তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, Benefits and drawbacks of watermelon in Bengali 

তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা

ভরা গ্রীষ্মে গরমের কারণে যখন ঘামতে ঘামতে ত্যক্ত অবস্থা হয়ে যায়, তখন কোনো রসালো ফলই এই ত্যক্ত ভাব দূর করতে পারে। রসালো ফলের কথা বললে তরমুজের নাম অবশ্যই মনে পড়ে। শরীরে জলের চাহিদা ঠিক রাখতে গরমের দিনে অনেকেই ডায়েটে তরমুজকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

এই ফলটি মূলত গরমের দিনের জন্য উপযুক্ত হলেও বর্তমান সময়ে সারা বছর ধরেই বাজারে তরমুজ পাওয়া যায়। তবে পুষ্টিকর এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও বেশি তরমুজ খাওয়ায় হতে পারে বিপদ। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তরমুজের  বৈশিষ্ট, Features of Water Melon

তরমুজ শরীরে জলের অপূর্ণতা পূরণে সহায়ক। তাই গরমে ঘামের পরিমাণ বেড়ে গেলে আর জলের সংকট হলে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করতে পারে তরমুজ। এই মিষ্টি রসালো সুস্বাদু এ ফলের আদি নিবাস আফ্রিকাতে।

তরমুজের  বৈশিষ্ট

তরমুজে মধ্যে থাকা উপকারী উপাদান, Beneficial ingredients in watermelon

বাইরে থেকে সবুজ আবরণে থাকে এবং ভেতরের অংশ লাল আঁশে পরিপূর্ণ। এই ফলটিতে রয়েছে ৯২ শতাংশ পানীয় উপাদান, যা শরীরের প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা পূরণ করে। ফাইবার সমৃদ্ধ তরমুজে রয়েছে ভিটামিন A, B6, C এবং বেশ কিছু খনিজ উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ করে। সেই সঙ্গে ওজনও কম করতেও সাহায্য করে। 

তরমুজে মধ্যে থাকা উপকারী উপাদান

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating watermelon

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা

১) তরমুজ ত্বকের জন্য উপকারী :

অনেকের ত্বকে মেচেতা থাকে, যার কারণে অনেকেই খুব বিরক্ত বোধ করে। তবে মেচেতা থেকে রেহাই পেতে হলে প্রতিদিন তরমুজ খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরমুজে উপস্থিত ভিটামিন ‘A’ দেহের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তরমুজ ত্বকের জন্য উপকারী

২) তরমুজ আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে 

 তরমুজের এমন বেশ কিছু উপাদান আছে যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তা ছাড়া, তরমুজের মধ্যে থাকা ভিটামিন C, ক্যারোটিন এবং পটাশিয়াম শরীরের কোলেস্টেরল কম করতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে, যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন, তারা তরমুজ খেয়ে সুস্থ হবার আশায় দিন কাটাবেন। হার্টের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

তরমুজ আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে 

৩) তরমুজ কিডনি বা বৃক্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়

আপনাদের পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ না কেউ হয়তো কিডনির পাথর রোগে আক্রান্ত হয়েছেন? কিডনিতে পাথর হলে অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। যারা, এই সমস্যা থেকে সাবধান থাকতে চান, তাদের নিয়মিত তরমুজ খাওয়া উচিত। তরমুজ রসযুক্ত হয় তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে আপনার প্রস্রাবের ধারা স্বাভাবিক থাকবে। এতে কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় থাকবে এবং পাথর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।

৪) তরমুজ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক 

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তরমুজ থাকলে আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকবে। এর কারণ, তরমুজে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘A’, আর এই ভিটামিনের ওপর নির্ভর করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে; অর্থাৎ তরমুজ খেলে আমাদের চোখ ভালো থাকে।

তরমুজ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক 

৫) তরমুজ হাড়গুলোকে সুস্থ রাখে

বয়স বাড়ার সাথে তালমিলিয়ে শরীরে হাড়ে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়, সেটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এ সময় শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে আমরা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার খাই। কিন্তু তাও যদি ক্যালসিয়ামের বাড়তি চাহিদা পূরণ না-হয় তখন হাত বা পায়ে ব্যথা অনুভব হয়, এছাড়াও আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তবে যদি আপনি নিয়মিত তরমুজ খান, তবে এর ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম আপনার হাড়কে মজবুত রাখবে। তাছাড়া এর সুফল পাবেন বয়সকালেও। তাই হাড় সুস্থ রাখতে তরমুজ খাওয়া উচিত।

তরমুজ হাড়গুলোকে সুস্থ রাখে

৬) তরমুজ রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক

আজকাল রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন অনেকেই, কারও উচ্চ রক্তচাপ, আবার কারো নিম্ন রক্তচাপ। সেক্ষেত্রে অনেকেরই খাদ্যগ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ও শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হয়। তবে, খাদ্যতালিকায় নিয়মিত তরমুজ রাখলে আপনার দেহ প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পাবে, যা রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

তরমুজ রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক

৭) পেশীর ব্যথা থেকে বাঁচতে অবশ্যই তরমুজ খান

শরীরচর্চার পর অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তারা পেশীর ব্যথায় ভোগেন। এই ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে তরমুজ খাওয়া উচিত। শরীরচর্চার অন্তত এক ঘন্টা আগে এক কাপ তরমুজের রস তৈরি করে পান করতে পারেন। দেখবেন এতে শরীররচর্চার পর পেশীতে ব্যথার অনুভূতি তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে। তবে মনে রাখবেন, তরমুজের রসে আলাদা করে চিনি যোগ যেন না করা হয়। 

৮) তরমুজ অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক

 মানুষ না কি নিয়মিত তরমুজ খেয়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধ করতে পারেন! শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্যি যে তরমুজ অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক। তরমুজে থাকে প্রচুর ভিটামিন-সি। যারা সদ্য অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও তরমুজ খেয়ে উপকার পেতে পারেন। বলাই বাহুল্য, তরমুজ ফুসফুস সুস্থ রাখতেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

তরমুজ অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক

৯) তরমুজ প্রোস্টেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক

 ক্যান্সার প্রতিরোধে তরমুজ কতটা উপকারী তা এখনও প্রমাণিত হয় নি। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে তরমুজে ক্যান্সার-প্রতিরোধক উপাদান আছে। বিশেষ করে,  প্রোস্টেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এই বিশেষ ফল।

তরমুজ প্রোস্টেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক

তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা, Drawbacks of eating watermelon

  • ১. তরমুজ লাইকোপেনে সমৃদ্ধ। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খেলে পেট ফোলাভাব, ডায়রিয়া, বমি, বদহজম, অম্বল এবং গ্যাস ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হয়, তাদের পাচনতন্ত্র দুর্বল হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি আরও তীব্র হতে পারে।
  • ২. পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে তরমুজে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে। তাই তরমুজের মত প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা হতে পারে। এর ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে নাড়ি দুর্বলতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি সমস্যা ঘটতে পারে।
  • ৩. তরমুজ প্রাকৃতিক চিনিতে পূর্ণ, এক কথায় এটি মিষ্টিজাতীয় ফল, তাই এটি বেশি খেলে শরীরে চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের তরমুজ খাওয়া যথা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ৪. অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শরীরের রক্তচাপ কম হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হল এটি রসালো ফল, তাই এটি খাওয়ার ফলে রক্তের ঘনত্ব কম হয়ে যায়, তাই রক্তচাপও কমে যায়, বেশি কম হয়ে গেলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
  • ৫. তরমুজে রয়েছে ‘সরবিটল’ নামের একটি উপাদান। এই উপাদানের কারণে বেশি তরমুজ খেলে অম্বল ও বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ৬. তরমুজ কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ফুসকুড়ি, অ্যানাফিল্যাক্সিসি এবং মুখের ফোলা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, জিহ্বায় চুলকানি, মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা হতে পারে। তাই এমন কোনো লক্ষণ দেখলে তরমুজ না খাওয়াই উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • ৭. তরমুজে থাকে লাইকোপিন, যা একপ্রকার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে পেটের নানা গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে হজমের সমস্যাও।
  • ৮. প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম। তাই ১ দিনে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ হজম করা সম্ভব। এতে শরীরে ঢোকে ১৫০ গ্রাম ক্যালরি, যা শরীরের জন্য যথেষ্ট। এর থেকে বেশি তরমুজ খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা

শেষ কথা, Conclusion 

আপনাদের দেশে গরমকালে অনেকের প্রিয় ফল তরমুজ। ফলটি যেমন রসালো ও সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণও রয়েছে অনেক। শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এটি কার্যকরী, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবন না করাই ভালো।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts