প্রথম ছয় বছর তিনি নিজের নানী, হ্যাটি মে লির সাথে কাটিয়েছিলেন।
নানী এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে উইনফ্রেকে প্রায়ই আলুর বস্তা দিয়ে তৈরি পোশাক পরতে হতো, যার জন্য আশে পাশের অন্যান্য শিশুরা তাকে নিয়ে মজা করত। তবে নানী তাঁকে তিন বছর বয়সের পূর্বেই পড়তে শিখিয়েছিলেন এবং রোজ তাকে স্থানীয় গির্জায় নিয়ে যেতেন, তার মধ্যে বাইবেল আবৃত্তি করার দক্ষতা ছিল বলে সেখানে অনেকেই তাঁকে “প্রচারক” বলে ডাকতেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি মিলওয়াকিতে বেড়ে ওঠেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে শৈশবে তথা কিশোর বয়সেও তাঁকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছিল। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে অবিবাহিত অবস্থাতেই গর্ভবতী হয়েছিলেন; ছেলে অকালে জন্মেছিল এবং অনেক কম বয়সেই মারা যায়।
শিক্ষালাভের ইতিহাস, Education
অপরাহ উইনফ্রে মিলওয়াকির লিঙ্কন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন, কিন্তু কিছু সময় পর তাঁকে নিকোলেট হাই স্কুলে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে উইনফ্রে একজন অনার্সের ছাত্রী হিসেবেও পড়াশুনা করেন। স্নাতক শেষে তিনি ইস্ট ন্যাশভিল হাই স্কুলের বক্তৃতা প্রদানকারীদের দলে যোগ দেন, বিভিন্ন বিষয়ে নাটকীয় ব্যাখ্যা করার দরুন তিনি এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। সেই সুবাদে তিনি টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য বৃত্তি লাভ করেছিলেন, যেখানে তিনি কমিউনিকেশন বিষয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন।
কর্মজীবনের প্রথমার্ধ, First phase of career
উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠরত থাকাকালীনই উইনফ্রে রেডিওতে চাকরি পেয়ে যান। তিনি স্থানীয় সন্ধ্যা সংবাদের সহ-অ্যাঙ্কর ছিলেন। উইনফ্রে নিজের কাজের মধ্য দিয়ে তৃতীয়-রেট স্থানীয় শিকাগো টক শোকে প্রথম স্থানে নিয়ে যান। তারপর তিনি নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা চালু করেন। ২০০৮ সালে, তিনি তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক, Oprah Winfrey Network (OWN) গঠন করেন।
একই সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় উইনফ্রে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সেই সুবাদে বারাক ওবামার সাথেও তার বেশ ভালো পরিচিত গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালে, উইনফ্রেকে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা কর্তৃক প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম পুরস্কার প্রদান করা হয়, তাছাড়াও ডিউক এবং হার্ভার্ড থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। Oprah Winfrey Network পরবর্তী সময়ে মিডিয়া যোগাযোগের সাথে তাঁকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে। বলতে গেলে তিনি মিডিয়ায় এক নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।
টেলিভিশনে কাজ, Working in television
স্থানীয় মিডিয়াতে কাজ করার সময়, উইনফ্রে ছিলেন ন্যাশভিলের WLAC-TV (বর্তমানে WTVF-TV) এর সর্বকনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা সংবাদ উপস্থাপক, যেখানে তিনি প্রায়শই গল্প ডাবিং করতেন। ১৯৭৬ সালে, তিনি বাল্টিমোরের WJZ-TV-এ চলে যান ছয়টার সংবাদের সহ-অ্যাঙ্কর হিসেবে কাজ করার জন্য। কিন্তু ১৯৭৭ সালে, তাকে সহ-অ্যাঙ্কর হিসাবে অপসারণ করা হয়েছিল এবং স্টেশনে এক নিম্ন পদে কাজ দেওয়া হয়।
এরপর রিচার্ড শেরে তাকে WJZ-এর স্থানীয় টক শো পিপল আর টকিং-এর সহ-হোস্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৮৪ সালে, স্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে ডেনিস সোয়ানসন নিয়োগ হওয়ার পর উইনফ্রে শিকাগোতে স্থানান্তরিত হন WLS-TV-এর কম-রেটেড আধা ঘণ্টার সকালের টক শো হোস্ট করার জন্য। এর প্রথম পর্বটি ওই সালের ২ জানুয়ারী সম্প্রচারিত হয়। উইনফ্রে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই, শো-টি রেটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটযুক্ত টক শো হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্ট উইনফ্রেকে কিং ওয়ার্ল্ডের সাথে একটি সিন্ডিকেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি করান।
এবার্ট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি অন্য উচ্চমানের টেলিভিশন শো এর তুলনায় ৪০ গুণ বেশি আয় করতে পারবেন। তারপরে এটির নামকরণ করা হয় The Oprah Winfrey Show এবং এক ঘন্টার অনুষ্ঠান হিসেবে প্রসারিত করা হয়। প্রথম পর্বটি ১৯৮৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী সম্প্রচারিত হয়। তৎকালীন সময়ে ডোনাহুয়ে এক নম্বর টক শো ছিল, কিন্তু উইনফ্রে-এর সিন্ডিকেটেড শো ডোনাহুয়ের থেকেও বেশ কিছু শ্রোতাদের নিজের দিকে টেনে এনেছিল, এরপর ডোনাহুকে আমেরিকার এক নম্বর দিনের টক শো হিসাবে স্থানচ্যুত করা হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তি, Awards and Recognition
উইনফ্রে তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে প্রভূত প্রশংসা জিতেছেন যার মধ্যে রয়েছে ১৮ টি ডেটাইম এমি অ্যাওয়ার্ডস; যেমন : লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড সহ আরো বেশ কিছু পুরস্কার। দুটি প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ড, যথা বব হোপ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড সহ একটি টনি অ্যাওয়ার্ড, একটি বডি অ্যাওয়ার্ড এবং একটি পিএ অ্যাওয়ার্ড ।
তাছাড়াও তার প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে হার্শোল্ট হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড, একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এছাড়া দুটি প্রতিযোগিতামূলক একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে, তিনি জাতীয় মহিলা অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের সময়কালে উইনফ্রে আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
পরিচালক হিসাবে অপরাহ গেইল উইনফ্রের শো- গুলো ছিল, Oprah Gail Winfrey directorial shows:
1989 – The Oprah Winfrey Show (supervising producer – 8 episodes, 1989–2011)
1989 – The Women of Brewster Place (TV miniseries) (executive producer)
1992 – Overexposed (TV movie) (executive producer)
1993 – ABC Afterschool Special (TV series) (producer – 1 episode “Shades of a Single Protein”) (producer)
1993 – Michael Jackson Talks to… Oprah Live (TV special) (executive producer)
1997 – Before Women Had Wings (TV movie) (producer)
1998 – David and Lisa (TV movie) (executive producer)
1999 – Tuesdays with Morrie (TV movie) (executive producer)
2001 – Amy & Isabelle (TV movie) (executive producer, producer)
2002 – Oprah After the Show (TV series) (executive producer)
2005 – Their Eyes Were Watching God (TV movie) (executive producer)
2006 – Legends Ball (TV documentary) (executive producer)
2007 – Oprah’s Big Give (TV series) (executive producer)
2007 – The Great Debaters (producer)
2009 – Christmas at the White House: An Oprah Primetime Special (TV special) (executive producer)
2010 – The Oprah Winfrey Oscar Special (TV movie) (executive producer)
2011 – Your OWN Show (TV series) (executive producer)
2014 – The Hundred-Foot Journey (producer)
2016–2020 – Greenleaf (executive producer)
2017 – The Immortal Life of Henrietta Lacks (TV movie) (executive producer)
2018 – Love Is (executive producer)[277][278]
2019 – When They See Us (executive producer)
2019 – David Makes Man (executive producer)
2020 – The Water Man (executive producer)[279]
2023 – The Color Purple (producer)
উপসংহার, To Conclude
বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও অপরাহ গেইল উইনফ্রের কখনো হার মানেন নি। তিনি শিক্ষাগ্রহণকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রেখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
Frequently Asked Questions :
20 শতকের আফ্রিকান-আমেরিকানদের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তাছাড়াও তিনি একাধারে একজন আমেরিকান টক শো হোস্ট, অভিনেত্রী, টেলিভিশন প্রযোজক, স্বনামধন্য লেখক এবং মিডিয়া স্বত্বাধিকারী।
১৯৫৪ সালের ২৯ শে জানুয়ারী।
দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো।