বন্ধু নিয়ে রচনা, Bondhu niye rochona in Bengali

বন্ধু নিয়ে রচনা

“গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ”৷রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের জীবন বন্ধু ছাড়া অপূর্ণ বলে মনে হয়। এর কারণ হল যেকোনো ব্যক্তির মানসিক উন্নয়নের প্রতিনিধিত্বকারী হয় পিতামাতার বন্ধন, আর এর পরের স্থানই হল বন্ধুত্বের। আমাদের সকলের জীবনেই একজন বা একাধিক বন্ধু রয়েছে, যাদের ছাড়া হয়তো আমরা জীবনকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারতাম না। আমাদের জীবনে তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি। একে অন্যের সুখে আনন্দিত হয়ে ওঠা; দুঃখে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর, একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বলা, একসাথে চূড়ান্ত পাগলামি করা, ইত্যাদির একমাত্র আধার হল ‘বন্ধুত্ব’।

বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব, stability of friendship

কারও সাথে বন্ধুত্ব তখনই স্থায়ী হয় যখন একে ওপরের প্রতি স্নেহ, সততা, স্বার্থপরতা, সহানুভূতি, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহমর্মিতা, সমবেদনা, ভালো বা খারাপ সময়ে একে অপরের সঙ্গ দেওয়া, পরস্পরের উপর আস্থা, ইত্যাদি সকল রকম অনুভূতি সম্পর্কটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব

বন্ধু দিবস কবে পালিত হয়, Friendship Day 

অনেকের মতে বন্ধু দিবস পালন করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। তবুও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগষ্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয় থাকে। আবার কিছু দেশে ০৮ এপ্রিল বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়। অন্যদিকে জাতিসংঘের মতে ৩০ জুলাই বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে পরিচিত।

বন্ধু দিবস কবে পালিত হয়

বন্ধুত্বের গুরুত্ব, importance of friendship

মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেরি হয় না। কারও বিপদে অজানা কোনো ব্যক্তি এসে যদি সহায়তা করে তবে পরবর্তীতে তারা বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, এর কারণ মানুষের একে অপরের প্রতি আন্তরিক মনোভাবের উপস্থিতি। একজন মানুষের জীবনে বন্ধুর উপস্থিতি অবশ্যই জরুরী, যার সাথে সব কথা খুলে বলে দেওয়া যায়, প্রয়োজনে কোনো পরামর্শ নেওয়া যায়, একসাথে ভালো সময় কাটানো যায়, প্রচুর পরিমাণে স্মৃতি তৈরি করা যায়।

তাই তো সবাই বিপদে আপদে সুখে দুঃখে একজন বন্ধুকে খোঁজে। যে বিপদের দিনে বা সুখের দিনে তার পাশে থাকবে এবং সময়ে অসময়ে একে অপরের দুঃখ-সুখকে ভাগ করে নেবে, কারণ যেকোনো ভালো বা খারাপ সময়ে একটা বন্ধু পাশে থাকলে যেন সাহস এবং আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেশি অনুভূত হয়। তাই সকলের জীবনে একজন ভালো বন্ধু থাকা খুব জরুরী, কারণ একসাথে জীবনের সকল অভিজ্ঞতা ভাগ করে ভােগ করার মধ্যে যে আনন্দ আছে-সেই আনন্দের সঙ্গী হয় সেই বন্ধু।তখন জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আরো রঙিন বলে মনে হয়।

একজন ভালো বন্ধু কেমন হয়, What is a good friend like?

ভালো বন্ধু বলতে এই না যে তুমি যা করছো বা যা বলছি তাকে সঠিক বলে মেনে নিয়ে তোমার সঙ্গ দেবে, বরং যদি সে তোমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সেগুলো শুধরানোর জন্য অনুপ্রাণিত করে তবেই তাকে একজন ভালো বন্ধু বলা যায়। তবে এর মানে এই নয় যে সে সবার সামনে তোমার ভুল নিয়ে লজ্জিত করবে।

ভালো বন্ধু সে যে তোমার সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে তোমায় সহায়তা করবে এবং তার বিনিময়ে তোমার থেকে কোনো কিছু আশা রাখবে না, কারণ বন্ধু হিসেবে এটা তার দায়িত্ব। তবে আমাদের স্কুল জীবন থেকে কলেজ জীবন তথা চাকরির সুবাদেও অনেকের সাথে বন্ধু হয়, কিন্তু সবাই শুরু থেকে শেষ অবধি পাশে থেকে যায় না, সাধারণত দেখা যায় যে একটা বয়স পরে ১ জন বা ২ জন বন্ধু থেকে যায় পাশে, যাদের সাথে সম্পর্কটা শুরুতে যেমন ছিল ক্রমে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং এই বন্ধুত্বই অটুট, হয়তো মৃত্যুর পূর্ব অবধি এই সম্পর্ক থেকে যাবে।

একজন ভালো বন্ধু কেমন হয়

যারা অনেক মিশুকে হয় তাদের ক্ষেত্রে খুব সহজ নতুন বন্ধু তৈরি করা, কিন্তু সবাই পারেনা বন্ধুত্বকে সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখতে, কারণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজার সম্পর্ক হলেও এর যত্নও নিতে হয়। ভালো বন্ধু হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নীতি নেই, কিন্তু পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, যত্ন ইত্যাদির মাধ্যমে বুঝে নেওয়া খুব কঠিন নয় যে কে আপনার ভালো বন্ধু আর কে নিজ স্বার্থের জন্য আপনার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাই কবি লিখেছেন –

“হিংসা ,বিদ্বেশ ভুলে গিয়ে ,
দুঃখের দিনে যে পাশে থাকে ,
কথা দিয়ে যে কথা রাখে ।
বন্ধুর সুখ – দুঃখ যে হৃদয়ে আঁকে ,
বন্ধুর খোঁজ – খবর রাখে যে কাজের ফাঁকে ,
পৃথিবীর বুকে সেই প্রকৃত বন্ধু ।”

বন্ধুত্ব কোনো বয়স মানে না, Friendship knows no age

বন্ধু সমবয়সী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, কারণ একটা বয়সে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কাজের সূত্রে হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে, তখন বয়স যাচাই করে বন্ধুত্ব হয় না, বরং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, আর মূল কথা হল কিশোর বয়সের কোন ছেলে বা মেয়ের সাথে যদি নিজের চাইতে বয়সে বড় কারোর সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে এই সম্পর্ক পরস্পরের জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে বিরাট ভূমিকা রাখে।

তবে এর জন্য অবশ্যই পরস্পরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, কারণ অনেক সময় এমন হয় যে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ছোট্ট বয়সী বন্ধু বলে অনেকে দ্বিধা করে, কিন্তু এমনটা করলেও যত্ন সহকারে করা উচিত যেন সেই ছোটো বন্ধু ব্যাপারটা খারাপভাবে না নেয় বা এই নিয়ে মন খারাপ না করে।

আবার বয়সে ছোটো বন্ধুটি নিজের বড় বয়সী বন্ধুকে কিছু বলতে গিয়ে যদি কখনো মুখ ফস্কে কিছু অযাচিত কথা বলে দেয় তাহলে এক্ষেত্রে বিরূপ ভাব না দেখিয়ে বরং ভালোভাবে সেটা নিয়ে বোঝানো উচিত, কারণ আমরা সাধারণত নিজের বন্ধুদের থেকে খারাপ ব্যবহার আশা করি না, বরং ভালোভাবে কিছু বললে সেটা সহজে বুঝতে পারি।

এভাবে কম বয়সীদের মনে কোন ভয় থাকে না কোনো বিষয়ে খোলা মেলা আলোচনা করার ক্ষেত্রে। এক কথায় বলতে গেলে বড়দের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে আমরা অনেক ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তেমনই আজকের সময়ে কম বয়সীরা টেকনোলজি তথা বিভিন্ন ব্যাপারে যতটা এগিয়ে আছে, সেই ব্যাপারেও বড়রা ছোটদের থেকে অনেক কিছু জানতে পারে। 

বন্ধুত্ব কোনো বয়স মানে না

বন্ধুর উপস্থিতিতে জীবনে পরিপূর্ণতার অনুভূতি, A sense of fulfillment in life in the presence of a friend

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে মানুষ সুখী হয়। তাই জীবনে বন্ধুর উপস্থিতি প্রয়োজন। আমরা যতই সাবলম্বী হই না কেন, দিন শেষে এক কাপ চায়ের সাথে জীবন নিয়ে গল্প করার জন্য কেউ না কেউ পাশে থাকা জরুরি, কখনো কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব অনুভব করলে সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটা ভালো বন্ধু সকলেই কাম্য। এমন কেউ যদি জীবনে না থাকে তখন খুব একা বোধ হয়, তাই জীবনে একজন বন্ধুর উপস্থিতি আমাদেরকে পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়। তাই সকলের জীবনেই একজন বন্ধু থাকা আবশ্যক। এজন্যই কবি লিখেছেন –

বন্ধুর উপস্থিতিতে জীবনে পরিপূর্ণতার অনুভূতি

“বন্ধু ছাড়া জীবন ধারা কঠিন সচল রাখা, বন্ধু আছে স্বপ্ন বাঁচে স্বপ্ন মেলে পাখা ।”

উপসংহার, Conclusion 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা নিজের মা বাবাকে বন্ধুর মত মনে করেন, তারাই আমাদের সব থেকে আপন বা কাছের মানুষ। কিন্তু তা সত্বেও অনেক বিষয় থাকে যা আমরা তাদের সাথে আলোচনা পারিনা। অনেকে কথাগুলো নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে আবার অনেকের একজন বন্ধুর প্রয়োজন হয় যাকে অকপটে সকল ভালো মন্দ বা যত খারপ কথাই হোক তা র্নিদ্বিধায় বলে ফেলতে পারি, আর তাকেই প্রকৃত বন্ধু বলা হয়।

 

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts