ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা, Disadvantages of Mobile Phones in Student Life in Bengali

ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা

আমাদের উন্নত বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম অবদান হল মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বিশাল পরিবর্তন। তবে মোবাইল ফোনের উপকারী অনেক দিক থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটাই বর্তমানে বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। বেশিরভাগ দিক থেকে বিচার করে দেখতে গেলে মোবাইল ফোন ছাত্রজীবনে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর সাব্যস্ত হয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অপকারিতাসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহারের আধিক্য, Excessive use of mobile phones in student life :

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহারের আধিক্য

 বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সভ্য জীবনযাপনের একটা অপরিহার্য ব্যবস্থা হয়ে উঠলেও এর বেশ কিছু ক্ষতির দিকও রয়েছে। বয়স আট বছর হোক বা আশি বছর, সকলেই মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি আজকাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার শিখে যাচ্ছে শিশুরা, যেটা ঠিক নয়। এ বিষয়ে সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত।

করোনা মহামারীর সময়কাল থেকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে উঠেছে। মোবাইলের সহায়তায় ছাত্রছাত্রীরা কম শ্রমে অনেক কাজ করে নিতে পারছে। তাই দিনের পর দিন ছাত্র ছাত্রীরা অলস হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মোবাইলের ব্যবহার ছাড়া হাতে কলমে করার মত কোনো কাজেই তাদের আর আগ্রহ নেই।

বলাই বাহুল্য যে মোবাইলের প্রতি তাদের আসক্তি বেড়ে উঠছে দিন দিন। অন্যদিকে মোবাইল ফোনে অনর্থক কথা বলা, কাজে বা কখনো অকাজে এস.এম.এস করার বদভ্যাস, বিভিন্ন ধরনের গেম খেলার মাধ্যমে সময় নষ্ট করা ইত্যাদি অদরকারি কাজে লিপ্ত থাকে বর্তমান যুবক-যুবতীরা।

বলতে গেলে এইসব অভ্যাস নেশার মত যুব সমাজকে গ্রাস করেছে, যার প্রভাবে তাদের পড়াশুনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া বেশ কিছু বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা করে জানিয়েছেন যে অত্যধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহারের কারণে মস্তিষ্কে ক্যানসারও হতে পারে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া জরুরি।

 ছাত্র জীবনে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, Harmful effect of mobile usage in student life :

মোবাইল ফোন ব্যবহারের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনই খারাপ দিকও রয়েছে। মোবাইল ফোনও কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসে। মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সৃষ্টি করে বলে জানা গেছে। একইভাবে, ফোন থেকে বিকিরণ কিছু শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এছাড়াও শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ঘুমের অভাব, মাথাব্যথাও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যা মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে জড়িত। মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেকেই অবগত, তাও প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে মোবাইলের ব্যবহার করতে আমরা কখনোই পিছ পা হই না। কোনো কাজ না থাকলেই মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করাটা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিম্নরূপ :

ছাত্র জীবনে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব

ছাত্র ছাত্রীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি :

মোবাইল ফোনের ব্যবহার করার প্রভাব স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে; যেমন : মোবাইলের নিত্য ব্যবহারে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে যায়, মস্তিষ্কে টিউমার জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, ঘুম কম হওয়ার ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা, হঠাৎ করে মস্তিষ্কের কোষগুলি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, এই সমস্ত রোগগুলি মোবাইল ব্যবহার করার কারণে হতে পারে।

ছাত্র-ছাত্রীদের সময় নষ্ট হয় :

 ছাত্র-ছাত্রীরা গেম এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা ধরে মোবাইল ব্যবহার করতে থাকে, ফলে তাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়।  এতটা সময়ে হয়তো তারা অন্য যে জরুরী কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারতো। কিন্তু তা না করে মোবাইল ব্যবহার করে তাদের সময়ের অপব্যবহার হচ্ছে, এখন থেকেই এরূপ সময় নষ্ট বন্ধ না করলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ খারাপ হতে পারে।

পড়াশুনার ক্ষতি :

 অনেকে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে গিয়ে পড়াশোনা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। অনেকক্ষণ যাবৎ মোবাইল ব্যবহার করার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। সঠিক গাইডলাইনের অভাবে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার করছে না। তাই তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি মস্তিষ্কেরও  বিকৃতি ঘটছে।

মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের অসুবিধা, Disadvantages of excessive use of mobile :

ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যেসব অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় সেগুলি হল :

মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের অসুবিধা
  • মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইলে কিছু করতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় যে এরপর আর ঘুম আসছে না।
  • মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চোখের সমস্যা দেখা দেয়, অর্থাৎ চোখে কম দেখতে শুরু করার মত সমস্যা হতে পারে।
  • মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

তবে ছাত্রদের ক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় তা হচ্ছে একাগ্রতা কমে যাওয়া, যার ফলস্বরূপ যে কোনো কাজে অনীহা প্রকাশ করে ছাত্ররা।

মোবাইল ফোন বেশি সময় ব্যবহার করলে কি হয়? What happens if you use mobile phone for a long time?

মোবাইল ফোন অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারের ফলাফল কতটা খারাপ হতে পারে, সে ধারণা সকলেরই কম-বেশি আছে।। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানব মস্তিষ্কে কু-প্রভাব পড়ে, এর থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দেয়, এমনকি টিউমারও হতে পারে।

অন্যদিকে শিশুরা বেশি মোবাইল ব্যবহার করার কারণে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের, এছাড়াও মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, এমনকি ব্লাড ক্যান্সার জনিত মারাত্মক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

উল্লেখ্য বিষয়গুলো ছাড়াও অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে অনেকক্ষণ ধরে একভাবে মোবাইল দেখতে থাকার পর মাথা ব্যথা এবং খুব ক্লান্ত বোধ হয়।

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়, How to avoid the harmful effects of mobile phone?

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়

১. বিশেষ কোনো দরকার ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা। বিশেষ করে শিশুদের সামনে মোবাইল ফোন ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

২. বাবা মা অথবা অভিভাবকগণ তাদের শিশুদের হাতে স্মার্টফোনে তুলে না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা, কারণ এভাবে করলে তারা শিশুকাল থেকে মোবাইল এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।

৩. ফোনে কথা বলার সময় ফোনটি কানের কাছে ধরবেন না, বরং তার পরিবর্তে ক্ষতিকর তরঙ্গ এড়াতে তারযুক্ত হেডসেড ব্যবহার করতে পারেন।

৪. আপনার স্মার্টফোনটি আপনার শরীরের কোনো অংশে না রাখার চেষ্টা করুন; যেমন – প্যান্টের পকেট , জামার পকেট বা অন্য কোথাও রাখবেন না, বরং ব্যাগে রাখার চেষ্টা করবেন।

৫. আপনার শিশুকে বিনোদনের জন্য ফোনের পরিবর্তে গল্পের বই দিন অথবা কোনো ধরনের সামগ্রী খেলার জন্য দিতে পারেন।

শেষ কথা, Conclusion :

ছাত্র জীবনে মোবাইল ব্যবহারের উপকারিতা থাকলেও এর অপকারিতার প্রভাব বেশি পরিমানে লক্ষ্য করা যায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখিত বিষয়গুলো সকলেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন।

উল্লেখ্য ক্ষতি থেকে দূরে থাকতে সচেতনতার সাথে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল ফোন অদরকারি কাজে না লাগিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করলেই, তা আমাদের সমাজের জন্যে কল্যাণকর হবে, নয়তো মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ার কারণে ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

Frequently Asked Questions :

মোবাইল আমাদের কি ক্ষতি করে?

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক
১. ঘাড় ব্যথা
২. চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া
৩. কানে কম শোনা
৪. অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি
৫. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কি ক্ষতিকর?

শিক্ষার্থীদের উপর মোবাইল ফোনের সবচেয়ে স্পষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব হল একাডেমিক বিভ্রান্তি। ক্রমাগত বিজ্ঞপ্তি, সামাজিক মিডিয়া আপডেট, বিনোদনের লোভ, এর ফলে একাডেমিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

মোবাইল কি উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

খুব বেশি ফোন ব্যবহার করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে । এটি আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং আমাদের চোখের ক্ষতি করতে পারে। অত্যধিক ফোন ব্যবহারে আমাদের দৈনন্দিন কাজ প্রভাবিত করতে পারে। 

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts

link to হাতের চাপ বলবে কতটা সুস্থ তুমি, ঠিক কীভাবে ফিরবে শরীরের জোর?

হাতের চাপ বলবে কতটা সুস্থ তুমি, ঠিক কীভাবে ফিরবে শরীরের জোর?

আপনার হাতের মুষ্টির চাপ (Grip strength) আপনার সামগ্রিক সুস্থতার এক দারুণ সূচক হতে...