রূপম ইসলামের জীবনী, Biography of Rupam Islam (Fossils) in Bengali

রূপম ইসলামের জীবনী

রূপম ইসলাম, একজন বাঙালি গায়ক, সুরকার, গীতিকার ও লেখক হিসেবে পরিচিত। বিখ্যাত বাংলা রক্‌ ব্যান্ড ফসিলস্‌-এর প্রধান কন্ঠ শিল্পী তিনি। তিনি মূলত ফসিল্‌স-এর বিভিন্ন অ্যালবাম দ্বারা বিপুল খ্যাতি লাভ করেছিলেন। এছাড়াও বেশ কিছু বাংলা ছবি-তে তিনি নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন। নেপথ্য গায়ক হিসেবে জয় করেছেন জাতীয় পুরস্কারও। আজ এই রকস্টারের জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরবো এই জীবনীমূলক প্রতিবেদনে।

রূপম ইসলামের  জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Rupam Islam birth and family identity 

রূপম ইসলামের জন্ম হয় ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। নুরুল ইসলাম এবং ছন্দিতা ইসলামের একমাত্র সন্তান তিনি। তাঁর বাবা-মা দুজনেই শিল্প জগতের সাথে জড়িত।

প্রথমবার মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন, Rupam Islam first musical presentation 

রূপমকে আমরা সকলেই একজন সঙ্গীত শিল্পী তথা রকস্টার হিসেবে জানি। তবে তিনি প্রথমবার কোথায় এবং কত বছর বয়সে মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন তা হয়তো অনেকেই জানেন না।

রূপমের বয়স যখন মাত্র চার বছর ছিল তখন তিনি মা বাবার পরিচালিত ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠির এক অনুষ্ঠানে প্রথমবার মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছয়-সাত বছর বয়সে তিনি অন্নদাশঙ্কর রায়-এর একটি ছড়ায় প্রথমবার সুর সংযোজনা করেছিলেন, এরপর সেই গানটি তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে গাইতে শুরু করেন। রূপম আট বছর বয়স থেকেই আকাশবাণী এবং দূরদর্শন-এ নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন।

প্রথমবার মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন

রূপম ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা, Rupam Islam education 

রূপম ইসলাম পড়াশুনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো ছাত্র ছিলেন। তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক করেন। পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীনে তিনি বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বেশ কিছুদিন টাকি বয়েজ স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করেছিলেন।

সঙ্গীতচর্চা, Music practice

স্কুলে শিক্ষকতার কাজের পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত থাকে রূপমের। বলাই বাহুল্য যে ‘ফসিল্‌স’ তৈরি হবার আগেও বিভিন্ন গানের ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘রিদিম’, ‘রিদমিক’, ‘হরিদাসের ডানা’ এবং ‘দূরের গাংচিল প্রভৃতি। কিন্তু, সেই ব্যান্ডগুলি চিরস্থায়ী হতে পারেনি। রূপমের প্রথম সোলো অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। অ্যালবামের নাম ছিল ‘তোর ভরসাতে’, যা এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা বাণিজ্যিকভাবে অসফল হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালে সেই অ্যালবামটি পুনঃপ্রকাশিত হয় ‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়’ নামে এবং তখন এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলা ‘ অটোগ্রাফ ‘ চলচ্চিত্রে রূপমের গাওয়া ‘ বেঁচে থাকার গান ‘ শ্রোতাদের মধ্যে কিরূপ সাড়া ফেলেছিল তা হয়তো আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না। তবে শুধু এই গানই নয়, রূপম ইসলামের গাওয়া এমন আরো বহু গান আছে যা প্রায়ই আমরা গুনগুন করতে থাকি।

স্কুলে শিক্ষকতার কাজের পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত থাকে রূপমের

তবে শুধু বাংলা সঙ্গীত নয় বরং হিন্দি গানেও নিজের ছাপ রেখেছেন তিনি। বাংলায় বেশ কিছু সিনেমায় নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গান গাওয়ার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছিলেন রূপম। ২০০৭ সালে, কুণাল দেশমুখ পরিচালিত ‘জান্নাত’ ছবিতে রূপম হিন্দি প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন , যেখানে তিনি “জান্নাত জাহান” গানটি গেয়েছিলেন।

রূপম ইসলামের অন্যান্য সোলো অ্যালবাম, solo album of Rupam Islam 

  • ২০১০ সালে ‘ ন হন্যতে’ প্রকাশিত হয় সারেগামা এইচএমভি লেবেলে।
  • ২০১১ সালে সারেগামা এইচএমভি লেবেলে ‘নিষ্ক্রমণ’ নামে অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। 
  • ২০১৪ সালে টাইমস মিউসিক লেবেলে ‘ প্রেরণা’ একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
  • ২০১৭ সালে ‘নতুন নিয়ম’ নামে অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বাংলা রক্‌ লেবেলে।
  • ২০২০ সালে ‘আমি’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বাংলা রক্‌ লেবেলে।
রূপম ইসলামের অন্যান্য সোলো অ্যালবাম

রূপম ইসলামের একক গানগুলো, solo songs of Rupam Islam 

বাংলা রক্‌ লেবেলে প্রকাশিত রূপম ইসলামের উল্লেখযোগ্য একক গানগুলো হল :

  • ২০১৮ সালে আমি তোমায় ভালোবাসি 
  • ২০১৮ সালে আমি তোমায় ভালোবাসি ২
  • ২০১৮ সালে রুনানুবন্ধ
  • ২০২০ সালে দগদগে ইতিহাসের ঘা
  • ২০২০ সালে বিভাজন
  • ২০২০ সালে ঈশ্বর
  • ২০২১ সালে ফিসফাস যুগে
  • এছাড়াও ২০১৯ সালে ‘স্তর’ নামে একটি গান প্রকাশিত হয় জি মিউসিক বাংলা লেবেলে।

ফসিলস্ ব্যান্ড গঠন, formation of fossils band

রূপম ইসলাম ১৯৯৮ সালে ফসিলস্ গঠন করেন। ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন :

  • রূপম ইসলাম (কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত রচয়িতা)
  • দীপ ঘোস (রিদম গিটারিস্ট)
  • অ্যালান তেমজেন আও (লিড গিটারিস্ট)
  • প্রসেনজিৎ (পম) চক্রবর্তি (বেসিস্ট) এবং তন্ময় দাস।

কলকাতায় এই ব্যান্ডের প্রথম স্টেজ শো হয় ১৯৯৯ সালের ৯ জানুয়ারি তারিখে। এই শোতে গিটার বাজিয়েছিলেন দীপ ঘোষ। এই দীপই ব্যান্ডটির নাম রাখেন ফসিলস্। এই নামটি রূপমের লেখা একটি গানের থেকে অনুপ্রণিত হয়ে রাখা হয়, গানটি হল “খোঁড়ো আমার ফসিল”। 

ফসিল্‌স ব্যান্ড এর প্রকাশিত অ্যালবাম, Released album by the band Fossils

২০০২ সালে ‘ফসিল্‌স’ নামে আশা অডিও থেকে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়, এই অ্যালবামের গানগুলো হল :

  • আরো একবার
  • একলা ঘর
  • নেমেসিস
  • হাসনুহানা
  • দ্যাখো মানসী
  • বিষাক্ত মানুষ
  • নিষ্ক্রমণ
  • মিলেনিয়াম
ফসিলস্ ব্যান্ড গঠন

২০০৪ সালে ‘ফসিল্‌স ২’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয় আশা অডিও লেবেলে।  অ্যালবামের গানগুলো হল :

  • কেন করলে
  • মানব বোমা
  • ছল
  • হারানো পদক
  • তৃতীয় বিশ্ব
  • অ্যাসিড
  • ২৯ শে অক্টোবর
  • বাইসাইকেল চোর
  • শাস্তি

২০০৬ সালে ‘মিশন এফ’ অ্যালবামটি আশা অডিও লেবেলে প্রকাশিত হয়। অ্যালবামের গানগুলো হল :

  • ইতস্ততা
  • সততার বিলাসিতা
  • মানব বোমা
  • ফ্রেন্ডশিপ চাই
  • বন্ধু হে
  • কিছুটা সময়
  • বিষাক্ত মানুষ
  • একা নও
  • শোনো আমরা কি সবাই
  • হারি না

২০০৭ সালে আশা অডিও থেকে ‘অপদার্থ’ নামে ফসিলস ব্যান্ডের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৯ সালে ‘ফসিল্‌স ৩’ নামে আশা অডিওর লেবেলে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়, অ্যালবামের গানগুলো হল :

  • স্বাভাবিক খুন
  • মা
  • দানবের উথথান
  • গুরু
  • ফিরে চলো
  • বিদ্রোহের পাণ্ডুলিপি
  • মমি
  • ভূত আর তিলোত্তমা ১
  • ধ্বংস রোমন্থন
  • হাসপাতালে
  • মৃত্যু মৃত্যু এর পরে
  • রেললাইনে মৃত্যু
  • সিজিওফ্রেনিক ব্রা
  • ভূত আর তিলোত্তমা ২

২০১৪ সালে ‘ফসিল্‌স ৪’ নামে বাংলা রক্‌ লেবেলে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়, অ্যালবামের গানগুলো হল : 

  • খোঁড়ো আমার ফসিলস
  • বাঁদর
  • হাজার বিছানা
  • মহাকাশ
  • বাড়ি এসো
  • শয়তান
  • রিসোলিউশন
  • স্থাবর এবং অস্থাবর
  • মৃত্যু

২০১৭ সালে ‘ফসিল্‌স ৫’ নামে বাংলা রক্‌ লেবেলে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়, অ্যালবামের গানগুলো হল :

  • পালাও
  • স্তব্ধ জীবন
  • জানলা
  • মৃত মানুষ

২০১৯ সালে ‘ফসিল্‌স ৬’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বাংলা রক্‌ লেবেলে, অ্যালবামের গানগুলো হল : 

  • ঘৃণা
  • হৃদয় ভাঙবার গান
  • দেওয়ালি পি।

রূপমের লেখা বই, books written by Rupam Islam 

রুপম ইসলাম শুধুই গানের অ্যালবামের সাথে যুক্ত ছিলেন না, বরং তিনি লিখেছেন বেশ কিছু বইও। তাঁর লেখা বইগুলো হল :

  • ২০০৬ সালে আহির পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘ এপিটাফ ‘।
  • ২০০৯ সালে আনন্দ পাবলিশারস থেকে প্রকাশিত ‘ রূপম অন দ্য রক্‌স ‘।
  • ২০১২ সালে ‘ এই তো আমি ‘ বইটি আনন্দ পাবলিশারস থেকে প্রকাশিত হয়।
  • ২০১৪ সালে ‘রক্‌স্টার’ প্রকাশিত হয় আনন্দ পাবলিশারস থেকে।
  • ২০১৭ সালে ‘ বিশ্বরূপম ‘ বইটি আনন্দ পাবলিশারস থেকে প্রকাশিত হয়।
রূপমের লেখা বই

রূপমের ব্যক্তিগত জীবন, Rupam Islam personal life 

২০০৩ সালে রূপসা দাসগুপ্তের সাথে রূপমের সাক্ষাত হয়। রূপসা তখন ফসিল্‌স ব্যান্ডকে নিয়ে এক বিখ্যাত ব্র্যান্ডের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তাদের আলাপ শুরু হয়।

পরবর্তীতে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায় এবং এই বন্ধুত্ব থেকেই প্রেমের সূত্রপাত হয়। ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই দম্পতির সংসারে সন্তান রূপ আরোহণ প্রমিথিউসের জন্ম হয়।

কর্মজীবনে অন্যান্য কাজ, Other work in career

রূপম ইসলাম বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের জন্য, টিভি প্রোগ্রাম এবং বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলগুলির জন্য শিরোনাম গান রচনা করেছেন। এছাড়াও তিনি টেলিভিশনে বেশ কিছু মিউজিক্যাল এবং চ্যাট শো তে সঞ্চালকের কাজ করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৮ সাল অবধি অর্থাৎ এক বছর ধরে, রূপম আনন্দ বাজার পত্রিকার ফ্রেন্ডস 91.9 এফএম- এ “রূপম অন দ্য রকস” নামে এক অনুষ্ঠানের সম্প্রচার করেছিলেন।

কর্মজীবনে অন্যান্য কাজ

শেষ কথা, Conclusion

রূপম ইসলাম বর্তমানে কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত প্লেব্যাক গায়ক। তিনি এখন অবধি অনেক গান গেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও নিজের শ্রোতাদের জন্য গান তৈরি করে যাবেন, এটাই আশা করা যায়। তাঁর এই যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে এটাই কামনা।

Frequently Asked Questions

রূপম ইসলামের জন্ম কবে হয় ?

১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি।

রূপম ইসলামের ব্যান্ডের নাম কি ?

ফসিলস্।

রূপম ইসলামের স্ত্রীর নাম কি ?

রূপসা দাসগুপ্ত।

রূপমের প্রথম সোলো অ্যালবাম কোনটি ?

অ্যালবামের নাম ছিল ‘তোর ভরসাতে’,প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts