ভারতের বিস্মৃত পাঁচ ক্রীড়াবিদ: ইতিহাসের আঁধারে হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্ররা

ক্রীড়াবিদ

ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে বহু প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ রয়েছেন যাদের অর্জনগুলো মুকুটের মতো হলেও, দুঃখজনকভাবে তারা যথাযথ সম্মান এবং সাহায্য থেকে বঞ্চিত। নিম্নলিখিত পাঁচজন ক্রীড়াবিদদের কাহিনী আমাদের চিরকাল মনে রাখার মতো, কিন্তু তাদের পরিশ্রম ও অর্জন এখনও অবহেলিত।

আশা রায় – ভারতের দ্রুততম দৌড়বিদ, যিনি ট্র্যাক ছেড়েছেন : আশা রায়, ভারতের দ্রুততম দৌড়বিদ, যিনি ২০১১ সালে কলকাতায় জাতীয় ওপেন অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে একটি রেকর্ড তৈরি করেছিলেন, বর্তমানে অধিকাংশ ভারতীয়ের কাছে অজ্ঞাত। তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট গ্রামে বসবাসকারী এক শাকসবজি বিক্রেতার মেয়ে। অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও তিনি ক্রীড়াঙ্গনে শীর্ষে উঠেছিলেন, কিন্তু অবশেষে তার সংগ্রাম ও দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তা তাকে পরাজিত করেছে। তাঁর কাছে কোনও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, সহায়তা বা সরকারি সাহায্য নেই, ফলে তার প্রতিভা কেবল অধরা রয়ে গেছে।

ভারতের বিস্মৃত পাঁচ ক্রীড়াবিদ
Pin it

কামাল কুমার – সাবেক বক্সার, এখন রাস্তার ময়লা কন্ট্রাক্টর : কামাল কুমার ভলমিকি তিনটি রাজ্যস্তরের সোনালী পদক জিতেছিলেন বক্সিংয়ে। আজ তিনি রাস্তায় ময়লা সংগ্রহ করছেন। তিনি একসময় রাজ্যস্তরের একটি কোচিং জবের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু আর্থিক সাহায্যের অভাবে তাকে জীবন-জীবিকার জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছে। আজ তার সংগ্রহে থাকা সোনালী পদকগুলি, তাকে সাহায্য করতে একেবারে অক্ষম।

কামাল কুমার
Pin it

রশ্মিতা পাত্র – ফুটবল খেলোয়াড়, এখন পানের দোকানদার : ভারতের আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড় রশ্মিতা পাত্র আজ নিজের গ্রামের বাজারে পান বিক্রি করছেন। তিনি মালয়েশিয়া, বাহরাইন ও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তবে দারিদ্র্য এবং পারিবারিক দায়িত্ব তাকে ফুটবল ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে। আজ তিনি একটি মৎস্যজীবীর স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানের সাথে জীবনযাপন করছেন।

রশ্মিতা পাত্র
Pin it

নিষা রাণী দত্ত – আর্চারি চ্যাম্পিয়ন, যার ধনুক বিক্রি করতে হয়েছে : নিষা রাণী দত্ত, যিনি ব্যাংকক ও তাইওয়ানে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করে বহু পদক আনেন, তার বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর তিনি তার প্রিয় আর্চারি ধনুকটি মাত্র ৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন। তার প্রশিক্ষক তাকে এই ধনুকটি উপহার দিয়েছিলেন, যার মূল্য ছিল প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। তবে অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারি সাহায্যের অভাবে তাকে খেলাধুলা ছাড়তে হয়েছে।

নিষা
Pin it

মুরলিকান্ত পেটকর – ভারতের প্রথম স্বর্ণপদক বিজয়ী, আজও অবহেলিত : মুরলিকান্ত পেটকর, যিনি ১৯৭২ সালে জার্মানিতে প্যারালিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন, আজও যথাযথ স্বীকৃতি পাননি। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম ব্যক্তি যিনি প্যারালিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। পেটকর একাধারে ছিলেন একজন বক্সার, যিনি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন এবং পরে প্যারালিম্পিক্সে সফলতা অর্জন করেছিলেন। তার অসাধারণ অর্জনগুলি অজ্ঞাতই রয়ে গেছে।

মুরলিকান্ত পেটকর
Pin it

এই ক্রীড়াবিদরা তাদের জীবন বাজি রেখে আমাদের দেশকে গর্বিত করেছিলেন, কিন্তু সমাজের অবহেলার শিকার হয়ে তারা আজ নিঃস্ব। সরকারের উচিত তাদের সম্মান দেওয়া এবং যথাযথ সাহায্য নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ক্রীড়াবিদকে এমন অবহেলার সম্মুখীন হতে না হয়।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts

link to নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন কাহিনী, Life story of Netaji Subhash Chandra Bose in Bengali

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন কাহিনী, Life story of Netaji Subhash Chandra Bose in Bengali

নেতাজি নামে পরিচিত সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের...