মো. আব্দুল জলিল অনন্ত, দর্শকদের মধ্যে অনন্ত জলিল হিসেবেই বেশি পরিচিত। তিনি একজন বাংলাদেশী অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক তথা ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব। সামাজিক মাধ্যমে তিনি বরাবরই নিজের ছবি, পোস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে আলোচনায় থাকেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and Family Identity :
মো. আব্দুল জলিল অনন্ত ১৯৭৭ সালের ১৭ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম হয় বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলায়। রেডিও ফুর্তিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে অনন্ত জলিল জানিয়েছিলেন যে, তিনি এবং তাঁর বড়ো ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলায় নিজের বাবার কাছেই বড়ো হয়েছেন।
পাঁচ বছর বয়সে দি ভাই মা- যে হারান। নিজের নাম সম্পর্কে রেডিও এবিসিকে দেয়া অন্য আজ সাক্ষাৎকারে অনন্ত বলেছিলেন যে তাঁর বাবা অভিনেতার নাম “আব্দুল জলিল” নামের গৃহশিক্ষকের অণুপ্রেরণায় রেখেছিলেন।
অনন্ত জলিলের গ্রামের বাড়ি কোথায়? Where is the village of Anant Jalil?
অনন্ত জলিল নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার গাবুরগাছ গ্রামের বাসিন্দা।
অনন্ত জলিলের শিক্ষাগত যোগ্যতা, Educational Qualification of Anant Jalil :
অনন্ত জলিল পড়াশুনা করেছেন ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে। তাছাড়াও তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়েও পড়াশুনা করেছিলেন। কলেজ শিক্ষার পূর্বের কথা বলতে গেলে, অভিনেতা অনন্ত জলিল সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছেন।
পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন। এরপর ম্যানচেস্টার কলেজ থেকে বিবিএ এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনা করেন।
অনন্ত জলিলের ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of Anant Jalil :
অভিনেতা তথা ব্যবসায়ী অনন্ত জলিলের দাম্পত্য সঙ্গী হলেন আফিয়া নুসরাত বর্ষা। দুজন-দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। বর্ষাকে ভালোবেসেই সিনেমা প্রযোজনায় এসেছিলেন।
‘খোঁজ দ্যা সার্চ’ সিনেমায় প্রথমবার একসাথে কাজ করেন দুজনে। এই দম্পতির সংসারে আরিজ ইবনে জলিল, আবরার ইবনে জলিল নামক দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
অনন্ত ও বর্ষার বিবাহবিচ্ছেদের খবর 2013 সালে ভাইরাল হয়েছিল। যদিও, পরে তারা একটি বোঝাপড়ায় এসেছিলেন এবং দম্পতি হিসাবে একসাথে থাকতে শুরু করেছিলেন।
সাংসারিক জীবন নিয়ে অনন্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
“আমি আমার ব্যবসা, অফিস নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি। খুব বেশি সময় দিতে পারি না। অফিস-ফ্যাক্টরি বাদ দিলে বাসায় ফিরে আমরা সপ্তাহে তিন-চারদিন বাইরে খেতে যাই। একসঙ্গে অনেক গল্প করি। বাচ্চাকে নিয়ে খেলা করি। দুজন দুজনার প্রতি দায়িত্বশীল। সামাজিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করি। সবকিছু মিলেমিশে করার চেষ্টা করি। এটাই ভালোবাসার রসায়ন।”
অনন্ত জলিলের উল্লেখযোগ্য কর্ম, Anant Jalil’s Notable Works :
চলচ্চিত্রে অনন্ত জলিলের উল্লেখযোগ্য কর্ম হল :
- খোঁজ-দ্যা সার্চ,
- দ্য স্পিড,
- মোস্ট ওয়েলকাম,
- নিঃস্বার্থ ভালবাসা,
- মোস্ট ওয়েলকাম ২,
- দিন-দ্যা ডে
- কিল হিম (২০২৩)
- আরিয়ান হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ (২০১১)
চলচ্চিত্র পরিচালনা :
- মোস্ট ওয়েলকাম ২ (২০১৪)
- নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (২০১৩)
চলচ্চিত্র প্রযোজনা :
- দিন – দ্য ডে (২০২২)
- নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (২০১৩)
- দ্যা স্পিড (২০১২)
- মোস্ট ওয়েলকাম (২০১২)
- হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ (২০১১)
- খোঁজ – দ্য সার্চ (২০১০)
লেখনী :
- নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (সংলাপ, কাহিনী)
গীতিকার :
- নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (২০১৩)
অঙ্গসজ্জা :
- খোঁজ – দ্য সার্চ (২০১০)
অনন্ত জলিল সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Some special information about Anant Jalil :
উচ্চতা : ৫ ফু ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মি)
ক্যারিয়ারের প্রাথমিক সময়, Early Career Period :
অনন্ত জলিল ১৯৯৯ সালে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে সময়ে সাথে সাথে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি নিজের প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছিলেন। নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনার জন্য বরাবরই রূপালীপর্দায় ঝুঁকেছিলেন অনন্ত জলিল।
ক্রমে ২০১০ সালে তিনি “খোঁজ-দ্যা সার্চ” সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডের চলচ্চিত্রে অভিনেতা যাত্রা শুরু করেন।
অনন্ত জলিল কিভাবে ধনী হলেন? How Anant Jalil became rich?
1999 সালে তিনি একটি প্রোডাকশন জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে তার পেশা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তার ছোট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন যা আরও বছর বছর AJI গ্রুপে পরিণত হয়। RMG সেক্টরে তার অবদানের জন্য 2014 সালে তাকে CIP (বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।
অনন্ত জলিল বিভিন্নভাবে সমাজসেবার কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ৩টি এতিমখানা নির্মাণ করেছেন। উক্ত এতিমখানাগুলো মিরপুর ১০ নং , বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে আছে।
তবে শুধু অনাথ শিশুদের জন্যই নয়, বরং তাঁর ভাবনা ছিল বৃদ্ধদের নিয়েও। তাই সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার উপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন অভিনেতা অনন্ত জলিল।
এসব ছাড়াও তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত বায়তুস শাহ জামে মসজিদ এর নির্মাণ কার্যেও বিশেষ অবদান রাখেন।
করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে মানুষ যখন ঘরবন্দী অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েছিল, তখন বহু অসচ্ছল পরিবারের সহায়তা করেন অনন্ত জলিল। সেই করুন সময়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট এমন ২৬০ জনের পরিবারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন শিল্পপতি, চিত্রনায়ক ও নির্মাতা অনন্ত জলিল।
অনন্ত জলিল চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ২৬০ জনকে দিয়েছেন। দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন চলচ্চিত্র প্রোডাকশন ম্যানেজার সমিতি, অ্যাসিসট্যান্ট প্রোডাকশন ম্যানেজার সমিতি ও মেকআপ আর্টিস্ট সমিতির সদস্যরা।
অভিনয়ের জন্য পুরস্কার প্রাপ্তি, Awards received for acting :
অনন্ত জলিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, পাশাপাশি তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে সম্মান প্রাপক। তাঁর প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলো হল :
- ২০১২ সালে সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড- এর পক্ষ থেকে সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান অনন্ত জলিল। মোস্ট ওয়েলকামছবির জন্য তাঁর জুলিতে এই পুরস্কার এসেছিল।
- ২০১৩ সালে বায়োস্কোপ বর্ষ-সেরা পুরস্কার এর পক্ষ থেকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেতার সম্মান লাভ করেন। একই বছর বায়োস্কোপ বর্ষো-সেরা পুরস্কারের পক্ষ থেকে পুরস্কার পান তিনি।
এছাড়াও তিনি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তিনি।
অনন্ত জলিলকে নিয়ে সমালোচনা, Criticism about Anant Jalil :
নারীর পোশাক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনায় এসেছিলেন অনন্ত জলিল। ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাকই দায়ী বলে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।
নায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল নিজের ফেসবুকে শেয়ার করা এক ভিডিওতে বলেন যে, শালীন পোশাক পরা নারী কখনোই ধর্ষণের শিকার হয় না। পোশাক ভালো না হলে তার শরীর-ফিগার দেখে বাজে স্বভাবের লোকজন ধর্ষণের উস্কানি পায়। এমন মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হতে থাকে।
এসব কথা শোনার পর নেতিজেনরা বিরক্তি প্রকাশ করায় তিনি সেই ভিডিও সরিয়ে দেন। তারপর আরো একটি পোস্ট করে লিখেন, ‘আমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না, তাই আমি উক্ত বিষয়টি কারেকশন করে দিলাম। কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’
শেষ কথা, Conclusion :
অনন্ত জলিল বাংলাদেশে ডিজিটাল ফিল্মের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে পরিচিত। তিনিই প্রথম ডিজিটাল ছবি নির্মাণ করে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর পথ ধরে পরবর্তীতে অনেকেই ডিজিটাল ফরমেটে ছবি বানিয়ে বাহ্বা নিয়েছেন। আশা করা যায় যে পরবর্তীতে তাঁকে আরো ভালো কাজ করতে দেখা যাবে।
Frequently Asked Questions
AJI Group
অনন্ত জলিলের স্ত্রী কয়জন?
অনন্ত 23 সেপ্টেম্বর 2011-এ মডেল-অভিনেত্রী আফিয়া নুসরাত বর্ষাকে বিয়ে করেন।
অনন্ত জলিল ২০১০ সালে খোঁজ-দ্যা সার্চ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন।