‘জলের আর এক নাম জীবন’ অথচ এটা জেনেও দিনের পর দিন আমরা জলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করছি ও জল নষ্ট করছি। কিন্তু আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে জল সংরক্ষণ ভারতের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য, কারণ আমরা আজকের সময়ে দাঁড়িয়েও জলের ঘাটতির সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি৷
তাই আজই যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে এই ঘাটতি আরো বেড়ে যেতে পারে। কিছু ছোট পদক্ষেপ বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীদেরকেও যথেষ্ট সচেতন করে তুলতে হবে। জলের অপচয় রোধে শিক্ষার্থীদেরকেও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
জলের অপচয়, wastage of water
আমরা নিত্য প্রত্যক্ষ করছি যে কিভাবে জল দূষিত হয়ে চলেছে এবং ক্রমে আমাদের ব্যবহারযোগ্য পানীয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে। তবে একটা কথা মানতেই হয় যে এই সমস্যার মূলে রয়েছে সভ্যতার অগ্রগতি এবং মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন – জল অপচয় ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, নাহলে হয়তো ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য জলের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যাবে।
বিভিন্নভাবে জলের ব্যবহার করার সময় আমরা ভুলে যাই যে আমাদের এহেন অপচয় আমাদের ভবিষ্যতে কত বড় বিপদ ডেকে আনছে। জলই জীবনের আধার, একথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই জলের ব্যবহার নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সচেতন হতে হবে। তবে জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে, এরজন্য তাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করতে হবে।
আজকের ছাত্রছাত্রী কাল ভবিষ্যত গড়ে তুলবে, তাই আজ থেকেই তাদের জলসংরক্ষণের কাজে লাগাতে হবে। এরজন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের জল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করতে হবে, তাদেরকে জলের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
জল সংরক্ষণের গুরুত্ব, Importance of water conservation
পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল, ছোটবেলা থেকেই আমরা এই কথা জেনেছি, কিন্তু এই তিনভাগের মধ্য আমাদের ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ খুবই কম, সেটা আমরা জানলেও অনেক সময় ভুলে যাই। জল ছাড়া আমরা একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না। আমাদের দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজেই জল ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু অনেক সময় আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জল ব্যবহার করি, যা শেষমেশ অপচয় হয়। কিন্তু এমন অপচয় না করে বরং ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের সকলকে জল সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের জানতে হবে জল সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে। জল সংরক্ষণের প্রধান গুরুত্বগুলি হল :
অপচয় তথা দূষণের ফলে প্রকৃতিতে জলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তাই জল সক্ষম করে এই ভারসাম্য বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব, নাহলে জল সংরক্ষণের অভাবে প্রকৃতিতে পানীয় জলের ভারসাম্য কমে যাবে।
কৃষিকাজে জলের চাহিদা মেটাতে জল সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম, নাহলে সূর্যের তাপে, জলের অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
শিল্প ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জলের চাহিদা মেটানোর জন্য জল সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, নয়তো সভ্যতার অগ্রগতি থেমে যাবে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে জল খুবই প্রয়োজনীয়। এই জল সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে জল সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
খরার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য জল সংরক্ষণ খুব জরুরি, নয়তো জলের অভাবে আমাদের আশপাশ শুকিয়ে যাবে ফলে জীবকুল ধ্বংস হয়ে যাবে।
জল সংরক্ষণের উপায় গুলি কি কি? How water can be conserved
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ :
বাড়িঘরে হোক কিংবা স্কুলে বৃষ্টির সময়ে বড় পাত্র বা ট্যাংকিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়, এই জল পানীয় হিসেবে ব্যবহার না করতে চাইলে আনুসঙ্গিক অন্যান্য কাজে লাগানো যেতে পারে। স্কুলে থাকাকালীন হোক কিংবা বাড়িতে থাকলে বৃষ্টির সময়ে খোলা জায়গায় বড় কোনো বালতি বা জল জমা করার মতো কোনো পাত্র রেখে দিলে খুব সহজেই জল সংরক্ষিত করে রাখা যায়।
জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি :
স্কুলে একে অপরকে জল অপচয় না করা এবং কি কি উপায়ে জল সংরক্ষণ করা যায় সে সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে দেওয়ালে জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টার, ছবি বা স্লোগান এঁকে লাগিয়ে রাখা যায়। তাছাড়া কখনো স্কুলে বা বাইরে কোথাও যদি কোনো ছাত্র অন্য কাউকে জল অপচয় করতে দেখে তবে তাকে বাধা দেওয়া উচিত।
জলাশয় রক্ষা করা :
জল সংরক্ষণের জন্য পুকুর বা জলাশয় ভরাট রোধ করা খুব জরুরী। মানুষ নিজের স্বার্থে বহু জলাশয় ভরাট করে দেয়, ফলে জলের উৎস হ্রাস হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ছাত্রদের জলাশয় ভরাট করতে না দিয়ে বরং এই জলের উৎস কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
জল অপচয় না করা :
অনেকেই স্নানের সময় অতিরিক্ত জল খরচ করে, দাঁত মাজার সময় নল ছেড়ে রেখে দেয়, বাসন মাজতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জল নষ্ট করে, আবার কেউ কেউ সেভ করার সময় জলের কল খুলে রেখে দেয়; এভাবে জল অতিরিক্ত খরচ না করে বরং প্রয়োজন মত জল ব্যবহার করা উচিত, যেমন সবজি বা ফল ধোয়ার সময় একটি পাত্রে কিছুটা জল নিয়ে পরিষ্কার করা উচিত যাতে জল অতিরিক্ত পরিমাণে নষ্ট না হয়।
দাঁত মাজা বা দাড়ি কামানোর করার সময় জলের কল ছেড়ে না রাখা, স্নান করার সময় বালতিতে জল নিয়ে সেই জল দিয়ে স্নান করলে জল কম অপচয় হবে, এইসব ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমেই জলের অপচয় বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীরা নিজেরাও যদি জলের অপচয় কম করে এবং অন্যদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তবে জল সংরক্ষণ করা সহজ হবে।
জল দূষণ বন্ধ করা উচিত :
বিদ্যালয়ে বই পুস্তক তথা সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রায়ই জল দূষিত বা অন্যান্য দূষণ সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা হয়, বাকিটা ছাত্রদের দায়িত্ব যে তারা কিভাবে এই দূষণ রোধে এগিয়ে আসতে পারে। শিক্ষকের হোক কিংবা বাড়ির আশে পাশের জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা জনগণকে সচেতন করতে পারে। জলাশয় বা পুকুরের জলের মধ্যে আবর্জনা ফেলা একেবারেই উচিত নয়, এক্ষেত্রে নিজেও কোনো আবর্জনা এভাবে না ফেলে অন্যদেরকেও ফেলতে বাধা দেওয়া উচিত।
সামাজিক কর্মসূচি :
ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে সমাজকে জল অপচয় এবং দূষিত না করার জন্য সচেতন করে তুলতে পারে। রাস্তার পাশে বা কলোনির মানুষের ব্যবহারের জলের নল যেন ছাড়া না রাখা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা, বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, জলাশয়ের কাছে কোনো আবর্জনার স্তূপ না রাখা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জনমনে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারে। তাছাড়াও জল সংরক্ষণ নিতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ছাত্ররা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সহায়তার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল, অনুষ্ঠান বা সচেতনতা মূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে পারে।
উপসংহার, Conclusion
পৃথিবীতে জল আছে বলেই আমরাও বেঁচে আছি। তাই বেঁচে থাকার জন্য জলকে বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরি। তবে জল সংরক্ষণের জন্য শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয় বরং সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, নয়তো ক্রমে আমাদের ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণ কম হয়ে যাবে, এবং হয়তো একদিন জল সোনার দরে বিক্রি হবে।
জলের অভাবে আমরা বিভিন্নভাবে সমস্যার সম্মুখীন হবো, তাই এমন পরিস্থিতি যেন কখনোই আমাদের জীবনে না আসে তা নিশ্চিত করতে আজ থেকেই জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে, জল দূষণ রোধ করতে হবে এবং জল সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।