সনু সুদ এর বয়স, উচ্চতা, জীবনী, বিবাহ, ছবি | Bollywood Actor Sonu Sood Height, Weight, Age, Affairs, Biography & More in bangla

সোনু সুদ এর জীবনী

সিনেমায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা গেলেও বাস্তবিক জীবনে নায়কের মত কাজ করে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা বিশিষ্ট অভিনেতা হলেন সোনু সুদ। তিনি ভারতের এমন একজন মডেল তথা অভিনেতা, যিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছেন। মডেল হিসেবে মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেওয়া ছাড়াও, দক্ষ অভিনেতা হিসেবে এখনও পর্যন্ত টলিউড, কলিউড, বলিউড এবং কন্নড়ের মতো বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন সোনু সুদ।  

সোনু সুদ কে? Who is Sonu Sood?

পরিচয় দিতে গিয়ে এক কথায় বলা যায় যে সোনু সুদ হলেন ভারতীয় অভিনেতা, মডেল এবং প্রযোজক। সোনু সুদ নিজের চলচ্চিত্র জীবনে মূলত ভিলেনের শক্তিশালী চরিত্রের জন্যই বিশেষ ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি একজন উদার ব্যক্তি, তাকে অনেকেই নিজের আদর্শ এবং বাস্তবের নায়ক বলে মনে করেন।

সোনু সুদ এর জন্ম ও পরিবার পরিচিতি, Birth and Family Profile of Sonu Sood

সোনু সুদ ১৯৭৩ সালের ৩০ জুলাই পাঞ্জাবের মোগায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শক্তি সাগর সুদ পেশায় একজন উদ্যোক্তা, অন্যদিকে মা সরোজ সুদ একজন শিক্ষিকা ছিলেন। এছাড়াও তাঁর পরিবারে দুই বোন রয়েছে, যাদের নাম মালভিকা সুদ এবং মনিকা সুদ। তিনি শৈশব থেকে কৈশোর কাল অবধি মোগায় নিজের পরিবারের সাথেই বাস করেন।

সোনু সুদ এর জন্ম ও পরিবার পরিচিতি

সোনু সুদ এর শিক্ষাজীবন, Educational life of Sonu Sood

সোনু সুদ শিক্ষাজীবনের শুরুতে মোগার সেক্রেড হার্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই স্কুলিং সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার জন্য YCC নাগপুরে চলে যান। সেখান থেকে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি মডেলিং শেখার উদ্দেশ্যে যশবন্তরাও চ্যাবন কলেজে ভর্তি হন। 

ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য, Personal life of Sonu Sood

নাগপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়কালে সোনু সুদের পরিচয় হয় সোনালীর সাথে। বেশ কিছু সময় সম্পর্কে থাকার পর তারা দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সোনু সুদ ১৯৯৬ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর সোনালিকে বিয়ে করেন। বর্তমানে এই দম্পতির ইশান্ত এবং আয়ান নামে দুই ছেলে রয়েছে।

সোনু সুদ ১৯৯৬ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর সোনালিকে বিয়ে করেন

সোনু সুদের মডেলিং জীবনের শুরু, Sonu Sood started his modeling career

 ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি করার সময় থেকেই সোনু সুদের আগ্রহ চলে যায় মডেলিং এবং অভিনয়ের দিকে। তাই স্নাতক শেষ করার পর তিনি কাজের সন্ধানে মুম্বাই আসেন। তবে তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল মডেলিং এর সুযোগ সন্ধান করা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম দিকে টাকার সমস্যা দেখা দেয়, কারণ মুম্বাইতে পূর্ব পরিচিতি না থাকলে নবাগতদের ক্ষেত্রে কাজ পাওয়া বেশ কঠিন।

সোনু তখন আরো বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে একটি রুমে থাকতেন। টাকার সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতেও কাজ করতে শুরু করেন, পাশাপাশি মডেলিং ও অভিনয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। ১৯৯৬ সালেই তিনি মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন। উক্ত প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে না পারলেও তিনি বহু মানুষের নজরে এসেছিলেন।

সোনু সুদের মডেলিং জীবনের শুরু

সোনু সুদ এর চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক, Sonu Sood’s film debut

সোনু সুদ দক্ষিণ ভারতীয় ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন। তাঁর অভিনয়ের অভিষেক হয় ১৯৯৯ সালে, কালজঘর নামক একটি তামিল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তারপর থেকে তিনি দক্ষিণ চলচ্চিত্র শিল্পে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিছুকাল দক্ষিণী ছবিগুলোতে কাজ করার পর ২০০২ সালে, তিনি বলিউডে কাজ করার আহ্বান পান। বলিউড এর ‘শহীদ আজম’ ছবিতে ভগত সিং-এর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।

একই বছর তিনি পাঞ্জাবি ভাষায় তৈরি ছবি ‘জিন্দেগি খুবসুরাত’ এ কাজ করার সুযোগ পান। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০৩ সালে, তিনি “কাহন হো তুম” নামক ছবিতে কর্ণের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৪ সালে সোনু মিশন মুম্বাই ছবিতে কাজ করেন এবং ২০০৫ সালে, আশিক বানায়া আপনে ছবিতে তনুশ্রী দত্ত ও ইমরান হাশমির সাথে অভিনয় করেছিলেন।

 ২০০৮ সালে সোনু ‘যোধা আকবর’ ছবিতে কাজ করেন, যেখানে তিনি যুবরাজ সুজামলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। উক্ত চরিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পান। একই বছরে তিনি অক্ষয় কুমারের সাথে ‘সিং ইজ কিং’ ছবিতে লাকি সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই বছরেই তিনি ‘ এক বিবাহ আইসা ভি ‘ ছবিতে প্রধান নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন।

২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলেগু ব্লকবাস্টার ‘অরুন্ধতী’ সিনেমার জন্য সেরা ভিলেন হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে নন্দী পুরস্কারে ভূষিত হন। একই বছর তিনি সিটি অফ লাইফ নামে একটি ইংরেজি মুভিতেও কাজ করেন। এরপর ২০১০ সালে সালমান খানের সাথে দাবাং মুভিতে ভিলেনের ভূমিকায় কাজ করেছিলেন সোনু সুদ, এবং এই চরিত্রের জন্য তিনি আইফা সেরা ভিলেনের পুরস্কার পেয়েছেন।

সোনু সুদ এর চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক

২০১১ সালে, ‘বুড্ডা হোগা তেরা বাপ’-ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে কাজ করার সুযোগ পান সোনু, যেখানে তিনি অমিতাভ বচ্চনের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’ তে তিনি দাউদ ইব্রাহিমের চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছরে ‘রামাইয়া ভাস্তাভাইয়া’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মানুষের মন জয় করেন।

ক্রমে তিনি বলিউডের বেশ কিছু হিট ছবিতে অভিনয় করেন। সিম্বা (২০১৮), হ্যাপি নিউ ইয়ার (২০১৪), কুংফু যোগা (২০১৭) প্রমুখ ছবিতেও নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। বলতে গেলে নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে নিজের স্থায়ী জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।

প্রযোজক হিসেবে সোনু সুদ, Sonu Sood as a producer

২০১৬ সালের জুলাই মাসে, সোনু সুদ নিজের পিতা শক্তি সাগর সুদের নামে একটি প্রোডাকশন হাউস শক্তি সাগর প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন । 

সমাজ সেবক হিসেবে সোনু সুদ, Sonu Sood as a social worker

নিজের গ্রামে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ সর্বদাই করে এসেছেন অভিনেতা সোনু সুদ। তবে তাঁর সমাজ সেবা বিশেষভাবে লক্ষনীয় হয়ে উঠে ২০২০ সালের করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে। তিনি নিজের সম্পত্তি বন্ধক রেখেছিলেন গরীব মানুষদের উপকার করার জন্য।

মহামারী যখন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণা করার কারণে দরিদ্র এবং আবাসিক শ্রেণীর শ্রমিকরা সমস্যায় পড়ে যায়। তাদের সমস্যার সমাধানে সোনু সুদই প্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন।

সেই সময় তিনি বিভিন্নভাবে রেল, বাসসহ ছোট-বড় সব যানবাহনের ব্যবস্থা করে প্রায় হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেন। এছাড়াও তিনি আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষজনের খাদ্যের ব্যবস্থাও করেন। করোনার মত ভয়ানক ট্র্যাজেডিতে অনেক অভাবী মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িতে দিয়ে তিনি বাস্তব জীবনের নায়কের ভূমিকা পালন করেন।

সমাজ সেবক হিসেবে সোনু সুদ

সোনু অভাবগ্রস্তদের সহায়তার জন্য একটি ফাউন্ডেশনও চালু করেন, যার নাম সুদ চ্যারিটি ফাউন্ডেশন; যার অধীনে, তিনি করোনাকালে প্রতিদিন ৪৫০০০ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন, পাশাপাশি তিনি মুম্বাইয়ের জুহুতে শক্তি সাগর হোটেল স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করেন।

সোনু সুদ এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Some special information about Sonu Sood

  • সোনু সুদের বাড়ি মুম্বাইয়ের আন্ধেরি পশ্চিম লোখান্ডওয়ালায় অবস্থিত। এটি একটি ২৬০০ বর্গফুটের চার বেডরুম যুক্ত অ্যাপার্টমেন্ট।
  • সোনু সুদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ $১৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ভারতীয় ১৩০ কোটি টাকা।
  • সোনু Mercedez benz ML ক্লাস 350 CDI-66lacs, অডি Q7 – 80 লাখ, পোর্শে পানামা – 2 এর মতো দামি গাড়ির মালিক। 
  • সোনু অভিনয়ের ক্যারিয়ারে পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন।
  • সোনু সুদ ধূমপান করেন না এবং অ্যালকোহল পান করেন না।
  • সোনু সুদ গ্রাসিম মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার শীর্ষ ৫ প্রতিযোগীর মধ্যে একজন ছিলেন।
  • সোনু সুদ বেশ কিছু জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের হোম পেজে স্থান পেয়েছেন।
  •  লকডাউনে মানবিক কাজ করার জন্য ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্টের বিশেষ মানবিক অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ডের জন্য সোনু সুদকে নির্বাচিত করা হয়।
  • সোনু সুদ হংকং অভিনেতা জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে একটি ছবিতেও কাজ করেছেন।
  • সোনু সুদ বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিও সহ কিছু ইংলিশ ছবির হিন্দি ডাবিংয়ের কাজও করেছিলেন।
সোনু সুদ এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য

উপসংহার, Conclusion 

সোনু সুদ দক্ষিণ ভারতীয় মুভি দিয়ে ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করলেও, বলিউডে দক্ষ অভিনয়ের কারণে একটি জনপ্রিয় অভিনেতা হতে পেরেছেন। সোনু সুদের ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলে বোঝা যায় যে তিনি নিজের কর্মজীবনের শুরু থেকে বর্তমান সময় অবধি অভিনয়ের দিন থেকে কখনও থেমে যান নি। চরিত্র ছোটো হোক কিংবা বড়, তিনি বছরের পর বছর ধরে কাজ করে চলেছেন এবং নিজের অভিনয়কে দিনে দিনে আরো উন্নত করে তুলেছেন। এছাড়াও তিনি সমাজসেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁর জীবনের বিভিন্ন কীর্তি সকলকে অনুপ্রেরণা দেয় ভালো কাজ করার।

Frequently Asked Questions : 

সোনু সুদ কে ?

একজন ভারতীয় অভিনেতা ।

সোনু সুদ এর জন্ম কবে হয় ?

 ৩০ জুলাই ১৯৭৩ সালে ।

সোনু সুদ এর জন্ম কোথায় হয় ?

 পাঞ্জাব ভারতে ।

সোনু সুদ এর পিতার নাম কী ?

শক্তি সাগর সুদ ।

সোনু সুদ এর মাতার নাম কী ?

 সরোজ সুদ ।

সোনু সুদ এর স্ত্রীর নাম কী ?

সোনালী সুদ ।

সোনু সুদ এর প্রথম ছবি কবে রিলিজ হয় ?

 ১৯৯৯ সালে ।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts