আরিফিন শুভ একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। পাশাপাশি তিনি একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। কর্মজীবনের তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার প্রাপক। ২০০৭ সালে তিনি টেলিভিশন ধারাবাহিক “হ্যাঁ/না” – এর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১০ সালে তিনি ‘জাগো’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের সিনেমা জগতের জনপ্রিয় এই অভিনেতার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আরিফিন শুভর জন্ম ও পরিবার, Birth and family information of Arifin Shuvoo :
অভিনেতার পুরো নাম মাহবুবুল আরিফিন শুভ। আরিফিন শুভর জন্ম হয় ১৯৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তিনি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম খাইরুন নাহার। এতদিন পর্দায় যাকে দেখে বুঁদ ভক্তরা, তাঁকে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমার প্রথমবার পর্দায় দেখলেন তাঁর মা। এ নিয়ে অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মা আমাকে পর্দায় প্রথম দেখলো, সবাই জানানেন উনি মানসিক ও শারিরীকভবে অসুস্থ, তারপরও উনাকে নিয়ে এসেছি। মাকে আমার সিনেমা তাঁর জীবদ্দশায় দেখাতে পারলাম সেজন্য সৃষ্টিকর্তা কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
আরিফিন শুভ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Some special information about Arifin Shubo :
- উচ্চতা : ৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার)
- রাশিচক্র: মেষ
- ধর্ম: ইসলাম
- শারীরিক পরিমাপ : ৪০-৩০-১৪.৫ ইঞ্চি
- চেস্ট সাইজ : ৪০ ইঞ্চি
- কোমরের আকার : ৩০ ইঞ্চি
- বাইস্পেসের আকার : ১৪.৫ ইঞ্চি
- ওজন : ৭৩ কেজি
- জুতো আকার : ১০ (মার্কিন)
- চুল রঙ : কালো
- চোখের রঙ : গাঢ় বাদামী
- প্রিয় খাবার: থাই চাইনিস
- প্রিয় অভিনেতা: সালমান খান
- প্রিয় অভিনেত্রী: ঐশ্বর্যা রাই
- শখ : দাবা খেলা
আরিফিন শুভর কর্মজীবন, Career of Arifin Shuvoo :
চিত্রনায়ক হতেই ঢাকা শহরে আসেন আরিফিন শুভ। র্যাম্পে হাঁটা দিয়ে ২০০৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পাশাপাশি রেডিও ফুর্তিতে ‘শুভ সকাল উইথ শুভ’ শিরোনামে শো করতেন। একদিকে শহরে টিকে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে রূপালি পর্দায় নিজেকে দেখার স্বপ্ন। টেলিভিশনে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ২০০৭ সালে। প্রথমিক সময়ে তিনি টেলিভিশনের জন্য কাজ করেন। পরবর্তীতে সিনেমার মুখ্য অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
- ২০০৭-২০০৯: টেলিভিশনে কাজ :
টেলিভিশনে কাজ শুরু করার আগে শুভ বেশ কিছু টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। ২০০৭ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশন সিরিজ ‘ হ্যাঁ-না ’ তে অভিনয় করার মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন । পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে ‘ইজ ইকুয়াল টু’ নামক ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
- ২০০৯-২০১৩: চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ এবং সাফল্য
খিজির হায়াত খান পরিচালিত ‘জাগো’ চলচ্চিত্রে ২০১০ সালে বড় পর্দায় শুভর অভিষেক হয়। এরপর ২০১৩ সালে পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। ছবিটি ব্যবসায়িক দিক থেকেও সফল হয়। একই বছর ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ চলচ্চিত্রে দেখা যায় তাঁকে। এতে তাঁর বিপরীতে কাজ করেছিলেন আইরিন সুলতানা।
- ২০১৪-২০১৬ : সমালোচনামূলক প্রশংসা
ইফতেখার চৌধুরীর ‘অগ্নি’ ছবিতে ২০১৪ সালে আরিফিন শুভ একজন বক্সিং খেলোয়াড় ও পেশাদার খুনী চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি পরিচালক শাহাদাত হোসেন লিটনের ‘মন বোঝেনা’ এবং মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘তারকাঁটা’ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিগুলোতে তাঁর অভিনয় নিয়ে দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই উক্ত চলচ্চিত্রগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারে নি।
ক্রমে আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘কিস্তিমাত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন আরিফিন শুভ। ছবিটি ব্যবসায়িক দিক থেকে বেশ ভালো সাফল্য পায়। পরবর্তীতে, ২০১৫ সালে শিহাব শাহীন পরিচালিত “ছুঁয়ে দিলে মন” ও ‘ওয়ার্নিং’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। উক্ত চলচ্চিত্র দর্শকদের ব্যাপক সাড়া পায়। উক্ত ছবির জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (পুরুষ) বিভাগে তারকা জরিপ পুরস্কার অর্জন করেন।
আরিফিন শুভ ২০১৬ সালে আশিকুর রহমান পরিচালিত অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘মুসাফির’-এ অভিনয় করেন। উক্ত ছবিতে তিনি অভিনয় জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী এর পুরস্কার পান।
ক্রমে অনন্য মামুন পরিচালিত নাট্যধর্মী “অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছবিতে তবে অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। একই বছরের শেষ দিকে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘নিয়তি’ চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন জলি।
- ২০১৭-২০২৩ : মুজিব চরিত্রে অভিনয়
২০১৭ সালের শুরুতে অরিজিৎ শুভ অভিনীত তথা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত “পথ-রোমাঞ্চকর” নামক রোম্যান্টিক ছবি মুক্তি পায়। ক্রমে শামিম আহমেদ রনি পরিচালিত কমেডিধর্মী ছবি ‘ধ্যাততেরিকি’ মুক্তি পায়। তাঁর অভিনয় দর্শকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলে এবং সমালোচকদের কাছেও বহুল প্রশংসিত হয়।
একই সালের অক্টোবর মাসে মুক্তি পায় দীপংকর দীপন পরিচালিত অ্যাকশন থ্রিলার ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এই ছবিটি বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং আন্তজার্তিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
এরপর আরিফিন শুভর “আহা রে” ছবিটি মুক্তি পায়। উক্ত ছবিটির জন্য দর্শকদের কাছ থেকে বেশি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। ছবিতে আরিফিন শুভর অভিনয়ও বেশ প্রশংসিত হয়। উক্ত ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। একই বছরের শেষদিকে মুক্তি পায় রাজনৈতিক থ্রিলার ‘সাপলুডু’। ছবিটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ২০২৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই চিত্রনায়ক বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। মুজিব চরিত্রে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত। এটা বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা। এই ছবিটির পারিশ্রমিক মাত্র এক টাকা নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ, Working as an advertising model :
অভিনয়ের পাশাপাশি আরিফিন শুভ তিনটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে কাজ করেছেন। বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মিস্টার কুকিজের বিজ্ঞাপন, যেখানে তাঁর সাথে কাজ করেন নুসরাত ফারিয়া মাজহার। এছাড়াও, যমুনা গ্রুপের বিজ্ঞাপনে শুভর সাথে ছিলেন নাদিয়া নদী এবং প্রাণ আপের বিজ্ঞাপন ছিলেন পরীমনি।
আরিফিন শুভ’ র ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of Arifin Shuvoo :
২০১৫ সালে আরিফিন শুভ অর্পিতা সমাদ্দারকে বিয়ে করেন। অভিনেতার স্ত্রী অর্পিতা সমাদ্দার পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তিনি ঢাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন।
আরিফিন শুভর চলচ্চিত্রের তালিকা, List of movies of Arifin Shuvoo :
- উনিশ ২০ (২০২৩) Web Film
- ব্ল্যাক ওয়ার (২০২৩)
- কন্ট্রাক্ট (২০২১) Web Series
- মিশন এক্সট্রিম (২০২১)
- আরমান ভালো থেকো (২০১৮)
- একটি সিনেমার গল্প (২০১৮)
- প্রেমী ও প্রেমী (২০১৭)
- আয়নাবাজি (২০১৬)
- নিয়তি (২০১৬)
- অস্তিত্ব (২০১৬)
- মুসাফির (২০১৬)
- ওয়ার্নিং (২০১৫)
- অগ্নি (২০১৪)
- সৌরভ জাগো (২০১০)
- ডিটেকটিভ (নির্মানাধীন)
- ওয়ারিশ মৃত্যুপুরী (নির্মানাধীন)
- নমুনা নূর (আসন্ন)
- ছায়া-ছবি জ্যাম (নির্মানাধীন)
- নীলচক্র (নির্মানাধীন)
শুভর পুরস্কার প্রাপ্তি, Awards in Shuvoo’s career: :
চলচ্চিত্রে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য আরিফিন শুভ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালে, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’- এ তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেতার হিসেবে প্রথম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পান।
এছাড়াও তিনি চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২০ এর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি “সাপলুডু” ছবির জন্য বাচসাস পুরস্কার জয়ী হন। ২০১৮ সালে তিনি ‘ ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
শেষ কথা, Conclusion :
আরিফিন শুভ তার ব্যক্তিগত জীবন এবং মানবপ্রেমিক কার্যক্রম সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করেন। অভিনেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। দর্শকদের মনে তাঁর বিশেষ জায়গা রয়েছে। আশা করা যায় যে তাঁকে ভবিষ্যতেও আরো ভালো ছবিতে কাজ করতে দেখা যাবে।
Frequently Asked Questions
অর্পিতা সমাদ্দার
ভালুকা উপজেলা, বাংলাদেশ
ইসলাম