“মা মানে মমতা, মা মানে ক্ষমতা,
মা মানে নিরাপত্তা, মা মানে নিশ্চয়তা,
মা মানে আশ্রয়দাতা, মা মানে সকল আশা,
মা মানে একবুক ভালোবাসা।”
আমাদের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি হলেন আমাদের মা। পৃথিবীতে যদি নিস্বার্থভাবে কেউ ভালোবেসে থাকে তবে সেটা আর কেউ না, আমাদের মা। মায়ের মন সর্বদাই নিজের সন্তানের জন্য নরম থাকে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকে মা নিজের জন্য বাঁচেন, বরং নিজের সন্তানের জন্য বেঁচে থাকেন। জীবনের সবকিছু যেন সন্তানের জন্য উৎসর্গ করে দিতে সর্বদাই রাজি হয়ে থাকেন। তাই মায়ের ভালোবাসার সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা হয়না।
মা বলতে কি বুঝায়, Who is mother?
মায়ের ব্যাপারে কোনো আক্ষরিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মা হচ্ছেন একজন নারী, যিনি গর্ভধারণ করে সন্তানের জন্ম দেন, তথা জন্মের পর সন্তানকে যতটা সম্ভব যত্ন ও ভালো শিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলেন। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারিণী। গর্ভধারণের ন্যায় জটিল কাজ একমাত্র মা-রাই করতে পারেন।
৯ মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, তথা ভয়ঙ্কর ব্যথা সহ্য করে একজন মা নিজের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার পর মায়ের সেই কষ্ট সুখে পরিণত হয়ে যায়, এই সুখ কেমন অনুভুতি দেয় এটা শুধু একজন মা -ই অনুভব করতে পারেন।
পৃথিবীতে যত অভিধান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে সুমধুর শব্দটি হচ্ছে ‘মা’। মা শব্দটি উচ্চারণ করার মধ্যেই যেন এক অবধারিত সুখের সন্ধান খুঁজে পাওয়া যায়। তাই কখনো কোনো ভাবে একটু আঘাত পেলেও আমাদের মনের অজান্তেই মুখ থেকে মা শব্দটি বের হয়ে যায়। তাই কবি লিখেছেন,
“মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
তিন ভুবনে নাই।”
প্রেমময়ী মা, Loving mother
মা আমাদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী উপহার, যার সঙ্গে আমরা কোনও কিছুর তুলনা করি না। যাদের মা নেই তারাই একমাত্র বোঝে, মা হারানোর যন্ত্রণা কিরূপ হয়। মা আমাদের জীবনের এমন একজন অংশ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন, কিন্তু অন্য কেউ কখনো মায়ের স্থান নিতে পারে না।
একজন বাবা নিজের সন্তানের প্রতি সর্বদা যত্নশীল, কিন্তু একজন মা নিজের সন্তানের প্রতি সর্বদা প্রেমময় হয়ে থাকেন। মা কখনো বলে বোঝান না যে তিনি সন্তানকে ভালোবাসেন, কিন্তু মায়ের ব্যবহার সেটা প্রতিক্ষণে বুঝিয়ে দেয়। শিশুকাল থেকে সন্তানের যত্নে তিনি কত কি না করেন, ঘুম পাড়ানি গান হোক কিংবা “আয় আয় চাঁদ মামা” কবিতা, মায়ের সাথে সন্তানের কত স্মৃতি যে বাঁধা। সন্তানের সাথে মায়ের প্রেমের কোনো সীমা নাই, এই সম্পর্কের কোনো অন্ত নেই। এই বিশেষ সম্পর্কটি আজীবন অটুট থেকে যায়।
মা সর্বদাই সন্তানের পাশে থাকেন, Mother is always by the child’s side
মা সর্বদাই নিজের সন্তানের পাশে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, সন্তানের স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য, তিনি সবকিছু করতে পারেন। মায়ের ভালোবাসা সন্তানের জন্য সর্বদাই একই রকম থাকে, আর এই ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ থাকে না। সন্তানের বয়স যতই হোক বা সে সবসময় নিজের মায়ের কাছে আদরের পাত্র হয়ে থাকে।
মায়ের চেয়ে বেশি দয়ালু বা যত্নশীল হয়তো এই সংসারে আর কেউ নেই। মা- ই হয় সন্তানের মূল ভিত্তি। মা সন্তানের জীবনের ধ্রুবক। একজন মা সর্বদাই নিজের সন্তানকে ভালোবাসা দিতে আগলে রাখেন, তাইতো সুখ হোক কিংবা কষ্ট, সর্বপ্রথম আমাদের নিজের মায়ের কথাই মনে পড়ে, কারণ সুখে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রথম মায়ের কাছেই যাই আমরা, আর দুঃখে কান্না করার সেরা জায়গা হিসেবেও আমরা মায়ের কোলই খুঁজি।
মা কে আমরা সর্বোপরি বলে মনে করি তাইতো যেকোনো কাজে যাওয়ার আগে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে যাই, মায়ের আশীর্বাদ পেয়ে মনে হয় যেন সব কাজ সঠিক হবে।
মা সন্তানকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, Mother shows the right path to the child
একজন মা সর্বদা নিজের সন্তানদের, যে কোনও উপায়ে উৎসাহিত করতে এবং সাহায্য করতে ইচ্ছুক থাকেন, আর যদি তিনি কোনও ভাবে সন্তানের কাজে কোনোও সহায়তা করতে পারেন তবে সেই মায়ের আনন্দের কোনো সীমা থাকে না। তবে অনেকেই নিজের মায়ের ভালোবাসা বুঝতে পারেন না, ভুল করলে যদি মা বকে দেয়, তবে মনে হয় যেন মা ভালো না, আমাকে বুঝতে পারেন না।
কিন্তু আমরা এটা ভুলে যাই যে মা আমাদের ভালো চান, তাই তো ভুল করলে বাধা দেন, যেন এমন ভুল আবার না করি। সন্তানের ভুল ধরিয়ে দিয়ে শোধরানোর রাস্তা মা দেখিয়ে দেন, তখন তিনি সেটা ভাবেন না যে আমার সন্তান আমাকে খারাপ ভাবছে, মায়ের মাথায় তখন একটাই বিষয় থাকে যে আমার ছেলে বা মেয়ে যেন এমন ভুল আবার না করে, সন্তান যেন সঠিক পথে চলে তা নিশ্চিত করাই মায়ের ধর্ম।
তাই কবির কথাগুলো মাকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছে হয়, ” মাগো হিমালয় হয়ে তুমি শিয়রে থাকো, কত ঝড়ের আঘাত থেকে বাঁচিয়ে রাখো। তোমার আশীষ তোমার স্নেহে হলাম আমি জীবনজয়ী। কিভাবে ঋণ শুধবো তোমার, ওগো স্নেহময়ী।”
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি : মায়ের ভালোবাসা, The most powerful force in the world: Mother’s love
আমার জীবনে মা হলেন সূর্যসম, সেই সূর্য যা কখনো ম্লান হয় না এবং তিনিই আঁধারে চাঁদের আলোর মত, সেই চাঁদ যেটা কখনো হারিয়ে যায় না। পৃথিবীতে মা এমনই একজন ব্যক্তি, যিনি সন্তানের দুশ্চিন্তা এবং ভয়কে সুখ লাভ করার মন্ত্রে পরিণত করতে পারেন। একজন মায়ের ভালোবাসার উপরই সন্তানের জীবনের সবকিছু নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
একজন মা যখন নিজের সন্তানকে বিপদে দেখেন, তখন সেই মায়ের মনেও অনেক কষ্ট ও দুশ্চিন্তা আসে, কিন্তু তখন একজন মায়ের মধ্যে এতটাই সাহস এসে পড়ে যে তিনি নিজের সন্তানকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য যে কোনও কিছু করতে সক্ষম হন, তাই বলা হয় যে একজন মায়ের ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি। কবির কথা বলতে গেলে,
“হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।”
মায়ের তুলনা মা নিজেই, Comparison of mother to mother herself
‘মা’ কথাটি হয়তো খুব ছোট একটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর সকল মায়া, মমতা, আদর, অকৃত্রিম স্নেহ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের গল্প। স্বার্থপরভাবে চাওয়া পাওয়ার এই পৃথিবীতে একজন মায়ের ভালোবাসা সঙ্গে আর কোনো কিছুরই তুলনা করা চলে না, কারণ একজন মায়ের দায়িত্বই পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
‘মা’ যেন সীমার মাঝে অসীম। নিজের সন্তানের সাথে তার মায়ের নাড়ির যে সম্পর্ক রয়েছে তা কখনো কেউ ছিন্ন করতে পারবে না। মাকে ঘিরেই সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে সারাটা জীবন আবর্তিত হয়ে থাকে। কবির কথায় বলা যায়,
“অকারণেই মাকে খুঁজি হঠাৎ বাড়ি ফিরে,
আমার যত স্বপ্ন রঙিন, সবই মাকে ঘিরে,
এই জগতে মায়ের মতো বিকল্প কেউ নাই,
মা বলতে আর কিছু না, মা বলতে মা-ই।”
উপসংহার, Conclusion
মায়ের কোল এতই শান্তিপূর্ণ স্থান যে শিশুরা তার মধ্যে খুব নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। মায়ের দুই বাহুর কোমলতায় ঘিরে থাকার মত সুখ হয়তো আর কোথাও নেই। মা- ই আমাদের প্রথম বন্ধু এবং চিরকালের শ্রেষ্ট বন্ধু। মায়ের হাত ধরেই সন্তানের শৈশব-কৈশোর কাটে, তবে এখানেই শেষ হয়, বরং মা সন্তানের তারুণ্যের পথপ্রদর্শক ও প্রেরণার উৎস হিসেবেও থাকেন। মৃত্যুর পূর্ব অবধি মা সন্তানের সাথে ছায়ার মত থাকেন, কখনো তার হাত ছেড়ে দেন না।