শাহরুখ খান এর জীবনী, Biography of Shah Rukh Khan in Bengali

শাহরুখ খান এর জীবনী

হিন্দি চলচ্চিত্রের জগতের এক ভুলে না যাওয়ার মত নাম শাহরুখ খান। তিনি অভিনেতা ছাড়াও, একজন প্রযোজক এবং টেলিভিশনের বিশেষ ব্যক্তিত্বও। শাহরুখ খান প্রায় সকল ধরনের ছবিতে কাজ করেছেন, যেমন রোমান্স, ড্রামা, কমেডি, অ্যাকশন ইত্যাদি। একসময় লস এঞ্জেলেস টাইমস বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে শাহরুখ খান কে অভিহিত করেছিল। সোজা কথায় বলতে গেলে ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও তার ভক্তরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

শাহরুখ খান কে ? Who is Shah Rukh Khan?

 “বলিউডের বাদশাহ” বলা যায়, অথবা “বলিউডের কিং খান” আবার কখনো শুধু “কিং খান” বা ” রোমান্স কিং ” হিসেবেও হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে অভিহিত শাহরুখ খান। ভারতে এমন মানুষ হয়তো নেই যার কিং খান কে পছন্দ নয়। তাঁর ছবির দর্শক-সংখ্যা ও আয়ের দিক থেকে দেখতে গেলে তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সফল চলচ্চিত্র তারকা বলা চলে।

শাহরুখ খানের জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family identity of Shah Rukh Khan

শাহরুখ খান জন্মগ্রহণ করেন দিল্লিতে, ১৯৬৬ সালের ২ নভেম্বর। তাঁর পিতার নাম মীর তাজ মোহাম্মদ খান, যিনি ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ার এর বাসিন্দা; মায়ের নাম লতিফ ফাতেমা। এছাড়া শাহরুখের শাহনাজ লালরুখ নামে একটি বড় বোনও আছে। তিনিও বর্তমানে শাহরুখ খানের সাথে মুম্বাইতেই থাকেন। সামাজিক মাধ্যম টুইটারে একবার নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন যে তাঁর বাবা পাঠানি এবং মা হায়দ্রাবাদি।

শাহরুখ খানের জন্ম ও পরিবার পরিচয়

শিক্ষা অর্জনের ইতিহাস, educational life of Shah Rukh Khan 

 শাহরুখ খান প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুল থেকে। শৈশবেকালে শাহরুখ খান খেলাধুলা, তথা একাডেমিক জীবনে এবং নাট্য শিল্পের ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ে সকলের প্রিয় ছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে “সোর্ড অফ অনারOpens in a new tab.” পুরষ্কার লাভ করে, যা প্রতি বছর স্কুলের সবচেয়ে যোগ্য এবং প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র এবং ক্রীড়াবিদকে প্রদান করা হত।

পরবর্তীতে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার জন্য হংসরাজ কলেজে অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি দিল্লি থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন, সেখানে থেকেই তিনি নামকরা থিয়েটার পরিচালক ব্যারি জনের অধীনে কাজ করে অভিনয় দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে, শাহরুখ খান জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে গণযোগাযোগে মাধ্যম বিষয়ে তাঁর স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শুরু করেন। কিন্তু উক্ত কলেজে পড়া সম্পন্ন হয় নি তাঁর। পাঠ্যক্রম চলাকালীন সময়েই তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান, এবং ক্যারিয়ারের জন্য স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন ছেড়ে দেন।

শাহরুখ খানের অভিনয় জীবন, Shah Rukh Khan’s acting career

শাহরুখ খান এর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। দিল দরিয়া, ফৌজি, সার্কাসের মতো সিরিয়ালের মাধ্যমে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ‘দিওয়ানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে, উক্ত সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও লাভ করেন।

সেই সময় ছবিটি সুপার হিট হয়েছিল এবং এই ছবিই শাহরুখ খান কে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করে। এর পর থেকে শাহরুখ কে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। তিনি ক্রমে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে কর্মজীবনের উপরের দিকে উঠতে থাকেন। ধীরে ধীরে শাহরুখ খান জনসাধারণের পছন্দের অভিনেতা হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে মেয়েদের মধ্যে বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।

শাহরুখ খানের অভিনয় জীবন

অভিনেতা হিসেবে জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Shah Rukh Khan’s various experiences of life as an actor

 শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের প্রাথমিক পর্বে তাঁর নিজের ঘরও ছিল না। ক্রমে সফলতা তাঁকে আর্থিক দিক থেকেও স্বচ্ছল করে তোলে। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাজিগর’ ছবিটি সুপারহিট হয়। উক্ত ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে ছিলেন কাজল। তাদের জুটিকে সকলে খুবই পছন্দ করেছিল। বাজিগর ছবিতে শাহরুখ একজন আততায়ীর চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ভালো অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম বার ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। এরপর থেকে একের পর এক সিনেমার জন্য ডাক পেতে থাকেন তিনি।

নিজের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে দীর্ঘসময় গড়ে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন শাহরুখ খান। তবে হিট ছবির পাশাপাশি আজ পর্যন্ত তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি ব্যর্থও হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনও হাল ছাড়েননি এবং সর্বদা নিজের সেরা শট দিয়েছেন। এমনকি ১৯৮৮ সাল থেকে এখনও অবধি তিনি নিজের দুর্দান্ত অভিনয়ের মধ্যদিয়ে মানুষের মনে আনন্দ যোগাচ্ছেন।

অভিনেতা হিসেবে জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা

ব্যক্তিগত জীবন, Personal Life

শাহরুখ খানের দাম্পত্য সঙ্গী হলেন গৌরী খান, যিনি পেশায় চলচ্চিত্র প্রযোজক, তবে প্রযোজনা ছাড়াও গৌরী আরো বেশ কিছু ব্যবসার সাথে জড়িত। ধর্ম ভিন্ন হওয়ার কারণে গৌরীর পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না। শাহরুখ যাতে গৌরীর সাথে দেখা না করতে পারে এরজন্য গৌরীর পরিবার তাকে মুম্বাইয়ে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

এদিকে প্রেমে অন্ধ শাহরুখ, গৌরীকে অনুসরণ করে মুম্বাই চলে যান। অনেক খোঁজ করার পর কোনভাবে একদিন গৌরীর সাথে তাঁর দেখা হয়। এর তিন মাস পর তারা হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ে করে। সংসারিক জীবনে তাদের তিন সন্তান রয়েছে, তাদের নাম হল সুহানা খান, আরিয়ান খান, এবং আব্রাহিম খান। 

ব্যক্তিগত জীবন

শাহরুখ খানের কর্মজীবনে প্রাপ্ত পুরস্কার সমূহ, Awards and recognition 

শাহরুখ খান একজন অনবদ্য অভিনেতা, তিনি নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের মন জয় করেছেন। শাহরুখ খান ৮০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শাহরুখ খান অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে চৌদ্দটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, যার আটটিই শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। শাহরুখ খানের কর্মজীবনে প্রাপ্ত পুরস্কার সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :

• হিন্দি চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০২ সালে, শাহরুখ খান ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে সম্মানিত হন।

•  ২০১২ সালে ‘এশিয়ানেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’ দ্বারা ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস’ এ সম্মানিত হন।

• ২০১৪ সালে, ‘এশিয়ানেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’ দ্বারা ‘ইন্টারন্যাশনাল আইকন অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’ পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন।

• ২০১৫ সালে, তিনি ‘দ্য এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডস’ দ্বারা ‘আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন সিনেমা’র জন্য পুরস্কার লাভ করেন।

• ২০১১ সালে, ‘মাই নেম ইজ খান’  সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।

• ‘চক দে! ইন্ডিয়া’  ছবির জন্য ২০০৭ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন।

• ‘ স্বদেশ ‘ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০০৫ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।

• ২০০৩ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন ‘ দেবদাস ‘ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করার পরিপ্রেক্ষিতে।

• ১৯৯৯ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য।

• ১৯৯৮ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ সিনেমার জন্য।

• ১৯৯৬ সালে, ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ তে অভিনয়ের জন্য।

• ১৯৯৪ সালে, বাজিগর ছবিতে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার।

শাহরুখ খানের কর্মজীবনে প্রাপ্ত পুরস্কার সমূহ

শাহরুখ খানের সম্পত্তির পরিমাণ, Shahrukh Khan’s net worth 

 ২০১৪ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, শাহরুখ খান হলেন সারা বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী অভিনেতা। তাছাড়া ভারতের বেশ কিছু মিউজিয়ামের পাশাপশি লন্ডনের মাদাম তুসোতেOpens in a new tab.ও শাহরুখ খানের মোমের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। অভিনেতা হিসেবে বৈশ্বিক অবদান রাখার জন্য শাহরুখ খান কে স্কটল্যান্ডের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। অনুমান করা হয় যে শাহরুখ খানের সারা এশিয়ায় ও বিশ্বব্যাপী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ভক্ত রয়েছে।  শাহরুখ খান মোট অর্থসম্পদের পরিমাণ ২৫০০ কোটি রুপিরও বেশি।

শাহরুখ খান সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, special information about Shah Rukh Khan 

• শাহরুখ খানের বাবা তাজ মোহাম্মদ খান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

•  মেজর জেনারেল শাহনওয়াজ খানের কন্যা ছিলেন শাহরুখ খানের মা লতিফা ফাতিমা।

•  গৌরী খান একজন ডিজাইনার এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক।

•  শাহরুখ ও তাঁর স্ত্রী গৌরী খানের তৃতীয় ছেলে আব্রাহামের জন্ম হয় ‘সারোগেসি’ পদ্ধতির মাধ্যমে।

•  শাহরুখ নিজের পরিবারকে নিয়ে মুম্বাইতে থাকেন, সমুদ্রের কাছে ‘মান্নাত’ নামে তাঁর বাংলোতে।

•  বর্তমানে তার ছেলে আরিয়ান ও মেয়ে সুহানা খান বিদেশে পড়াশোনা করছেন।

•  2020 সালের হিসাব অনুযায়ী, শাহরুখ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ $600 মিলিয়ন।

•  শাহরুখ খান নিজের কর্মজীবনে মোট ২৯৭টি পুরস্কার জয় করেছেন।

• শাহরুখ খান কখনো দুবাই গেলে, সেখানে তিনি বিনামূল্যে বুর্জ খলিফা তথা অন্য রেস্টুরেন্টে থাকতে পারেন।

শাহরুখ খান সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য

উপসংহার, Conclusion 

ভারতীয় অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক তথা মানবসেবী হলেন শাহরুখ খান, এক কথায় তিনি নিজের পরিচয় শুধু অভিনেতা হিসেবে ই সীমাবদ্ধ রাখেন নি। তাঁর অভিনয় অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা স্বরূপ। তাছাড়া তাঁর জীবনকাহিনী সকলকেই একটি কথা ভাবতে বাধ্য করে যে, চেষ্টা করলে সবকিছুই পাওয়া যায়। শাহরুখ চেষ্টা করে গেছেন বলেই আজ বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি লাভ করেছেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts