জীবনে চলার পথে বহু মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বেশিরভাগ বন্ধুই হারিয়ে যায়, অনেকের সাথে আর সম্পর্কই থাকে না। তবে নতুন বন্ধু পেয়ে পুরোনো বন্ধুকে অবহেলা করা উচিত নয়। কিন্তু একটা কথা বলতেই হয় যে, জীবনে নতুন বন্ধুদের আগমন ও পুরনো বন্ধুদের হারিয়ে যাওয়ার মাঝে কিছু বন্ধু এমনও থাকে যারা আমাদের জীবনে ও মনে বিশেষ জায়গা দখল করে নেয়, এদেরকেই আমরা প্রিয় বন্ধু মনে করি।
আমার প্রিয় বন্ধু, My best friend
আমার প্রিয় বন্ধুর নাম হলো রূপম। রূপমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে। দিনটির কথা আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি পরছে, কিন্তু এদিকে আমি স্কুল যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ঘরে বসে আছি।
সেদিনটি ছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমার প্রথম ক্লাস। যাইহোক, কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামলে আমি কোনরকমে স্কুলে পৌঁছে যাই এবং নির্দিষ্ট কক্ষে ঢুকে বসার পর পাশে দেখি এক অচেনা ছেলে বসে আছে। তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে ওর নাম রূপম।
সেই দিন ক্লাসের ফাঁকে ওর সাথে অনেক কথা হয়, টিফিন বেলায় আমরা একসাথে খাবারও খেয়েছিলাম এবং স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলেছি। এরপর থেকে রোজ আমরা পাশাপাশি বসতে শুরু করি এবং সেই থেকেই ধীরে ধীরে রূপমের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এখন আমরা স্কুলে সবসময় একসাথে থাকি। এমনকি আমার সব কোচিং ক্লাসেও আমরা একসাথে পড়তে যাই।
প্রিয় বন্ধু এবং সর্বক্ষণের সাথী, best friend is a companion forever
আমাদের জীবনে থাকা ভালো বন্ধুদের মধ্যে সবাই তো আর সমানভাবে আমাদের মনে জায়গা করতে পারে না, কোন একজন থাকে যে আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। বলতে গেলে সে হয় আমাদের সর্বক্ষণের সাথী। আমার ক্ষেত্রে রূপম সেই জায়গা করে নিয়েছে আমার জীবনে। সেই আমার সর্বক্ষণের সাথী।
প্রিয় বন্ধু তো এমনই একজন যার সাথে আমাদের অজান্তেই এমন এক হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে যে মনের কোণে চলতে থাকা যেকোন কথা তাকে না বলা অবধি যেন মন হাঁসফাঁস করে। আমিও রূপম আমার মনের সব কথা খুলে বলতে পারি, কখনই কোনো দ্বিধা বোধ হয় না। সে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমার মনের এক বিশাল জায়গা দখল করে নিয়েছে। সকলের জীবনেই একজন প্রিয় বন্ধু থাকে, তেমনই আমার জীবনের এমন প্রিয় একজন বন্ধু হল রূপম।
রূপমকে ছাড়া আমার স্কুলে যেতেই ভালো লাগে না, খেলা করতেও ভালো লাগে না। আগে আমার এমন কোনো প্রাণের বন্ধু ছিল না, কিন্তু রূপম যে কি করে আমার এত ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো তা আমি নিজেও জানি না।
রূপম কেন আমার প্রিয়, Why Rupam is my best friend
প্রত্যেকের জীবনে যে প্রিয় বন্ধুটি থাকে সে বিভিন্ন কারণের জন্যই আমাদের প্রিয় হয়ে ওঠে। আমি আর রূপম দুজন দুজনের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠার পেছনেও কয়েকটি বিশেষ কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, আমরা পরস্পরকে বন্ধু হিসেবে ভীষণ ভালোবাসি। পড়াশোনা ও খেলাধুলার বিষয়েও আমাদের উৎসাহ একই রকম।
আমরা দুজনেই ফুটবল খেলা পছন্দ করি। অন্যদিকে স্কুলে ও কোচিং ক্লাসে সব সময় একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়েছে, একজন অপরজনকে খুব ভালো চিনি এবং পরস্পরের ইচ্ছা অনিচ্ছা নিয়েও অবগত। তাছাড়া আমি আর রূপম দুজনেই পরস্পরের বাবা মা কে যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। আমার মা বাবা রূপমকে যতটা আদর করে, ঠিক সেভাবেই তার মা বাবাও আমায় ততটাই ভালোবাসে। আমাদের বন্ধুত্বের কারণে আমাদের মা বাবার মধ্যেও এক মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
আমাদের বন্ধুত্ব, our friendship
আমার আর রূপমের বন্ধুত্ব এককথায় অনবদ্য। আমরা স্কুলে সবকিছু একসাথে করি এবং কোচিং ক্লাসেও সবসময় একসাথে থাকি, একসাথে বসি, একসাথে পড়াশুনা করি। আমাদের বাড়িও খুব কাছাকাছি, সে কারণে উভয়ের বাড়িতেই পরস্পরের যাতায়াত রয়েছে।
আমাদের অনেক ছোটো ছোটো ঝগড়া হয়, কিন্তু আমরা সেই রাগ মনে রাখি না, কারণ আমরা দুজনেই মনে করি যে বন্ধুকে মনের কথা না লুকিয়ে বলে দেওয়া উচিত, তাই আমাদের মধ্যে হওয়া ঝগড়া অভিমান আমাদের সম্পর্ককে হানি পৌঁছাতে পারেনি। স্কুলে যাওয়ার সময় আমরা প্রতিদিন একসাথে সাইকেল চালিয়ে যাই এবং ফেরার সময় একসাথে বাড়ি ফিরি।
তাছাড়া পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার আমরা একসাথে বসে সমাধান করি, আমরা দুজন পরস্পরকে পড়ার ক্ষেত্রেও যথাসাধ্য সাহায্য করে থাকি। পরীক্ষার আগে আমরা একসাথে পড়াশোনা করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। এছাড়াও রূপম ও আমার দুজনেরই ইচ্ছে বড় হলে ভবিষ্যতে একসাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যাব।
রূপমের সাথে স্মরনীয় একটি ঘটনা, A memorable incident with Rupam
আমাদের বন্ধু জীবনে প্রতিদিন এমন কত ঘটনা ঘটে যেগুলি স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। রূপমের সাথেও আমার এমন অনেক স্মৃতি আছে। আনন্দ দুঃখ মিলিয়ে সব স্মৃতি। কিন্তু সেইসব ঘটনাবলীর সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে এতটাই বেড়ে গেছে যে সবকিছু মনে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কিন্তু বিশেষ কিছু ঘটনা এমনও থাকে যা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থেকে যায়। এমন একটি দিনের কথা আমার এখনো মনে আছে। সেই দিনটি ছিল রবিবার; স্কুল ছুটির দিন।
কোচিং ক্লাস সেরে আমরা দুজনে বিকেল বেলা রোজকার মতন মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলাম। খেলতে খেলতে হঠাৎ মাঠে থাকা একটি গর্তে আমার পা পড়ে যায়, যায় ফলে আমার পা মচকে গিয়েছিল এবং আমি অসহ্য যন্ত্রণায় মাঠে পড়ে গেলাম, এদিকে আমার আকুতি শুনে রূপম সঙ্গে সঙ্গে খেলা থামিয়ে আমার কাছে দৌড়ে আসে। আমার পায়ের অবস্থা দেখে সে দৌড়ে গিয়ে সামনেরই এক দোকান থেকে বরফ এনে আমার পায়ে লাগিয়ে দিল।
তারপর খেলার অন্য সাথীদের সাহায্য নিয়ে আমায় তুলে ওর সাইকেলের পেছনে বসিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলো। বাড়িতে এসে সে আমার বাবা মা কে সব কথা বললো, তারা আমায় তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, রূপম তখনও ছিল আমার সঙ্গে। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি এক্স-রে পরীক্ষা করানোর জন্য বলেন, পরীক্ষায় ধরা পরল আমার পায়ের একটি হাড়ে সামান্য চিড় ধরেছে। তারপর ওষুধপত্র নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরলাম, সেই থেকে আমি প্রায় একমাস মাঠে খেলতে যেতে পারিনি, স্কুলেও যেতে পারিনি, সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ ছিল আমার জন্য।
এই একমাস ধরে প্রত্যেকদিন স্কুল থেকে ফিরতে রূপম সরাসরি আমার বাড়িতে চলে আসত, স্কুলে কি পড়ানো হয়েছে সব কিছু আমার বুঝিয়ে দিত, এরপর আমরা সারা বিকেল গল্প করতাম, সন্ধ্যেবেলা একসাথে পড়াশোনা করতাম, তারপর বাবা রাতের দিকে ওকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। মাঝে মাঝে ওর মা বাবাও আমায় দেখতে আসতো। তখন আমার মনে হয়েছিল অনেক ভাগ্য করে এমন বন্ধু পেয়েছি। এই বন্ধুত্বে যেন কখনো চিড় না ধরে।
শেষ কথা, To conclude
আমার এবং রূপমের এই বন্ধুত্ব চিরন্তন। আমার বিশ্বাস আমরা কোন দিন একে অপরের থেকে মানসিকভাবে দূরে চলে যাব না। মনে মনে তাই এই স্থির করেছি যে আমরা নিজেদের মধ্যে কোনদিন দূরত্ব তৈরি হতে দেবো না। ভবিষ্যতে আমরা যখন নিজেদের পায়ে দাঁড়াবো, তখন একসাথে দূরে কোথাও বেড়াতে যাব। সব সময় এবং সব পরিস্থিতিতে আমরা পরস্পরের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। এইভাবে চিরকাল আমরা ভালো ও খারাপ সময়ে একে অপরের পাশে থেকে বন্ধুত্বের আসল অর্থকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করবো