বর্তমান যুগ হল প্রযুক্তির যুগ আর এই প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা সকলেই ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতে প্রায়ই ফোন ব্যবহার করি।কিন্তু ফোন নাম্বার দিয়ে কারো অবস্থান অর্থাৎ লোকেশন নির্ধারণ করা নিয়ে আজকাল অনেক আলোচনা ও বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। এটি যেমন নিরাপত্তার দিক থেকে সহায়ক হতে পারে, তেমনি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কাও তৈরি করে।
ফোন নাম্বার দিয়ে কারো লোকেশন নির্ধারণ করার জন্য সাধারণত মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির সাহায্য লাগে। তারা প্রতিটি ফোন কল বা মেসেজ পাঠানোর সময় মোবাইল টাওয়ার ভিত্তিক ট্র্যাকিং করে থাকে।এর মাধ্যমে অনুমান করা যায়, ফোন ব্যবহারকারী কোন এলাকায় অবস্থান করছে। এছাড়া, স্মার্টফোনে জিপিএস (GPS) সুবিধা থাকলে এবং লোকেশন শেয়ারিং চালু থাকলে আরও নির্ভুলভাবে লোকেশন নির্ধারণ করা যাবে।
এই প্রযুক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে।বিশেষ করে অপহরণ, চুরি কিংবা সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে ফোন ট্র্যাকিং প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল খুঁজে পেতে বা প্রিয়জনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনেকেই লোকেশন শেয়ারিং ফিচার ব্যবহার করেন।

তবে এই প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অনেক সময় কোনো অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তির ফোন নাম্বার দিয়ে তার লোকেশন খোঁজার চেষ্টা করা হয়।এটি গোপনীয়তার পরিপন্থী এবং অনেক দেশে তা বেআইনি বলে বিবেচিত। হ্যাকার বা সাইবার অপরাধীরা ভুয়া অ্যাপ বা লিংকের মাধ্যমে ফোন ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের অবস্থান জেনে নিতে পারে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
ফোন নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার ক্ষেত্রে কিছু অনলাইন টুল বা অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায়, যেগুলোর অনেকগুলোই ভুয়া বা প্রতারণামূলক।ব্যবহারকারীরা না বুঝে এসব অ্যাপ ব্যবহারে নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে সচেতন থাকা জরুরি।
গুগল ম্যাপে মোবাইল লোকেশন বের/ Find mobile location on Google Maps
গুগল ম্যাপে মোবাইল লোকেশন বের করার জন্য, আপনাকে প্রথমে গুগল ম্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার মোবাইলে ওপেন করতে হবে। তারপর আপনার প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করে লোকেশন শেয়ারিং অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।সেখানে গিয়ে আপনি যে ব্যক্তির সাথে আপনার লোকেশন শেয়ার করতে চান, তাকে যুক্ত করতে পারেন এবং কতক্ষণের জন্য লোকেশন শেয়ার করতে চান সেটিও নির্বাচন করতে পারেন।
এইভাবে, আপনি যাদের সাথে আপনার লোকেশন শেয়ার করেছেন তারা আপনার লাইভ লোকেশন দেখতে পারবে। যদি আপনি চান সেই লোকেশন শেয়ারিং যেকোনো সময় বন্ধ করতে পারেন।গুগল ম্যাপের এই লোকেশন শেয়ারিং ফিচারটি সকলের জন্যই খুব উপকারী কারণ যখন আপনি কারো সঙ্গে দেখা করতে চান ও অন্য কেউ আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এটি আপনাকে এবং আপনার পরিচিত জনকে একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।

সিম লোকেশন ট্র্যাকার, SIM Location Tracker
সিম লোকেশন ট্র্যাকার হল এমন একটি প্রযুক্তি যা সিম কার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের অবস্থান ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত কাছাকাছি সেল টাওয়ার থেকে সংকেত ব্যবহার করে ফোনের অবস্থান নির্ণয় করে।এই ট্র্যাকিং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন অবস্থান-ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান, নেটওয়ার্ক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা করা ইত্যাদি।
বন্ধ সিমের লোকেশন জানার উপায়, How to know the location of a deactivated SIM
বন্ধ সিমের লোকেশন সরাসরি জানার কোন উপায় নেই কিন্তু কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে সেই বন্ধ সিমের অবস্থান জানা যেতে পারে।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস: যদি আপনার ফোন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গুগল এর ফাইন্ড মাই ডিভাইস ফিচারটি ব্যবহার করে ফোনের সর্বশেষ অবস্থান জানা যায়।কিন্তু এরজন্য আগে থেকেই আপনার ফোনে এই অপশনটি চালু এবং ডিভাইসটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রাখতে হবে।
ফোনের বিল্টইন ফিচার: অনেক ফোনে “ফাইন্ড মাই ফোন” বা এই ধরনের বিল্টইন ফিচার থাকে, যা দিয়ে বন্ধ সিমের শেষ অবস্থান জানা যায়। তবে এই ফিচারটিও ব্যবহার করার জন্য আগে থেকেই চালু করতে হবে।
আইনি সহায়তা: যদি আপনার সিম হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে পারেন। তারা সিম কার্ডের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে।
সিম কার্ডের নম্বর জানা: অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সেটিংস থেকে সিম কার্ডের নম্বর জানা যায়। সেটিংস এ গিয়ে “ফোন সম্পর্কে” বা “ডিভাইস সম্পর্কে” অপশন থেকে “সিম স্ট্যাটাস” বা “সিম কার্ডের অবস্থা” তে গেলে সিম নম্বর দেখা যায়।
স্পাইওয়্যার বা অন্যান্য ট্র্যাকিং সফটওয়্যার: কিছু ক্ষেত্রে, স্পাইওয়্যার বা অন্যান্য ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফোন ট্র্যাক করা যায়। কিন্তু এটি একটি বেআইনি কাজ এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার হতে পারে।
বিশেষ কোড ডায়াল করা: কিছু বিশেষ কোড ডায়াল করে ফোনের ট্র্যাকিং স্ট্যাটাস জানা যেতে পারে। যেমন, *#৬১# ডায়াল করে ইনকামিং কল অন্য কোথাও ফরোয়ার্ড করা হচ্ছে কিনা সেটিও জানা যায়।তবে সিমের লোকেশন সরাসরি জানার কোন বৈধ উপায় নেই। উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে ফোনের সর্বশেষ অবস্থান জানার চেষ্টা করা যায়।
Also check out: বর্তমান মোবাইল ব্যাংকিং কি

ফোন নম্বর দিয়ে আইফোন লোকেশন ট্র্যাকিং? iPhone location tracking by phone number?
ফোন নম্বর দিয়ে সরাসরি আইফোনের লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব নয় যদি সেই আইফোনে আপনি অ্যাকসেস না রাখেন বা যথাযথ অনুমতি না থাকে।
তবে কিছু বৈধ উপায় রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে আইফোন লোকেশন ট্র্যাক করা যায়:-
Find My iPhone (Find My App) : এই ফিচারটি আগে থেকেই আপনাকে অন করে রাখতে হবে। যদি না জানেন এটিকে কিভাবে অন করতে হয় তাহলে জেনে নিন।
প্রথমে অন্য একটি ডিভাইস থেকে iCloud.com বা “Find My” অ্যাপে যেতে হবে, তারপর Apple ID দিয়ে লগইন করতে হবে (যেটা ট্র্যাক করতে চান সেই ফোনের ID)।তারপর “Devices” তালিকা থেকে আইফোনটি সিলেক্ট করলে ম্যাপে লোকেশন দেখা যাবে।
Family Sharing দিয়ে লোকেশন শেয়ারিং : যদি আপনার ফ্যামিলি মেম্বারদের সঙ্গে Family Sharing সেটআপ করা থাকে তাহলে আপনি তাদের লোকেশন “Find My” অ্যাপে দেখতে পারবেন।
একবার সেটআপ হলে, তারা যেখানেই থাকুক আপনি লাইভ লোকেশন দেখতে পারবেন।
থার্ড-পার্টি অ্যাপ (যেগুলোর অনুমতি রয়েছে):যেমন: Life360, Glympse, Find360 ইত্যাদি। এগুলোর সাহায্যে একে অপরের লোকেশন শেয়ার করা যায়।

এছাড়াও ফোন নম্বর দিয়ে সরাসরি লোকেশন ট্র্যাক করা যায় যদি সেটা অবৈধ না হয় এবং যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনুমতি দেয়।ফোন নম্বর দিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করতে হলে মোবাইল অপারেটর বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে যেতে হয়।
পরিশেষে
প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফোন নাম্বার দিয়ে লোকেশন নির্ধারণ করার সুবিধা থাকলেও, তা যেন অপব্যবহার না হয় সে বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগ প্রয়োজন।পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে যেমন অচেনা অ্যাপ ডাউনলোড না করা, লোকেশন শেয়ারিং ফিচার কাকে দেব তা নির্ধারণ করা, এবং সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক না করা।
ফোন নাম্বার দিয়ে লোকেশন নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সুবিধা, তবে এর ব্যবহার হতে হবে আইন ও নৈতিকতার ভিত্তিতে।এটি যেন মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হয় এবং কেউ যেন এর মাধ্যমে ক্ষতির শিকার না হয় এই দায়িত্ব আমাদের সবার।আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন।