বিদ্যালয় হল সেই স্থান, যেখানে আমরা শিক্ষিত হই; প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ শিক্ষকদের নির্দেশনায়। আমার বিদ্যালয়ের নাম কুমারঘাট দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, যা ত্রিপুরা রাজ্যের কুমারঘাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। আমাদের বিদ্যালয় পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন খেলাধুলা এবং সঙ্গীতের মতো ক্রিয়াকলাপগুলিতে অংশ নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ দেয়। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিশ্বাস করে যে ছাত্রদেরকে শুধুমাত্র একাডেমিক উৎকর্ষতাই নয়, বরং সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের বিকাশের মাধ্যমে একজন ভালো এবং উপযোগী মানুষ হিসেবে বিবর্তিত হওয়া উচিত। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়,
” আমাদের বিদ্যালয় অতি মনোরম !
বিদ্যাদেবী সদা সেথা করেন বিচরণ !
শিক্ষকগণ সদা থাকেন অতি ততপর !
বিদ্যাদানে নাহি থাকে ত্রুটি অতঃপর । “
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা, School management
আমাদের বিদ্যালয় শহরের অন্য স্কুলের মতো বিশাল বড় এলাকা জুড়ে না হলেও ছাত্রদের প্রয়োজনীয় সকল রকম শিক্ষা প্রদানের মত ক্যাম্পাস রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয় মূলত চারতলা ভবনের মতো যাকে কেন্দ্র করে চারপাশে বেষ্টিত ভিন্ন ভিন্ন গাছে সমৃদ্ধ একটি বাগান রয়েছে।
স্থানের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা এতটাই আকর্ষণীয় যে শিক্ষার্থীরা সাধারণত অনুপস্থিত থাকেনা, বরং সকলেই রোজ বিদ্যালয়ে আসে। আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয় এবং সকল বিষয়ের দক্ষ শিক্ষকও আছেন যারা আমাদের সঠিকভাবে শিক্ষাদান করেন এবং সমস্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা উপস্থিত থাকেন। তাই শিক্ষকদের জন্য বলতে হয়,
“শিক্ষদানে আর দীক্ষদানে সদা রেেছ যাঁ হত, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে মোদের মন যে অনুরত।”
নিয়মিত ক্লাস হওয়ার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। মানুষকে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন করার জন্য এবং আশেপাশের গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষার প্রচার করার মতো সামাজিক কাজগুলোর সাথে আমাদের বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জড়িত আছে।
আমাদের শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরাও এই বিশেষ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে আমরা গ্রামের লোকজনকে, তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্য রাজি করি, সে ছেলে হোক বা মেয়ে। প্রতিবছর বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুদেরকে বিনামূল্যে বই এবং অন্যান্য স্কুল সামগ্রী বিতরণ করি। তাছাড়াও আমরা বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পোলিও ড্রপ, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদির মতো অন্যান্য প্রচারেও অংশগ্রহণ করি। তাই কবির কথায় বলতে ইচ্ছে হয়,
“আমাদের বিদ্যালয় দিয়েছে বিদ্যা দিয়েছে শিক্ষা
করেছে মোদের কুসংস্কারে মুক্ত,
গড়েছে দেশ, বিজ্ঞানে বিষয়ে যুক্তি যুক্ত।
জাগিয়েছে ছাত্রদের মনে পড়ালেখার মজা আর ফুর্তি,
মিটিয়েছে সকলের মন থেকে পড়াশুনার ভয় আর ক্লান্তি।”
বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ, Various activities in school
আমাদের বিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রম ছাড়াও দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মধ্যে থাকে বক্তৃতা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গান, আর্ট, নাচ ইত্যাদি, এসব নিয়ে দৈনন্দিন চর্চার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ অনেকটা বৃদ্ধি পায়। এক কথায় বিদ্যালয়ে আমরা সকলে মিলে বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতায় শিক্ষিত হওয়ার মত প্রশিক্ষণ পাই।
মাঠে বিভিন্ন ব্যায়াম এবং ক্রিকেট, ফুটবল, শর্ট পুট, লং জাম্প ইত্যাদি খেলাধুলার মতো পাঠ্যক্রমিক ক্রিয়াকলাপের প্রশিক্ষণের জন্যও একজন শিক্ষক রয়েছেন। এর ফলস্বরূপ ছাত্রছাত্রী যেকোনো মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েও দ্বিধা করে না। আর নাচ এবং সঙ্গীতের চর্চা করার ক্ষেত্রে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে যেখানে রোজ কিছু সময়ের জন্য অভ্যাস করা যায়।
বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি পৃথক বাস্কেটবল কোর্ট, টেনিস কোর্ট, ফুটবলের গোলপোস্ট ইত্যাদি রয়েছে। প্রতিবছর বিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ খেলাধুলার একটি প্রতিযোগিতা করা হয়, যেখানে আউটডোর খেলাগুলোর পাশাপাশি ইনডোর গেমসও খেলা হয়, বিজয়ীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেন প্রধান শিক্ষক নিজে। এসব কিছুর কারণে বিদ্যালয়ে আমাদের আকাঙ্খাগুলি ডানা মেলে এবং আমি সেগুলি উপলব্ধি করার শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস পাই। কবির কথায় বলতে গেলে,
“আমাদের বিদ্যালয় আমাদের প্রাণ । চলে সেথা লেখাপড়া, খেলাধুলা – গান। আমাদের বিদ্যালয়ে সুন্দর ভবন । রয়েছে যে শিশুদের মনের মতন । আলো -বায়ু খেলা করে ধরে সারাক্ষণ । ভালো লাগে বিদ্যালয় তাই যে ভীষণ। “
বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, School library
আমাদের বিদ্যালয়ে একটি সুসজ্জিত গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি রয়েছে, যার মধ্যে পাঠ্যবই থেকে শুরু করে গল্পের বই এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক অনেকগুলো বই রয়েছে। জানা থেকে অজানা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শেখার জন্য অনেক কিছু আছে এখানে তাই আমি আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সময় কাটাতে পছন্দ করি। গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বই পড়ে এমন কিছু বিষয়ের শিক্ষা অর্জন করা যায় যা হয়তো পাঠ্যক্রমে নেই।
নিরাপত্তা রক্ষা, Security in school
সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমাদের বিদ্যালয় সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, কারণ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকগণ তথা বহিরাগতদের উপর নজর রাখার জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা এবং নজরদারির জন্য কর্মীও রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের নজর বাঁচিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া প্রায় সকল অংশেরই সিসিটিভি লাগানো রয়েছে যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আলাদা কক্ষ এবং কর্মী নিযুক্ত।
জরুরী ব্যবস্থা, Emergency services
আমাদের বিদ্যালয়ে জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে একটা আলাদা বড় হলের মত কক্ষ আছে যেখানে ফাস্ট এইড এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের কারও যদি রক্তচাপ সংক্রান্ত বা মাথা ঘুরানোর মত সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে জরুরী ব্যবস্থা ও বিশ্রাম নেওয়ার মত বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া কখনো কোনো মারাত্বক সমস্যার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে যা ছাত্র বা শিক্ষক যারই সমস্যা থাকবে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে।
আমাদের বিদ্যালয়ের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, Other facilities of our School
আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী এবং কর্মীদের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে সমস্ত প্রকার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ছেলে, মেয়ে এবং কর্মীদের জন্য আলাদা করে সৌচালয়ের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিন দুবার করে সৌচালয়গুলো পরিষ্কার করেন। অন্যদিকে শিক্ষক, বিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মী তথা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থাও রয়েছে।
বিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব, School friends
আমাদের বিদ্যালয়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই শিক্ষা গ্রহণ করছে। বিদ্যালয়ে আমার সকল সহপাঠী আমার বন্ধু। তবে সবার মধ্যে দুই – তিন জন এমনও আছে যাদের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশ গভীর, তাদেরকে আমি কখনই ভুলব না, সবসময় ভালবাসবো।
আমরা সকলে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাগ্রহণ ছাড়াও একসাথে মিলে বিভিন্ন খেলায় অংশ নেই, আবার কখনো গ্রন্থাগারে গিয়ে বিভিন্ন বই নিয়ে পড়ি, কখনো আমি কিছু না বুঝলে অন্য কোনো বন্ধু আমায় তা বুঝিয়ে দেয় আবার কখনো আমি তাকে বুঝিয়ে দেই। তাছাড়া আমি এটাও জানি যে আমার যখনই আমার বন্ধুদের প্রয়োজন হবে তখন তারা আমার পাশে থাকবে এবং তাদের প্রয়োজনে আমিও তাদের পাশে থাকবো।
উপসংহার, Conclusion
আমাদের বিদ্যালয় আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেখানে আমি নিজের রোজকার বিশেষ সময় কাটাই, বিদ্যালয়ে আমার শরীর যেন আত্মার সাথে মিলিত হয় এবং আমার জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে।
শিক্ষা এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ হল যেকোনো মানুষের জীবনের দুটি অপরিহার্য গুণ যা আমাদের বিদ্যালয় প্রদান করে, আমাকে এমন একজন মানুষের রূপান্তরিত করে যে সমাজে ফলপ্রসূভাবে অবদান রাখতে পারে। আমি সর্বদা আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের বন্ধুদের, শিক্ষকদের এবং স্কুলের অন্যান্য সকল কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব আমার শিক্ষাজীবনকে এতটা আরামদায়ক তৈরি করার জন্য।