একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচনা, Essay on a travel experience in Bengali

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচনা

ভ্রমণ  করতে কার না ভালো লাগে। জানা থেকে অজানায় বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার আনন্দই যে আলাদা, সেই অজানার পিপাসা মেটানো সম্ভব একমাত্র ভ্রমণের মাধ্যমে। ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা জীবনের অভিজ্ঞতা পাই। নতুন বিষয় জানার সুযোগ পায় যা হয়তো পাঠ্যক্রমে কখনো পাই নি। আবার এমন বহু জায়গা আছে যা সম্পর্কে আমরা বই তে পড়েছি কিন্তু নিজে সেইসব জায়গায় না গেলে সেই স্থান সম্পর্কে সঠিক অভিজ্ঞতা পাওয়া দুষ্কর। এক কথায় ভ্রমণ খুব জরুরী সকল মানুষের জীবনেই। 

কলকাতা ভ্রমণের পরিকল্পনা, Kolkata bhromoner porikolpona

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভিনদেশে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, পরিকল্পনা করেন বাইরের দেশগুলো দেখার। কিন্তু আমরা হয়তো ভুলে যাই যে নিজের দেশেই এমন অনেক স্থান আছে যেখানকার সংস্কৃতি, ইতিহাস, পর্যটন সম্পর্কে অনেক কিছু আমাদের অজানা। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের বসবাস।

এমনকি ভারতে এমন বহু রাজ্য আছে যেখানে প্রায় সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের একসাথে বাস হয়। এমনই একটি রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। তবে উক্ত রাজ্যের কলকাতা শহর বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাই দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা না করে কলকাতা ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলাম। এটা ছিল আমার প্রথম কলকাতা ভ্রমণ। সামাজিক মাধ্যমে, টিভিতে বহুবার দেখেছি কলকাতার হলুদ টেক্সি, দুর্গাপূজা, মেট্রো রেল এবং বহু ভ্রমণের যোগ্য স্থানগুলো।

সেই সব নিজের চোখে দেখার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্যই এইরূপ পরিকল্পনা। তবে দুর্গাপূজা দেখা হবে না, কারণ মাসটি ছিল আগস্ট। কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে বেশি সময় নিলেই সাধারণত সেটা ভেস্তে যায়। তাই দেরি না করে চটজলদি বিমানপথের ৪ টে টিকিট কেটে নেওয়া হল। এটা ছিল পারিবারিক ভ্রমণ, আমি, আমার বাবা-মা, আর আমার বোন। এক সপ্তাহের শেষেই যাত্রার দিন। এরপর তো শুরু যাওয়ার দিনের অপেক্ষা।

কলকাতা ভ্রমণের পরিকল্পনা

যাত্রার শুরু, The start of the journey

ত্রিপুরা থেকে বিমানে করে কলকাতা পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখি হলুদ টেক্সী, আমি আর উৎসাহ ধরে রাখতে পারলাম না, সকলে মিলে একসাথে একটি টেক্সী ভাড়া করে চলে গেলাম একটা হোটেলে। হোটেল যাওয়ার পথে মুগ্ধ নয়নে কলকাতা দেখছি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম ও ছবি দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন ব্যানারে। এছাড়াও আছে সিনেমার পোস্টার, বিজ্ঞাপন বিষয়ক বড় বড় বিলবোর্ড। এখানকার রাস্তাঘাট যথেষ্ট পরিষ্কার। ব্রিটিশ আমলের লাল ও দীর্ঘ দালানগুলোতে পরিপূর্ণ কলকাতা শহর।

হোটেল নির্দিষ্ট করা ছিল পূর্ব থেকেই। হোটেল পৌঁছতে বেজে যায় বিকেল চারটে, সবাই হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে বেরিয়ে পড়লাম খাবারের দোকানগুলোর খোঁজে। হোটেলটি ছিল কলেজ স্ট্রীট এ, এই স্ট্রিট হল এশিয়ার সবথেকে বড় বই এর বাজার। সেদিন আর কোথাও যাওয়ার মত পরিস্থিতি ছিলো না বলে, কলেজ স্ট্রিট এ ঢু মেরে ফিরে এসে পরের দিনটা কিভাবে উপভোগ করবো সেটা নিয়ে পরিকল্পনাতেই সন্ধ্যে কাটিয়ে দিলাম।

কলকাতায় প্রথম সকাল, The first morning in Kolkata

কলকাতার সাধরণত্বে আছে এক অসাধারণ সৌন্দর্য্য। সেটা হয়তো বলে বোঝানো দায়, কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতাটা ছিল অপরূপ। এখানকার বিভিন্ন খাবার বিশ্ব ব্যাপী নাম করেছে। এরমধ্যে অন্যতম হল ভাঁড়ের চা। তাহলে এই চা তো পান করতেই হয়। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আর বাবা বেরিয়ে পড়লাম চায়ের উদ্দেশ্যে।

হোটেলে চায়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেটায় তো আমাদের মন ভরবে না। হোটেলের পাশের একটি ছোটো চা স্টল ছিল, যেখানে বসে একজন বয়স্ক ব্যক্তি চা বিস্কুট বিক্রি করছেন। সেখানে বসে ভাঁড়ের চা উপভোগ করে মনে খুব আনন্দ পেলাম। ফেরার পথে দেখলাম অনেকগুলো টানা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে যা হয়তো এখন শুধু কলকাতাতেই আছে। মোবাইলের ক্যামেরায় এর ছবি নিলাম এবং ফিরে এলাম হোটেলে। তারপরে স্নান খাওয়া সেরে নিয়ে ৮ টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম কলকাতার সৌন্দর্য্য উপভোগের উদ্দেশ্যে। হোটেলে গাড়ির জন্য বলে রাখা হয়েছিল আগের দিনই, তাই কিভাবে যাবো সেটা নিয়ে আর কোনো চিন্তা ভাবনা করার ছিলনা।

কলকাতায় প্রথম সকাল

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, Travel experience

কলকাতা ভ্রমণের প্রথমদিনেই আমরা সর্বপ্রথম যাই দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে, সেখানে মায়ের দর্শন শেষে লঞ্চে করে চলে যাই বেলুড় মঠে। গঙ্গা নদীর বুকে লঞ্চে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনন্য। সেখান থেকে ফিরে দুপুরের খাবার শেষে আমরা চলে যাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পরিদর্শনে। তারপরে সাইন্সসিটিতে সন্ধ্যে অবধি স্পেইস থিয়েটারে একটা অনুষ্ঠান দেখে ফিরে আসি হোটেলে।

পরদিন শহরে স্থিত ছোটো বড় বেশ কিছু মন্দির দর্শন করার পর, বিকেলের দিকে হাওড়া ব্রিজের গঙ্গাঘাটে গিয়ে লঞ্চে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করি, বলতে গেলে লঞ্চে যাওয়ার আনন্দ বার বার গেলেও যেন মন ভরে না। তারপর হোটেলে ফেরার পথে চা-সিঙ্গারা খেয়ে নিলাম।

তৃতীয়দিন আমরা বিশ্ব বাংলা গেট দেখতে যাই, সেখান থেকে যাই ইকো পার্কের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। বিশাল বড় এলাকা জুড়ে তৈরি এই পার্ক পুরোটা দেখতে অনেকটা সময় লেগে যায়। তবে মজা হয় দারুণ । ফেরার সময় বালাজী মন্দিরে যাই ঠাকুর দর্শনে, সেখানে ভক্তদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর পর ঠাকুর দর্শন করে ফিরে যাই হোটেলে। সারাদিন ঘুরে হয়তো এতটা ক্লান্ত কেউ হয়নি যতটা ওই লাইনে দাঁড়ানোর কারণে হতে হয়েছিল ।

চতুর্থ দিন আমাদের শেষ দিন ছিল কলকাতায়, তাই সেদিন আর বেশি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু কলকাতা এসে যদি ঠাকুর বাড়ি না দেখা হয় তবে যেন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই সেদিন আবার একটা হলুদ টেক্সী ভাড়া করে চলে গেলাম জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি দেখতে। দুর্ভাগ্যবশত সেদিন ছিল সোমবার, আর এটা আমাদের জানা ছিল না যে এদিন ঠাকুর বাড়ি পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। অগত্যা ফিরে আসতে হল সকলকে।

সেখান থেকে ফেরার পথে চলে গেলাম নিউ মার্কেট, এই মার্কেটের নাম অনেক শুনেছিলাম তাই দেখার ইচ্ছেও ছিল। সেখানে টুকটাক কেনাকাটা সেরে এবার সবাই মিলে বাসে করে বউবাজার যাবার সিদ্ধান্ত হল। পরিকল্পনা মত বাস বুঝে উঠে পড়লাম, গন্তব্যে গিয়ে আবারও অল্প কিছু কেনাকাটা করা হয়। ফেরার পথে দেখলাম অনেকগুলো পুজোর প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে বললাম “পূজো এসে গেছে”।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

পরদিন অর্থাৎ ফিরে যাওয়ার দিন মন টা কেমন যেন করছিল। ৪ টে দিন মন্দ কাটেনি এখানে, কত মজার মজার জিনিস দেখলাম, ভালো খাবার খাওয়া, কেনাকাটা ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে আনন্দে ভরে গিয়েছিল আমার সহ সকলের মন। তবে আবার কখনো হয়তো ফিরে আসবো আমি এখানে। সেদিন সকালে হোটেলে স্নান সেরে বাইরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে অনলাইনের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করে চলে গেলাম বিমানবন্দরে। ফিরে এলাম বাড়ি।

উপসংহার, Conclusion 

শহরের সাথে যেমন ইতিহাসের ছোঁয়া লেগে আছে তেমনি আধুনিকতার দিক থেকেও বড় বড় শহরগুলো থেকে কম নয় কলকাতা। কলকাতার কথা ভাবলেই মনে হয় “সিটি অফ কালচার”, “সিটি অফ জয়” , “সিটি অফ হেরিটেজ” এবং সর্বপরি “সিটি অফ প্যাসন”, আর আমার মনের কথা  বলতে গেলে কলকাতা সম্পর্কে একটা কথাই বলতে ইচ্ছে হয় “ভালোবাসার শহর কলকাতা”।

শহরটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দ এবং অন্যান্যদের মতো বিখ্যাত ভারতীয় অগ্রগামীদের জন্মস্থান হিসাবেও পরিচিত। শেষ কথা এটাই বলার আছে যে, কলকাতা হল এমন একটি শহর এখানে অনেকগুলো দেখার মত জায়গা আছে, প্রত্যেক ভ্রমণকারীরই সেগুলো একবার হলেও দেখা উচিত।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts