বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার এক সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলাদেশ ভারতেরই অংশ ছিল, কিন্তু স্বাধীনতা লাভের সাথে ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশ পূর্বপাকিস্তান হিসেবে স্বীকৃত হয়।
পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই দেশ সম্পর্কে বহু তথ্য রয়েছে যা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। আজকের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ভৌগলিক অবস্থান, geographical location
ভৌগোলিকভাবে দেখতে গেলে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরেও পশ্চিমবঙ্গ সহ রয়েছে আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে রয়েছে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। জনসংখ্যার বিবেচনায় প্রায় ১৭ কোটিরও অধিক মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। তাছাড়াও বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
বাংলাদেশ আয়তনে বিশ্বে ৯২ তম। ৬টি ক্ষুদ্র দ্বীপ ও নগররাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে প্রায় প্রতি বছর মৌসুমী বন্যা হয়; আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ ঘটনা। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র গত দুই দশকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুত, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সফলতা।
ঔপনিবেশিক সময়কাল, Colonial period
বাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনর্বার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয়; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈরিতার প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়। মুক্তি আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিভক্তি ঘটে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপিত হয়।
বাংলার বহু বিপ্লবী উক্ত আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন। তাদের আত্মবলিদান তথা লক্ষ লক্ষ মানুষের তাজা রক্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়াতে পেয়েছে। তাই তাদের স্মরণে তৈরি করে রাখা আছে বেশ কিছু স্থাপত্য, যথা শহীদ মিনার, শহীদ স্তম্ভ ইত্যাদি।
প্রশাসনভিত্তিক ভৌগোলিক বিভাজন, Administrative geographical division
বাংলাদেশ ৮টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। যথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে একাধিক জেলা। বাংলাদেশের মোট জেলার সংখ্যা ৬৪টি এবং ৪৯৫ টি উপজেলা রয়েছে।
বাংলাদেশে মোট ৪,৫৫৪টি ইউনিয়ন; ৫৯,৯৯০টি মৌজা এবং ৮৭,৩১৯টি গ্রাম রয়েছে। সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া শহরাঞ্চলে ১২টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) এবং ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে।
এর সবগুলোতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে – চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী,নাটোর, বগুড়া ও দিনাজপুর। বাংলাদেশের বাণিজ্যনগরী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম ও চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত সিলেট।
সাহিত্য, literature
এটা আমরা সকলেই জানি যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লিখিত বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি ও পালাগানের প্রচলন ঘটেছিল। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক বিকাশ ঘটে কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের।
শিল্পকলা, Art
বাংলাদেশে নৃত্যশিল্পের নানা ধরন প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে আছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলনও আছে। পূর্বে বাংলাদেশে যন্ত্রসংগীতের ভূমিকা সামান্য ছিল, সঙ্গীত মূলত ছিল বাণীপ্রধান; গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি। গ্রামাঞ্চলের লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র ছিল মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদির ব্যবহার।
বাংলাদেশের উৎসব, Festivals of Bangladesh
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উৎসবগুলোকে মূলত ধর্মীয় ও সর্বজনীন এই দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসব ঈদুল ফিত্র, ঈদুল আজহা, মিলাদুন্নবী, শবে বরাত, শবে কদর ও মুহররম। হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবগুলোর মধ্যে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বৌদ্ধদের প্রধান উৎসব হল বুদ্ধ পূর্ণিমা, আর খ্রিষ্টানদের বড়দিন। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান। গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি লোকজ উৎসবের প্রচলন রয়েছে।
বাংলাদেশের খেলাধুলা, Sports of Bangladesh
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি। বাংলাদেশের অন্যান্য খেলার মধ্যে হকি, হ্যান্ডবল, সাঁতার, কাবাডি, গলফ, আর্চারি এবং দাবা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ২৯টি খেলাধুলা সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করে।
বৈদেশিক সম্পর্ক, Foreign relations
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’, এই নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহের পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থেকেছে।
একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর বাংলাদেশের সঙ্গে সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে বিশ্বের ৫৭ টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। তাছাড়া এমন বহু দেশ আছে যার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে তাইওয়ানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। আর ইসরাইলের সাথে বাংলার কোন সম্পর্ক নেই।
১৯৭১ সালে স্বাধীন দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এ যোগদান করে।এটি দ্বি-বার্ষিক অনুষ্ঠিত সরকারি প্রধানদের সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হয়েছিল এবং ১৯৭৮-১৯৮০ সালে সুরক্ষা কাউন্সিলের পদে নির্বাচিত হয় এবং আবার ২০০০-২০০২ মেয়াদে নির্বাচিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব হুমায়ুন রাশিদ চৌধুরী ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের ৪১ তম সাধারণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের সহায়তায়, বাংলাদেশী সেনারা সোমালিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, কুয়েত, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং হাইতিতে সেবা দিয়েছে বা সেবা দিচ্ছে এবং ইউনিটগুলি বর্তমানে কুয়েত ও পূর্ব তিমুরে কর্মরত রয়েছে। ১৯৯৪ সালে হাইতির জন্য বহুজাতিক বাহিনীর জন্য সেনা ও পুলিশ গঠনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অনুরোধে বাংলাদেশ বৃহত্তম দল সরবরাহ করেছিল। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত, বাংলাদেশ ছিল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, World Trade Organization
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সক্রিয় সদস্য।
ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, World Customs Organization
বাংলাদেশ বিশ্ব শুল্ক সংস্থার (ডব্লুসিও) সক্রিয় সদস্য। ডাব্লুসিওতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছে। ব্রাসেলসে ডব্লুসিওর সদর দফতর রয়েছে।
এশিয়ার বিভিন্ন উপমহাদেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক, Bangladesh’s relationship with various Asian subcontinents
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহ : বাংলাদেশ ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, এবং শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সাথে সর্বদাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত বিরোধ ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও নেপাল সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে স্থল পরিবহনের সুবিধার্থে সম্মত হয়েছে।
আফগানিস্তান :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে আফগানিস্তান রাজতন্ত্র পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এ দেশের সাধারণ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের যোগান দিয়েছিল। ২০১০ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন বিশেষ দূত রিচার্ড হোলব্রুক বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ সৈন্য পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে যে তারা আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাবে না, বরং বাংলাদেশ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্বাসন এবং পুনর্নির্মাণের সহায়তা প্রদান করবে।
আজারবাইজান :
আজারবাইজান–বাংলাদেশ সম্পর্ক আজারবাইজান এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বোঝায়। ২০১১ সালে আজারবাইজান আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে মনোনয়নের বিষয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল।
ভুটান :
বাংলাদেশ এবং ভুটান আঞ্চলিক প্রতিবেশী। দুইদেশের মধ্যকার সম্পর্ক দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উভয় দেশ একটি কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদারত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উক্ত অংশীদারত্বের মধ্যে রয়েছে জল শক্তি, শুল্কহীন বাণিজ্য এবং পরিবহন ইত্যাদি।
ভারত :
দক্ষিণ এশিয়ার দুইটি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিরোধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় বাঙালি সম্প্রদায় ও ভারত সরকারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বিষয়ে বিবাদ হয়ে থাকলেও বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক সার্বিক দিক দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। দুটি দেশই একই সাথে সার্ক, বিমসটেক, আইওরা এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী সবসকৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে, ফলে তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার বলে অনুমান করা হয়। বর্তমানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ রেলের মাধ্যমে আরো উন্নত করার চেষ্টা চলছে।
নেপাল :
নেপাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করলেও যুদ্ধশেষে ১৯৭২ সালের ১৬ই জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। এর ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সরকার নেপালের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ও নেপাল পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য, ট্রানিজিট এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের উন্নয়নের জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে।
পাকিস্তান :
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুটি দক্ষিণ এশীয় দেশ। দেশ বিভাগের পরও বহু বছর দেশ দুটি মিলিত অবস্থায় ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান পৃথক হয়ে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ গঠন করে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয়েই সার্কের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, এছাড়াও দেশ দুটি উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, ওআইসি এবং কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য। ইসলামাবাদে বাংলাদেশের একটি হাইকমিশন রয়েছে, অপরদিকে ঢাকায় পাকিস্তানের একটি হাইকমিশন রয়েছে।
শ্রীলঙ্কা :
ইংরেজদের উপনিবেশের আগে থেকেই দক্ষিণ এশীয় এই দুই রাষ্ট্রর মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধন রয়েছে। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার বর্তমান বিনিয়োগ রয়েছে পোশাক এবং ব্যাংকিং খাতে। তাছাড়াও বাংলাদেশ তাদের অনেকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের একটি ফর্ম হিসাবে শ্রীলঙ্কান মেডিকেল ছাত্র এবং ক্রিকেটকে হোস্ট করে থাকে।
দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহ, South East Asian countries
ব্রুনেই , কম্বোডিয়া প্রমুখ দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
কম্বোডিয়া:
কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকারকগুলো রয়েছে পোশাক, পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য, নিটওয়্যার, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেবিলওয়ার, বাড়ির পট্টবস্ত্র, টেক্সটাইল, সীফুড এবং সামুদ্রিক পণ্য, চা, আলু, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল দ্রব্য, মশলা, প্রসাধনী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, টয়লেটস ইত্যাদি। অন্যদিকে কাম্বোডিয়া প্রধানত তুলা, ভোজ্য তেল, সার, ক্লিনার, স্ট্যাপল ফাইবার, সুতা ইত্যাদি বাংলাদেশে রপ্তানি করে থাকে। ২০১৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের প্রচার ও পারস্পরিক সুরক্ষার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া :
বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ, যেখানে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এই দুটি দেশ জাতিসংঘ এবং আরও অনেক বহুজাতীয় সংগঠনের সদস্য, বিশেষত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কমিটি, উন্নয়নশীল ৮ টি দেশ, নিরপেক্ষ আন্দোলন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং ইসলামী সমবায় সংস্থা ওআইসি এর সদস্য। জাকার্তায় বাংলাদেশের এবং ঢাকায় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস রয়েছে।
লাওস :
লাওস এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক শৌখিন।
মালয়েশিয়া:
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের মধ্যেই শক্তিশালী ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকায় মালয়েশিয়ার একটি দূতাবাস রয়েছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। উভয় দেশ কমনওয়েলথ অব নেশনস, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন, উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন এর সদস্য। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম।
মিয়ানমার
বর্মী সামরিক জান্তার অধীনে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার-এর মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল, তবে সীমান্ত নিয়ে কিছু বিবাদ থাকার পরও উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে বাণিজ্য, সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের আরও উন্নতি করতে চেয়েছিল।
ফিলিপিন্স :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ফিলিপাইন বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ফিলিপাইনে বাংলাদেশের একটি আবাসিক দূতাবাস রয়েছে এবং বাংলাদেশে ফিলিপাইনের বসবাসকারী রাষ্ট্রদূত রয়েছে।
সিঙ্গাপুর:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত হন। ২০১৬-এর ৯ আগস্ট বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি চুক্তিতে সই করে।
থাইল্যান্ড:
থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭২ সালের ৫ অক্টোবর থেকে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহ, East Asian countries
চীন
চীন—বাংলাদেশ সম্পর্ক হল চীন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। বাংলাদেশ—চীন সম্পর্ক প্রায় তিন হাজার বৎসরের পুরোনো। ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে চীন এবং বাংলায় মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের এক অন্যতম অংশীদার চীন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক পক্ষ। চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক এখন ভারতসহ প্রতিবেশী অনেক দেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী বৎসরগুলোর মধ্যে চীনের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থপিত হবে।
জাপান :
বাংলাদেশ জাপান সম্পর্ক হল দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সাথে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্তমানে জপান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
মঙ্গোলিয়া :
বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী রাষ্ট্রদূত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া :
দক্ষিণ কোরিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্ক হল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। বাংলাদেশ সেইসকল দেশের একটি, যারা কিনা উভয় কোরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় আছে। ১৯৭৫ সালে, দক্ষিণ কোরিয়া রাজধানী ঢাকায় তার দূতাবাস খোলে।
মধ্য এশিয়ার দেশ সমূহ, middle Asian countries
কিরগিজস্তান :
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথেই কিরগিজস্তানের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ।
পশ্চিম এশিয়ার দেশ সমূহ, West Asian countries
বর্তমানে বাণিজ্য, ইতিহাস, সামরিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলিতে বাংলাদেশ ১ মিলিয়নেরও বেশি অতিথি শ্রমিক সরবরাহ করে। পরিবর্তে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ তেল এই অঞ্চল থেকে আমদানি করা হয়।
ইরাক:
ইরাক ছিল প্রথম আরব দেশ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ও ইরাকের বাগদাদ ও ঢাকায় দূতাবাস রয়েছে। বাংলাদেশ ও ইরাকের সম্পর্ক মূলত সাধারণ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কিন্তু বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
ইরান :
২০০৬ সালে বাংলাদেশ-ইরান উভয় দেশই একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে যা শুল্ক-বহির্ভূত বাধা দূর করে। উভয় দেশই উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, ওআইসি, লাইক মাইন্ডেড গ্রুপের সদস্য। বিশেষ করে প্যালেস্টাইনের দখল নিয়ে বিশ্ব বিষয়ে তাদের সাধারণত একই মত রয়েছে।
লেবানন :
বাংলাদেশ-লেবানন উভয়ের মধ্যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, ইসলামিক জঙ্গিবাদ মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা, বৈশ্বিক ঘটনা এবং সাধারণ ধর্মের উপর অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গির মতো সাধারণ পটভূমির উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ইসরাইল :
বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং ইজরায়েলি দখলের অবসানের পক্ষে কথা বলায় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
রিয়াদ:
রিয়াদ এবং ঢাকা বর্তমানে রাজ্যের অনুকূলে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে চাইছে। তাদের প্রস্তাবগুলির মধ্যে একটি হ’ল সিরামিক, চামড়া এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যগুলি রাজ্যে রপ্তানি করা যেমনটি তারা ইতোমধ্যে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে করছে।
রাশিয়া :
বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার সম্পর্ক ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে অত্যন্ত উষ্ণ থেকে ১৯৮০এর দশকে সর্বকালের সর্বনিম্ন ব্যাপকভাবে ওঠানামা করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশ রাশিয়াসহ সাবেক সব সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, সামরিক ও শক্তির মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে শুরু করে।
উক্ত দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের অন্য বহু দেশের সাথে বাংলাদেশের কোনো না কোনো সম্পর্ক রয়েছে।
শেষ কথা, Conclusion
স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ দেশ হিসেবে নিজেকে আরও উন্নত করে বিশ্ব দরবারে স্থান পাওয়ার মত বহু কাজ করেছে। তাইতো আজ বাংলাদেশের নাম বিশ্বের কোণায় কোণায় পৌঁছে গেছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে নিজ চেষ্টায় এই দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারবে।