অ্যালোভেরার উপকারিতা, Benefits of Aloevera in Bengali

অ্যালোভেরার উপকারিতা

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একধরণের উপকারী উদ্ভিদ। বহু যুগ ধরে ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছে অ্যালোভেরার জুস। এর পাতার ভিতর অংশে পিচ্ছিল শাঁস বা জেলি থাকে, যা আমাদের দেহের জন্য উপকারী, কারণ এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে, যা শরীরের নানা উপকার করে। অ্যালোভেরার পাতায় প্রায় ২০ ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এই বিশেষ পাতায় ঔষধি গুণ আছে বলে আজ থেকে প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্ব আগে থেকেই অ্যালোভেরার নাম চিকিৎসা শাস্ত্রে উল্লিখিত রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আমরা অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা কি, What is Aloevera

ঘৃতকুমারীর বৈজ্ঞানিক নাম হল Aloe vera, এটি একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি, যা এলো পরিবারের উদ্ভিদ। উক্ত গাছ দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা। ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো বলে মনে হলেও এটি ক্যাক্টাস নয়, বরং এটি লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা গাছ দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত বলে মনে হয়, এর পাতাগুলি বেশ পুরু হয়, পাতার দুধারে করাতের মত ছোটো ছোট কাঁটা থাকে এবং পাতার ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে, আর এই শাঁসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বিভিন্ন উপকারী উপাদান। ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ২০ রকম খনিজ পদার্থ। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডও এতে বিদ্যমান। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E ।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা কি

অ্যালোভেরার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত, Aloevera’s benefits in details

অ্যালোভেরার ব্যবহারের বহু উপকারিতা রয়েছে, বিভিন্নভাবে এটি আমাদের দেহের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর সকল উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। তবে অ্যালোভেরা ব্যবহারের বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হল :

অ্যালোভেরা সেবন করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে :

বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে বা কখনো কোনোভাবে চামড়া পুড়ে গেলে সেই অংশে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। ছোটখাটো কাটা-পোড়া হলে, অ্যালার্জির কারণে চুলকানির সমস্যা বা চামড়ার কোনো অংশ লাল হয়ে উঠলে অথবা ত্বকের অন্য কোনো সমস্যা ইত্যাদি সারাতে অ্যালোভেরা খুব কার্যকর, কারণ অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, আর ত্বক আর্দ্র থাকলে সহজে বলিরেখা পড়ে না, সে কথা তো সবাই জানেন।

তাই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সরাসরি অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেলটা নিয়ে ত্বকে মাখিয়ে নিতে পারেন। যেহেতু অ্যালোভেরায় যথেষ্ট পরিমাণ জল থাকে, তাই সকালে খালি পেটে অল্প পরিমাণ অ্যালোভেরা খেলেই শরীর হাইড্রেট থাকে এবং টক্সিনগুলোও বের হয়ে যায়।

অ্যালোভেরা সেবন করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে

ওজন কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার 

কেউ যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তবে অ্যালোভেরা এক্ষেত্রে আপনার সাহায্য করবে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আর মিনারেল থাকে। তাছাড়াও থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড, এনজাইম আর স্টেরল, আর এই সবকিছুই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খেলে আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তবে অ্যালোভেরার জুস খানিকটা তিতা স্বাদের হয়। তাই সম্ভব হলে ব্লেন্ডারে এর শাঁস নিয়ে, জল ও বরফ দিয়ে এর জুস তৈরি করে সামান্য মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খাওয়া যায়।

চুল পড়া কম করতে অ্যালোভেরার ব্যবহার :

অ্যালোভেরায় প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইমস নামক এক ধরনের উৎসেচক থাকে, যা মাথার তালুর ত্বকের কোষগুলোর স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষভাবে কার্যকরী। নিয়মিত এর ব্যবহারে বাড়বে চুলের দৈর্ঘ্য, খুশকি কমে যাবে, আর সাথে মাথার চামড়ার বা তালুর মধ্যে ইনফেকশন হলে তাও সেরে যাবে। এটি চুলে কন্ডিশনারের মত কাজ করে এবং চুল নরম ও মোলায়েম করে তোলে। 

রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় অ্যালোভেরা :

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে এসেছে অ্যালোভেরার জুস। এই পানীয় নিয়মিত সেবন করলে দেহে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেড়ে ওঠে, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা আরো সহজ হয়ে যায়।  

অ্যালোভেরা হজম শক্তি উন্নত করে : 

কেউ যদি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে অ্যালোভেরার শরবত আপনার জন্য উপাদেয় হতে পারে। যেহেতু অ্যালোভেরায় এনজাইম রয়েছে, ফলে এর সেবন হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে। অন্যদিকে এটি শরীর থেকে টক্সিন পরিষ্কার করার কাজ করে। তাই শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স যদি ঠিক রাখতে হয় তবে অ্যালোভেরার শরবত পান করতে পারেন। 

পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে অ্যালোভেরা :

আমরা সকলেই জানি যে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আমাদেরকে সুস্থ থাকতে এবং দেহ থেকে অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, আর অ্যালোভেরা হলো দুটিরই পাওয়ার হাউস। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি, এ এবং ই রয়েছে, পাশাপাশি এতে ক্যালোরির পরিমাণও অত্যন্ত সামান্য থাকে। তাই নিয়মিত  খালি পেটে অ্যালোভেরা খেলে আপনার পুষ্টির ঘাটতি দূর হবে এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার : 

অ্যালোভেরাতে আছে বিভিন্ন উপকারী ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বক ও চুলের জন্য উপাদেয়। এতে থাকা ভিটামিন দেহকে সুস্থ রাখে এবং এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলোও ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোর বিপরীতে লড়াই করে।

তাই অ্যালোভেরার ব্যবহার করে ত্বক ও চুল দুটোই সতেজ ও ঝলমলে রাখা যায়। তাছাড়াও কখনো ব্রণ হলে অ্যালোভেরা জেল, মধু, দুধ, হলুদ অথবা সামান্য দুধের সর একসাথে মিশিয়ে মুখে মাস্কের মতো লাগালে দারুণ ফল পাওয়া যায়। অন্যদিকে রোদে পোড়া ত্বকে অ্যালোভেরা, শসার রস এবং দই দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে লাগালে ত্বকের বিশেষ উপকার হয়।

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার

কোলেস্টেরল কম করতে অ্যালোভেরার ব্যবহার :

আমাদের দেহে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি প্রয়োজন। তবে শরীরে যদি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপুল পরিমাণে বেড়ে ওঠে, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে কোলেস্টেরল অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার কারণে হার্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।  অ্যালোভেরার বিশেষ ঔষধি গুণাগুণ এসব সমস্যা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখতে পারে, এটি আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজ অ্যালোভেরা সেবন করতে পারেন।

অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন, How to take Aloevera

অ্যালোভেরার বিভিন্ন উপকার পেতে ছোট থেকে বড় সকল মানুষই এটি খেতে পারেন। যেহেতু অ্যালোভেরার একাধিক গুনাগুন  রয়েছে, সেজন্য এর উপকারিতাও রয়েছে একাধিক। তবে অ্যালোভেরার উপকারিতা  সঠিকভাবে পেতে হলে নিয়ম  সেটি মেনে খাওয়া উচিত। প্রতিনিয়ত সকাল বেলায় খালি পেটে অ্যালোভেরা জুস খাওয়া উচিত, তবেই বেশি উপকার পাওয়া যায়।

আপনি বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে পারেন আবার বাজারেও অ্যালোভেরার জুস কিনতে পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা পাতার জেলিকে সাধারণ শরবত করে খাওয়া হয়। তবে প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ করে জলের সাথে কিংবা জল ছাড়াও খেতে পারেন, এর থেকে বেশি না খাওয়াই উত্তম। 

অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

অ্যালোভেরার অপকারিতা কি কি, Limitations of Aloevera

প্রত্যেক জিনিসের ক্ষেত্রে যেমন কিছু ভাল দিক আছে, ঠিক তেমনি কিছু খারাপ দিকও থাকে। অ্যালোভেরার ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। এরও কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই নিয়ম করে অথবা প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমান মত অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন। জেনে নিন অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে :-

• অতিরিক্ত অ্যালোভেরা জুস সেবনের ফলে প্রস্রাবের রং লালচে হয়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা খাওয়া ভালো।

• অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে ডায়রিয়াও হতে পারে।

• যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা ব্যবহারের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

• গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলারা অ্যালোভেরা থেকে দূরে থাকাই ভালো।

গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলারা অ্যালোভেরা থেকে দূরে থাকাই ভালো।

উপসংহার, Conclusion

সারা পৃথিবী জুড়ে অ্যালোভেরার প্রায় ২৫০ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। কিন্তু সকল প্রজাতির চাষ সাধারণত করা হয় না। মাত্র দুই প্রজাতির অ্যালোভেরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে থাকে। তবে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বিষয়ে যতই বলি না কেন, ততই যেন কম হয়ে যায়। উপরে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর বিভিন্ন উপকারিতা তথা কিছু অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি এগুলো আপনাদের কাজে আসবে।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts