সুশান্ত সিং রাজপুত এর বায়োগ্রাফি, Biography of Sushant Singh Rajput in Bengali

সুশান্ত সিং রাজপুত এর বায়োগ্রাফি

 সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন ভারতীয় টেলিভিশন তথা চলচ্চিত্র জগতের একজন সুপরিচিত অভিনেতা। তিনি বলিউডের বেশ কিছু হিট ছবিতে প্রধান অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় জীবনে নিজের দক্ষতার জোরে খুব অল্প সময়েই দর্শকদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তাঁকে সেই খ্যাতি উপভোগ করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ দেয় নি। আজ এই নিবন্ধে আমরা এই বিশিষ্ট অভিনেতার জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরবো। 

সুশান্ত সিং রাজপুত কে ছিলেন? Sushant Singh Rajput at a glance

সুশান্ত সিং এর পরিচয় দিতে গেলে বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করতে হয়। তিনি ছিলেন একজন সুখ্যাতিমান তথা দক্ষ ও প্রতিভাবান ভারতীয় অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, একজন উদ্যোক্তা এবং লোকহিতৈষী। সুশান্ত, একটি পারিবারিক টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করার মধ্যে দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে চলচ্চিত্র জগতে অভিনয়ের সুযোগ লাভ করেন।

সুশান্ত সিং রাজপুত এর বায়োগ্রাফি

সুশান্ত সিং রাজপুত এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family identity of Sushant Singh Rajput

সুশান্ত সিং রাজপুত ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারী বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কৃষ্ণ কুমার সিং এবং মায়ের নাম ঊষা সিং। তাদের পৈতৃক বাড়ি পাটনায়। সুশান্তের বোন মিতু সিং রাজ্য স্তরের ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার।  তাঁর মাতৃবিয়োগের পর পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল, এর কিছু সময় পর পরিবারের সকলেই পাটনা থেকে দিল্লিতে চলে আসে। 

সুশান্ত সিং রাজপুত এর জন্ম ও পরিবার পরিচয়

সুশান্ত সিং রাজপুত এর শিক্ষা, Education of Sushant Singh Rajput 

অভিনেতা সুশান্ত সিং শিক্ষাজীবনের প্রথমদিকে পাটনার সেন্ট কারেন্স হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে তিনি দিল্লির কুলাচি হংসরাজ মডেল স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করেন। বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষে তিনি দিল্লির টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে সেখানে সপ্তম স্থান অধিকার করেন।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি উক্ত কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক ডিগ্রির অর্জনের জন্য ভর্তি হন। পড়াশুনায় সুশান্ত সিং রাজপুত যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন, তিনি পদার্থবিজ্ঞানের জাতীয় অলিম্পিয়াডেও বিজয়ীও হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পূর্বে তিনি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ মাইনস সহ প্রায় ১১ টি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেন এবং সবগুলোতেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। 

ছোটবেলা থেকেই  সুশান্ত সিং এর অভিনয় করার শখ ছিল। দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়, তিনি নিজের কিছু সহপাঠীদেরকে বিভিন্ন ছবির নায়কের অভিনয় করে দেখাতেন, তাঁর বন্ধুরা তাঁকে অভিনয়ের প্রতি এইরূপ আগ্রহী হতে দেখে সুশান্তকে আরো উৎসাহ দেন। কিছুদিন পর তিনি ব্যারি জনের নাটকের ক্লাসে যোগ দেন। অন্যদিকে তিনি শিয়ামক দাভারের নাচের স্কুলেও ভর্তি হন। সেই থেকে তিনি ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত ৫১ তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের জন্য মূল নৃত্যশিল্পীর পেছনের নাচের দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। এভাবে তাঁর নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আরো বাড়তে থাকে।

সুশান্ত সিং রাজপুত এর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Career life of Sushant Singh Rajput 

২০০৮ সালে স্টার প্লাস নামক একটি হিন্দি চ্যানেলে প্রচারিত হওয়া প্রণয়ধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে সুশান্ত সিং এর ক্যারিয়ার শুরু হয়। ধারাবাহিকটির নাম ছিল ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’, যেখানে তিনি প্রীত জুনেজার চরিত্রে অভিনয় করেন। এভাবেই টেলিভিশন জগতে তাঁর অভিষেক হয়।

সুশান্ত সিং রাজপুত এর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা

অতঃপর তিনি জি টিভির একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান। উক্ত ধারাবাহিকটির নাম ছিল ‘পবিত্র রিস্তা’, যেখানে তিনি মানব দেশমুখ নামক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন; উক্ত চরিত্রের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন। 

 চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলতে গেলে, তাঁর প্রথম ছবির নাম ‘ কাই পো ছে ‘ , যা ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। উক্ত চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় প্রভূত প্রশংসা লাভ করে। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু হিট ছবিতেও কাজ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হল:  শুদ্ধ দেশি রোমান্স, এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি, গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সী ইত্যাদি, যেগুলোতে সুশান্ত সিং প্রধান অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন।

তিনি পিকে ছবিতে প্রধান অভিনেতা হিসেবে অভিনয় না করলেও যে চরিত্রেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন সেটা এতই দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তোলেন যে ‘ সরফরাজ ‘ চরিত্র দর্শকদের থেকে প্রচুর ভালবাসা অর্জন করেছিল।

সুশান্ত সিং রাজপুত সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি ছবির মাধ্যমে, উক্ত ছবিতে তিনি বিখ্যাতক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি ২০১৬ সালে মুক্তি পায়, যা বক্স অফিসেও ভাল ব্যবসা করেছিল। পরবর্তীতে তিনি রাবতা, কেদারনাথ, ছিছোড়ে প্রমুখ ছবিতেও প্রধান অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন। 

চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের জন্যও কাজ করেন। তাছাড়া চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করার পূর্বে তিনি বেশ কিছু টিভি শো- তে যোগাদান করেছিলেন। অন্যদিকে একসময় মূল শিল্পীর পেছনের নৃত্য পরিবেশনকারী হিসেবে থাকলেও চলচ্চিত্রের খ্যাতি তাঁকে মূল নৃত্য শিল্পী হিসেবে বলিউডের বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিনোদনের সুযোগ করে দেয়। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পূর্বে শেষবারের মত অভিনীত করা ছবির নাম ছিলো “দিল বেচারা”, যা তাঁর মৃত্যুর পর ডিজনি প্লাস হট স্টার- এ মুক্তি পেয়েছিল। 

সুশান্ত সিং রাজপুত সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি ছবির মাধ্যমে

সুশান্ত সিং এর ব্যাক্তিগত জীবন, Personal life of Sushant Singh Rajput

সুশান্ত সিং রাজপুতের ব্যক্তিগত জীবন সামাজিক ভাবে তেমন চর্চিত ছিল না। তিনি জীবদ্দশায় কাউকে বিয়েও করেননি। তবে তাঁর ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিকের সহ-অভিনেতা অঙ্কিতা লোখান্ডের সাথে তিনি সম্পর্কে ছিলেন বলে জানা যায়। এই বিষয় নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কখনো কিছু না বললেও এ ব্যাপার অস্বীকারও করেন নি। এরপর ২০১৬ সালে দুজনেই আলাদা হয়ে যান।

বিচ্ছেদের কারণ কখনো প্রকাশ পায় নি। তবে সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পর রিয়া চক্রবর্তী নামক অভিনেত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়, তবে রিয়া সামাজিক মাধ্যম বা খবরে কখনো এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেন নি।

সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনয়ের পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাতেও আগ্রহী ছিলেন। তিনি এই সংক্রান্ত বেশ কিছু কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাছাড়া তিনি প্রযুক্তি এবং সামাজিক উদ্বেগ সংক্রান্ত কয়েকটি কোম্পানির সহ-পরিচালকও ছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, যায় নাম ‘ সুশান্ত ফর এডুকেশন ‘।

সুশান্ত সিং এর ব্যাক্তিগত জীবন

সুশান্ত সিং রাজপুত এর মৃত্যু কিভাবে হয়, How did Sushant Singh Rajput die?

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু হয় আকস্মিকভাবে, কেউই হয়তো কখনো ভাবতে পারেন নি যে তাঁর মতো এমন একটা মজাদার মানুষ কখনো আত্মহত্যা করতে পারে। এক কথায় সুশান্তের মৃত্যু গোটা দেশের মানুষকে হতবাক করেছিল। ২০২০ সালের ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় সুশান্তের নিজের বাড়িতেই তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

বিভিন্ন খবরের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা; কিন্তু তাঁর বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব তথা পরিবারের লোকজনের মতে তিনি আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে সুশান্তের পরিবার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ পায় যে সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যুর পূর্বের ৬ মাস ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, সেই কারণেই হয়তো তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু হয় আকস্মিকভাবে

তবে মৃতদেহ উদ্ধার করার পর পুলিশ মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে তদন্ত শুরু করেছিল এবং এ নিয়ে চলচ্চিত্র জগতের বহু মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এই ঘটনা সুরাহা আজও হয়নি। 

উপসংহার, Conclusion 

সুশান্ত সিং রাজপুত এমন একজন অভিনেতা যার অভিনয় পছন্দ করেনি এমন কোনো দর্শক হয়তো ভারতে নেই। সকলেই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছিল। কর্মজীবনের খুব অল্প কিছু বছরের মধ্যেই তিনি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করে সুখ্যাতির পাশাপাশি দর্শকদের ভালোবাসাও অর্জন করেন।

সুশান্ত সিং রাজপুত এমন একজন অভিনেতা যার অভিনয় পছন্দ করেনি এমন কোনো দর্শক হয়তো ভারতে নেই।

তিনি পৃথিবীতে না থাকলেও সকলের মনে অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল।

Frequently asked questions:

সুশান্ত সিং কে ?

সুশান্ত সিং একজন ভারতীয় অভিনেতা ।

সুশান্ত সিং এর জন্ম কোথায় হয় ?

সুশান্ত সিং এর জন্ম হয় বিহারে ।

সুশান্ত সিং এর জন্ম কবে হয় ?

সুশান্ত সিং এর জন্ম হয় ২১ জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে ।

সুশান্ত সিং এর কর্মজীবন কবে শুরু হয় ?

সুশান্ত সিং এর কর্মজীবন শুরু হয় ২০০৮ সালে ।

সুশান্ত সিং এর পিতার নাম কী ?

সুশান্ত সিং এর পিতার নাম কৃষ্ণ কুমার সিং ।

সুশান্ত সিং এর মাতার নাম কী ?

সুশান্ত সিং এর মাতার নাম ঊষা সিং ।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts