রণবীর সিং ভবনানী ভারতের বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একজন খ্যাতনামা অভিনেতা। তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন নিজের অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে। অভিনয় জগতে বিশেষ অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার অর্জন করেছেন। এক কথায় তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের সেরা অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা রণবীর সিংয়ের শৈশব থেকে বড়ো হওয়ার কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
রণবীর সিং এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়/ Birth and family identity of Ranveer Singh
১৯৮৫ সালে ৬ই জুলাই রণবীর সিং এর জন্ম হয়। তিনি মুম্বাই শহরের এক সিন্ধি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জগজিৎ সিং ভবনানী এবং মায়ের নাম আঞ্জু ভবনানী। মা বাবা ছাড়াও তাঁর পরিবারে আছেন দিদি রীতিকা ভাবনানী। রণবীর তার বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। অন্যদিকে রণবীর সিং হলেন অনিল কাপুর এর ভাগ্নে অর্থাৎ অনিল কন্যাদ্বয় সোনাম কাপুর এবং প্রযোজক রিয়া কাপুরের মামাতো ভাই।
রণবীর সিং এর শিক্ষাগত যোগ্যতা, Ranveer Singh education
রণবীর সিং বিদ্যালয় শিক্ষা সম্পন্ন করার পর মুম্বাইয়ের এইচআর কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখান থেকে রণবীর ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন থেকে ২০০৮ সালে টেলিকমিউনিকেশনে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন ।
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নপূরণ, Ranveer Singh as an actor
রণবীর অনেক কম বয়স থেকেই অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি স্কুলে পড়াশুনা করার সময় থেকে বিভিন্ন নাটকে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। শৈশব থেকেই তিনি বলিউডের মুভি দেখতে খুব পছন্দ করতেন। এক কথায় বলিউডের দ্বারা তিনি বেশি প্রভাবিত হন। কিন্তু তখন হয়তো তিনি বুঝতে পারেন নি যে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করা খুব সহজ কাজ নয়।
একসময় তাঁর মনে ধারণা জেগেছিল যে বলিউড ব্যাকগ্রাউন্ড যাদের আছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাই শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগতে কাজ করার সুযোগ পায়। এমনটা ভাবতে ভাবতে রণবীরের মন থেকে অভিনয় করার স্বপ্ন থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশুনা চলাকালীন অভিনয়ের উপর পুনরায় আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। এরপর রণবীর সিং অভিনয় কোর্স করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তিনি মুম্বাইয়ে ফিরে আসেন ২০০৭ সালে। ফিরে আসার পর প্রথমদিকে তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করতেন। এরপর তিনি বিভিন্ন মুভির জন্য অডিশন দিতে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালকদের কাছে নিজের পোর্টফলিও প্রদান করতে শুরু করেন তিনি।
২০১০ সাল ছিল রণবীরের জীবনের স্বপ্ন সফল হওয়ার বছর। উক্ত সালের জানুয়ারি মাসে রণবীর সিংকে প্রথমবার যশ রাজ ফিল্ম থেকে অডিশনের জন্য ডাকা হয়। অডিশনে দুটি দৃশ্যে তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে যশ রাজ ফিল্মের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদিত্য চোপড়া মুগ্ধ হয়ে যান এবং অনুষ্কা শর্মার বিপরীতে “ব্যান্ড বাজা বারাত” সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য তাঁকে অফার দেন।
ছবিটি সমালোচকদের থেকে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছিল এবং বাণিজ্যিকভাবেও প্রভূত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। উক্ত ছবিতে অভিনয় করে রণবীর শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা, Ranveer Singh’s acting experiences
প্রথম ছবি “ব্যান্ড বাজা বারাত” এ কাজ করার পর থেকে রণবীর সিং একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন এবং খুব কম সময়েই দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রথম ছবির অসাধারণ সাফল্যের পর যশ রাজের পরিচালনায় আরও একটি ছবিতে কাজ কর প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে। পরিচালক মানীশ শর্মার “লেডিস ভার্সেস রিকি বাহল” ছবিতে আরও একবার অনুষ্কা শর্মা এবং রণবীর সিংকে একসাথে জুটি বাঁধতে দেখা যায়। এরপর তিনি অভিনয় করেন রোম্যান্টিক ড্রামা লুটেরা (২০১৩) তে, যেখানে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন সোনাক্ষি সিনহা।
পরবর্তীতে তিনি সঞ্জয় লীলা ভংসালী পরিচালিত ট্র্যাজিক রোম্যান্স গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা (২০১৩) তে অভিনয়ের সুযোগ পান যেখানে তিনি দীপিকা পাড়ুকোন এর সাথে কাজ করেছিলেন। পরের বছর তাঁকে দেখা যায় অ্যাকশন-ড্রামা ‘গুন্ডে’ (২০১৪) ছবিতে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং অর্জুন কাপুরের সঙ্গে উক্ত ছবিতে কাজ করেন তিনি। রণবীরের সিংয়ের বড়ো বাজাটের সিনেমা মুক্তি প্রাপ্ত হয় ২০১৫ সালে। সঞ্জয় লীলা ভানসালি পরিচালিত ঐতিহাসিক ছবি ” বাজীরাও মস্তানী” সিনেমায় তিনি বাজিরাওয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি।
২০১৮ সালে ‘ ছবি মুক্তি পায়, যা ছিল রণবীর সিংয়ের অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত ছবি। এই ছবির সুযোগে তিনি আরও একবার সঞ্জয় লীলা ভানসালি এবং দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁর অভিনয় জীবনে ‘পদ্মাবত’ ছবিতে খিলজীর ভূমিকায় অভিনয় ছিল তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত চরিত্র। তিনি এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলেন। এর পর দেশব্যাপী তাঁর খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পায়।
উক্ত চলচ্চিত্রে অসামান্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসাবে দাদা সাহেব ফালকে পুরষ্কার পেয়েছেন। ক্রমে তিনি বিভিন্ন ছবির জন্য প্রস্তাব পান। ২০১৯ সালে আলিয়া ভাট এর সাথে রণবীরের একটি ছবি মুক্তি পায় যার নাম ছিল ‘ গলি বয়’ যেখানে রণবীর নিজে একটি গানও গেয়েছিলেন।
রণবীর সিং অভিনীত চলচ্চিত্র, Movies acted by Ranveer Singh
অভিনেতা রণবীর সিং ভবনানী বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, তাঁর প্রতিটি ভূমিকা ছিল ভিন্নধর্মী এবং তিনি প্রতিটি চরিত্রই খুব সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হল :
- সার্কাস (২০২২)
- সিম্বা (২০১৮)
- পদ্মাবত (২০১৮)
- বেফিকরে (২০১৬)
- বাজীরাও মাস্তানী (২০১৫)
- গুণ্ডে (২০১৪)
- লুটেরা (২০১৩)
- গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা (২০১৩)
- ব্যান্ড বাজা বারাত (২০১০)
- রকি আউর রানী কি প্রেম কাহানি (২০২৩)
- লেডিস ভার্সেস রিকি ভেল (২০১১)
- সূর্য্যবংশী (২০২১)
- 83 (২০২১)
- গলি বয় (২০১৯)
- জয়েশভাই জোরদার ( ২০২২)
- দিল ধাড়াকনে দো ( ২০১৫)
- কিল দিল (২০১৪)
রণবীর সিং এর বৈবাহিক জীবন, Ranveer Singh married life
কলেজের পড়ার সময়কালে রণবীর সিং ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনীর মেয়ে আহনা দেওলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু সেই সম্পর্ক ছিল স্বল্প সময়ের জন্য ।
বলিউডে প্রথম সিনেমা “ব্যান্ড বাজা বারাত” এর সেট থেকে তিনি অনুুষ্কা শর্মার সঙ্গে ডেটিং শুরু করেন। পরে শোনা যায় যে তাদের দুজনের মধ্যে মতবিরোধের কারণে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। তবে বর্তমানে দুইজন খুব ভালো বন্ধু। পরবর্তী সময়ে রণবীর জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে ডেটিং শুরু করে। দীর্ঘ সময় ধরে সম্পর্কে থাকার পর ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর এই জুটির বাগাদান সম্পন্ন হয়। বর্তমানে তারা সুখী বৈবাহিক জীবনযাপন করছেন।
রণবীর সিং এর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা, Ranveer Singh awards and recognition
বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ারে রণবীর সিং বহু অ্যাওয়ার্ডস অর্জন করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস (২০১০,২০১৬), দাদা সাহেব ফালকে শ্রেষ্ঠত্ব পুরষ্কার (২০১৮), সেরা অভিনেতা অ্যাওয়ার্ডস (২০১০,১৬,১৮), বছরের শ্রেষ্ঠ বিনোদনকারী অ্যাওয়ার্ড (২০১৬,২০১৮) প্রভৃতি।
উপসংহার, Conclusion
রণবীর সিং বলিউডের সবচেয়ে ফুর্তিবাজ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজের জীবনকে আনন্দের সাথে উপভোগ করেন এবং তিনি যা কাজই করেন তা নিষ্ঠার সাথে করেন। তাইতো দর্শকরাও তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তথা তিনি পরিচালকদের কাছেও প্রিয়। আশা করা যায় আমরা ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু ছবিতে রণবীরকে কাজ করতে দেখবো।
Frequently Asked Questions
৬ জুলাই
মুম্বাই শহরে
ব্যান্ড বাজা বারাত