সানি লিওন নামটি শুনলে অনেকের মনেই নীল জগতের ভাবনা চলে আসে। কিন্তু কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছে, যে এই নীল জগতে সানির আগমন কীভাবে ঘটেছে ? বর্তমানে সেই নীল জগতের সানি লিওনের জীবনের ইতিহাস হয়ে গেছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অনেকেই হয়তো এ সম্পর্কে অবগত নন। আজকের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আমরা সানি লিওনের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
সানি লিওন কে? Who is Sunny Leone?
বিশ্বব্যাপী পরিচিত সানি লিওনির আসল নাম করেনজিত কউর ভোহরা। তিনি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় এবং আমেরিকান নারী। তিনি বর্তমানে একজন প্রসাধন সামগ্রীর ব্রান্ড এর ব্যবসায়ী, মডেল, বলিউড অভিনেত্রী এবং প্রাক্তন পর্ণোতারকা।
সানি লিওনের প্রাথমিক জীবন, Early Life of Sunny Leone
সানি লিওন কানাডার অন্টারিওর সার্নিয়া শহরে এক শিখ পাঞ্জাবি বাবা-মার ঘরে জন্ম নেন। ১৯৮১ সালের ১৩ মে জন্ম হয় তাঁর। সানির বাবার জন্ম হয়েছিল তিব্বতে এবং তিনি দিল্লিতে শৈশব কাটিয়েছিলেন, আর তাঁর মা ছিলেন হিমাচল প্রদেশের মেয়ে।
তরুণী বয়সে তিনি খেলাধুলা করতে খুব ভালোবাসতেন এবং বাড়ির আশে পাশের ছেলেদের সাথে রাস্তায় নেমে হকিও খেলতেন সানি। তাছাড়াও তিনি হিমায়িত হ্রদের উপর আইস স্কেটিং করতে পছন্দ করতেন। তাঁর ১৩ বছর বয়সকালে সানির পরিবার ফোর্ট গ্রাটিয়ট, মিশিগান চলে যান। পরবর্তী এক বছর পর তারা আবার ক্যালিফর্নিয়ায় লেক ফরেস্ট এর কাছে স্থানান্তরিত হন।
সানি লিওনের পর্ণগ্রাফি জগতে প্রবেশ, Sunny Leone in the world of pornography
নীল জগত হল এমন এক জগত যেখানে সাধারণত স্বেচ্ছায় কখনও কেউ প্রবেশ করেন না। বহু তরুণী এমন আছেন যারা নিজের ভাগ্যের দোষে এই নীল দুনিয়ায় পা রাখতে বাধ্য হন। তবে সকলের অতিপরিচিত সানি লিওনের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন ছিল। তিনি কারো প্ররোচনা কিংবা কোনোও রকম পরিস্থিতির চাপে পড়ে নয়, বরং নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী এই নীল দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন, আর এ নিয়ে কখনো কোনো আক্ষেপও নেই সানির।
অনেকের কাছেই এটা অবাক হওয়ার মত বিষয়, কিন্তু হ্যাঁ, পর্ণ জগতের বেশীর ভাগ তারকাই হয়তো বাধ্য হয়ে এই জগতে পা রাখেন, তবে সেক্ষেত্রে সানি লিওন নিজ ইচ্ছায় এখানে যোগ দিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে ১৬ বছর বয়সে একটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সাথে তিনি নিজের কুমারীত্ব হারান এবং পরবর্তীতে ১৮ বছর বয়সে নিজের মধ্যে তিনি উভকামিতা অনুভব করেন।
তবে এই পর্ণ তারকা একসময় নীল দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে পড়েন এবং বলিউডের একজন জনপ্রিয় তারকাতে পরিণত হয়েছেন। তিনি ২০১০ সালে ম্যাক্সিম বিশ্বেসেরা ১০ পর্ণোতারকার মধ্যে একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সানি লিওনের কর্মজীবন, Sunny Leone’s Career Life
পর্নো শিল্পের জগতে কাজ করার পূর্বে, তিনি এক জার্মান বেকারিতে কাজ করেছিলেন। এরপর একটি ট্যাক্স এবং রিটায়ারমেন্ট ফার্মেও কাজ করেন তিনি। তাছাড়াও সানি অরেঞ্জ কাউন্টিতে পিডিঅ্যাট্রিক নার্স হিসেবে অধ্যয়ন করেন। তখন জন স্টিভেনসের সাথে তাঁর পরিচয় হয়।
স্টিভেনস পরবর্তীতে পেন্টহাউস ম্যাগাজিনের আলোকচিত্রী জে অ্যালেনের সাথে সানি লিয়নের পরিচয় করিয়ে দেন যিনি সানিকে পেন্টহাউস ম্যাগাজিনের পেন্টহাউস পেট অব দ্য মান্থ হিসেবে মার্চ ২০০১ সংখ্যার ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার সামনে আসার সুযোগ দেন।
পরবর্তী সময়ে হলিডে ফিচারে হাস্টলার হানি হিসেবে হাস্টলার ম্যাগাজিনের ২০০১ সংস্করণে বেশ কিছু ম্যাগাজিনের প্রথম পাতার জন্য নিজের ছবি তোলানোর সুযোগ পান সানি লিওনি। সেই ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে রয়েছে, চেরি, মায়েস্টিকু ম্যাগাজিন, এভিএন অনলাইন, শয়ান্ক, লেগ ওয়ার্ল্ড, হাই সোসাইটি, ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এবং লোরিডার।
এরপর তিনি বেশ কিছু সময় মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। কর্মজীবনে তিনি সচিত্র ক্রেডিটে আদ্রিয়ানা সেজ, জেলেনা জেনসেন, জেনা জেমসন এবং আরিয়া জিওভান্নি সহ আরো বিভিন্ন নামী তারকাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং একজন পর্নো তারকা হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাত অভিনেত্রী ছিলেন। ২০০৩ সাল ছিল সানির ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। তিনি সে বছর নির্বাচিত হন ‘পেন্টহাউস পেট’ এর জন্য। পর্ণো ছবির অন্যতম সেরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভিড এন্টারটেইনমেন্টের সাথে তিনি তিন বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে চুক্তির শর্ত অনুসারে লেসবিয়ান চরিত্রেই অভিনয় করেন তিনি।
সানি অভিনীত প্রথম ছবি ‘সানি’ নামেই ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বের হয়েছিল। পরের ছবির নাম ছিল ‘ভার্চুয়াল ভিভিড গার্ল সানি লিওন’, যেখানে তার সঙ্গে অভিনয় করেন মিকালা মেনডেজ এবং ডেইজি ম্যারি। এই ছবির জন্য তিনি ‘এভিএন’ সম্মাননা পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ব্রাজিলে বের হয় ‘সানি ইন ব্রাজিল’ এবং ‘দ্য সানি এক্সপেরিমেন্ট’ নামক দুটি ছবি, যা যথেষ্ঠ জনপ্রিয় ছিল। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সানির নতুন ছবির চুক্তি করেন। সেই চুক্তির আওতায় ছয়টি ছবিতে অভিনয় করতে হয় তাঁকে, আর এই ছবিগুলোতে প্রথম কোনো পুরুষ অভিনেতার সাথে কাজ করেন তিনি।
ছবিতে সানির বাগদত্তা ম্যাট এরিকসন তার সহ অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। পুরুষের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করা সানি ছবির নাম ছিল ‘সানি লাভস ম্যাট’। ছবিটি ২০০৯ সালের সেরা নারী অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করিয়ে দেয় তাঁকে।
বেশ কয়েকটি ছবিতে একসাথে অভিনয় করার পর সানি উপলব্ধি করেন যে ম্যাটের সঙ্গে টানা অভিনয় করায় ছবিগুলোর বাজারদর কম হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি অন্য অভিনেতাদের সাথেও অভিনয়ের কাজ শুরু করে দেন, যাদের মধ্যে ছিলেন টমি গান, চার্লস ডেরা, জেমস ডিন প্রমুখ।
পর্ণগ্রাফি ছেড়ে দিয়ে বলিউডে আসার পর তিনি বহু হিন্দি ছবিতে কাজ করেন। বলিউডে রাগিণী এমএএস ২, ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড, জিসম ২, এক পাহেলী লীলা এর মত বলিউডের জনপ্রিয় কিছু ছবিতে মূল চরিত্রে কাজ করেছিলেন।
তাছাড়াও বেশ কিছু সিনেমায় আইটেম গানে নিজের রূপের জাদু দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এরপর তিনি কিছু স্বাধীন মূলধারার চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
সানি লিওনের দ্বৈত নাগরিক হিসেবে থাকার পরিকল্পনা, Sunny Leone’s plan to stay as a dual citizen
সানি লিয়ন ২০০৬ সালের জুন মাসে, একজন আমেরিকান নাগরিকত্ব পান এবং তিনি কানাডায় দ্বৈত নাগরিক হিসেবে থাকার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৪ ই এপ্রিল, সানি লিওন ‘দ্য নিউ ইন্ডয়িান এক্সপ্রেস’ এর এক সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে নিজেকে ভারতের অধিবাসী হিসেবে ঘোষণা করেন।
সানি লিওনের ব্যক্তিগত জীবন, Personal Life of Sunny Leone
সানি লিওনে বিবাহ এবং পরিবার শুরু করার ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি ড্যানিয়েল ওয়েবারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শিখ নিয়ম মেনেই তারা দুজন বিয়ে করেছিলেন। বর্তমানে দুজনেই ভারতে একসাথে বাস করছেন, তাদের তিন সন্তান রয়েছে, যার মধ্যে একজন কন্যা যাকে এই দম্পতি দত্তক নিয়েছিলেন এবং দুটো যমজ ছেলে রয়েছে, যাদের জন্ম সারোগেসি পদ্ধতিতে হয়েছিল।
সানি লিওন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য, Some unknown facts about Sunny Leone
সানির উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। আর তাঁর ওজন ৫০ কেজি। বলিউডের এই আবেদনময়ী অভিনেত্রীর ছোটবেলা থেকেই পেডিয়াট্রিক নার্স হবার ইচ্ছা ছিল এবং সেই সংকল্পে পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে এই অভিনেত্রী মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমায় নাম লিখান।
উপসংহার, To conclude
বর্তমানে সানি লিওনি বহু সামাজিক কাজের সাথেও যুক্ত রয়েছেন। আমেরিকা এবং কানাডার নাগরিকত্ব প্রাপ্ত এই বিখ্যাত অভিনেত্রী একসময় লস এঞ্জেলসের এক হাফ ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি ক্যান্সার থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু টাকা জমানোর মতো একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন।
প্রাক্তন পর্নোগ্রফির দুনিয়ার এক পরিচিত মুখ হিসেবে সানি লিওনের সূত্রপাত ঘটলেও, বর্তমানে তিনি লেখিকা হিসেবেও নিজের বিকাশ ঘটাতে শুরু করেছেন। আজকাল তিনি বেশ কিছু ছোটো গল্প এবং ই- বুকের লেখিকা হিসেবে পরিচিত লাভ করছেন। বিভিন্ন সময়ে অভাবী মানুষদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করেন সানি ও তাঁর স্বামী। তাই নীল ছবির দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আসলেও তাঁকে বেশিরভাগ মানুষই শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
Frequently Asked Questions :
১৯৮১ সালের ১৩ মে।
জিসম ২, রাগিণী এমএমএস ২, এক পাহেলি লীলা।
২০১১ সালে তিনি ড্যানিয়েল ওয়েবারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।