রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক এর বয়স, উচ্চতা, জীবনী, বিবাহ, ছবি | Bangladeshi Actor Riaz Uddin Ahamed Siddique  Height, Weight, Age, Affairs, Biography & More in bangla

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জীবনী

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক সারা দেশ তথা অভিনয় জগতে রিয়াজ নামেই বেশি পরিচিত। তিনি একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা, তথা প্রযোজক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে প্রণয়, মারপিট ও নাট্যসহ ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। এছাড়াও তিনি অভিনয়ের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করেছেন।

জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family identity 

রিয়াজ ১৯৭২ সালের ২৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলন।

অভিনেতার ছেলেবেলা কেটেছিল ফরিদপুর শহরের সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টার্সের চৌহদ্দিতে। পিতা জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা; অন্যদিকে মাতা আরজুমান্দ আরা বেগম গৃহিণী ছিলেন। রিয়াজ ছিলেন নিজের পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতার বড় ভাই রাইজুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক এবং ছয় বোন জিন্ন্যা আরা, সুলতানা জাহানারা সিদ্দিক, সুলতানা রওনক আরা, সুলতানা রওশন জামিল, সুলতানা সালমা শাহীন ও সুলতানা ফাতেমা শিরিণ। 

রিয়াজের শিক্ষাগত যোগ্যতা, Educational qualification of Riaz

ছেলেবেলা থেকেই রিয়াজ উদ্যমী এবং খেলাধুলাপ্রিয়, তাছাড়া লেখাপড়ায়ও উজ্জ্বল ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা সদরে অবস্থিত তারার মেলা উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপরে ভর্তি হন ফরিদপুর জিলা স্কুলে, সেখানে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ফরিদপুর সদরস্থিত ময়েজউদ্দীন হাই স্কুলে ভর্তি হন।

রিয়াজের শিক্ষাগত যোগ্যতা

সেখান থেকে তিনি এসএসসি পাশ করেন। এরপর ফরিদপুর থেকে পৈতৃক বাসস্থান যশোর জেলায় চলে আসেন। রিয়াজের কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। এই কলেজে তিনি এইচএসসিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে তিনি বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকা এসে কোচিং শুরু করেন। 

কর্ম জীবনের প্রাথমিক সময়ে, Riaz, at the early phase of his career 

ছোটবেলায় রিয়াজের ইচ্ছা ছিল যে তিনি বড় হয়ে একজন স্থপতি হবেন; পরে পরিবারের বড়দের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর বিমান বাহিনীর যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বিমানচালক বা ফ্লাইং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রিয়াজ ১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রিয়াজ ১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন।

অভিনয় জগতে পদার্পণ, Entering the world of acting

বিমান বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুতির পর রিয়াজ ঢাকা শহরে পাড়ি জমান এবং নিজের চাচাতো বোন তথা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার হাত ধরে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। অভিনয় কর্মজীবনের শুরুতে কয়েকটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের পর ১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্‌নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রে প্রধান অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের অনেক প্রখ্যাত পরিচালকের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। 

রিয়াজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো:

প্রাণের চেয়ে প্রিয় ও হৃদয়ের আয়না (১৯৯৭), ভালবাসি তোমাকে, পৃথিবী তোমার আমার, বুক ভরা ভালোবাসা ও কাজের মেয়ে (১৯৯৮), বিয়ের ফুল ও স্বপ্নের পুরুষ (১৯৯৯), এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে, সাবধান ও ভয়ঙ্কর বিষু (২০০০), হৃদয়ের বন্ধন, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, মিলন হবে কতো দিনে ও প্রেমের তাজমহল (২০০১), নিঃশ্বাসে তুমি বিঃশ্বাসে তুমি, ও প্রিয়া তুমি কোথায় ও সুন্দরী বধু (২০০২), মাটির ফুল, ভালবাসা কারে কয়, মনের মাঝে তুমি, স্বপ্নের বাসর ও জামাই শ্বশুর (২০০৩), রং নাম্বার ও ছোট্ট একটু ভালবাসা (২০০৪), মোল্লা বাড়ীর বউ (২০০৫), হৃদয়ের কথা (২০০৬), আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ও তোমাকেই খুঁজছি (২০০৮), চাঁদের মত বউ ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯), বাজাও বিয়ের বাজনা (২০১০) এবং লোভে পাপে পাপে মৃত্যু (২০১৪)।

তিনি জনপ্রিয় কিছু গল্প-উপন্যাসের ভিত্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এগুলো হলো দুই দুয়ারী (২০০০), সুন্দরী বধু (২০০২), মেঘের পরে মেঘ, শ্যামল ছায়া ও শাস্তি (২০০৪), হাজার বছর ধরে (২০০৫), খেলাঘর ও বিদ্রোহী পদ্মা (২০০৬), দারুচিনি দ্বীপ ও একজন সঙ্গে ছিল (২০০৭) এবং মধুমতি (২০১১)।

এছাড়াও রিয়াজ বিকল্প ধারার কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন যেমন টক ঝাল মিষ্টি (২০০৪), না বোলনা ও বকুল ফুলের মালা (২০০৬), মেঘের কোলে রোদ, কি যাদু করিলা ও চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮), এবাদত (২০০৯), কুসুম কুসুম প্রেম (২০১১), টাকা(The Ultimate Magic) ইত্যাদি।

রিয়াজ অভিনীত সাম্প্রতিকতম চলচ্চিত্রগুলো হল সুইটহার্ট ও কৃষ্ণপক্ষ (২০১৬)। এছাড়াও তিনি ২০২০ সালে সুন্দরবনে র‍্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে নির্মিত“অপারেশন সুন্দরবন” চলচ্চিত্রে কাজ করছেন।

রিয়াজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো:

পুরস্কার প্রাপ্তি, Awards and recognition 

 রিয়াজ হুমায়ূন আহমেদের দুই দুয়ারী (২০০০) চলচ্চিত্রে রহস্য মানব চরিত্রে, তৌকির আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রে শুভ্র চরিত্রে এবং কি যাদু করিলা (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও সাত’বার সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন, Personal life

রিয়াজ চলচ্চিত্রে বিভিন্ন নায়িকার সাথে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। ফলস্বরূপ চলচ্চিত্রাঙ্গনে রিয়াজ-শাবনূরের প্রেমের খবর প্রকাশ হয়েছিল একসময়। এছাড়া অভিনেত্রী পূর্নিমার সাথেও তার সম্পর্কের খবরও কিছুদিন লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু এই সব খবর বা গুজবকে পিছে ফেলে দিয়ে রিয়াজ ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৪-এর বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী বিজয়ী মডেল মুশফিকা তিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১৫ সালে বিয়ের প্রায় আট বছর পর ১ জুন রিয়াজ কন্যা সন্তানের পিতা হন। 

 রিয়াজ ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৪-এর বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী বিজয়ী মডেল মুশফিকা তিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন

প্রযোজনার কাজ, Production work

রিয়াজ অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার কাজও করেছেন। তিনি ২০০৫ সালে তুহিন বড়ুয়ার সাথে যৌথ ভাবে পথিক নামে এক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হৃদয়ের কথা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন তিনি। বলাই বাহুল্য তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেও সফলতা লাভ করেছেন।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ছবিতে রিয়াজ নিজেই প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার আগেই বাজারে মুক্তি দেওয়া হয় গানের অডিও এ্যালবাম, যা শ্রোতারা সাদরে গ্রহণ করে। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর মুক্তি পায় এবং বক্স অফিসে এটি ব্যবসায়িকভাবে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করে। ক্রমে রিয়াজও চলচ্চিত্র প্রযোজনাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী চলচ্চিত্রের নাম “হৃদয় আছে যার”। উক্ত “হৃদয় আছে যার” ছবিটি পরিচালনা করার কথা ছিল ফেরদৌস হাসানের।

রিয়াজ অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার কাজও করেছেন

টেলিভিশন এ কাজ, Work in television 

রিয়াজ নানা মাধ্যমের কাজে সক্রিয়। অভিনেতা রিয়াজ চ্যানেল আইয়ের হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় মৌসুমে প্রধান বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি উপস্থাপক হিসাবে টেলিভিশনে কাজ করেছিলেন।

  • মেরিল-প্রথম আলো পূরস্কার – ২০০৭ (ফেরদৌস-কে সাথে নিয়ে)
  • নির্মাণের তারকা – ২০০৯-২০১০ (স্ত্রী তিনা-কে সাথে নিয়ে)
  • নির্মাণের তারকা ঈদ স্পেসাল – ২০১০ (বিশেষ পর্ব ঈদুল ফিত্‌র)
  • পূর্তি উৎসব তারার মেলা – ২০১১ (চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে)
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১০ – ২০১২ (মৌসুমী-কে সাথে নিয়ে)
  • ইত্যাদি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থাপক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।

অন্যান্য ব্যবসা, Other business

রিয়াজ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি ঢাকার বনানীতে ইয়েস কর্পোরেশন নামে একটি কোমল পানীয় উৎপাদনকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। এছাড়াও হাউজিং কোম্পানি আশিয়ান গ্রুপ-এর পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

রিয়াজ আহমেদ নেট ওয়ার্থ, Riaz Ahmed net worth

 ফোর্বস এবং বিজনেস ইনসাইডার এর তথ্য অনুযায়ী রিয়াজ আহমেদের নেট ওয়ার্থ প্রায় 1.5 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রিয়াজ আহমেদ নেট ওয়ার্থ

রিয়াজ আহমেদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য, Some more information about Riaz Ahmed

  • রিয়াজ আহমেদের উচ্চতা 5 ফুট 7 ইঞ্চি।
  • ওজন 68 কেজি। 
  • চোখের রং কালো। 
  •  চুলের রং কালো।
  • রিয়াজের সখের কাজের মধ্যে অন্যতম হল মাছ ধরা।

শেষ কথা, To conclude:

রিয়াজ তার সু অভিনয়ের জন্য দীর্ঘ অভিনয় জীবনে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশী অভিনেতা, মডেল, উপস্থাপক, সিনেমা প্রযোজক এবং ব্যবসায়ীও। ফ্লাইং অফিসার হিসেবে সফল না হতে পারলেও তিনি অভিনয় জগতে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts