‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী সামাজিক মাধ্যমের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ওয়াজ মাহফিলে শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত। জনপ্রিয়তা লাভ করার পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে তাঁকে হাজত বাসও করতে হয়েছিল।
রফিকুল ইসলাম মাদানীর জন্ম ও পরিবার, Birth and Family of Rafiqul Islam Madani :
১৯৯৪ সালে, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় রফিকুল ইসলাম মাদানীর জন্ম হয়েছিল। এর থেকে বুঝতে পারা যায় যে তিনি শুধু নামেই শিশু বক্তা, বয়স তাঁর অনেকটাই। রফিকুল ইসলাম মাদানী হলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার অন্তর্গত লেটিরকান্দা এলাকার সাহাব উদ্দিনের পুত্র। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সাধারণ শ্রমিক। দুর্ভাগ্যবশত মাদানী আট বছর বয়সে বাবাকে হারান। রফিকুল ইসলামের চারজন ভাই ও তিন বোন রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম মাদানীর পড়াশুনা, Education of Rafiqul Islam Madani :
রফিকুল ইসলাম পুরাকান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর জারিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। বিভিন্ন সূত্র থাকে জানা গেছে যে, নেত্রকোনার একটি মাদ্রাসায় রফিকুল ইসলাম মাদানী হিফজুল কোরআন পড়াশুনা করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। উক্ত স্কুলে কয়েক বছর পড়াশোনা করেন তিনি। শেষে চলে যান গাজীপুরের কোনাবাড়ির একটি মাদ্রাসায়। সেখানে কিছুদিন পড়াশোনা করার পর তিনি ঢাকার বারিধারা এলাকায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমানের) পাশ করেন।
ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ, Debut as a speaker in Waj Mahfil :
২০১২ সাল থেকে রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। সেই সময় থেকেই ইসলামী বক্তা হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের পথ চলা শুরু হয়। তিনি মূলত বারিধারা মাদ্রাসায় যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের একজন আলোচিত বক্তা হয়ে ওঠেন। তবে নিজ এলাকায় তাঁর তেমন একটা পরিচিতি নেই।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, শিশুবক্তা হিসেবে তবে হঠাৎ পরিচিত হয়ে ওঠা কারও কারও কাছে অবাক করে দেওয়া একটি বিষয়। রফিকুল ইসলাম মাদানীর নামের সাথে শিশুবক্তা বিশেষণ যুক্ত করার ব্যাপারে তাঁর নিজেরও অবশ্য কিছুটা আপত্তি রয়েছে, যা তিনি নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে বহুবার প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কিছুটা অস্বাভাবিক খর্বকায় বালকসুলভ চেহারা ও কোমল কণ্ঠস্বর হওয়ায় তাঁর পরিচিতি শিশু বক্তা হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজ এ তাঁর নামের সঙ্গে শিশুবক্তা বিশেষণ ব্যবহার না করার অনুরোধও করেন তিনি।
মাদ্রাসাতে পড়াশুনা করার সময় থেকেই ওয়াজে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন রফিকুল। তিনি বিএনপি জামায়াত , জোটের শরিক দল , জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অঙ্গ সংগঠন , যুব জমিয়তের নেত্রকোণা জেলার সহ সভাপতি । এসব ছাড়া নেত্রকোণার পশ্চিম বিলাশপুর সাঁওতালেরা মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন এই শিশুবক্তা।
বিতর্কিত বক্তা হওয়ার কারণে রফিকুল ইসলামকে ওয়াজকারী বক্তাদের সংগঠন রাবেয়াতুলজিম বাংলাদেশের সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হয়নি, বরং উক্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে ওয়াজে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা, Case against Rafiqul :
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বেশকয়েকটি মামলায় মাদানিকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তাঁকে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল তাঁর নেত্রকোনার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় র্যাব। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে চারটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছিল। উক্ত মামলার এজাহারে রফিকুলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছিল। রাজধানীর মতিঝিল থানায় তাঁর নামে অভিযোগ করা হয় , গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় ও রাজধানীর তেজগাঁও থানায় রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক মামলা হয়
অভিযুক্ত হিসেবে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ তে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তবে কিছু সময় পর তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। আদালতে রফিকুল ইসলাম মাদানীর পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী আশরাফ আলী মোল্লা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজারের কলমেশ্বর এলাকায় এক কারখানা চত্বরে, ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, এক ওয়াজ মাহফিলে দেশের সরকারকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম মাদানী।
এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকার সফরের সময়কালে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়, এতে অংশগ্রহণ করে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। এরপর থেকেই ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।
‘নুরিয়া ইসলামিক মিডিয়া’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে রফিকুল ইসলামের বক্তব্যের এক ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে যে, সোনারগাঁও এলাকার একটি রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।
নামের শেষে ‘মাদানী’ শব্দের ব্যবহার, Use of the word ‘Madani’ at the end of the name :
রফিকুল ইসলাম ঢাকার বারিধারা এলাকায় অবস্থিত জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমানের) ডিগ্রি লাভ করেছিলেন, এর পর থেকেই তিনি নিজের নামের শেষে ‘মাদানী’ টাইটেল যুক্ত করেন।
রফিকুল ইসলামের নামের সাথে মাদানী যোগ করার বিষয় নিয়েও বেশ কিছু বিতর্ক ছড়িয়েছে। তাঁর নামের শেষে মাদানী লাগানোর ঘটনায় তাকে আইনী নোটিশও দিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের মদিনা শাখার আমির ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য।
নোটিশে বলা হয়, সৌদি আরবে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা না করেও ‘মাদানী’ উপাধি ব্যবহার করছেন রফিকুল ইসলাম। উক্ত নোটিশ পাওয়ার পরে একটি অনুষ্ঠানে রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, “মদিনা থেকে পড়াশুনা করলেই যে শুধু ‘মাদান‘ উপাধি ব্যবহার করা যাবে বিষয়টি সে রকম নয়।”
রফিকুল ইসলাম মাদানীর ওয়াজ, Rafiqul Islam Madani waz :
সামাজিক মাধ্যমে বিশেষ আলোচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর ওয়াজের কিছু শিরোনাম দেখে নিন :
- কিশোরগঞ্জ বছরের সেরা ওয়াজ রফিকুল ইসলাম মাদানী ওয়াজ, (YouTube channel : ISLAMIC NUR MEDIA) ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়।
- জেল থেকে মুক্তি পেয়ে মাদানীর নতুন ওয়াজ | Rafiqul Islam ( YouTube channel : Sumaiya TV) ২০২১ সালের ২৯ মার্চ প্রকাশিত হয়।
- অজ্ঞান হওয়ার আগে ইতিহাসের সেরা ঝড় তোলা বয়ান করলেন! ( YouTube channel : Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত।
- ইতিহাসের সেরা বয়ান উত্তাল লাখো জনতা! (YouTube channel : Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত হয়
- সম্পূর্ণ নতুন গরম ওয়াজ করলেন লাখো জনতার হৈচৈ! (YouTube channel: Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়।
- শাহাদাত হতে এসেছি! ২য় মাহফিলে উত্তাল লাখো জনতা! (YouTube channel: Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রকাশিত হয়।
- ইতিহাসের সেরা ঝড় তোলা বয়ান করলেন! (YouTube channel : Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর।
- যেমন গরম তেমন কান্নার ওয়াজ! (YouTube channel : Sylhet Islamic Media) ২০২৩ সালের ২রা ডিসেম্বর।
- বয়ান করলেন বড় পেতনা নিয়ে আলোড়ন তৈরি করা ওয়াজ। (YouTube channel : Deeply Happiness) ২০২৪ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি।
- কারামুক্তির পর প্রথম মাহফিলে অগ্নিঝরা বয়ান! ( YouTube channel : CTG Islamic TV) ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর।
শেষ কথা, Conclusion :
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম মাদানী নামেও তাঁকে অনেকেই জানেন। তাঁর যেমন বিশাল পরিচিতি রয়েছে, তেমনি সমালোচনাও রয়েছে অনেক। যারা এখন পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম মাদানী সম্পর্কে বা তার পরিচয় সম্পর্কে জানেন না তারা আশা করি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
Frequently Asked Questions
রফিকুল ইসলাম মাদানী সামাজিক মাধ্যমের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ওয়াজ মাহফিলে শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৪ সালে
রফিকুল ইসলাম ঢাকার বারিধারা এলাকায় অবস্থিত জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমানের) ডিগ্রি লাভ করেছিলেন, এর পর থেকেই তিনি নিজের নামের শেষে ‘মাদানী’ টাইটেল যুক্ত করেন।